#তুমি_শুধু_আমারই_হও
লেখনীতে- অরনিশা সাথী
|৩৪|
অর্নি ঘরে এসে দেখলো উৎসব ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে। ভ্রু কুঁচকে তাকালো অর্নি। এখন তো অফিসেই যাবে তাহলে আবার ল্যাপটপ নিয়ে বসার কি দরকার? ভেবে পেলো না ও। অর্নিকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উৎসব ল্যাপটপ রেখে দিয়ে বললো,
–“দ্রুত আসো, তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।”
অর্নি কিছু না বলে দরজা লক করে এগিয়ে গেলো৷ চুপচাপ কাবার্ড থেকে উৎসবের শার্ট প্যান্ট বের করলো৷ সেগুলো বিছানায় রাখতেই উৎসব প্যান্ট হাতে নিয়ে চেঞ্জ করতে গেলে অর্নি মৃদু চিৎকার করে উঠে৷ উৎসব ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
–“কি? ওভাবে চেঁচাচ্ছো কেন?”
–“আপনি এখানেই চেঞ্জ করছেন কেন? ওয়াশরুমে যান।”
উৎসব বিড়বিড় করে বললো,
–“আমার আগাগোড়া সবই তো দেখছো তাহলে তোমার সামনে চেঞ্জ করলে দোষ কোথায়?”
অর্নি কথাটা শুনে চোখ রাঙিয়ে তাকালো। তা দেখে উৎসব বললো,
–“যাচ্ছি তো, ওভাবে তাকানোর কি আছে?”
এই বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ক্ষানিক বাদে বের হতেই অর্নি শার্ট নিয়ে পড়িয়ে দিলো উৎসবের গায়ে৷ এটা রোজকার রুটিন অর্নির। উৎসব অফিস যাওয়ার সময় শার্ট আর টাই বেঁধে দিতে হবে অলওয়েজ। এরকমই আর্জি রেখেছে উৎসব। অর্নি শার্টের বোতামগুলো লাগিয়ে টাই বেঁধে দিলো। অতঃপর চুল সেট করে দিলো। উৎসব ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে গায়ে পারফিউম লাগিয়ে আবারো অর্নির কাছে এসে দাঁড়ালো। অর্নিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“ভালোবাসি বউ।”
অর্নি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
–“কি পাগলামি শুরু করেছেন আপনি?”
–“কি করলাম আবার?”
–“একটু আগে বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা বললেন কেন? সবকিছুতে এত তাড়াহুড়ো কেন আপনার?”
–“আমার গাফলতির জন্যই তো তোমাকে বাজে বাজে কথা শুনতে হয়েছে। আমি চাই না এই নিয়ে আর কোনরূপ কথা কেউ তোমাকে শুনাক।”
–“যা হয়েছে হয়েছে। এখন ওসব কথা বাদ দিন৷ হুট করে বললেই সবকিছু সবসময় সম্ভব হয় না উৎসব৷”
–“সম্ভব। চাইলে সব সম্ভব।”
–“কিন্তু___”
–“কোনো কিন্তু না। এ বিষয়ে আর কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না আমি। আমি যেহেতু বলেছি বিয়ের অনুষ্ঠান এখনই হবে তাহলে তাই।”
অর্নি আর কিছু বললো না। চুপ করে রইলো। উৎসব অর্নির দুই গালে হাত রেখে কপালে শব্দ করে চুমু খেলো। নাকের ডগায়ও আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো। তারপর বেশ কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে রেখে বেরিয়ে গেলো অফিসের উদ্দেশ্যে। অর্নি চুপচাপ ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। এই ছেলেকে কিছু বুঝি লাভ নেই। একবার যা বলবে তাই করতে হবে। ভেবে তপ্ত শ্বাস ফেললো অর্নি।
–
নূরের রুমে এসে শুয়ে আছে অর্নি৷ নূর ব্যালকোনিতে গিয়ে শান্ত’র সাথে ফোনে কথা বলছে৷ অর্নি ঠিক করে নিয়েছে বিয়ে যদি হয়ই তাহলে একসাথে তিন-জোড়া বিয়ে হবে৷ নয়তো না। অর্নি ধুপধাপ পা ফেলে ব্যালকোনিতে গিয়ে নূরের সামনে দাঁড়ালো৷ নূর কান থেকে ফোন নামিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–“কি হয়েছে?”
অর্নি কিছু না বলে নূরের হাত থেকে ফোন কানে নিয়ে সালাম দিয়ে বললো,
–“কেমন আছেন জিজু?”
–“আলহামদুলিল্লাহ ভাবী, তুমি ভালো আছো? আর ভাইয়া?”
