নব্যদিনের_সূচনা #দ্বিতীয়_পরিচ্ছদ 🍂হুমাইরা হুর 🍂 (২)

0
241

#নব্যদিনের_সূচনা
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছদ
🍂হুমাইরা হুর 🍂

(২)

–দেখ বাবা মেঘনা তোকে বাবা হওয়ার সুখ দিতে পারবে না। আমার মনে হয় তোর আরেকটা বিয়ে নেওয়া উঠিৎ।

–কিন্তু মা আমি মেঘকে ভালোবাসি।এই কষ্টের মুহূর্তে আমি যদি মেঘনার পাশে না থাকি তাহলে কে থাকবে? তুমি তো জানো মেঘনা কতটা অসহায়।তারপরও তুমি এ কথা বলছো?

–সন্তান হলো বংশপ্রদীপ। দেখ বাবা ছেলে মেয়ে নিয়ে আমি কোনেদিন ভেদাভেদ করি নি।তুই ও যেমন আমার কাছে কিয়াও তেমন।কিন্তু মেঘনা বাচ্চা হওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে পরপর দুবার মিসক্যারেজ হওয়ায় মেঘনা তোকে বাবা হওয়ার সুখ দিতে পারবে না।আমিও তো চাই আমাকে কেউ দাদি বলে ডাকুক।এই সংসার টা ভরে উঠুক।তুই আমার একমাত্র ছেলে।

–মা বাচ্চা না হলেও চলবে আমার।কত দম্পতি আছে যাদের বাচ্চা হয় না তবুও কি তারা একে অন্যের সাথে আছে।বাচ্চা না হোক আমরা দত্তক নিবো।

–ভেবে বলছিস তো? আমিও বলে দিলাম এ বাড়িতে অন্যের সন্তান আনবো না। এই বংশের সন্তান ই আনবো।আর তুই আরেক বিয়ে করবি,এটা আমার শেষ কথা।

মায়ের কথা শুনে মুগ্ধের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেল। চোখেমুখে রাগের আভাস কিন্তু মায়ের উপর এসে একটা কথা বলতে পারে না। মাথা নত করে চলে আসে সেখান থেকে। পাশে আড়াল থেকে এগুলো শুনছিল মেঘনা। চোখে ভরা জল।নিজের চোখের জল আড়াল করতে সে তার রুমে চলে গেলো।হয়তো তার সংসার আর হবে না।

কিন্তু মুগ্ধের মা তা দেখে ফেলল।মনে মনে বললেন,

আমি তো চেয়েছিলেন তুই আর মুগ্ধ সব সময় একসাথে থাকবি।আমার ভরা সংসার হবে। কিন্তু পরিস্থিতির কাছে আমি বাধ্য রে মেঘনা।আমি চাই আমার বংশ আগে বাড়ুক। আমার মুগ্ধের সন্তান আসুক।আদৌ আদৌ বুলিতে আমাকে দাদি বলুক।যাই হোক না কেন এ বংশের প্রদীপ আসবে।হ্যা আসবে।এর জন্য যাই করতে হোক আমি করব।

মেঘনা রুমে এসে অঝরে কান্না করতে থাকল।কেনো এমন হচ্ছে তার সাথে।পরপর দু সন্তান এর হরানো যে কতটা কষ্টের তা একজন মা ছাড়া কেউ জানে না। কই কালপর্যন্ত তো কাকিমা তাকে কত ভালোবাসত।কিন্তু আজ?

ঘরে এসে কান্নারত অবস্থায় মেঘনাকে দেখে মুগ্ধের বুকটা ধক করে উঠল।মেহেন্দি কান্নার অবস্থা দেখে তার বুকটা ধক করে উঠলো ভীষণ ভালোবেসে ছিলাম প্রথম সন্তানের মৃত্যুর পরে মেঘনা যতনে ভেঙে পড়েছিল তার থেকে বেশি এবার ভেঙে পড়েছে। মুগ্ধ যেয়ে মেঘনার পাশে নসল।মেঘনাকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরল। মুগ্ধ দেখল মেঘনা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। মেঘনার মুখটা তার দুই হাতের মধ্যে নিয়ে মেঘনার কপালে চুমু কেটে দিলো।এক হাত দিয়ে মেঘনার চোখের সমস্ত পানি মুঝে দিলো।শান্ত হতে বলল মেঘনাকে।আশ্বাস দিলো সে মেঘনাকে ছেড়ে যাবে না।

.
.
.
.
.

