নব্যদিনের_সূচনা #দ্বিতীয়_পরিচ্ছদ 🍂হুমাইরা হুর🍂 (৪)

0
245

#নব্যদিনের_সূচনা
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছদ
🍂হুমাইরা হুর🍂

(৪)

–মা তুই ঠিক আছিস?

কারো শান্ত,নির্লিপ্ত, স্নিগ্ধময়ী কন্ঠস্বর শুনে চোখ মেলে তাকাল মেঘনা।সামনে তাকাতেই চমকে উঠল সে।আজ এত দিন পরে সে কাকে দেখছে? যার কাছ থেকে হাজারো মাইল পাড়ি দিয়ে সে ঢাকা থেকে থেকে রাজশাহী এসেছিলো ? সামনে যে তার জন্মদাত্রী দাড়িয়ে আছে!মেঘনা যেন হতভম্ব হয়ে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল তার মা মুনিয়ার দিকে সে বুঝতে পারছে না তার মা এখানে কিভাবে আসলো? তার ঠিকানাই বা কিভাবে জানল? আর তাকে পেলেই বা কিভাবে? ঐ লোকটা আবার আসে নি তো? তাহলে কি এখন আবার সেই নরকে যেতে হবে তো?

–কিরে কথা বলছিস না যে? ঠিক আছিস তো মা? শরীর ভালো আছে তোর?

কারো কথায় ধ্যান ভাংলো মেঘনার। সে যেনো এক ঘোরের মাঝেই রয়েছে এখনো।এতদিন পর মাকে দেখে সে যেনো নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলো না।শক্ত করে জরিয়ে ধরল নিজের মা কে।

আসলে খারাপ হয় মানুষ নিজে। কিন্তু মাকে কি কখনো খারাপ বা ভালো তা বিচার করা যায়? মা তো সন্তানের জন্য সব সময় ভালই চায় । মা তো মাই হয়।মায়ের সাথে ঠিক আত্নার টান।

মেঘনা তার মাকে ধরে অনবরত যাচ্ছে। হয়ত তার চোখের বাধ আজ ভেঙেছে । মাকে কাছে পেয়ে নিজেকে যেনে হালকা করে দিতে চায়ছে সে।মনে মধ্যে জমতে থাকা হাজারো অভিমান এর কথা যেনো সে বলতে চাইছে।চাইছে আজ জমা থাকুক অভিমানগুলো খাতা।

এতদিন পর নিজের মেয়েকে সামনে এ এমন বিধস্ত অবস্থায় দেখে মুনিয়াও যেনো মেয়েকে আগলে ধরে রেখেছেন।এবার যেনো কোথাও পালাতে দেবেন না সে।অনেক কষ্টের ফল মেঘনা।দীর্ঘ পাঁচ বছর সাধনা করেছে মেঘনা কে পেয়েছিল মেঘনা শুধু মাত্র মেঘনা জন্য আজ পর্যন্ত তিনি কোন সন্তান নেননি।মেঘনা হারিয়ে গেলে সে যে হন্ন হয়ে খুজেছিলো নিজের একমাত্র মেয়েকে।এখন আবার পেয়েছি অনেক কষ্টের পর, কোনোমতে তিনি এবার মেয়েকে হারাতে পারবে না সে।

তখনই সেখানে প্রবেশ করল মুগ্ধ। খবর পেয়েছে মেঘনা এখানে রয়েছে।মেঘনা এখানে শুনে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসেছিলো সে।মুগ্ধ এক ধেয়ানে তাকিয়ে রইয়েছে তাদের দিকে। যেন এক মনোরম দৃশ্য এ।

