বইছে আবার চৈতী হাওয়া ৫৮

0
315

বইছে আবার চৈতী হাওয়া
৫৮
আশিকের পরীক্ষা শুরু হতে আর দশ দিন বাকী। এখন আর কেউ গ্রুপ স্টাডি করছে না। যে যার মতো পড়ছে। ভোর হতেই ও উঠে অফিসে চলে যায়। মীরা হয়ত তখনো ঘুমে। সকালে ক্লাসে যাবার আগে মীরা একবার আসে, সঙ্গে করে ব্রেকফাস্ট নিয়ে আসে। দুজনে একসঙ্গে নাস্তা খায়। তারপর মীরা চা করে। ছাদ বারান্দায় দাঁড়িয়ে চা খেতে খেতে গল্প হয় কতক্ষণ। মাঝে মাঝে মীরা ক্লাস শেষ করেও আসে। দুজনে একসঙ্গে লাঞ্চ করে। আশিকের মাঝে মাঝে মনে হয় এগুলি সত্যি নয়। পুরোটাই একটা স্বপ্ন। এই হয়ত চোখ খুলে দেখবে ক্যম্পাসের গলি ঘুপছিতে কোথাও পড়ে আছে একদল ছেলের সঙ্গে। সেই ভবঘুড়ে জীবনটার জন্য কখনো আফসোস হয়না আশিকের। সেসময় এক আপার স্বাধীনতা ছিল এটা সত্যি কিন্তু বুকের ভিতর ছিল এক প্রকান্ড শূন্যতার গহবর। মীরা এসে কি করে যেন সেটা একেবারে কানায় কানায় পূর্ণ করে দিয়েছে।

প্রথম পরীক্ষার দিন প্রায় দুমাস পর শুভর সঙ্গে দেখা হল আশিকের। একবার চোখাচোখি হলে ও চোখ ফিরিয়ে নিল। কথা হল না কোন। শুভ অবশ্য কারো সঙ্গেই কথা বলল না। প্রতিদিনই পরীক্ষা শুরু হবার পর হলে ঢোকে, আবার সবার আগে শেষ করে বেরিয়ে যায়। আশিক ইচ্ছা করেই আর ঘাটায় না। শেষ দিন ফোনে ও বলেছিল, মীরা কিংবা আশিকের কোন ব্যপারে ও আর থাকতে চায় না। যতটা নির্লিপ্ত ভাব দেখিয়েছিল ততোটাও বোধহয় হতে পারেনি। কারন ওই ঘটনার পর ও বাবা মায়ের সঙ্গে দেশের বাইরে চলে গিয়েছিল বলে শোনা গেছে। পরীক্ষার জন্য দুদিন আগে ফিরেছে।

আশিকের পরীক্ষা এবার বেশ ভাল হচ্ছে। এমনিতে ও সারাবছর পড়াশোনা করে না। ক্লাস ও মিস করে প্রচুর, তবে গ্রুপ স্টাডিটা ওর খুব কাজে দেয়। এর পর নিজে একটু পড়লেই মোটামটি উৎরে যায়। তাছাড়া আশিকের লেখার হাত ভাল। অনুবাদ নিয়ে কাজ করার দরুন ভাষার উপর দখলটাও পর্যাপ্ত। সবচেয়ে বড় কথা এবার মীরা ওর খুব যত্ন করছে। সাধারনত পরীক্ষা শুরু হবার পর ওর আর পড়াশোনা করতে ইচ্ছা করেনা। একটা পরীক্ষা শেষ করে আর পরেরটার জন্য পড়তে ভাল লাগে না। আগেতো এমন ও হয়েছে পরের পরীক্ষার আগে ও দুদিনের জন্য ঢাকার বাইরে চলে গিয়েছিল। একবারে পরীক্ষার দিন সকালে ফিরেছে। কিন্তু এবার সেসব কিছুই হচ্ছে না। যেদিন পরীক্ষা থাকে মীরা ওকে আর কোথাও যেতে দেয় না। পরদিন সকাল থেকে আবার অফিসে পাঠিয়ে দেয় পড়তে। ফোন করে খোজ নেয়। নিজে আসতে না পারলে বাড়ি থেকে দুপুরের খাবার পাঠিয়ে দেয়।

আশিকের পরীক্ষা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। ঠিক হয়েছে পরীক্ষার পর ওদের রিসেপসান হবে। মীরার বড় চাচা অবশ্য বলেছিলেন বিয়ের দুমাস হয়ে গেছে একবার এখান থেকে বেড়িয়ে যেতে। আশিক এখন না পারলে অন্তত মীরা কদিনের জন্য এসে ঘুরে যাক। পরীক্ষার জন্য আশিকের পক্ষে যাওয়া সম্ভব না আর ওকে ফেলে একা যেতে মীরার মন চাইল না। ও জানিয়ে দিল রিসেপসানের পর দুজন এক সঙ্গেই যাবে।

