#তুমি_শুধু_আমারই_হও
লেখনীতে- অরনিশা সাথী
|৩১|
রুশান আর তরীকে স্টেজে পাশাপাশি বসানো হয়েছে। দুজনকে একসাথেই হলুদ লাগানো হবে। হলুদ রঙের জামদানী শাড়ি পড়েছে তরী৷ সাথে কাঁচা ফুলের গয়না। রুশান পড়েছে কাঁচা হলুদ রঙের পাঞ্জাবি। দুজনকে একসাথে কি সুন্দর লাগছে। মানিয়েছে বেশ৷ শান্ত ফটোগ্রাফার এর সাথে কথা বলছিলো ছবি তোলার বিষয়ে। হঠাৎ করেই গেটের দিকে তাকিয়ে ওর চোখ আটকে যায়। হলুদের বাটি নিয়ে নূর স্টেজের দিকে আসছে। পরণে লাল রঙা জামদানী শাড়ি। দুহাত ভর্তি চুড়ি। হালকা সাজ আর খোপা করা চুলগুলোতে বেলিফুল আটকানো। ব্যাস! এতেই চোখ ফেরানো যাচ্ছে না নূরের দিক থেকে। নূর শান্তকে ক্রশ করে যাওয়ার সময় বললো,
–“এভাবে হা করে কি দেখছেন? মুখ বন্ধ করেন নয়তো মশা ঢুকে যাবে।”
শান্ত নিজেকে সামলে নিয়ে মাথা চুলকালো। নূর মুচকি হেসে স্টেজে উঠে গেলো৷ শান্ত ঘুরেফিরে সেই নূরকেই দেখছে। নূর মৃদু হাসলো। রুশানকে বললো,
–“তরীকে না সবার আগে হলুদ লাগাতে চেয়েছিস? তাহলে এখনি লাগা৷ আবার আন্টিরা চলে আসবে তখন আর লাগাতে পারবি না।”
কথাটা বলে নূর স্টেজ থেকে নেমে শান্তর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। রুশান হাতে একটুখানি হলুদ লাগিয়ে পেছন থেকে তরীর কোমড় ছাড়িয়ে উম্মুক্ত পেটে হলুদ ছোঁয়ালো৷ রুশানের এমন স্পর্শ পেয়ে তরীর শরীরে কম্পন সৃষ্টি হলো। রুশান বললো,
–“শাড়ি দিয়ে পেট ঢেকে রাখো। হলুদ যাতে কারো চোখে না পড়ে।”
রুশানের কথামতো তরী শাড়ি দিয়ে পেট ঢেকে নিলো। যদিওবা দেখা যেতো না তবুও সাবধানের মার নেই। রুশান বললো,
–“আমাকে লাগাবে না হলুদ?”
তরী কাঁপা কাঁপা হাতে হলুদ নিয়ে রুশানের হাতে হলুদ ছুঁইয়ে দেয়৷ তখনই রুশানের আম্মু আন্টিরা আসে হলুদ লাগাতে৷ বড়রা সকলে একে একে হলুদ লাগিয়ে ভেতরে চলে যায়৷ এবার ছোটদের পালা। ওরা হাসি ঠাট্টা করবে তাই এখানে বড়রা কেউ না থেকে চলে গেলো।
শান্ত আর নূর একসাথে উঠেছে রুশান-তরীকে হলুদ লাগানোর জন্য। ওদের দুজনকে হলুদ লাগিয়ে শান্ত কিছুটা হলুদ হাতে লাগিয়ে নেমে পড়ে স্টেজ থেকে৷ ফাঁকা জায়গা দেখে টেনে নেয় নূরকে। তারপর আলগোছে হলুদ লাগিয়ে দেয় নূরের গালে। নূর ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো,
–“এটা কি হলো?”
–“কিছু না তো।”
শান্ত’র ডোন্ট কেয়ার ভাব। নূর বললো,
–“হলুদ লাগালেন কেন?”