মেঘনার হুঁশ ফিরতেই সে তার মা থেকে ছিটকে গেল। আটসাট হয়ে বসে রইলো। মনে পড়ে গেল তার সেই কালো অতীতের কথা,যদিও বর্তমানটা সুখকর নয় তার জন্য। সামনে তাকি দেখল মুগ্ধ দাড়িয়ে।ঘামে সিক্ত শার্ট,প্যান্টে অবস্থা ও করুন।চুলগুলো এলোমেলো,চোখদুটো যেন কান্তিয়ে ভরপুর।কেমন জানি এক নাজেহাল অবস্থা তার।কোথায় অবস্থান করছে তা জানতে চারদিকে তাকালো দেখলো ছোট একটা রুম সাদা দিয়ে মুড়োনো।বুঝতে বাকি রইল না সে হাসপাতালের একটি কেবিনে অবস্থান করছে। মনে পড়ে গেলো সেই কথা।তাকে ধকানোর কথা।

তার কানে শুধু বাজছে মুগ্ধের সেই কথা যা সে দরজার আড়ালে থেকে শুনতে পেয়েছিলো,

–হ্যাঁ আমি লোভে পড়ে বিয়ে করেছি মানছি। তুমি তোমার কসম দিয়ে বিয়ে করিয়েছো তাও মানছি।তবুও কেন এখন মেঘনাকে আমার জীবনকে সরাতে চাইছো? কেনো?

তাহলে কি মুগ্ধ তাকে কোনোদিন ভালোবাসে নি?শুধু মাত্র সম্পত্তির জন্য বিয়ে করেছিলো তাকে? ভালোবেসে নয় টাকার লোভে সে এই মিথ্যা ভালোবাসার অভিনয় করল সে? তার জীবনে কি কষ্টের অবশান ঘটবে না? মুগ্ধ ঠকিয়েছে তাকে।সে বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছে মেঘনাকে।কথাটা ভাবতেও শীতল অভিভুতে ছেয়ে গেলো তার হৃদয়। মুগ্ধ যেহেতু তাকে ভালোবাসেনি কোখনো তাহলে সে কেন থাকবে বাড়িতে ? এসব ভেবেই সে বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বের হয়ে গিয়েছিলো।কোনোদিকে তার হুস ছিলো না এক ধ্যানে সে কান্না করতে করতে ছুটছিলো।মুগ্ধের হাজারো ডাক তার কানে প্রবেশ করেনি সে সময়।

কিন্তু পরের কথা তার মনে নেই।কিন্তু কি হয়েছিলো সে সময়? হাসপাতালে বা কেনো সে? আর তার মায়ই বা কোথায় তাকে পেলো?

মেঘনাকে চুপ থাকতে দেখে মুনিয়া বললো,

–মা কই ছিলি এতদিন? জানিস কত খুজেছি তোকে? কিন্তু পাইনি।রাজশাহী আছিস জানলে আমি আরো আগে এখানে আসতাম। আল্লাহর অসীম রহমতে আমি তোকে ফিরে পেয়েছি।

মুগ্ধ মুনিয়ার কথা শুনে বুঝতে পারল ইনিই মেঘনার মা।এই মানুষটাকে সে নিজের থেকে বেশি ঘৃণা করে।তার জন্যই মেঘনার জীবনে এত কষ্ট। তিনি হয়লে হয়ত মেঘনাকে এক ভালো অতীত দিতে পারতেন।কিন্তু না সে নিজের সুখকে প্রাধান্য দিয়ে বিয়ে করেছেন।

মুনিয়ার কোনো কথায় মেঘনা উওর দিচ্ছিল না।এতে মুনিয়ার যথেষ্ট মন খারাপ হয়।এতক্ষন নিরব থাকলেও মুগ্ধ এসে মেঘনাকে জরিয়ে ধরতেই মেঘনাকে ছিটকে মুগ্ধের কাছ থেকে সরে আসে।মেঘনার কানে শুধু সেই কথাটায় বারবার বাজছিলো।সে চেচামেচি করতে লাগলে।মুনিয়া ও মুগ্ধ কে চিনতে না পারায় সেও চেচামেচি শুরু করে দেয়।
মেঘনার ওভার রিয়েক্ট দেখে ডক্টর মেঘনাকে ঘুমের ওষুধ দেন।এতে মেঘনা ঘুমিয়ে পড়ে।তখন ডক্টরকে দেখে মুগ্ধ বলে,

–কি হয়েছে ডক্টর আমার মেঘনার?