আজ পহেলা বৈশাখ। ডিপার্টমেন্টে বেশ জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান হচ্ছে। আশিকরা পরীক্ষার্থী, তাই নতুন ফাইনাল ইয়ার আয়োজন করছে। মীরার যেতে মন চাইল না। ঘুম থেকে উঠে ও দেখল আশিক বেরিয়ে গেছে। মীরা একবার আফসিনের রুমে উকি দিল। মেয়েটার গলদঘর্ম অবস্থা। একগাদা জামা কাপড় বের করে বিছানার উপর ছড়িয়ে রেখেছে। মিরা ভেতরে ঢুকে বললো
– তুমি প্রোগ্রামে যাচ্ছো আফসিন?
– হ্যাঁ ভাবি
– এতসব ড্রেস বের করেছো কেন?
– কোনটা পরবো বুঝতে পারছি না
– তুমি ড্রেস পড়বে কেন? শাড়ি পড়ে যাও। আজকে তো সবাই শাড়ি পরবে
আফসিন মন খারাপ করা গলায় বলল
– আমি ঠিক মতন শাড়ি পড়তে পারি না। তাছাড়া এক্সেসরিজ ও কিছু রেডি নেই
– আমি পরিয়ে দিচ্ছি। সমস্যা নেই
আলমারি খুলে মীরা অবাক হয়ে গেল। বেশ অনেকগুলো লাল সাদা শাড়ি। এগুলো রেখে বোকা মেয়েটা ড্রেস পরতে যাচ্ছিল। মিরা একটা অফ হোয়াইট আর সাদা মনিপুরী তাতের শাড়ি বের করল। আফসিনকে শাড়ি পরানোর পর ও নিজের ঘর থেকে নিজের বানানো গহনার বাক্সটা নিয়ে এলো। সাদা আর লালের উপর করা একটা সেট ওকে পরিয়ে দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়েও দিল। মেয়েটা দেখতে এত মিষ্টি অথচ ভালো মতো সাজতেই পারেনা। নিজেকে দেখে আফসিন অবাক হয়ে বলল
– আমাকে তো চেনাই যাচ্ছে না
– অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে। তুমি আমাকে আগে বলনি কেন?

আফসিন একটু লজ্জা পেয়ে বলল
– এমনিই। ভাবলাম তুমি ব্যস্ত, তাই
– আরে ধ্যত। আমাকে আগে বললে আমি তোমাকে মেহেদী ও পরিয়ে দিতাম
– তুমি মেহেদী ও পরাতে পারো?
– হু, পারি তো। আজকে রাতে তোমাকে পরিয়ে দেব
– আচ্ছা। এত সব গয়না কার ভাবি?
– আমার। আমার একটা গয়নার পেজ আছে। “পলকা ডট” নাম । ওখান থেকেই সেল করি
– বল কি? আমি তো জানতামই না। তোমার পেজ এর লিঙ্ক দিও। আমার ফ্রেন্ডদের দেব।
– আচ্ছা, পাঠিয়ে দেব। তুমি ছাতা আর পানির বোতল নিয়ে যাও। আজকে অনেক গরম
আফসিন মীরাকে জড়িয়ে ধরে বলল
– থ্যঙ্ক ইউ ভাবী।
মীরা কিছু বলল না। হাসলো একটু।
– তুমি কোথাও যাবে না?
– তোমার ভাইয়া এলে বিকেলে একসাথে বের হব।
আফসিন চোখ টিপে দুষ্টামির হাসি হেসে চলে গেল।

আফসিন বেরিয়ে যাবার পর বহুদিন পর মীরা ওর পেইজটা ওপেন করল। বেশ অনেকগুলো ভাল রিভিউ এসেছে। অনেকেই নক করেছিল বৈশাখ অফারের জন্য। অনেকদিন মীরা একেবারেই সময় দেয়নি। শুধু পেজ না বাড়ীতেও আজকাল কথা হয় খুব কম। হঠাত করেই বাড়ীর কথা খুব মনে পড়তে লাগল। ওখানে থাকতে প্রতি বছর ওরা তিন বোন সৌরভের সঙ্গে বৈশাখী মেলায় যেত। আজ সুমনার জন্মদিন। ওকে উইশ ও করা হয়েনি এখন পর্যন্ত। মীরা সুমনাকে একবার ফোন দিল। ধরল না। হয়ত ব্যস্ত। মীরা ফোন রেখে ওর গয়নার ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে গেল।

আশিক আজ একটু তাড়াতাড়িই ফিরল। মিরাকে নিয়ে বাইরে যাবে বলেছে। ঘরের দরজায় পা দিয়ে ও থমকে গেল। মিরা ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলছে। একটা শব্দই শুধু আশিকের কানে এলো
“ শুভ “

চলবে……

আগামী তিন দিন খুব ব্যস্ত থাকব। পরের পর্ব দিতে দেরী হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here