নব্যদিনের_সূচনা🌾 #দ্বিতীয় পরিচ্ছদ 🍂হুমাইরা হুর🍂 (১)

0
252

#নব্যদিনের_সূচনা🌾
#দ্বিতীয় পরিচ্ছদ
🍂হুমাইরা হুর🍂

(১)

চারিপাশ অন্ধকার। মেঘ ডাকছে ভীষণভাবে ।বজ্রপাতের শব্দে গা ছমছম যেন এমন ভাব।কোথায় কি হচ্ছে তা জানার বিন্দু মাত্র রেস যেনো কারো নেই।চারিপাশ এলোমেলো। ঘরের সব জিনিস যেনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেয়েছে।কোনো এক ঘরে কারো সুখ কারো জীবনের অন্ধকার।কোনো এক ছায়ামানব এগিয়ে আসছে মেঘনার দিকে।সারা গায়ে অসংখ্য আঘাত পাওয়ার কারনে ব্যাথায় জর্জারিত হয়ে আছে সে।নড়া চড়া যেন তার দ্বারা আর সম্ভব না।ছায়া মানব এগিয়ে আসছে মেঘনার দিকে।ভারি পেট নি য়ে দৌড়োতে যেন পারছে না সে।আসতে ছায়ামানবটার মুখ দর্শন হলো।যা মেঘনা থমকে গেলো।সোহান তার দিকে এগিয়ে আগছে।রক্ত লাল চোখ তার।চোখে মুখে এক ভয়ানক হিংস্রতা। যেনো কাউকে খুন করার আকাঙ্খা তার ভীষণভাবে । হাতে ধারালো ছুড়ি। কাউকে আঘাত করতে তার কোন আক্ষেপ নেই।

এ ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার করে উঠল মেঘনা।চেঁচামেচি হাতে টান পড়লে চারপাশে তাকিয়ে দেখল সে হাসপাতালে বেডে শুয়ে আছে।হাতের ফিনকি দিকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।সেদিকে মেঘনার খেয়াল নেই।সে যেনো রীতিমতো ঘামছে। শুধু মনে পড়ছে সোহানের ভয়ানক রুপ ।

চিৎকার চেঁচামেচি শব্দ শুনে ডক্টর সহ মুগ্ধ প্রবেশ করলো। কোনো মতো যেন সে শান্ত হতে পারছিলো না।মুগ্ধ কে দেখা মাত্র ঝাপটে ধরল সে।কিছু মুহুর্তে মধ্যেই সারারুম জুরে নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেলো।সদ্য জন্ম নেওয়া বিড়াল ছানার যেভাবে জাপ্টে ধরে সেখাবেই মেঘনাও গুটিশুটি হয়ে মুগ্ধের বুকের সাথে মিশে রইল।হটাৎ কিছু একটা মনে পড়তে ছিটকে সরে এলো মুগ্ধের বুক থেকে।চেচামেচি করতে লাগল।মুগ্ধ যেন কিছুতেই মেঘনাকে শান্ত করতে পারছিল না বারবার ব্যর্থ হচ্ছিল। তখনই নার্স এসে ইনজেকশন পুশ করলেন। তখন বাড়ির সবায় তখনই বাড়ির সবাই এসে মেঘনাকে একে একে দেখে আলো মেঘনা এখানে রয়েছে আজ পাঁচ মাস হল কিন্তু মেঘনার মানসিক অবস্থার কোন উন্নতি ঘটে নি। ডক্টর মুগ্ধকে বললেন,

মেঘনা খুব দ্রুতই রিকভার করছে কিন্তু মেঘনার মানসিক অবস্থা খুব খারাপ।ওকে মেন্টাল প্রেসার দেওয়া যাবে না,না হলে মেঘনা মানসিক ভারসাম্য হারাবে।আর আপনাদের বেবিটার কথা আশা করি জানাবেন না।বুঝতেই পারছেন এই অবস্থা মেঘনা জানলে কি হতে পারে?আপনি অবশ্যই চাইবেন না আপনার স্ত্রীর ক্ষতি হোক।

ডক্টরের কথা শুনে মুগ্ধের বুকটা ধক করে উঠল।সে চায় না মেঘনার কোন ক্ষতি না হয়, সে যে মেঘনাকে ভীষণ ভালোবাসে কোনমতে সে মেঘনাকে হারাতে পারবে না।মনে পড়ে যায় সেই রাতের ঘটনা।রাত নয় বিষাক্ত এক অধ্যায়। সেদিনের পর থেকে বদলে গিয়েছে তাদের জীবন । আজ সে স্তব্ধ হয়ে যায় সেই দিনের ঘটনা মনে করে।চোখেমুখে অন্ধকার ছেয়ে আসে তার।কি হয়েছিল সেদিন রাতে?