–মুগ্ধ তোমাকে না বলেছি মেঘনা কি মানসিক ভাবে দূর্বল। সবেই তো কয়দিন আগে মেঘনার পরপর তার দুটো বাচ্চাটা হারালো ? তোমাকে আমি বলেছিলাম মেঘলা খেয়াল রাখতে কিন্তু তুমি তা করো নি।তুমি জানো মেঘনার আবার এক্সিডেন্টে মেঘনার কত বড় ক্ষতি হয়েছে? মুনিয়া আনজুম মেঘনাকে সঠিক সময়মত না আনলে মেঘনা আজ মারা পর্যন্ত যেতে পারত।

ডক্টরের কথা শুনে মুগ্ধ আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না। সে যেন ভেঙে পড়ল। সেতো পারেনি মেয়েটাকে রক্ষা করতে, তাকে আগলে রাখতে।তার জন্য মেঘনার আজ এ অবস্থা। নিজেকে কিভাবে সে ক্ষমা করবে?এতক্ষণ তো সে মুনিয়া তানজুমকে দোষারোপ করছিলো কিন্তু এখন নিজের প্রতি ই তার বিরক্ত লাগছে।

‘পরপর দুটে বাচ্চা হারালো’কথাটা যেনো তিনি হজম করতে পারলেন না।তবে কি সে ভুল শুনলো? না সে ঠিকই শুনেছে। ডাক্তার এটাই বলেছে।তাহলে কি মেঘনার বিয়ে করেছে?তাহলে কি তার বর্তমান স্বামি রিয়াদ সত্যি কথা বলেছিলো? যে মেঘনা পালিয়ে গিয়েছে এক বখাটে ছেলের সাথে?

সামনে থাকা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইলেন সে।দেখে বিধ্বস্ত মনে হচ্ছে। তাহলে এটাই কি মেঘনার সেই বখাটে প্রেমিক? কিন্তু কোনো দিক দিয়ে ছেলেটকে বখাটে মনে হচ্ছে না তার।বেশ বড়লোক ঘরের মনে হচ্ছে তার।

রাজশাহী আসার পর প্রাক্তন শশুড় বাড়ির দিক আসছিলেন তিনি।পথে শুনতে পেলেন একটা মেয়ের মারাত্মক এক্সিডেন্ট হয়েছে।তিনি গিয়ে দেখে এটা তার মেয়ে মেঘনা।তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ভর্তি করান।

পাখির কিচিরমিচির আর এক ফালি আলোক রশ্মি মেঘানার কাছে পৌঁছাতেই ঘুম ভেঙে গেলো মেঘনার।চোখ পড়ল সামনে থাকা দেওয়ার ঘড়ির উপর।সবে ভোর ছটা বাজে।নিস্তব্ধ পরিবেশ ।প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে তার।শরীরটাও দূর্বল যেনো।মেঘনা বালিশ পিছনে রেখে ভর করে বসল বেডের উপর।পাশের জানালার দিকে চেয়ে দেখল চারিপাশটা সবুজে ভরপুর।প্রকৃতি তার ভীষণ প্রিয়।সব দুঃখ যেনো এ প্রকৃতি ভুলিয়ে দেয়। কিছুক্ষন প্রকৃতি অনুভব করতেও তার কানে ভেসে আসলো চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ। পরিচিত কন্ঠ মনে হচ্ছিল তার কিন্তু মাথায় আসছিলো না কিছু। আওয়াজ একটু গভীর হতেই মেঘনা চেয়ারের উপর হালকা ভর দিয়ে দাড়াল।আলত পায়ে কেবিনের বাইরে দাড়িয়ে যা দেখল,,

চলবে?

(পর্ব ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here