#গল্পঃ_অন্যরকম_প্রেমানুভূতী
#Maisha_jannat_nura (লেখিকা)
#পর্ব_১০
তীব্র তৃপ্তিকে জরুরী কাজের কথা বলে রুম থেকে বের হয়ে কাওকে কল করে।
.
অন্ধকার একটি রুমে সেন্সলেস অবস্থায় চেয়ারের সাথে হাত-পা বেধে রাখা হয়েছে আবির চৌধুরীকে, বেশ কিছু সময় কেটে যাওয়ার পর সেন্স ফেরে আবিরের, আস্তে আস্তে চোখ মেলার চেষ্টা করছে মাথাটা যেন ভার হয়ে আছে, চোখ মেলে নিজেকে একটি অন্ধকার রুমে বাধা অবস্থায় দেখতে পেয়ে অনেক ঘারড়ে যায় আবির। চিৎকার করে সাহায্য চাইবে তার ও উপায় নেই মুখ বেধে রেখেছে ওর, নিজেকে বাধা অবস্থা থেকে ছুটানোর জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় সে, একটা সময় ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেয়।
.
[ফ্লাশব্যাক]
(আবির বাসা থেকে বেড়িয়ে অফিসে আসার জন্য গাড়িতে উঠতে যাবে তখনি কারা যেন আবিরের মুখে রুমাল চেপে ধরে অঙ্গান করে ওকে একটা কালো গাড়িতে উঠিয়ে নেয়)
.
.
একটুপর দরজা খোলার শব্দ কানে আসতেই মাথা তুলে নিজের দৃষ্টি সামনে স্থির করে দেখে, ব্লাক হুডি পড়ে হাতে লাঠি\রড জাতীয় কিছু নিয়ে মেঝেতে বারি দিতে দিতে ওর দিকে এগিয়ে আসছে, দরজা দিয়ে আসা আবছা আলোয় লোকটির মুখ দেখতে পারছে না আবির। লোকটি আবিরের কাছে এসে হাতে রডটি দিয়ে জোড়ের সাথে ওর ২ পায়ের হাটুর নিচে পর পর ২টা বারি দেয়, রডের বারিতে অসহ্যকর ব্যথায় চিৎকার দেয় আবির, মুখ বাধা থাকার জন্য চিৎকারের আওয়াজ গোঙানী হয়ে বের হয়। আবিরের গোঙানীর আওয়াজ এ পাশে থাকা লোকটি জোড়ে শব্দ করে হেসে দেয়, একটুপর লোকটি আবিরের মুখের বাধন খুলে দিয়ে চুলগুলো নিজের হাতের মুঠোয় শক্ত করে পেচিয়ে মাথা উচু করে ধরে, ভয়ে আবিরের মাথা থেকে ঘাম ঝরছে, কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে..
-ক কে আপনি? আমাকে এখানে এনে এভাবে মারছেন কেন?
আবিরের এমন প্রশ্নে লোকটি রাগে ক্ষীপ্ত হয়ে বলে..
-কিছুদিন আগে কাকে মারার জন্য লোক পাঠানোর দুঃসাহস দেখিয়েছি?
লোকটির কন্ঠ শুনার পর আবিরের যেন কলিজার সমস্ত পানি শুকিয়ে গেছে, প্রচন্ড ভয় মিশ্রিত কন্ঠে বলে..
-ত তী তীব্র….
আবিরের মাথার চুল ছেড়ে দিয়ে পাশে থাকা একটা চেয়ার টেনে নিয়ে আবিরের মুখোমুখি বসে পরে তীব্র, রডটি দিয়ে আস্তে আস্তে আবিরের পায়ে বারি দিতে দিতে ওকে উদ্দেশ্য করে বললো..
-চিনতে পেরেছিস তাহলে, যাক আমার জন্য কাজটি এখন সহজ হলো কষ্ট করে নিজের পরিচয় দিতে হলো না।
তীব্রের রডের বারি পায়ে পড়তেই কেপে কেপে উঠছে আবির, তীব্র আবারও বলে
-তো এখন কেমন ফিলিংস হচ্ছে তোর?
-আ আমায় ছেড়ে দাও তীব্র, আমি আর কখনও এমন ভুল করবো না, আমায় ক্ষমা করে দাও (আবির)
তীব্র আবিরের কথায় শুনে হাসতে থাকে, নিজের রাগান্বিত চোখ লাল বর্ন চোখের দৃষ্টি আবিরের দিকে স্থির করে দাঁতে দাঁত পিষে বলে..
