#নব্যদিনের_সূচনা🌾
🍂হুমাইরা হুর🍂
(৬)
চারিপাশে ফুলের গন্ধে মো মো করছে। রঙ বেরঙের ফুল দিয়ে পুরো রুম সাজানো হয়েছে। চারপাশে জন্য ফুলের মেলা বসেছে।
ভয়, জড়তা, অস্থিরতা সব কিছু নিয়ে বসেছিলাম বাসর ঘরে।হ্যা বিয়ে হয়ে গিয়েছে আমার তাও পারিবারিক ভাবে।কখনো ভাবতেও পারি নি মুহূর্তের মধ্যে আমার জীবন এভাবে বদলে যাবে। নব্যদিনের সূচনা হলো তবে?
কিছুদিন আগে…
সোহানের কল আসার পর নিজেকে যেন পাগল মনে হচ্ছিল। সাথে সাথে কল কেটে দিয়েছিলাম। যার ভয়ে আমি ঢাকা ছেড়েছিলাম সে রাজশাহী আসছে।ভাবতেই গলা শুকিয়ে আসছিলো।তাহলে কি বিপদ আমার পিছু ছাড়বে না? হটাৎ ফোনে টুংটাং করে শব্দ আসল।চেক করে দেখলাম সোহান এর মেসেজ।
মেসেজে লেখা ছিল —
`খুব বাড়া বেড়ে ছিলিস তাই না? ডানা গজিয়েছে গিয়েছিল, সমস্যা নেই যতদিন আমি না আসছি উঠে নে। ইচ্ছেমতো উড়ে নে।আমি আসছি, সোহান আসছে তোর ডানা কাটতে রাজশাহীতে।ভেবেছিলি রাজশাহী যেয়ে আমার থেকে পার পেয়ে যাবি? আর আমি পুলিশ হয়েও তোর খোঁজ পাবনা? এতটাই বোকা মনে হয় তোর আমাকে? তুই যে ভার্সিটিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ফুড়তি করছিস তা আমি ভালোভাবে জানি।তুই যে আমার সেনার ডিম পাড়া হাঁস তোকে ছেড়ে থাকি কি করে বল?`
মেসেজটা পড়ে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।হাত পা থরথড় করে কাপছিলো।না আমি আবার সেই নরকে ফিরে যেতে চাই না, খুব কষ্ট করে এখান পর্যন্ত এসেছি।আবার ফিরতে চাই না, যে করেই হোক বাঁচতে হবে আমার।তাড়াতাড়ি ফোনটা বন্ধ করে রাখলাম। না ফোনটা কাছে রাখা যাবে না।গায়ে উড়না জরিয়ে নিয়ে হল থেকে বের হয়ে গেলাম।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল পড়েছে। সেই বাটন ফোনটা বেচে দিলাম। আর সিম টাও ফেলে দিলাম সামনে থাকা ড্রেনে। জমানো টাকার ভিতর হাজার তিন টাকা দিয়ে পুড়োনো একটা সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন আর নতুন কিনলাম।ফোন ছাড়া চলা দুষ্কর।
দিন চারেক পার হয়ে গেলো আমার ভয়ে ভয়ে।কখন সোহান চলে আসে সেই ভয়ে রাতে ঘুম ও হতো না। যতই হোক আমি মেয়ে।আর সোহান পুলিশ।পুলিশের কাছে যেয়েও কোনো লাভ হবে বলে মনে হলো না।আজ কিয়া আপু তার বাড়ি চলে যাবে।এই মানুষটা আমায় অনেক সাহায্য করেছে।হলে হাতে গোণা খুব কম ছাত্রী ই রয়েছে।যে যার যার বাসায় চলে গিয়েছে।কিয়া আপু আমাকে একা রেখে চলে যেতে চাইছিলো না। আমি জোর করায় রাজি হলো। কিয়া আপু আর আমি এক সাথেই বের হলাম। আপুর উদ্দেশ্য তার বাড়ীর পথে যাওয়া আর আমার বাজারে যাওয়া।
আপুকে বিদায় দিয়ে বাজারের উদ্দেশ্য যাচ্ছিলাম।হটাৎ নজরে পড়ল মন কেড়ে নেওয়া নীলাভ চোখের সেই সু্র্দশন ছেলে টার উপর। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেলো।সামনে সোহান দাড়িয়ে ছিলো।তাহলে সোহান কি আমায় খুঁজে পেয়ে যাবে? কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। সোহান কে পিছন দিকে তাকাতে আমি আড়াল হয়ে গেলাম। না আমাকে পালাতেই হবে।
কিন্তু এখানে থাকলে তো সোহান আমাকে খুজে পেয়ে যাবে।তড়ি হড়ি করে কিয়া আপুকে ফোন করলাম।তিনি অনেক বার তার সাথে যাওয়ার জন্য জোড় করেছিলেন।কিন্তু আমি রাজী হয় নি। কিয়া আপুকে ফোন দিয়ে হল এ আসতে বললাম।আপুকে অগত্যা হলে আসতে হলো৷ আসলে আমি তার সাথে তার বাড়ি যাওয়ার বায়না করলাম।কেননা সোহানের থেকে বাঁচতে হবে আমার এই মুহুর্তে এখান থেকে দুরে যেতে হবে। আমি যাওয়ার কথা বলতেই কিয়া আপু খুশি তে আমায় জরিয়ে ধরলেন।তিনি যেন এটাই চাইছিলেন।রেডি হয়ে কিয়ার আপুর সাথে রওয়ানা হলাম।জানি না কি হতে চলেছে আগামীতে?