.

.

.

সেদিন রাতে মেঘনাকে ফোনে না পেয়ে যখন ভোর রাতে যখন মুগ্ধ বাসায় ফিরে সারাঘর হন্ন হয়ে মেঘনাকে খুজলেও সে মেঘনাকে কোথাও দেখতে পায়,না।হটাৎ করে তার চোখ যায় রান্না ঘরের দিকে।রান্নাঘরে যেয়ে দেখল রান্না ঘরের মেঝে রক্তে ভেজানো এক আলপোনা সৃষ্টি করেছিলো।সে মেঘনাকে এক বিধস্ত অবস্থায় আবিষ্কার করে। মেঘনাকে রক্তাঙ্ক অবস্থায় দেখে সে যেন স্তব্ধ হয়ে যায় নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের সামনে এরকম অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে সে যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলো।পাথরের ন্যায় দাড়িয়ে ছিলো।দ্রতই সে মেঘনাকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওয়ানা দিয়েছিলো।তার কাছে আজো অজানা সেদিন রাতে কে ছিলো সেখানে? কার জন্য মেঘনার আজ এ অবস্থা।

ভাবতেই চোখমুখ শক্ত হয়ে আসল তার।না কোনো মতেই না সে শাস্তি দেবে তাদের যারা মেঘনার বিধস্ত অবস্থার জন্য দ্বায়ী।

আজ তিন দিন হয়েছে মেঘনাকে রাজশাহী নিয়ে আসা হয়েছে। মুগ্ধ মেঘনাকে বাসায় না নিয়ে রাজশাহী নিয়ে এসেছে কেননা সে মেঘনাকে ঐ রাতে কথা মনে করাতে চায় না। এতে মেঘনার অবস্থার অবনতি ঘটবে।মেঘনা যে ভীষণ দূর্বল।তার সুস্থতাই এখন তার একমাত্র কাম্য।মেঘনার অতীত ভুলিয়ে রাখতে ডক্টর তাকে কড়া ডোজের কিছু ঔষধ দিয়েছে।এতে সাময়িক ভাবে তার কিছু ঘটনা মনে থাকবে না।
.

.

.

প্রকৃতি মন ভালো করে দেওয়া এক বিশস্ত বন্ধু। প্রকৃতির এই ঝলমলে রুপ যে কাউকে মুগ্ধ করতে বাধ্য।মেঘনা যেনো ভীষণভাবে মুগ্ধ হয়ে প্রকৃতির উপর। প্রকৃতি যেন তার সব খারাপ লাগাকে দূর করে দেয় এক মুহূর্তে। এত মানুষের ভাকোবাসা আর প্রকৃতি আবহাওয়া যেনো মেঘনাকে ক্ষনে ক্ষনে ঠিক করে দিয়েছে।বাড়ির কেউ তাকে একা ছাড়ে না।সর্ব মুহূর্ত তার সাথেই থাকে।এতে করে তার খারাপ লাগা যেনো আনন্দে ভরে ওঠে।

কিন্তু মেঘনা আজও মনে সেই রাতের ঘটনা।সেই রাতে সে নিজের বাচ্চা কে সে বাচাতে পারে নি।বুক ফেড়ে এক দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে। পাঁচ মাস গর্ভে ধারণ করে সে বাচ্চাকে না পাওয়ার বেদনা সে যেন ভুলতে পারেনা চিৎকার করে কারা শুরু করে কাঁদা শুরু করে সে।দুবার আত্মহত্যা করতে চেষ্টা ও করেছিলো।কিন্তু করে উঠতে পারে নি সে।আল্লাহ কে যে বড্ড ভয় হয় তার।