–“আমার হাফ-বউ তো আর আমাকে লাগাবে না, তাই আমিই লাগিয়ে দিলাম।”
নূর শান্তকে দাঁড়াতে বলে আবারো স্টেজে গিয়ে দুহাত ভর্তি হলুদ নিয়ে এসে শান্ত’র পুরো মুখে লাগিয়ে দেয়৷ শান্তকে একদমই চেনা যাচ্ছে না। নূর ফিক করে হেসে দিলো। হাসতে হাসতে বললো,
–“খুব কিউট লাগছে আপনাকে।”
–“তাই না? ওয়েট____”
কথাটা বলে শান্ত নূরের দিকে এগোতে গেলেই নূর দৌড় লাগায়৷ নূরের পেছনে শান্ত’ও ছোট লাগায়।
–
অর্নি শাড়ি ঠিক করতে করতে বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। উৎসব সোফায় বসে ফোন দেখছিলো। অর্নি উৎসবের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
–“স্যরি স্যরি, লেট হয়ে গেলো খুব।”
অর্নির কথায় উৎসব চোখ তুলে তাকাতেই থমকে যায়। লাল পাড়ের সাদা শাড়ি, গ্রাম্য ভাবে পড়ে লম্বা করে আচঁল ছেড়ে রেখেছে পেছনে৷ বা হাত ভর্তি লাল এবং সাদার সংমিশ্রণে চুড়ি পড়েছে৷ এবং ডান হাতে বেলি ফুলের মালা জড়িয়েছে। চোখে কাজল, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। আর কোমড় সমান চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া৷ খোলা চুলে আবার বেলী ফুলের মালা আটকেছে৷ একদম নজরকাঁড়া সুন্দর। যে দেখবে তারই ভালো লেগে যাবে। উৎসবকে এক ধ্যানে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অর্নি বললো,
–“কি হলো? চলুন।”
–“হু__হুম চলো।”
দুজনে একসাথে রুশানদের বাসা থেকে বেরিয়ে বাগানে গেলো। বাগানেই হলুদের স্টেজ করা হয়েছে। ওরা দুজনে সরাসরি স্টেজে উঠে গেলো। সবার হলুদ লাগানো শেষ। শুধুমাত্র উৎসব আর অর্নিই বাকী ছিলো। অর্নি তরীর পাশে বসলো। আর উৎসব রুশানের পাশে৷ রুশান অর্নির মাথায় গাট্টা মেরে বললো,
–“তোর জন্য কতক্ষণ যাবত অপেক্ষা করছি হিসাব আছে? সাজগোজ সহজে হয় না, না?”
অর্নি মাথা ডলে কটমটে চোখে তাকালো রুশানের দিকে। রুশানের চুল ধরে টান দিয়ে বললো,
–“আরো বেশি অপেক্ষা করানোর দরকার ছিলো তোকে।”
এই বলে তরীকে হলুদ ছোঁয়ালো প্রথমে। উৎসবও তরী রুশান দুজনকেই হলুদ লাগিয়েছে। অর্নি দুহাতে বেশি করে হলুদ নিয়ে রুশানের পুরো মুখে লাগিয়ে দিলো। রুশান তেড়ে গিয়ে অর্নিকে হলুদ লাগাতে গেলে অর্নি লাফ দিয়ে নেমে গেলো স্টেজ থেকে। উৎসব আর তরী মুচকি হাসলো দুজনের কান্ডে।
রুশানদের ছাদে বেশ কিছু লাল গোলাপ ফুঁটেছে। অর্নি ফুলগুলো ছিঁড়তে এসেছে। বিকেলে তরীকে সাজানোর সময় খোপায় লাগাবে৷ বাচ্চারা এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করছে। কখন ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যায় ঠিক নেই। তাই ও আগেই ফুল ছিঁড়ে নিয়ে ফ্রীজে রেখে দিবে ঠিক করলো। ফুল ছেঁড়ার জন্য হাত বাড়াতেই একটা শক্তপোক্ত হাত অর্নির হাত ধরে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। চোখ মেলে উৎসবকে দেখতে পেয়ে অর্নি স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,
–“আপনি? আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।”
উৎসব একহাতে অর্নির কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো,
–“আমার বউকে আমি ছাড়া আর অন্য কে ছোঁয়ার সাহস দেখাবে? হাত ভেঙে ফেলবো না আমি?”
–“হয়েছে হয়েছে, এখন ছাড়ুন দেখি৷ ফুলগুলো ছিঁড়তে হবে।”
বলেই অর্নি ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা চালালো। উৎসব নিজেই নিজের গালের হলুদ লাগালো। তা দেখে অর্নি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময়। হুট করেই উৎসব অর্নির দিকে ঝুঁকে গিয়ে নিজের হলুদ লাগানো গাল ঘঁষে দেয় অর্নির গালে। ফলস্বরূপ উৎসবের গালের হলুদ অর্নির গালেও লাগে। অর্নি ক্ষানিকটা সময় ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। অতঃপর অর্নিও মুচকি হেসে পা ক্ষানিকটা উঁচু করে উৎসবের অন্যগালে হলুদ লাগিয়ে দেয় নিজের গাল থেকে। মৃদু হেসে বললো,
–“সমান, সমান।”
উৎসব বাঁকা হাসলো। হাতের অবশিষ্ট হলুদ নিজের গালে ভালো করে লাগিয়ে নিয়ে অর্নির হাত ধরে ওকে ঘুরিয়ে নিলো। অর্নির চুলগুলো একপাশে সরিয়ে দিলো। অতঃপর নিজের গাল স্পর্শ করলো অর্নির ঘাড়ে। অর্নি ওর ঘাড়ে উৎসবের খোচাখোচা দাঁড়ির স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো। উৎসব মুচকি হেসে অর্নিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“এবার? এবার কি করবেন মিসেস সা’য়াদাত আবরার উৎসব?”