রাজশাহী গ্রামের দিক এটা।গ্রাম হলেও পুরোপুরি শহরের ভাব হয়ে গিয়েছে জায়গাটায়। খুব দূরে না হল থেকে জায়গাটা। যাতায়াতে ঘন্টা এক সময় লাগে। কিয়া আপু ভ্যানের ভাড়াটা মিটিয়ে দিলো।সামনে দেখতে পেলাম দোতলা ডুপ্লেক্স বাড়িটা।বাইড়ে থেকে দেখতে খুব ই সুন্দর লাগছে।মনে হচ্ছে কোনো এক রাজার অট্টালিকা। কিয়া আপুকে দেখে দাড়োয়ান তাড়াতাড়ি এসে গেট খুলে দিলাম। দাড়োয়ান চাচা যেন কেমন অদ্ভুত নজরে আমাকে দেখছিলো। বিষয়টা কেমন জানি লাগলো।কিয়া আপুর পেছন পেছন বাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম।
বাড়িটার নিখুত ডিজাইন যেনো যে কারো মন কেড়ে নেবে।হয়তো বাড়ির মালিক অনেক সৌখিন।বাড়ির সামনে যেন বাগান করা।আশ্চর্য নিখুত ভাবে বাড়িটার ডিজাইন লক্ষ করে বুঝেছিলাম কিছু আমাদের বাড়ির মত। যদিও সে বাড়িটা বাবা মারা যাওয়ার পড় মা বেচে দিয়েছিলেন পরে নতুন স্বামী কে নিয়ে নতুন আরেক বাড়ি কেনেন।
যাক সেসব। কিয়া আপু তার বাড়ি নিয়ে গেলেন আমাকে।বাড়িতে ঢুকতেই দুটো পিচ্চি এসে আপুকে জড়িয়ে ধরল। পিচ্চি গুলো দেখতে মাশাল্লাহ। কেয়া আপু বললেন পিচ্চি দুটো তার ছোট চাচার মেয়ে।পিচ্চি গুলো আমায় দেখে আমার দিকে এসল। আবার দিকে এমন ভাবে তাকিয়েছিলো যেন আমি ভুত। পিচ্চি গুলোর চেচামেচি তে বাড়ির লোকজন সব বের হয়ে আসলো।কিয়া আপুর মা এসে কিয়া আপুকে জড়িয়ে ধরলেন।সবাই কেয়া আপুকে দেখে অনেক খুশি হলেন।তাদের দেখে মনে হচ্ছে অনেক অভিজাত্য তা বিরাজ করছে। কিয়া আপুকে দেখে কখনো ভাবিনি তিনি এত বড় বাড়ির মেয়ে। তার মধ্যে আমি কখনো কোনো অহংকার দেখি নি। কিয়া আপু বাড়ির সবার সাথে তার রুমমেট বলে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। কিন্তু একটা ব্যাপারে খটকা লাগল।বাড়ির সবাই যেন কেমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো আমার আসায় তারা খুশি হন নি।সৌজন্যের খাতিরে ভালো ব্যবহার করছে।। কিন্তু আমার করার যে কিছু নেই সোহান হন্নতন্ন হয়ে আমায় খুজছে।ওখানে থাকলে তো যোকোনো সময় আমার খোজ পেয়ে যাবে।তাই অনিচ্ছাকৃত আমার এখানে আসতে হয়েছে। কিয়া আপুর একজন কাজের লোককে ডেকে আমাকে আমাকে তার রুমে রেখে আসতে বললেন।কিয়া আপু নাকি তার দীদুনের সাথে দেখা করতে যাবে।তিনি নাকি প্যারালাইসড।কথা না বাড়িয়ে কাজের লোকের সাথে আমি কিয়া আপুর রুমের দিকে চলে গেলাম। জার্নি করার ফলে অনেক কান্ত লাগছিলো।তাই ফ্রেস হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুম ঘুম ভাঙতেই দেখি কিয়া আপু পাশে বসে আছে।রাত হয়ে গিয়েছে।সেই ঘুমিয়েছিলাম দুপুরে।আমাকে দেখে কিয়া বলে উঠল খাওয়া কথা। কিয়া আপু আমাকে নিয়ে খাবার টেবিলে বসালেন। একে একে বাড়ির সবায় এসে টেবিলে বসলেন।কিয়া আপুর আব্বু আসলেন।সকালে দেখি নি তাকে।
