#তুমি_শুধু_আমারই_হও
লেখনীতে- অরনিশা সাথী
|১৯|
একটা ছবি বুকে আকড়ে ধরে বসে আছে অর্নি। ছবিটা অর্নির আসল মা-বাবার। দু মাসের অর্নিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অর্নির মা। আর পাশে দাঁড়িয়েই অর্নির বাবা অর্নির মাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। অর্নি যখন ওর আসল বাবা-মায়ের কথা জানতে চায় মিসেস অদিতি তখন এই ছবিটা অর্নির হাতে দিয়ে বলেছিলো এই ছবির মানুষ দুটোই ওর মা বাবা। অর্নির মা আর মিসেস অদিতি ছিলেন খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। অর্নির বাবার কোনো ভাই বোন ছিলো না। অর্নির জন্মের আগেই অর্নির দাদা-দাদু মারা যান।
অর্নির বাবা-মা মিসেস অদিতির বাসায় বেড়াতে আসেন। সেদিনই খবর আসে অর্নির নানু মারা যায়৷ পাগলের মতো কান্না করতে থাকেন অর্নির মা। তখনই গাড়ি নিয়ে ছুটে যায় অর্নির নানুবাড়ি। মিসেস অদিতি অর্নির মায়ের এমন অবস্থা দেখে ছোট্ট অর্নিকে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। আধ ঘন্টা বাদেই খবর আসে অর্নির বাবা মা পথিমধ্যে গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা যান। হাউমাউ করে কেঁদে উঠে মিসেস অদিতি। আল্লাহ হয়তো চেয়েছিলেন দুই মাসের বাচ্চাটাকে বাঁচিয়ে রাখতে তাই তো মিসেস অদিতি অর্নিকে নিজের কাছের রেখে দিয়েছিলেন। অর্নির দাদু বাড়ির কেউ না থাকায় অর্নিকে নিয়ে ওর মামা বাড়ি যায় মিসেস অদিতি। অর্নির নানা-নানু বেঁচে না থাকায় ওর মামারা কেউ-ই অর্নিকে নিজেদের কাছে রাখতে চায়নি।
সেই থেকেই অর্নি মিসেস অদিতির কাছে। অর্নবের বয়স তখন নয় বছর। দুই মাসের বাচ্চা মেয়েটাকে খুব সযত্নে বড় করেছেন তিনি। গর্ভে ধারণ না করেও মাতৃস্নেহে বড় করে তুলেছেন। অর্নির জন্যই পরবর্তীতে আর কোনো সন্তান নেননি তিনি। অর্নিকে কখনো বুঝতে দেয়নি ওরা অর্নির আসল মা-বাবা ভাই না। তিনজনেই বেশ আদর যত্নে মানুষ করেছে মেয়েকে। অর্নির যখন আট বছর বয়স তখন অর্নবের বাবা মারা যান। দুই সন্তানকে বুকে আগলে মিসেস অদিতিই মানুষ করেছেন।
মিসেস অদিতির মুখ থেকে এসব শুনে বেশ কিছুক্ষণ স্থির হয়ে বসেছিলো অর্নি। তারপর আচমকাই মিসেস অদিতিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়৷ তিনি অর্নিকে শান্ত করে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। আর অর্নি বসে ভাবতে থাকে ওর নিয়তির কথা। ওর নিজের মামারা ওকে রাখতে চায়নি সেখানে মিসেস অদিতির সাথে ওর রক্তের সম্পর্ক না থাকা স্বত্তেও তিনি এতগুলো বছর আগলে রেখেছেন৷ নিজে আর কোনো সন্তানও নেয়নি। এমন মানুষও দুনিয়াতে আছে মিসেস অদিতি অর্নব আর বাবাকে না দেখলে বুঝতোই না অর্নি।
অর্নি ছবিটা বেড সাইড টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দিলো। তারপর চোখের পানি মুছে বললো,
–“আমার লাইফে একটাই সত্যি আর সেটা হলো আম্মু আর ভাইয়াই আমার সবকিছু৷ এই দুজন মানুষই আমার নিজের। আম্মুই আমার নিজের মা।”
কথাগুলো বলে হেঁচকি তুলে কাঁদলো অর্নি। ফোনের রিংটোনে অর্নি চোখের পানি মুছে ফোন হাতে নিলো। নূরের ফোন। অর্নি নিজেকে স্বাভাবিক করে ফোন রিসিভ করলো,
–“হ্যাঁ নূর, বল।”
–“কাঁদছিলি তুই?”