–
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা নাগাদ রুশান আর তরীর বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়৷ বিয়ের সকল রিচুয়্যালস মেনে সাড়ে দশটা নাগাদ তরীকে রুশানের ঘরে বসিয়ে বাইরে থেকে দরজা লক করে দেওয়া হয়। রুশান রুমের সামনে এসে দরজায় তালা দেখে অবাক হলো। পরমূহুর্তেই তালা লাগানোর কারণ বুঝতে পেরে মৃদু হাসলো। তবুও না বোঝার ভাণ করে বললো,
–“খয়রাতির মতো দরজার সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? সর, ঘরে যেতে দে।”
–“উঁহু, এমনি এমনি তোমাকে ঘরে যেতে দিচ্ছি না আমরা। আগে টাকা দিবি তারপর ঘরে যেতে পারবি।”
নূরের কথায় রুশান অবাক হওয়ার ভাণ ধরে বললো,
–“কিসের টাকা?”
অর্নি বললো,
–“এই যে এত কষ্ট করে ঘর সাজালাম, তোর বিয়েতে এত খাটলাম তার জন্য।”
–“ইইইহহহহ সর! আমি বেকার মানুষ টাকা পামু কই?”
শান্ত বললো,
–“অত কিছু না জানি শালা বাবু, চুপচাপ টাকা বের করো তারপর ঘরে যাও। ওদিকে তোমার বউ তোমার অপেক্ষা করছে তো।”
রুশান অসহায় ভাবে বললো,
–“কত টাকা?”
–“বেশি না, তুই বেকার দেখে জাস্ট দশ হাজার।”
অর্নির কথায় রুশান গাট্টা মারলো ওর মাথায়, বললো,
–“ডাকাতের মত এত টাকা চাস কেন? আমার পকেট পুরা ফাঁকা৷”
নূর বললো,
–“এত কিছু জানি না। তুই টাকা বের কর। নয়তো আমরা গেলাম, তুই দরজায় দাঁড়িয়ে থাক সারা রাত।”
রুশান কাঁদো কাঁদো চেহারা বানিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে বললো,
–“উৎসব ভাই_____”
উৎসব এখানে নেই। ও ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে ফোনে কিছু দেখছে। এসবে ও থাকতে চায় না দেখেই আসেনি এখানে। অর্নি রাগী স্বরে বললো,
–“এই চুপ, একদম উৎসব ভাই উৎসব ভাই করবি না। উনি এলেও কিচ্ছু করতে পারবে না। আমরা যা চেয়েছি চুপচাপ তা আমাদের দিয়ে দে আমরা চলে যাবো।”
শেষে আর কোনো উপায় না পেয়ে টাকা বের করে ওদের হাতে দিয়ে দেয়৷ নূর দরজা খুলে দিলো। টাকা পেয়ে ওরা সবাই চলে গেলো ওখান থেকে।
–
ভারী লেহেঙ্গা, পাঞ্জাবী পালটে দুজনে একসাথে দু রাকাত নামায পড়ে নিলো। তারপর জায়নামাজ জায়গা মতো রেখে দিলো রুশান। তরী আবারো চুপচাপ গিয়ে বিছানায় বসে পড়লো। রুশান ড্রয়ার থেকে একটা চেইন এনে পড়িয়ে দিলো তরীর গলায়৷ তরীর দুই গালে হাত রেখে তরীর কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে রুশান বললো,
–“তুমি আমার তরী। আজ তুমি আমার বউ হয়ে আমার ঘরে আছো। আই কান্ট বিলিভ দিস।”
–“আমি তোমারই আছি রুশান।”
তরীর কথা শুনে রুশান সাথে সাথেই বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো ওকে। তরীও চুপচাপ রুশানের বুকের সাথে লেপ্টে থেকে ওর হৃদপিণ্ডের ঢিপঢিপ শব্দ শুনছে। রুশান একহাতে তরীর কোমড় খামচে ধরে অন্যহাত দিয়ে তরীর ঘাড় ধরলো। তরীর মুখটা নিজের দিকে নিয়ে এলো ক্ষানিকটা। তরী নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে আছে রুশানের দিকে। রুশান তরীর সারামুখে অজস্র চুমু খেয়ে আচমকা ওর ঠোঁট জোড়া নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো। রুশানের এমন স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো তরী। তরীকে ধীরে ধীরে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজের পরণে টি-শার্ট খুলে ছুঁড়ে মারলো একপাশে। তরীর দিকে এগোতে এগোতে বললো,
–“আজ আমার ভালোবাসার অন্য এক রুপ দেখাবো তোমায়।”
কথাটা বলেই তরীর বুক থেকে ওড়না সরিয়ে গলায় মুখ গুজলো।
চলবে~
[ সবাইকে ঈদ মোবারক। গল্প ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত। সন্ধ্যা থেকে কয়েকজনকে মেহেদী লাগিয়ে দিয়ে লিখার মতো এনার্জি নেই আর। তবুও আপনারা অপেক্ষায় আছেন বলে যেটুকু পারলাম সেটুকুই লিখে দিয়েছি। আশা রাখছি এইটুকুতেই খুশি থাকবেন আপনারা। ]