#নব্যদিনের_সূচনা
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছদ
🍂হুমাইরা হুর🍂
(৩)
ভোরের আমেজ কেটে গিয়ে নব্য দুপুরের সূচনা। রৌদ্রস্নাত হয়ে আছে চারিপাশ।আধখোলা জানলা দিয়ে রোদ মুখে এসে পড়ছে মেঘনার।রৌদের গুলো যেনো ছুয়ে দিচ্ছে তাকে।দুপুরের রোদটাও যেন মিষ্টি লাগছে তার কাছে। মেঘনাকে দেখে তার যেনো সিগ্ধময়ী মনে হলো।মেঘনার কাছে গিয়ে কোমর জরিয়ে ধরল।মুখটা মেখনার কাধ বরাবর স্পর্শ করালো।
পরিচিত স্পর্শ পেয়ে মেঘনার বুঝতে বাকি রইল না কে তার সন্নিকটে। তবুও নিরাবতা পালন করল।
মেঘনাকে চুপ করে থাকতে দেখে মুগ্ধ বলে উঠল,
–রাগ করেছ বুঝি বউ। উফ ছুটির দিনে তুমিও কথা বলছেন না এটা কি ঠিক? এটা কি মানা যায় বলো বউ? ওই বউ একটু কাছে আসবে তানা বউ এখানে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে তাও আবার অভিমানের পাল্লা ভারী করে।
মুগ্ধের কথা শুনে মেঘনার চোখের বাধ ভেঙে গেলো।মুগ্ধ কে জাপটে ঝরে কান্না করতে লাগল।মুগ্ধ যেনো মোটেও প্রস্তুত ছিলো না এজন্য।
মেঘনা কান্না মাখা গলায় বলে উঠল মুগ্ধ কে ছাড়া সে বাঁচবে না।মরে যাবে সে।আমি সব কিছু ভাগ দিতে পারি কিন্তু তোমার না।
কথা শুনে মুগ্ধ বুঝতে পারল হয়েছেটা কি।মুগ্ধ মেঘনাকে জরিয়ে ধরে বলল সব ঠিক হয়ে যাবে।আমাদের কোন আলো করে সন্তান আসবে।আর আমি সব সময় তোমার পাশে আছি।
তখনই ই কেউ দরজার কড়া নাড়ল। আরিসা বেগম মুগ্ধ ডেকেছেন।কথাটা শুনে মেঘনার বুকটা ধক করে উঠল।আবারও কি নতুন বিপদের আগমন? তবে?
.
.
.
.
.
.
.
মুগ্ধের অনেক বোঝানোর ফলে মুগ্ধের মা শান্ত হয়েছেন।বেশকিছু দিন যাবত নিরাবতা ছেয়ে গেছে পুরো বাড়িতে।কেউ মেঘনার সাথে তেমন ভালো ব্যবহার করে না।এমন কি কিয়া আপু না।কেননা সেও চায় বাড়িতে নতুন বৌ আসুক।মুগ্ধের সন্তান আসুক।বাড়ির বংশধর আসুক। মেঘনা ভাবে আদৌকি এরা সেই মানুষগুলোই যারা তাকে একদিন অনেক ভালোবাসত।
তবে সেদিনের পর থেকে মুগ্ধ আর মেঘনার সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছে।মুগ্ধ এখন মেঘনাকে যথেষ্ট সময় দেয়।অবহেলা করে না।কিন্তু মুগ্ধের মা মেঘনাকে বার বার মুগ্ধের দ্বিতীয় বিয়ের কথা বলে।এতে মেঘনা মানষিক ভাবে বেশ অশান্তিতেই রয়েছে।তবে মুগ্ধকে এসব কিছু জানায় নি সে।
আরিসা বেগম অর্থাৎ মুগ্ধের মা চুপচাপ থাকলেও ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার জন্য মেয়ে খুজছেন। একবার সুন্দর গুণবতী একটা ভালো মেয়ে পাক।মুগ্ধ কে বুঝিয়ে সুজিয়ে না হয় বিয়ে দিয়ে দিবেন।পরে নতুন বৌমাকে বলবেন বংশ বাড়াতে।আর মেঘনা না হয় থাকল ঘরের কোনো এক কোণে।