পুরো ক্ষত সারিয়ে না উঠতেই নতুন খবরের আবির্ভাব।সেই ঘটনার ১ বছর হয়ে গিয়েছে।সবাই পুরো সব কিছু ভুললেও ভোলেনি মেঘনা।এখনো সে রাতে কেঁদে উঠে।আল্লাহর কাছে আজহারি করে বাচ্চা হারানোর।রাতের আধারে আগের সেই মেঘনা যেনো আর নেই।মুগ্ধের সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।খুব তো চেষ্টা করেছিলো নিজের বউ বাচ্চার সাথ অন্যকারীদের শাস্তি দেওয়ার কিন্তু ফলাফল শূন্য।কোথাও সোহানের নাম ও চিহ্ন পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। সোহান কই গা ঢাকা দিয়ে বসে আছে তা জানা যায়নি এখনো।মুগ্ধ সমস্ত শক্তি লাগিয়ে দিয়েছে সোহানকে খোজার জন্য।কিন্তু সে হতাশ।

ইদনিং মেঘনার শরীরটা খারাপ লাগা শুরু করেছে।কোনো কিছু খেতে পারছে না।কোনো কাজ ঠিকমত করতে পারে না।মুগ্ধের সন্দেহ হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে খুশির খবর শুনতে পায়।মেঘনা আবারও মা হতে চলেছে।মেঘনার যেনো খুশির ঠিকানা নেই।এত কষ্টের পর তাহলে ভাগ্য কি তার দিকে মুখ তুলে তাকালো?

মেঘনা এখন রাজশাহীতেই তার পরিবারের সাথে থাকে।ভার্সিটি শেষ হওয়ার আর কিছু দিন বাকি। সামনেই ফাইনাল। মুগ্ধ সকল বইখাতা এনে দিয়েছে।তার তাকে পড়তে বলছে। কিন্তু এখন তার মোটেও পড়তে ভালোলাগে না। ঘনঘন মুড সুয়িং হয়।কিছু ভালো না লাগলে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে।আর মুগ্ধ যেনো তার বাচ্চামি দেখে হাসে এইত সেদিন রাত ১২ টার বেশি বাজে মেঘনা বায়না ধরেছে এখন ফুচকা খাবে। এত রাতে মুগ্ধ ফুচকা কই পাবে।মেঘনাকে হাজার বুঝিয়েও লাভ হলো না সে মুখ ফুলিয়ে বসে রইল।মেঘনার মুখ ফুলিয়ে বসে থাকা দেখে সে মেখনার বায়নার কাছে হার মানল। মেখনার ফুলিয়ে থাকা গাল গুলোতে চুমু দিয়ে বের হয়ে গেলো ফুচকার খোজে।মুগ্ধের এমন কান্ড দেখে মেখনা হেসে ফেলল। কিন্তু এত রাতে ফুচকা কই পাবে সে।হাজার খুজেও ফুচকা পেলো না কোথায়।খালি হাতে বাসায় ফিরে গেলো। ফুচকস না পেয়ে মেঘনা আরো জিদ করল। অগত্যা মুগ্ধ তার মাকে জাগাতে বাধ্য হলো।আর সেই রাতে ফুচকা বানাল।

মুগ্ধ নিজেও বাচ্চামি করে। এতই তো সেদিন বেবির সকল জামাকাপড় কিনে নিয়ে এসেছে।বাড়ির সবায় মাথায় হাত।সবে দুমাসে পড়ল।ছেলে না মেয়ে হবে তা না জেনে দুই আকমারি ভরে গিয়েছে এত জামা কাপড় নিয়ে এসেছে। বাড়ির সবাই তাদের বাচ্চামি দেখে হাসে। তারাও খুশি।এত বছর পর তাদের বাড়িতে নতুন অতিথি আসবে।

চলবে?

(আসসালামু আলাইকুম পাঠক মহল। ফিরে আসলাম আপনাদের #নব্যদিনের_সূচনার দ্বতীয় খন্ড নিয়ে।পার্টটি কেমন হয়েছে আশা করি সবাই মতমত দিবেন। আর হ্যা গল্পের নাম যেমন গল্পের সমাপ্তি অবশ্যই তেমনি হবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here