চমকালো অর্নি। মা আর ভাইয়ের পরে লাইফে বন্ধু পাইছে দুইটা যারা কিনা ওর থেকেও বেশি ভালো বুঝে অর্নিকে। এদের থেকে কিচ্ছু লুকানো যায় না। অর্নি হেসে বললো,
–“আরেহ না, কাঁদবো কেন?”
–“দেখ অর্নি মিথ্যে বলবি না। আমি তোর কন্ঠ শুনে স্পষ্ট বুঝতে পারছি তুই কাঁদছিলি এতক্ষণ, কি হয়েছে বল?”
অর্নি সবটা বললো নূরকে। জানালো ওর আসল বাবা মায়ের কথা। সব শুনে নূর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
–“অতীতের কথা ভাবিস না। আল্লাহ আংকেল আন্টিকে নিজের কাছে নিয়ে গেছেন তাতে কি? তোকে তো আর এতিম হতে দেয়নি৷ আন্টির মতো মা আর অর্নব ভাইয়ার মতো ভাই পাইছিস এটা কি কম?”
নূরের কথায় অর্নি হাসলো। বললো,
–“আম্মু আর ভাইয়াকে আমি আমার লাইফে সব থেকে বেশি ভালোবাসি।”
–“আর আমার ভাইয়াকে? আমার ভাইয়াকে তাহলে কি ভালোবাসিস না তুই?”
আচমকা নূরের এমন প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেলো অর্নি। তারপর বললো,
–“এখানে তো আমার আম্মু আর ভাইয়াকে নিয়ে কথা হচ্ছিলো নূর। মাঝখানে তুই উৎসব ভাইকে টানিস কেন?”
–“বল না নিজের মুখে, ভালোবাসিস না ভাইয়াকে? খুব তো লুকোচুরি হলো। আর কত লুকাবি? আর এখন তো সব ঠিক আছে। সবাই সবটা জানে। তাহলে এরপরও তো আর লুকানোর কিছু দেখছি না আমি।”
অর্নি গোমড়া মুখে বললো,
–“কোথায় সব ঠিক আছে? সেদিন যে উৎসব ভাই আমাদের বাড়ি থেকে গেলো। নিহাল ভাইয়ের সাথে কথা বলে বিয়েটাও ক্যান্সেল করলো। এরপরে একবারও উৎসব ভাই কথা বলেছে আমার সাথে? বলেনি তো। তাহলে সব ঠিক থাকলো কিভাবে?”
–“গাধী, ভাইয়া যে তোর উপর রেগে আছে এটাও বুঝিস না? ভাইয়া গিয়ে সবার কাছে তোকে ভালোবাসার কথাটা বলে যে বিয়েটা ভাঙলো এটা যদি তুই এনগেজমেন্ট এর আগেই করতি তাহলে তো আর এতকিছু হতো না৷ তুই আগে থেকেই নেগেটিভ ধারণা পুষে রেখেছিলি মনে। তাহলে আমার ভাইয়া এখন রেগে থাকবে না তো কি করবে?”
অর্নি রিনরিনে কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
–“কোথায় আছে উৎসব ভাই?”
–“কথা বলবি?”
একরাশ লজ্জা এসে ভর করলো অর্নিকে। আমতা আমতা করে বললো,
–“হুম, উৎসব ভাইয়ার কাছে একটু ফোনটা নিয়ে___”
–“বাট স্যরি দোস্ত। আমি তো পারবো না। তুই বাসায় এসে তারপর রাগ ভাঙাবি ভাইয়ার। বাসায় চলে আয়। ভাইয়া বাসায়ই আছে।”
–“যেটা ফোনে পসিবল ওটা বাসায় গিয়ে করতে হবে কেন?”