আরিসা বেগমের তার বান্ধবীর মনিরার মেয়ে মিরাকে যথেষ্ট পছন্দ পছন্দ হয়েছে।যেমন দুধে আলতা রং,মুখের কাটিং ও মাশাল্লাহ। ছেলে তার একবার এই মেয়েকে দেখলে নিশ্চয়ই তার এ মেয়ে পছন্দ হবে । পরে মেঘনার দিকে সে তাকাবেও না।মেঘনার চেয়ে এ মেয়ে লক্ষ গুণ সুন্দরী। বান্ধবীর সাথে কথা বলে এ মেয়ের সাথেই তিনি মুগ্ধে বিয়ে দিবেন।
মনিরা যথেষ্ট লোভী প্রকৃতি মানুষ।তিনি আগে থেকেই চাইতেন তার মেয়েকে মুগ্ধের সাথে বিয়ে দেবেন।কিন্তু মাঝখানকে মেঘনা এসে জুটে বসল।কিন্তু আরিসা বেগমের কথা শুনে তার মনে লোভের দানা আবারও বইতে শুরু করবেন।তার মেয়ের সাথে বাড়ির এক মাত্র ছেলের বিয়ে হলে সব সম্পত্তি তাদের হবে।প্রথম বৌ আছে তাতে কি? তার মেয়ে যথেষ্ট রূপবতী। প্রথম বৌকে না হয় পরে বাড়ি থেকে বের করে দিবে।এসব ভেবে মনিরা বেগম ও মানা করতে পারলেন না।
আজ আরিসা বেগম মনিরা এবং তার মেয়েকে ডেকেছেন।সম্ভব হলে আজকে কেই আংটি পড়িয়ে দিবেন মুগ্ধ কে আজকে অফিসে যেতে মানা করেছেন।
সোফায় বসে আছে আরিসা বেগম আর মনিরা। দুজনে খোজগল্পে জমে আছে।আর তার মেয়ে মিরা চুপচাপ বসে আছে। মুগ্ধ আর মেঘনা নিচে নামতেই আরিসা বেগম তাদের কে সোফায় বসালেন।মুগ্ধ আর মেঘনা কেউ এ সম্পর্কে এখনও আচ করতে পারেনি। মেঘনা দেখল অসম্ভব রূপবতী এক কন্যা বসে আছে।তার পোশাক আশাক এ তেমন জাকজমক নেই।সাধারণ একটা কুর্তী পড়ে আছে তাতেই খুব মায়াবী লাগছে।
মেয়েকে কেমন লাগল? কথা শুনেতেই ভড়কে গেলো মুগ্ধ। সব কফি মুখে নিয়েছিলো সে।মায়ের কাছে এ কথা আশা করে নি সে। স্বাভাবিক স্বরেই উওর দিয়েছিলো ভালো।কিন্তু এ কথায় যে তার কাল হয়ে দাড়াবে সে তার স্বপ্নেও তা ভাবতে পারে নি। তার মা খুশি হয়ে নিজের হাতে পড়ে থাকা আংটি টা মিরাকে পড়িয়ে দিলেন। আরিসা বেগমের কথায় বুঝতে পারল মেঘনা সে মুগ্ধের বৌ হিসেবে তিনি এই মেয়েকেই পছন্দ করেছেন।মেঘনা দেখল মুগ্ধ এ মেয়ের সাথে যেনো মানায়।আর মুগ্ধ ও সম্মতি দিয়েছে।ভাবতেই চোখ দুটো ভরে গেলো তার পানিতে।
মায়ের এহেম কান্ড দেখে হতভাগ হয়ে গেলো মুগ্ধ। সে বুঝতেই পারে নি তার মা এমন খেলা খেলবে তার সাথে।মেঘনার দিকে তাকিয়ে দেখল মেয়েটার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।
মেঘনা ছুটে গেলো তার রুমের দিকে।ঘটনার আষ্মিকতায় মুগ্ধ বুঝতে পারল না হলো টা কি?