দিন যাচ্ছে মেঘনার শরীরের কন্ডিশন খারাপ হচ্ছিল।ডক্টর আগেই বলেছিলো পরপর তিন চার ছুড়ির আঘাতের কারনে মেঘনার প্রথম বাচ্চা মারা গিয়েছিলো।এতে তার জরায়ুতে সমস্যা ধরা পড়েছিলো।দ্বিতীয় বার কনসিভ করায় ডক্টর মেঘনাকে সাবধানে থাকতে বলেছিলেন।মেঘনাও সথেষ্ট সাবধান ছিলো এ বিষয়ে।কিন্তু তিন মাস পেরোতে না পেরোতেই হটাৎ একদিন মেঘনার পেটে ব্যাথা ওঠে।যন্ত্রণায় ছটপট করতে থাকে সে।কিয়া আপু রুমে এসে মেঘনাকে এমন অবস্থায় দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে যায়।তাড়াতাড়ি বাড়ির সবাইকে ডাকে।বাড়ির সবাই মিলে মেঘনাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।ডাক্তার জানায় প্রথমবার মিসক্যারেজ এর পর মেঘনার বাচ্চা ধারন ক্ষমতা কমে গিয়েছিলো।ফলে মেঘনা এত সর্তক থাকার পরও বাচ্চা ধারণ করায় জটিলতার সম্মুখীন হয়েছে।কিন্তু দ্বিতীয় বাচ্চারও মিসক্যারেজ হওয়ায় মেঘনার ধারন শক্তি অনেক আংশে কমে গিয়েছে।এখন তৃতীয় বার যদি মেঘনা কনসিভ করে তাহলে তার মৃত্যু হওয়ার সম্ভনা ৭০%।

ডাক্তারের কথা শুনে সকলের মুখে হাসি উরে গেলো।বিশেষ করে মুগ্ধে।এমনটা হবে কেউ ভাবতেই পরারে নি।

তিন দিন পর মেঘনাকে ডিসচার্জ দেওয়া হয়।কিন্তু মেঘনাকে কেউ জানায়নি তার বাচ্চাটা নেই। ডাক্তার ও বলেছে কিছুদিন পর জানাতে।কিন্তু বাড়িতে ফিরে আসার পর মুগ্ধের ময়ের আচরণ কঠিন হয়ে চলছিলো মেঘনার উপর। মেঘনা বুঝে উঠতে পারে নি কেনো এমন করছে সবাই।কিন্তু মুগ্ধের মা একদিন বলেই ওঠেন মেঘনার মিসক্যারেজের কথা।এতে মেঘনা যেনো পাথরের ন্যায় পরিণত হয়। কিছু দিন যেতে না যেতেই বিয়ে কথা শুনে মেঘনাকে যে নিজেকে ভুলে যায়।সে যে সহ্য করতে পারছে না এসকল কিছু।

.
.
.
.
.

অফিসের চাপ,মায়ের বিয়ের প্রতি প্রেসার,দিনশেষে বাড়ি ফিরলে মেঘনার নামে মায়ের কাছে হাজারো অভিযোগ যেনে মুগ্ধকে খিটখিটে করে তুলেছে।সকল কিছু তার এখন বিষাক্ত মনে হয়।মায়ের কথার উপর কথা বলতে না পারায় মুগ্ধ যেন চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।ইদানীং আবার তিনি বলছে বিয়ে না করলে তিনি খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিবেন।সব মিলিয়ে মুগ্ধ যেন খাপছাড়া হয়ে গিয়েছে।যার প্রভাব পড়ে মেঘনার উপর।মুগ্ধ নিজেও তা বুঝতে পারছে।কিন্তু সে জে ক্লান্ত।

এদিকে মুগ্ধের মা মেঘনাকে প্রতিনিয়ত বোঝাচ্ছে মুগ্ধের জন্য সে পার্ফেক্ট না। পদে পদে সে মেঘনাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে তার বাচ্চা না হওয়ার কথা।মেঘনাকে বলছে মুগ্ধ কে আরেক বিয়ে করানোর জন্য রাজি করানোর জন্য।বংশের জন্য সন্তান প্রয়োজন। মেঘনাও যেনো বিরক্ত তার জীবন নিয়ে।