–“ভাইয়া কিন্তু প্রচুউউউউর ক্ষেপে আছে তোর উপর। আচ্ছা তুই যেহেতু আসতে পারবি না তাহলে আর কি করার? ওদিকে তুই বাড়িতে বসে থাক৷ এদিকে আমার ভাইয়ের রাগটা তোর উপর দিন দিন আরো বাড়ুক।”
কথাটা বলেই খট করে লাইন কেটে দিলো নূর। অর্নি অসহায় ভাবে বিছানায় বসে আছে। বাসায় যাবে কি যাবে না? নাকি ফোন করবে? পরমূহুর্তেই মনে পড়লো উৎসবের নাম্বারটাও নেই অর্নির কাছে৷ এখন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না অর্নি।
অর্নি গুটিগুটি পায়ে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে৷ মিসেস অদিতি কিচেনে কিছু একটা করছিলেন। অর্নি মিসেস অদিতিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বললো,
–“আম্মু একটু নূরদের বাসায় যাই?”
মিসেস অদিতি ভ্রু কুঁচকে বললেন,
–“একটু বাদেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে। এসময় ওদের বাড়িতে কেন? কাল সকালে যাস।”
–“এখনই যেতে হবে আম্মু যাই প্লিজ?”
মিসেস অদিতি মুচকি হাসলেন মেয়ের মুখভঙ্গি দেখে। অর্নির গালে হাত রেখে মুচকি হেসে বললো,
–“উৎসব রেগে আছে বুঝি? আর তার রাগ ভাঙাতেই বুঝি আমার মেয়ে ও বাড়িতে যেতে চাইছে?”
অর্নি লজ্জা পেলো ক্ষানিকটা। মিনমিন করে জিজ্ঞেস করলো,
–“তুমি বুঝলে কি করে উৎসব ভাই রেগে আছে?”
–“অর্নব বলেছে।”
অর্নি ক্ষানিকটা সময় চুপ থাকলো। তারপর আবার বললো,
–“তাহলে আমি যাই এখন? যাবো?”
মিসেস অদিতি মুচকি হেসে বললেন,
–“আচ্ছা যা, সাবধানে কিন্তু হ্যাঁ? আর একা ফিরবি না কিন্তু। আসার আগে অর্নবকে ফোন করবি ও গিয়ে নিয়ে আসবে।”
অর্নি সম্মতি জানিয়ে চলে গেলো। মিনিট দশেকের মাথায় নূরদের বাসায় পৌঁছে গেলো। কলিংবেল চাপতেই শায়লা বেগম দরজা খুলে দিলেন। অর্নিকে দেখে মুচকি হেসে বললো,
–“আজ সূর্য কোনদিকে উঠেছে? এই অসময়ে আপনার পায়ের ধুলো পড়লো যে আমার বাড়িতে?”
অর্নি ভিতরে ঢুকে বললো,
–“আমি বুঝি আগে আসতাম না।”
–“আসতি কিন্তু এমন অসময়ে না।”
–“এখন থেকে যখন ইচ্ছে হবে আসবো। নূর কোথায় আছে সেটা বলো।”
শায়লা বেগম অর্নিকে কাছে টেনে নিয়ে বললেন, –“নূর তো শুধু বাহানা। কেন এসেছিস বুঝি না আমি? তা আমার ছেলেকে ছাড়া থাকতে আর ইচ্ছে করছে না বুঝি?”