মেঘনাকে এমন কান্নারত অবস্থা ছুটতে দেখে মুগ্ধ ও ছুটতে লাগল মেঘনার পিছন পিছন।কিন্তু বাধা সাধল তার বাবা।মুগ্ধ হুংকার দিয়ে বলে উঠল,
-যে বাড়িতে আমাকে এবং আমার বউকে বাচ্চার জন্য প্রতিনিয়ত হেনস্তা করা হয় সেই বাড়ি তে আমি আর এক মুহুর্তেও থাকতে চাই না বাবা।
চিৎকার করে বলতে লাগল মুগ্ধ। মুগ্ধের বাবা এরূপ কথা শুনে অবাক শীর্ষ পর্যায়ে চলে গেলেন। তিনি তো কখনো এ ব্যাপার নিয়ে কথা পর্যন্ত তোলেন নি।
–দেখো মুগ্ধ তুমি কিন্তু এখন বাড়াবাড়ি করছ। আমি তোমাকে আর তোমার বউকে নিয়ে এ ব্যাপারে কিছু বলেছি?
–তুমি বলনি বাবা কিন্তু তোমাদের আচরণ আমাকে ক্ষণে ক্ষণে তা বুঝিয়ে দিচ্ছে। কি ভেবেছো?এগুলো জানলাম কিভাবে? বাবা আমি এখন ছোট নেই।যথেষ্ট বড় হয়ে গিয়েছে।আল্লাহ সহায় হলে এতদিন দুই সন্তানের বাবা হতাম। কিন্তু তোমরা প্রতিনিয়ত মেঘনাকে মানষিক ভাবে হেনস্তা করে যাচ্ছ।
–সন্তান আল্লাহর দান।আল্লাহ যদি না চান তাহলে কিভাবে আমাদের সন্তান হবে।তাই বলে যে আমাকে বিয়ে করতে হবে তার কোনো কথা নেই।
–তাহলে তুৃমি কেনো মায়ের কথায় মত দিয়েছিলে? কি করে পারলে এমনটা করতে আমার সাথে? আরে ঐ তো তোমার আপন ভাইয়ের মেয়ে তারপর ও?
মুগ্ধের বাবা কিছু বলতে পারলেন না।রাগান্বিত চোখে আরিসা বেগমের দিকে তাকিয়ে রইলেন।শান্ত স্বরে বলে উঠলেন,
–তুমি হয়তো ভুলে গেছো মেঘনার সাথে আমি কেনো তোমায় বিয়ে দিয়েছিলাম।তারপরও তুমি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছো?
–হ্যা করছি।মেঘনার সাথে আমাকে বিয়ে দিয়েছিলে কেননা তোমার নজর মেঘনার সম্পত্তির উপর ছিলো।আর আমার সাথে বিয়ে দিয়েছো শুধুমাত্র সম্পত্তির লোভে।এত বিশাল সম্পত্তির যেনো অন্যের ঘরে না যায় সেজন্য তুমি মেঘনাকে আমার সাথে বিয়ে দিয়েছো।না হলে মেঘনাকে তুমি এ বাড়িতে আশ্রয় পর্যন্ত দিতে না।
–তুমি এখন অস্বীকার করতে চায়ছো যে তুমি লোভে পড়ে বিয়ে করোনি?
–হ্যাঁ আমি লোভে পড়ে বিয়ে করেছি মানছি। তুমি তোমার কসম দিয়ে বিয়ে করিয়েছো তাও মানছি।তবুও কেন এখন মেঘনাকে আমার জীবনকে সরাতে চাইচো? কেনো?
হটাৎ মুগ্ধের চোখ পড়ল দরজার পাশে দাড়িয়ে থাকা এক কান্না রত রমনীর দিকে? তবে কি মেঘনা শুনে ফেলেছে সব?
চলবে?
( লেখার মনমানসিকতা নেই।ছোট ভাই অসুস্থ প্রচন্ড জ্বর আজ চারদিন যাবৎ।সবাই দোয়া করবেন।আসসালামু আলাইকুম )