নব্যদিনের_সূচনা #দ্বিতীয় পরিচ্ছদ 🍂হুমাইরা হুর🍂 (৫)

0
387

#নব্যদিনের_সূচনা
#দ্বিতীয় পরিচ্ছদ
🍂হুমাইরা হুর🍂

(৫)

শান্ত প্রহরে উচ্চস্বর যেনো বিরক্তিকর। মেঘনার শশুর বাড়ি আর লোকজন মেঘনার মাকে দেখে যেনো নিজেদের নূন্যতম সেন্স হারিয়ে ফেলেছে।মেঘনার মার উপস্থিতি তারা চায়নি এখানে।তারা কোথায় অবস্থান করছে তার বিন্দু মাত্র রেশ কারো মাঝে নেই।ক্রমাগত চেচামেচি করেই যাচ্ছে তারা।বেশ বিরক্ত লাগছে মেঘনার কাছে এগুলো।মেঘনার উপস্থিত যেনো কেউ গ্রাহ্য করছে না।সকলে মেতে আছে চেঁচামেচি নিয়ে।

মুগ্ধ পরিস্থিতি বেসামাল দেখে তাদের থামাল।মুগ্ধ মুনিয়া বেগমকে জানিয়েছে সে মেঘনার স্বামী সাথে মেঘনার চাচাত ভাইও।সকল ঘটনা শুনে মুনিয়া বেগম হকচকিয়ে গেলেন।তিনি ভাবতেও পারেন নি তার মেয়ের সাথে এতটা কিছু ঘটে গিয়েছে। মেঘনার যে সময়টায় তাকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিলো সে সময় তিনি মেঘনার কোনো কথা শোনেন নি। ভালোবাসায় এতটা অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি কোনটা সঠিক কোনটা অন্যায় তার পরখ করেন নি তিনি।মেঘনাকে দোষারোপ করেছেন। সেদিন যদি মেঘনার কথা শুনতেন, মেয়েকে আগলে নিতেন তাহলে মেঘনার আজ এভাবে থাকত না।হয়ত তার জীবনটা আরোও সুন্দর হতো।নিজেকে তার দোষী মনে হচ্ছে। আজ তার জন্য মেঘনার এই পরিণতি।

মেঘনাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে।মুনিয়াও মেঘনার সাথে এসেছে।মুগ্ধের মা অনিচ্ছার সত্ত্বেও মুনিয়া কে থাকতে বলেছেন। মেঘনা চুপচাপ ঘরের এক কোণে বসে থাকে।তার মুখ থেকে একটা কথাও কেউ শোনে না।মেঘনার এ অবস্থার জন্য মুগ্ধ দায়ী।মুগ্ধ হাজার বার মেঘনার কাছে গেলে সে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।

মেঘনার নিজ জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা ধরে গিয়েছে।যেখানে মায়ই আপন ছিলো না সেখানে সবাইতো আর আপন না। সে কঠিন সিদ্ধান্ত নিলো এবার।সে নিজের জীবন রাখবে না। এতে করে সে নামক ঝামেলা সকলের জীবন থেকে চির তরে হারিয়ে যাবে।যেই সিদ্ধান্ত সেই মেঘনা নিজের মনকে স্থির করে ফেলল। মেঘনার রুমে কেউ না থাকায় তার আরো সুবিধা হলো।নিজের পরনের ওরণাটা ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে গিট্টু দিয়ে নিলো।এবার সে শেষ করে দেবে নিজেকে।ভুলে যাবে কালো অতীতকে। চারপাশ দেখে নিলো। পাশের টুল এনে তার উপর দাড়িয়ে ওরনাটা গলায় পেঁচিয়ে নিলো।আর কয়েক মুহুর্ত সে নামক কোনো ছায়া থাকবে না।

কিভাবে মেঘনাকে মানানো যায় তা ভাবছিলো মুগ্ধ। মুগ্ধ মেঘনার রুমে বেশ কয়েকবার নক করলো।কিন্তু ঘেঘনার কোনো সাড়া শব্দ পাচ্ছিল না।তাই বিনা নকে ঢুকে গেলে দেখতে পায় মেঘনার ঝুলন্ত দেহ।যা দেহে হ্রদয়ে এ শীতল বায়ু প্রবাহিত হয়ে যায় মুগ্ধ। দুদন্ড দেরি না করে মেঘনাকে যে ওরনার বাধন থেকে মুগ্ধ করে। মুগ্ধ যখন রুমে প্রবেশ করেছিলো তখন সবে মেঘনা টুল টা ধাক্কা দিয়েছিলো।তাই এতে বেশি ক্ষতি হয়নি মেঘনার।

মেঘনাকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো মুগ্ধ। জান যায় যায় এমন একটা অবস্থা তার।বুক থেকে শরীয়ে মেঘনাকে ঠাটিয়ে চড় মারল সে।মুগ্ধ চড় খেয়ে মেঘনা চুপটি করে বসল।মুগ্ধ বল,

‘বিয়াদ্দপ মেয়ে? ভয় করে না? বার বার আত্মহত্যা করতে চাও? ভয় নেই নাকি তোমার? জানো না আত্মহত্যা মহাপাপ।পরকালের জীবনের উপর মায়া নেই তোমার? সাময়িক মুক্তির জন্য আজ এমন করলে? পরকালে কি আরামে থাকবে? সেখানে আগুন দিয়ে ঝলসে ঝাবে।আত্মহত্যাকারীরদের আল্লাহ পছন্দ করেন না।আর বার বার এমন করে কি প্রমাণ করতে চায়ছো তুমি?’

মুগ্ধের কথা শুনে মেঘনা কান্না শুরু করছিলো।শয়তানের প্রশয়ে সে ভালো খারাপ সব ভুলে গিয়েছিলো।কোনটা ঠিক কোনটা অন্যায় তাও ভুলে গিয়েছিলো।তার এ পদক্ষেপ নেওয়া মোটেও উঠিৎ হয় নি। যদি মুগ্ধ একটু দেরি করে আসত হবে?

মেঘনাকে চিন্তারত অবস্থায় দেখে মুগ্ধ মেঘনাকে চরম আবেশে জরিয়ে ধরল।আর বলল,

দেখো তোমাকে চিনি সেই দিন থেকে যেদিন তুমি ফোন রেখে আসেছিলে।ভার্সিটিতে দেখে আস্তে আস্তে তোমার প্রেমে পড়ে যাই আমি। কিন্তু যখন জানতে পারি তুমি আমার চাচাত বোন অবাক হয়ে যাই।বাবা যখন বলল তোমায় বিয়ে করতে হবে। আমি তো সেই খুশি।ভালোবাসার মানুষটাকে পাবো।কিন্তু বাবার আসল উদ্দেশ্য তখন জানতে পারি যখন তুমি প্রথম বার গর্ভবতী ছিলে।নিজেকে অসহায় লাগছিলো। ততদিনে তোমাকে আমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসেছিলাম।তাই তোমাকে এসব বিষয়ে কিছু জানাইনি। কিন্তু আমি ভাবতেই পারি নি সত্যিটা এভাবে সামনে আসবে।

‘মেঘনা আমি তোমাকে ভালোবাসি। কোনেদিন কাউকে ভালোবাসবো না।তুমি আমার শেষ ভালোবাসা’বলে মেঘনাকে জরিয়ে ধরল।

পরিশিষ্টঃ

দেখতে দেখতে বিয়ের দশটা বছর কেটে গিয়েছে।সেদিনের পর নব্যদিনের সূচনা ঘটেছে মেঘনার জীবনে। এখন তারা দেশে থাকে না।তারা রাশিয়াতে অবস্থান করছে।মেঘনা এখন রাশিয়ার একটি স্কুলে পড়ায়। মেঘনা ও মুগ্ধের মেয়ে নয়না। নয়নার বয়স চার বছর।অনেক সাধনার পর নয়না আজ তাদের কাছে।আজ নয়নার জন্মদিন। সারাঘর আলোকিত করে রাখে নয়না।আদৌ আদৌ বুলিতে সারা ঘর ছেয়ে যায়।

মাঝে মাঝে মেঘনা ভাবে তার জীবনে এত কষ্ট আগে না আসলে হয়ত সুখে এ দিনগুলো আসত না তার জীবনে।মেঘনাকে ভাবতে দেখে মুগ্ধ তাকে আলতো করে জরিয়ে ধরে।পার করে একের পর এক রজনী।

মুগ্ধের বাবা মারা গিয়েছে।মেঘনার সৎ বাবা আজ পচে গলে এক বস্তুির ভিতর অবস্থান করছে।হয়ত নিয়ত ভালো হলে আজ তার পরিনতি ভিন্ন হত।

আর সোহান নামক সেই কালোছায়ার অস্তিত্ব যেনো আজও পাওয়া যায় নি। সে রাতে কথা যেনো আজও কিছু অজানা।

সমাপ্ত…

(গল্পটার সাথে এতদিন থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।অনেকে হয়ত প্রশ্ন করবেন সোহানের পরিণতি কি? আসলেই কি বাংলাদেশ পরিণতি পাওয়া যায় সকল অন্যায়ের।তাই একটু পরিণতিহীন রাখলাম বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here