তিনি আরো বলছেন মেঘনাকে তিনি মুগ্ধের বিয়ের পর সে তার মেয়ে হয়ে এ বাড়িতে থাকবে।

দিন যাচ্ছে আর মুগ্ধের আচার আচরণ মেঘনাকে ভাবিয়ে তুলছে।মুগ্ধ এখন মেখনাকে সময় দিচ্ছে না।খাপছাড়া দিন পার করছে সে।মেঘনার সাথে খিটখিটে আচরণ করছে। আগের মত সম্পর্কে মাধুর্যতা নেই আছে তিক্ততা।মেঘনা ভালো আচ্ছা সন্তান ছাড়া কি সুখি হওয়া যায় না? আমার সাথে এমন হচ্ছে কারণ আমি সন্তানহীনা?কোনো মেয়েই তার স্বামীর ভাগ দিতে পারে না।কিন্তু আজ মেঘনা পরিস্থিতির স্বীকার। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কঠিন সিদ্ধান্ত।

মুগ্ধ যদি চায় সে মুগ্ধ কে মুক্ত করে দিবে।মেঘনা আজ নীল সাড়ি,নীল চুড়ি,চোখে টানা কাজল পড়ে রেডি হয়েছে।প্রতিনিয়ত ঝগড়াতে ক্লান্ত সে।হয় সম্পর্ক ঠিক করবে না হয়,

মায়ের প্যাচক্যাচানি শুনে মেজাজ চড়া হয়ে গিয়েছিলো মুগ্ধে।বাসায় ফিরে যেনো শান্তি পায় না সে আর। মেঘনার মায়া ভরা মুখ দেখেও যেন এখন তার ক্লান্তি দুর হয় না।ঘরে প্রবেশ করে মেঘনার মোহনীয় রুপ দেখেও যেনো তার উপর কোনো প্রভাব ফেলল না।নীরবে পাশ কাটিয়ে চলে গেল সে।বিরক্তি তার আকাশ ছুঁইছুঁই। মেঘনা ভেবে নেয় এমন যদি বাচ্চার কারনে হয় তাহলে সে মুগ্ধ কে বিয়ে করতে বলবে।সাজানো সংসার অন্যের হাতে তুলে দিবে।মুগ্ধ বাথরুম থেকে বের হয়ে বিছায়া গিয়ে বসল।মাথায় হাত রেখে চোখ বুজে রইল।মেঘনা মুখের কাছে গিয়ে বলল তাকে আরেকটা বিয়ে করে নেওয়ার কথা।সে তো আর বাবা হওয়ার সুখ তাকে দিতে পারবে না।

কথাটা শুনে মুগ্ধের মাথাটা যেন গরম হয়ে গেল।ঠাটিয়ে একটা চড় মাড়ল মেঘনাকে।দুরে সরে যেত বলল সে মেঘনাকে।রুম থেকে বেড় হয়ে গেলো সে।
আকষ্মিক চড় খেয়ে মেঘনা যেন হতভম্ব হয়ে গেলো।সে ভাবতেও পারেনি মুগ্ধ এত রিয়েক্ট করবে।চোখ থেকে টপটপ পানি পড়তে লাগল।

আজ সারাদিন মুগ্ধের মা খাবার খায় নি।বাড়ির সবাই তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। মুগ্ধ আর মেঘনাও অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। তার একটাই কথা সেটা হলো বংশের প্রদীপ। সেই জন্য মুগ্ধের বিয়ে দিবে সে। দুই দিন পার হয়ে গেলেও মুগ্ধের মা কিছু খেলো না।পরিস্থিতি পরিস্থিতি হাতে নেই দেখে মুগ্ধ চিৎকার করে বলে উঠলো ,

চলবে?
(আসসালামু আলাইকুম পাঠক মহল। আপনাদের রেসপন্স দেখে আমি আশাহত।তারপরও গল্প দিচ্ছি। অনেকে জিগ্যেস করেছেন এটি কাল্পনিক নাকি বাস্তব ঘটনার উপর।সত্যি কথা বলতে প্রথম দিকে ঘটনা কিছু কাল্পনিক পরে সব বাস্তবিক।আমার এক পরিচিত আন্টির জীবনের ঘটনার কিছু অংশ। সেটাই সাজিয়ে গুছিয়ে লেখার প্রচেষ্ঠা।ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here