অর্নি লজ্জা পেয়ে বললো,
–“আন্টি তুমিও___”
শায়লা বেগম হাসতে হাসতেই বললেন,
–“বেশি অপেক্ষা করতে হবে না। দাঁড়া খুব শীঘ্রই তোকে পার্মানেন্ট ভাবে এ বাড়িতে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছি আমি।”
অর্নি লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিলো। সাথে উৎসবের উপর ক্ষানিকটা রাগও হলো। এই ছেলের জন্য মিসেস অদিতি আর শায়লা বেগমও ওর লেগপুল করতে ছাড়ছে না। কি লজ্জায় বিষয়। ইশ্। শায়লা বেগম হেসে বললো,
–“আপনি যার কাছে এসেছেন সে নিজের ঘরেই আছে। তবে আপনার উপর রেগে আছে কিন্তু। গিয়ে দেখেন পারেন কিনা তার রাগ ভাঙাতে।”
অর্নি অসহায় চোখে তাকালো। শায়লা বেগম হেসে বললো,
–“আচ্ছা আচ্ছা, আর বলছি না। তুই যা।”
অর্নি কথা না বাড়িয়ে উপরে চলে গেলো। উৎসবের ঘর ক্রশ করার সময় উৎসবের ঘরের সামনে দাঁড়ালো। দরজাটা এমনিতেই ভিরানো, লক করা নেই। অর্নি দরজা ঠেলে ভিতরে উঁকি দিলো। দেখলো উৎসব রুমের কোত্থাও নেই। অর্নি পা টিপে টিপে ভিতরে ঢুকে। রুমের চারদিকটা ঘুরেফিরে দেখছি অর্নি। উৎসব ছেলে হয়েও কি সুন্দর নিজের ঘর পরিপাটি করে গুছিয়ে রেখেছে আর ওদিকে অর্নির ঘর এখনো মিসেস অদিতি গুছায়।
ব্যালকোনি থেকে রুমে আসতেই উৎসবের চোখ আটকায় অর্নির উপর। কালো রঙের শর্ট কূর্তি পড়েছে। উৎসব পলকহীন দেখছে অর্নিকে। অর্নির চোখ উৎসবের উপর পড়তেই অর্নি দরজার দিকে ছুট লাগায়। উৎসব গম্ভীর স্বরে বললো,
–“ঘরের বাইরে যাতে পা না পড়ে।”
উৎসবের এমন শান্ত গলায় কথা বলা শুনে অর্নির পিলে চমকে গেলো। এত শান্ত আছে উৎসব। তারমানে এটা নিশ্চয়ই ঝড় আসার পূর্বাভাস। উৎসব ক্ষানিকটা এগিয়ে বললো,
–“এদিকে ঘুরো।”
অর্নি রোবটের মতো উৎসবের কথা মেনে নিয়ে উৎসবের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। উৎসব বললো,
–“এখানে কি করছো?”
–“না মানে__”
–“সোজাসাপটা ভাবে বলো। কি করছিলে এখানে?”
অর্নি আমতা আমতা করে বললো,
–“কিছু না তো, আমি এক্ষুনি চলে যাচ্ছি।”
কথাটা বলতেই উৎসব দাঁতে দাঁত চিপে বললো,
–“যাওয়ার অনুমতি দিয়েছি আমি?”
অর্নি দু দিকে মাথা নাড়ালো৷ যার অর্থ উৎসব ঘর থেকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়নি৷ উৎসব আরো দু কদম এগিয়ে এসে বললো,
–“তাহলে যাচ্ছিলে কেন?”
কথাটা বলে অর্নির দিকে এগোতে লাগললো। অর্নি ভয় পেয়ে রুমের অন্যদিকে সরে গেলো। উৎসব একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আবার অর্নির দিকে ঘুরে বললো,
–“সমস্যা কি?”
–“সমস্যা আমার না তো। সমস্যা তো আপনার।”
উৎসব ভ্রু কুঁচকে তাকালো। মৃদু চিৎকার করে বললো,
–“হোয়াট? আমার সমস্যা?”
–“হ্যাঁ আপনারই তো সমস্যা৷ আপনার যদি সমস্যা না হয়ে থাকে তাহলে কথা বলছেন না কেন আমার সাথে? এভাবে গম্ভীর স্বরে কেউ কথা বলে?”