–“আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো।”
–“তারপর হঠাৎ কি মনে করে?”
অর্নি আমতা আমতা করে বললো,
–“কথা আছে একটু।”
–“হ্যাঁ বলো।”
–“আপনার ভাইয়া চাইছিলো যত দ্রুত সম্ভব আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান করতে।”
–“হ্যাঁ এটাতো ভালো খবর___”
–“এখন আমি চাই, একই দিনে আপনার আর নূরের বিয়েটাও হোক।”
কথাটা শুনে নূর চোখ বড়বড় করে তাকালো অর্নির দিকে৷ ওদিকে শান্ত খুশি হয়ে বললো,
–“আমার কতদিনের স্বপ্ন তোমার ননদিনী কে বউ করে ঘরে তোলার। নূরই তো কিছু বলছে না।”
–“নূরের বলতে হবে কেন? আপনাদের এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে। আপনি বাসায় জানান।”
–“উৎসব ভাই___”
–“উনার সাথে আমি কথা বলবো৷ যদি উনি রাজি না হয় তো আমাদের বিয়েও ক্যানসেল। বিয়ে হলে একসাথে তিন জোড়া হবে নয়তো না।”
–“তিন জোড়া?”
–“অর্নব ভাইয়া-টায়রা আপু, আপনি-নূর এবং আমরা।”
–“ওয়াহ গ্রেট ভাবী! নো চিন্তা, আপনি উৎসব ভাইকে জাস্ট রাজী করান আমি বাসায় জানিয়ে সন্ধ্যায় আব্বু আম্মুকে পাঠাচ্ছি।”
–“থ্যাংকিউ জিজু।”
আরো টুকটাক কথা বলে অর্নি নূরের হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। করার মতো কিছুই নেই। ভার্সিটিও যাইনি আজ। এখন শুয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই৷ বেশ কিছুক্ষণ ফোন চালিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো অর্নি।
–
বিকেলের দিকেই আজ অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছে অর্নব। টায়রাকে নিয়ে একটু বের হবে। এটা অবশ্য টায়রা জানে না। শাওয়ার নিয়ে বের হতেই দেখলো মিসেস অদিতি বসে আছে বিছানায়। অর্নব মায়ের পাশে বসে বললো,
–“কিছু বলবে আম্মু?”
মিসেস অদিতি অর্নবের হাত ধরে বললো,
–“বেয়াই সাহেব ফোন দিয়েছিলো।”
অর্নব ভ্রু কুঁচকে তাকালো। মিসেস অদিতি বুঝলেন অর্নব বুঝেনি। মিসেস অদিতি হেসে বললো,
–“অর্নির শ্বশুর ফোন করেছিলো।”
–“ওহ আচ্ছা, কি বললো?”
–“উনারা বললো অর্নি আর উৎসবের বিয়ের অনুষ্ঠান-টা এখনি করতে চাচ্ছে। তুই কি বলিস?”
–“আমি কি বলবো? এটা তো ভালো কথা। কবে করতে চাচ্ছে?”
–“উৎসব নাকি বলেছে যত দ্রুত সম্ভব।”
–“আচ্ছা বলে দাও আমরা রাজি। আংকেলকে ডেট ফিক্সড করতে বলো।”
–“তোর আর টায়রার বিয়েটা? দুটো অনুষ্ঠান তো একসাথে করার কথা ছিলো।”
–“হ্যাঁ অর্নির তো এরকমই ইচ্ছে৷ তুমি মামার সাথে কথা বলো। বিয়ে একসাথেই হবে।”
–“তোর কোনো আপত্তি আছে?”
–“নাহ, তুমি কথা বলো মামার সাথে।”
মিসেস অদিতি মুচকি হেসে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো। অর্নব মৃদু হাসলো। ফাইনালি তাহলে টায়রাকে নিজের কাছে নিয়ে আসবে। মৃদু হেসে ডায়াল করলো টায়রার নাম্বারে। কিছুক্ষণ বাদে ফোন রিসিভ হতেই অর্নব বললো,
–“রেডি হও, আসছি আমি।”
টায়রা অবাক হলো বেশ। জিজ্ঞেস করলো,
–“কোথায়?”
–“এমনি বের হবো। আর একটা নিউজ আছে।”
–“কি?”
–“খুব শীঘ্রই নিয়ে আসছি তোমাকে আমার কাছে। রেডি থেকো।”
–“মানে?”