-তীব্র চৌধুরীর ডিকশেনারিতে ক্ষমা বলতে কোনো শব্দ নেই, ১টা অপশন ইই রয়ে যায় তাদের জন্য সেটা হলো মৃত্যু।
তীব্রের মুখে মৃত্যুর কথা শুনে আবির এতেটাই ভয় পেয়ে যায় যে নিজের সেন্স হারিয়ে ফেলে, আবিরের বাহিরের একজন গার্ড করে ১ বালতি গরম পানি আনতে বললো, একটুপর গার্ড গরম পানি আনলে তীব্র সেটা আবিরের শরীরে ছুড়ে ফেলতে বললো, তীব্রের কথা অনুযায়ী গার্ডটি বালতির সম্পূর্ণ গরম পানি আবিরের শরীরে ছুড়ে দিলো। ঠান্ডা পানি ছুড়ে দেওয়াটা স্বাভাবিক বাট তীব্র আবিরকে কষ্ট দিয়ে দিয়ে মারবে বলে ঠিক করে নিয়েছে এতোটাই বাজে ভাবে মারবে ওকে জঙ্গলে ফেলে আসলেও শেয়াল কুকুররা ওকে দেখে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিবে।
নিজের শরীরে গরম পানি পড়তেই আবির চিৎকার দিয়ে উঠে, ওর শরীরের বেশকিছু অংশের চামড়া খসে মাংসের পড়ল বের হয়েছে, অসহ্যকর জ্বালায় বাধা অবস্থায় ছুটার চেষ্টা করছে আবির কিন্তু আজ তার মুক্তি বেচে থাকা অবস্থায় হবে না মৃত্যুতেই মুক্তি, তীব্র তো এতো অল্পতেই ওকে মরতে দিবে না যন্ত্রণার আগুনে একটু একটু করে দগ্ধ করবে, যখন আবিরের সহ্য সীমা শেষ হবে তখন সে নিজেই ওর কাছে মৃত্যু ভিক্ষা চাইবে।
তীব্র আবিরের সামনে রাখা চেয়ারে আবার ও বসে পরে, আবিরের কপালের মাঝ বরাবর বন্দুক ঠেকিয়ে ওকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে..
-মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয়ে নে,
-আ আমাকে শেষ বারের মতো ক্ষ… (আবির)
আবিরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তীব্র পর পর ৩বার গুলি করে আবিরের মাথায়, ১টা গুলিতেই মৃত্যু হয়েছিলো আবিরের তীব্র তা বুঝতে পেরেও ২টা গুলি বেশি করেছিলো তবুও যেন ওর ওপর থেকে তীব্রের রাগ কমছে না। কিছুসময়পর তীব্র আবিরের দিকে একনজর দেখে বলে..
-তোকে আমি এতোটা যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু দিতাম না শুধু আমাকে মারার জন্য, কিন্তু তুই যে আমার কলিজার গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করেছিলি তাকে অনেক কষ্ট আর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে অপমাণ করেছিলি, তাই তোর জন্য এটাই প্রাপ্য।
তীব্র চেয়ার থেকে উঠে রুমের বাহিরে এসে গার্ডকে উদ্দেশ্য করে বলে,,
-ভিতরে যে পরে আছে ওকে উঠিয়ে টমের (টম হলো তীব্রের পোষা কুকুর) কাছে দিয়ে আসো, আজ টমের খাবার ভালো হবে।
-ওকে বস (গার্ড)
তীব্র সেখান থেকে বেড়িয়ে আসে, গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট করে উদ্দেশ্য বাড়ি। বেশকিছু সময় ড্রাইভিং করার পর তীব্র বাড়িতে পৌঁছে যায়, বাড়িতে এসে প্রথমে সে তার সিক্রেট রুমে যায় কারণ আবিরকে মারার সময় রক্তের ছিটেফোঁটা ওর শার্টে লেগে গিয়েছিলো, শার্ট চেইন্জ করে সেই রুম থেকে বের হয় তীব্র। তীব্রের এই সিক্রেট রুমে বাড়ির আর কোনো সদস্যের প্রবেশ নিষেধ, শুধুমাত্র তূর্যই এই রুমে আসতে পারে।
তীব্র বাড়ির ভিতরে এসে দেখে সবাই একজোট হয়ে কোনো একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছে আর ওকে দেখে সবাই চুপ হয়ে যায়, ভ্রু কুঁচকে নিজের নজর সবার দিকে একবার ঘুড়িয়ে নিয়ে বলে..
-কি বিষয় নিয়ে কথা বলছিলে তোমরা? আমাকে দেখে থেমে গেলে কেন?
-কিছু না দাদুভাই (আমজাদ চৌধুরী)
-উহুহ কিছু না বললে তো হবে না, আমি বেশ বুঝতে পারছি (তীব্র)
তীব্র অথৈকে নিজের কাছে ডাকে, অথৈকে তীব্রতর কাছে যেতে দেখে আমজাদ চৌধুরী মনে মনে বলে..
-সেরেছে রে এবার তো সব জেনে যাবে তীব্র, না কিছু একটা করতে হবে এখনি জানতে দেওয়া যাবে না ওকে কিছু।
আমজাদ চৌধুরী রুবাইয়াকে ইশারা করে অথৈকে তীব্রের কাছে যাওয়া থেকে আটকাতে বলে, রুবাইয়া দৌড়ে গিয়ে অথৈকে কোলে উঠিয়ে নিয়ে বলে..