কিয়া আপু আমাকে খেতে বললেন।সবার বলায় আমি খাওয়া শুরু করলাম।কিয়া আপুর আব্বু আমার পরিবারের কথা জিগ্যেস করলেন। আমি খেতে খেতে উওর দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার বাড়ির কথা জিগ্যেস করতেই খাওয়া থামিয়ে সবার দিকে তাকালাম সবাই কেমন করে যেন আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। আশ্চর্য তারা এমন ভাবে কেন তাকিয়ে আছে?ঠিকমত খাবার যেন খেতে পারছিলাম না।কিয়া আপুর বাবা আর ফুফু যেন নিজে উঠে এলেন আর আমার পাতে খাবার বেড়ে দিলেন। দেখে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।হটাৎ করে এত আদর যত্ন কিভাবে। কেনো মতে খাওয়া শেষ করলাম।
পরের কিয়ার আপুর বাবা আমায় ডেকে পাঠালেন। সেখানে গিয়ে যা দেখলাম তা দেখে আমি মুহুর্তের মধ্যে নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম।আমার দিদুন বিছানায় শুয়ে আছেন। তার চেহারা আমার আবছা আবছা মনে ছিলো।কিয়া আপুর বাবা আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,
রাজিব আমায় ফোন দিয়েছিয়ে বলেছিলো সায়নের মেয়েকে সাথে আজ সে কথা বলেছে।রাজীব হলো আমার বাবার সেই লেকচারার বন্ধু । আমিও আফনান কে তোর ব্যাপারে খোজ নিতে বললাম।কিন্তু সকল তথ্য দেওয়ার আগেই রাজীব অসুস্থ হয়ে হার্ট অ্যাটাক এ মারা গেলো। তোকে আর খুজে পাওয়ার আসা নিমিষেই শেষ হয়ে গেল। সায়ন মারা যাওয়ার পর তোর মা রিয়াদকে বিয়ে করে নিলো।আমরা তোকে আসতে চাইলেও মুনিয়া তা হতে দিলো না।বাড়ি গাড়ি সব বেচে কোথায় চলে গেলো।আমরা তোর খোজ ও পেলাম না।রাজীব যেদিন ফোন দিয়েছিলো নতুন করে যেন আশার আলো পেয়েছিলাম।কিন্তু তাও যখন শেষ হয়ে গিয়েছিলো নিজের কাছে নিজেকে অসহায় মনে হতো।নিজের ভাইয়ের অংশকে আমি দেখে রাখতে পারলাম না । একদিন কিয়ার সাথে কথা বলার সময় কথায় কথায় মেঘনা নামটা উঠে এসেছিলো। আমি ততটা গুরুত্ব দেই নি।কিন্তু আজ তোকে দেখার পর আমার সায়নের কথা মনে পড়ে গিয়েছিলো। তোর ভার্সিটিতে খোজ লাগিয়ে জানতে পারি তুই আমদের সায়নের ই মেয়ে।আমাদের সিদরাতুল।
কথা গুলো শুনে আমি যেন বাকহারা হয়েগিয়েছিলাম।তাহলে কিয়া আপু আমার চাচাত বোন আর কিয়া আপুর বাবা আমার আপন বড় চাচা।তাহলে কি আমার পরিবার আমি খুজে পেয়েছি? অজান্তেই নিজের বাড়ি চলে এসেছি? এটাকি ভাগ্যের খেলা? বিষাদ ময় জীবন থেকে সুখ সাগরে চলে এসেছি?