–“মানে খুব দ্রুতই বউ করে ঘরে তুলছি তোমায়। এখন রেডি হও। সামনা সামনি সবটা বলবো।”
কথাটা বলেই খট করে লাইন কেটে দিলো অর্নব। মৃদু হাসলো। টায়রাটা এখন নিশ্চয়ই অর্নবের বলা কথাগুলোই ভাবছে।
–
উৎসব অফিস থেকে এসেই সোজা শাওয়ারে গেছে। অর্নি বিছানায় বসে ওর অপেক্ষা করছে। উৎসব টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। কয়েক সেকেন্ড বাদে অর্নি ধীরে কদম ফেলে উৎসবের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। উৎসব আয়নার ভিতর দিয়েই ভ্রু কুঁচকে তাকালো অর্নির দিকে। জিজ্ঞেস করলো,
–“কি ব্যাপার? সাপের মতো মোচড়ামুচড়ি করছো কেন? কিছু বলবে?”
–“হ্যাঁ আসলে___”
উৎসব টাওয়াল গলায় ঝুলিয়ে অর্নির দিকে ঘুরলো। ড্রেসিং টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে অর্নির কোমড় ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো৷ দুহাতে অর্নির কোমড় জড়িয়ে ধরে রেখে অর্নির চোখে চোখ রেখে বললো,
–“বলো এবার।”
–“এ্ একটা আব্ আবদার আছে আমার।”
–“হ্যাঁ শুনি, কি আবদার আমার বউয়ের?”
–“আমি চাইছিলাম, নূর আর শান্ত ভাইয়ার বিয়েটাও আমাদের সাথেই___”
–“হয়ে যাবে।”
অর্নির চোখদুটো খুশিতে চিকচিক করে উঠলো। উৎসবের দুই গাল ধরে বললো,
–“সত্যিই বলছেন?”
উৎসব অর্নির নাকের সাথে নাক ঘঁষে দিয়ে বললো,
–“আমার একমাত্র বউয়ের আবদার বলে কথা, আমাকে তো রাখতেই হবে।”
অর্নি খুশিতে আটখানা হয়ে উৎসবের গালে পরপর দুটো চুমু দিয়ে বললো,
–“থ্যাংকিউ, থ্যাংকিউ সো মাচ।”
উৎসব অর্নির ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেয়ে বললো,
–“শুকনো থ্যাংকিউ তে তো আমার হবে না বউ।”
অর্নি অবাক হলো৷ প্রথমে উৎসবের চুমু দেওয়াতে আর দ্বিতীয় বার উৎসবের কথা শুনে। অবাক কন্ঠেই বললো,
–“মানে?”
–“মানে শুকনো থ্যাংকিউ তে আমার হবে না। আমার অন্যকিছু চাই।”
–“ক্ কি__”
উৎসব অর্নির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
–“এখনই করে দেখাবো নাকি রাতে ঘুমানোর সময়?”
উৎসবের এহেন কথায় লজ্জা পেয়ে গেলো অর্নি। উৎসবকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে বললো,
–“অসভ্য একটা।”
এইটুকু বলেই দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। উৎসব মৃদু হাসলো অর্নির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে৷ তারপর কাবার্ড থেকে টি-শার্ট বের করে গায়ে জড়িয়ে নিজেও বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।
–
তিন পরিবার একসাথে বসে কথা বলেছে৷ সকলেই বিয়ের আয়োজনে রাজি৷ মিসেস অদিতি নিজের ভাইয়ের সাথেও কথা বলেছেন। উনারও আপত্তি নেই এখন বিয়ের অনুষ্ঠান করাতে। সবাই মিলে ঠিক করা হয়েছে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই বিয়ের অনুষ্ঠান করা হবে। সেই হিসেবে হাতে আর মাত্র দশদিন সময় বাকী আছে। যেহেতু তিনটে বিয়ে একসাথে হবে তাই বড় কোনো রিসোর্ট ভাড়া করা হবে। একসাথে তিনটে বিয়ে এভাবে পসিবল না। তিনটে বিয়ে একই সাথে, একই রিসোর্টে করা হবে৷ সেই অনুযায়ী সকল বন্দবস্ত করছে উৎসব। সাথে হাত লাগিয়েছে অর্নব নিজেও।
চলবে~
[ সবার অভিযোগ উৎসব অর্নির বিয়েতে কাউকে দাওয়াত দিইনি কেন? এবার কাউকে নিরাশ করবো না৷ তিন জোড়া বিয়ে একসাথে। ঠিক দশ দিন পর। চলে আসবেন সকলে। আর হ্যাঁ গিফট নিয়ে আসতে কিন্তু একদমই ভুলবেন না। গিফট ছাড়া আবার ঢুকতে দেওয়া হবে না কাউকে। ]