-দাভাই এখন অথৈকে পড়তে বসাতে হবে পরে ওর সাথে কথা বলো।
রুবাইয়ার এমন কাজে তীব্রের সন্দেহ বেশ গাঢ় হয়, সে শিউরলি বুঝে গেছে এদের সবার মনেই কিছু না কিছু একটা চলছে যা ওর থেকল হাইড করা হচ্ছে,কিন্তু তীব্র ও তো এতো সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র না, কিছু একটা ভেবে আমজাদ চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলে..
-দাদু আমার রুমে আসো।
বলেই তীব্র উপরে চলে যায়, তীব্রের কথায় আমজাদ চৌধুরী বুঝতে পেরেছে এবার সে তার পেট থেকে কথা বের করেই ছাড়বে, অসহায় দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকালে দেখে সবাই হাসছে। সবার হাসি দেখে আমজাদ চৌধুরীর রাগের সাথে অসহায়ত্ব ও বাড়ছে, ধীরপায়ে উঠে তীব্রের রুমের উদ্দেশ্যে হাটা ধরেন। রুমে এসে দেখে তীব্র বিছানায় বসে আছে, আমজাদ চৌধুরী ও তীব্রের পাশে বসে পরে। তীব্র কিছুটা রাগ মিশ্রিত দৃষ্টি ওর দাদুর উপর স্থির করে প্রশ্নসিক্ত কন্ঠে বলে..
-কি নিয়ে কথা বলছিলে তোমরা নিচে?
-ক কিছু… (আমজাদ চৌধুরী)
-দাদু তুমি খুব ভালো ভাবেই জানো মিথ্যা জিনিসটা আমার মোটেও পছন্দনীয় নয়, ভালোভাবে সত্যি না বললে আমাকে অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে (তীব্র)
আমজাদ চৌধুরী তীব্রের কথার ভাজ পুরোপুরি বুঝতে না পারলেও এতোটুকু বুঝতে পেরেছেন তার আর অন্য কোনো উপায় নেই তাই ভালোভাবে কথাটি বলে দেওয়াই উত্তম কাজ হবে। আর কোনো চিন্তাভাবনা না করে আমজাদ চৌধুরী তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলে..
-দাদুভাই আমরা তোমার সাথে সিনহার বিয়ের বিষয়ে কথা বলছিলাম।
সিনহা নামটি বরাবরই তীব্রের অপছন্দের, সিনহা হলো তীব্রের ফুফাতো বোন, এই মেয়েটার ক্যারেক্টার এর ঠিক নেই আর তার সাথে বিয়ের কথা শুনতেই তীব্রের রাগের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়, সবথেকে বড় কথা হলো তীব্র এখন তৃপ্তিকে ভালোবাসে আর তীব্রের সাথে আগে কথা না বলে বিয়ের বিষয়ে কথা উঠানো খুবই খারাপ বিষয় হিসেবে মনে হয়েছে ওর কাছে। রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে তীব্র আমজাদ চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলে..
-what তোমাদের কি মাথা খারাপ হয়ে দাদু, সিনহার মতো ক্যারেক্টারলেস মেয়ের সাথে তোমরা আমার বিয়ের বিষয়ে কথা বলছো সেটাও আমার থেকে হাইড করে?
আমজাদ চৌধুরী এই ভয় টাই পাচ্ছিলো, তীব্র কেমন রিয়েক্ট করবে সেটা নিয়ে। আমজাদ চৌধুরী খুব ভালো করে জানেন সিনহাকে তীব্র পছন্দ করে না, তবুও শান্ত কন্ঠে তীব্র কে উদ্দেশ্য করে বলে..
-দাদুভাই মাথা ঠান্ডা কর, এটা সম্পূর্ণই তোর দাদীমার ইচ্ছে। উনি তো জানেন না সিনহার বিষয়ে এতোকিছু তাই বলছিলেন, আর আমরা কেও ইই রাজি নই সেই বিষয়েই তোর দাদীমাকে সবাই বুঝাচ্ছিলাম।
তীব্র নিজের রাগ কন্ট্রোল করে নেয়, তীব্রকে শান্ত হতে দেখে আমজাদ চৌধুরী আবারও বলে..
-তুই তৃপ্তিকে ভালোবাসিস তাই না দাদুভাই!
আমজাদ চৌধুরীর কথায় তীব্র অবাক হয় না, স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বলে..
-হুম।
-তৃপ্তি দিদিভাই কে আমার অনেক ভালো লাগে, মেয়েটা অনেক ভালো ভদ্র আর মিশুক, তুই এসব নিয়ে ভাবিস না তোর আর তৃপ্তির বিয়ের বিষয় নিয়ে আমি বাড়ির সবার সাথে কথা বলবো (আমজাদ চৌধুরী)
আমজাদ চৌধুরীর কথা শুনে তীব্র হেসে দেয় আর বলে..
-ঠিক আছে দাদু।
-আচ্ছা ঠিক আছে, আমি তাহলে এখন যাই তুই ফ্রেশ হয়ে নে (আমজাদ চৌধুরী)
-আচ্ছা (তীব্র)
আমজাদ চৌধুরী রুম থেকে চলে যান, তীব্র ও ফ্রেশ হতে চলে যায়।
#চলবে……..