বাড়ির সবায় কে সত্যিটা জানালে সবায় অনেক খুশি হয়।সবথেকে বেশি খুশি হয় কিয়া আপু।নিজেকে আমার বোন রুপে পেয়ে তিনি যেন অনেক খুশি।আমি খুশি হতে পারছিলম না।তাহলে কি সব দুঃখের অবসান ঘটবে?
দেখতে দেখে দিন তিন চলে গেলো।পরিবার পেয়ে যেনো আমি অনেক খুশি।সবায় আমাকে খুব ভালোবাসে।বড় চাচা মনে হয় আমার প্রতি জান উজার করে দেন।সেদিনই এত গুলো জামা এনে দিলে সাথে নিউ মডেলের আইফোন। যেখানে আমি তিন হাজার এর সেকেন্ডে হ্যান্ড ফোন চালাতাম সেখানে আমার কাছে লাক্ষ টাকার উপরে ফোন।
ঈদের আগের রাত, চাঁদ রাত।বাড়ি ভর্তি আয়োজন।মেহেদী গন্ধে চারিপাশ মো মো করছে। জীবনের সেরা ঈদ যেন আজ। বড় চাচার ছেলে আসবে আজ। যাকে আমি এতদিন ধরে খুজেছি।
সকালে উঠে চারিপাশে আনন্দে উৎসবে মেতে উঠেছে সবাই।কিয়া আপু আমাকে সাজিয়ে দিচ্ছে।বাড়ির সবাই নামাজে গিয়েছে।
সামনে মুগ্ধ কে দেখে আমার রাগ উটে গেলো।এই ছেলেটা আমার পিছু কেনো ছাড়ে না? আর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল যখন জানতে পারলাম মুগ্ধ সাহেব আর কেউ নয় আমার বড় চাচার ছেলে আফনান আহযাব মুগ্ধ। যাকে এত দিন ধরে সহ্য করে আসছি সেই আমার কাজিন। কথাটা শুনে মেজাজ তুরঙ্গে উঠে গিয়েছিলো। কে জানত এই শয়তানটার সাথেই আমার জীবন বাধা পড়ে যাবে?
ঈদের ছুটি শেষ। আমাদের আবার ভার্সিটি ফিরতে হবে।এত দিন যেন সোহানের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।মনে ভয় বাঁধতে লাগল। বড় চাচাকে সব ঘটনা জাগলে আমাকে আশ্বাস দেন কিছু হবে না।
একদিন বড় চাচা আমাকে তার রুমে ডাকেন। আমাকে যা বললেন তা শুনে আমি নির্বাক হয়ে গেলাম। বড় চাচা মুগ্ধের সাথে আমার বিয়ে দিতে চান। তাহলে তার আর কোনো চিন্তা থাকবে।এটা শুনে শুনে আশ্চর্য হয়ে ছিলাম যে মুগ্ধ বিয়েতে রাজি অনেক বোঝানো অনেক বোঝানোর পর পরিবারের কথার মধ্যে আমিও বিয়েতে রাজি হয়ে গেলাম সেদিন বিকেলে কাজী তাকিয়ে দেখে আমাদের বিয়ে পড়িয়ে দিলেন বড় চাচা। বদলে গেলো আমার জীবন।এতদিন যেটা আমার দাদাবাড়ী ছিলো সেটা আজ আমার শশুড় বাড়ীও হলে গেলো।তাহলে কি আজ থেকে হলো নব্যদিনের সূচনা?
চলবে?
(আসসালামু আলাইকুম পাঠকমহল।অনেকে আমাকে বলেছেন যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু আমি উইকিপিডিয়াতে সার্চ দিয়েছিলাম তখন দেখেছিলাম সেখানে রাজশাহীর নাম উল্লেখ রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে।হয়তো আমার জানায় ভুল হয়ছে,সে জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আর ভুল-ত্রুটি আমাদের দাঁড়াও হয়ে থাকে তার জন্য ক্ষমা করবেন।)