উৎসব বললো,
–“কেন কথা বলবো? আর যদিও বা বলি তাহলে এরকম গম্ভীর স্বরেই কথা বলবো।”
–“নাহ, এভাবে গম্ভীরস্বরে না। একটু হেসে মিষ্টি করে কথা বলতে পারেন না?”
উৎসব এগিয়ে গিয়ে অর্নিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। বললো,
–“হেসে আর মিষ্টি করে কথা বলার মতো কোন কাজটা করেছো তুমি?”
অর্নি চুপ হয়ে গেলো। মথা নিচু করে নিলো। উৎসব অর্নির দিকে আরো কিছুটা ঝুঁকে বললো,
–“কে তুমি? তোমার সাথে আমার মিষ্টি করে কথা কেন বলতে হবে?”
অর্নি চোখ তুলে তাকালো। চোখদুটো জলে টইটম্বুর হয়ে আছে। লোকটাকে মনে হয় বড্ড বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলেছে অর্নি। মনে মনে কথাটা ভাবলো। ধরা গলায় বললো,
–“আপনি না আমায় ভালোবাসেন?”
উৎসব অর্নির কথার জবাব না দিয়ে পালটা প্রশ্ন করলো,
–“তুমি ভালোবাসো আমায়? একবারো ভালোবাসি বলেছো? ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে তো এনগেজমেন্ট করে নিয়েছিলে। একবারো বাসায় জানানোর চেষ্টা করেছিলে? করোনি। তাহলে তো ধরে নেওয়া যায় তুমি আমাকে ভালোবাসো না৷ আর ভালোবাসো না বলেই এনগেজমেন্ট করতে রাজি হয়েছিলে। তাহলে যে আমায় ভালোবাসে না তার সাথে কোন স্বরে কথা বলবো আমি?”
অর্নি বিড়বিড় করে বললো,
–“ভাইয়ার সামনে না বললাম?”
–“সেটাতো তোমার ভাই প্রশ্ন করেছে তাই ছোট্ট করে ‘হুম’ বলেছো। আমায় ভালোবাসি বলেছো একবারো?”
–“বলতে হবে কেন উৎসব ভাই? আপনি বোঝেন না? ”
উৎসবের এবার রাগ হলো প্রচুর। এমনিতেই অর্নির উপর চটে আছে তার উপর আবার ভাই ডেকে মাথাটা বিগড়ে দিলো। অর্নিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো ওর সামনে থেকে। তারপর বাজখাঁই গলায় চিৎকার করে বললো,
–“না বুঝি না আমি। আমাকে মুখে ভালোবাসি বলতে হবে। নয়তো কোনোদিনও বুঝবো না আমি।”
অর্নি ধীর পায়ে উৎসবের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আমতা আমতা করে বললো,
–“উৎসব ভা___”
উৎসব চোখ রাঙিয়ে তাকালো। অর্নি সাথে সাথেই চুপ হয়ে যায়। অর্নির মুখের কথা মুখেই রয়ে যায়। একটা শুকনো ঢুক গিলে বলে,
–“আচ্ছা ভাই বলছি না।”
উৎসবের দৃষ্টি স্বাভাবিক হলো। অন্যদিকে ঘুরে লম্বা করে কয়েকটা শ্বাস নিলো। তারপর বললো,
–“হ্যাঁ বলো__”
–“আপনি আমার উপর রাগ করে থাকবেন না প্লিজ। আপনার নিরবতা কষ্ট দেয় আমাকে।”
–“যতদিন না ভালোবাসি বলবে নিজ মুখে ততদিন আমার নিরবতা তোমাকে কষ্টই দিবে।”
অর্নি অসহায় চোখে তাকালো উৎসবের দিকে। উৎসব ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বিছানায় গিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে পড়লো। অর্নি পেছন পেছন ওখানেও গেলো। উৎসবকে টেনে তুলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। অর্নির কাজে উৎসব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। প্রথমে অবাক হলেও পরে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুঁটে উঠলো। উৎসব নিজেও অর্নিকে একদম মিশিয়ে নিলো নিজের বুকের মাঝে।
চলবে~