#নব্যদিনের_সূচনা 🌾
🍂হুমাইরা হুর🍂
(২)
মাঝ রাতে গভীর পানি পিপাসায় আমার ঘুম ভেঙে গেলে।হাতের কাছে পানি না পেয়ে পানি আনার জন্য উঠে দরজার খুলতে গেলেই আশ্চর্য হলাম দরজা বন্ধ। কিন্তু রীতি আপু দরজা বাইরে দিয়ে কেনো লাগিয়ে দেবে?
সেই রাত ভয়ে ভয়ে কাটল আমার। বুঝতে পারছিলাম না রীতি আপু কেন দরজাটা বাইরে থেকে আটকে রাখেছিলো। এখনও আমার চারপাশে হানা দিচ্ছে?
রাতে ঘুম হলো না আমার।এসময় চোখটা লেগে এসেছিল আমার। রীতি আপু ঠাক্কায় ঘুম ভাঙলো। আমি দরজা আটকানোর কারন জিগ্যেস করতেই তিনি আমতা আমতা করে বলতে লাগল ভুলে লাগিয়ে দিয়েছিলো।কেন জানি কথাটা আমার বিশ্বাস হলো না।যাই হোক তখন কার মত চিন্তা বাদ দিলাম। রীতি আপু আমাকে খাওয়ার জন্য ডাকলেন। খাবার টেবিলে বসতেই সেই কালকের ছেলেটার সাথে দেখা হলো।আশ্চর্য কালকে যতটা সুন্দর ভেবেছিলাম তার থেকে বেশি সুন্দর। মাথা ঝাকড়া ঝাকড়া চুল,নীলাভ চোখের অধিকারী তিনি বেশি লম্বা না ৫ ফিট ৯ এর মত লম্বা। খাওয়ার সময় ছেলেটার সাথে আমার দু তিনবার চোখাচোখি হয়েছিলো।প্রথম দেখায় ছেলেটা কে আমার ভালো লেগেছিলো।
কিন্তু এই ভালো লাগে ই যে কাল হয়ে দাড়াবে কে জানত?
কেটে গেলো সাপ্তাহ খানেক।দেখতাম ছেলে রাতে আসত।আমার সাথে বেশ কয়েকবার চোখাচোখি ও হয়েছিলো। নিরবে পাশ কেটে এড়িয়ে যেতাম।ভালো লাগতে শুরু করেছিলো ছেলেটাকে আমার।রীতি আপুর সাথে কথায় কথায় জানতে পারলাম ছেলেটার নাম সোহান। সে পুলিশ।ছেলেটার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বোধ বেড়ে গেলো।ছোটবেলা থেকেই যেনো আমার পুলিশ দের প্রতি দুর্বলতা ছিলো। তাদেরকে আমি শ্রদ্ধা চোখে দেখতাম।কারণ আমার বাবা ছিলেন পুলিশ। আমার মনে হতো আমার বাবার প্রতিচ্ছবি যেন তারা।ছেলে টা পুলিশ জানার পর থেকে আমি আরো দুর্বল হয়ে পড়ি তার প্রতি। দিনে দিন যেন আমার ভালোলাগা তার প্রতি বাড়ছিলো।তার কথাবার্তা আমায় মুগ্ধ করে দিতো।আস্তে আস্তে তাকে আমি ভালবাসতে শুরু করি। কিভাবে মনের কথা বলব তা বুঝতে পারছিলাম না।ভেবেছিলাম তার মত সুদর্শন ছেলে আমার মত আমার মত এতীম কেন ভালবাসতে?কই আমি তো তেমন সুন্দর না। না আছে আমার লম্বা চুল,না গায়ে ফর্সা রঙ।
তার পাশে আমাকে মানাবে না।এটা নিজের কাছে অসহায় লাগত নিজেকে।যেই মেয়ে কিনা ঘর ছাড়া তার ও কি সুখ কপালে আছে?তাই নিজেকে গুটিয়ে রাখা শুরু করলাম।যতটা পারতাম এড়িয়ে চলাম।কখনো দেখা হলে দেখতাম তার নীলাভ চোখ আমার দিকে শান্ত ভাবে তাকিয়ে রয়েছে,যেন কিছু বলতে চায়। আমি নিরবে সেখান থেকে চলে যেতাম।কত দিন আর অন্যের ঘাড়ে বোঝা হয়ে থাকব? নিজের তো কিছু করতে হবে তাই না।তাই রীতি আপুকে টিউশনি যোগার করে দেওয়ার বললাম।আর লেখাপড়া শুরু করার কথা বললাম।সে আমার সাথে সহমত পোষণ করল।
কিন্তু আমাকে ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে সোহান একদিন অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে সে আমাকে জরিয়ে ধরে।হতভম্ব হয়ে যায় সেই দিন। হাত-পা যেন আমার স্তব্ধ হয়ে আসছিল। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল আমি যেন অজ্ঞান হয়ে যাব। আমাকে জড়িয়ে ধরেছে অঝোরে কাঁদতে থাকে।ছেলেরাও বুঝি কাঁদে?তাকে অসহায় লাগছিলো। আমি কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে আমাকে তার ভালোবাসার কথা জানায়। এক মুহূর্তে আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম তার ভালোবাসার কথা শুনে। ভেবেছিলাম হয়তো মনে ভুল।কিন্তু না আমাকে ভুল প্রমাণিত করে দিয়েে সে আমাকেই ভালোবাসে বলেন। সেও আমাকে ভালোবাসে কথাটা শুনে আমি যতটা খুশি হলাম তার থেকে বেশি অবাকই হলাম কারণ তার মত ছেলে আমার মত মেয়েকে ভালোবাসতে পারে এটা আদৌ সম্ভব।আমার প্রতি না জানা হাজারো অভিযোগ সে আমাকে জানায়।তার প্রতি দুর্বল থাকায় আমিও মানা করতে পারি না। আমাকে গড়ে উঠলো আমাদের মাঝে প্রণয় সম্পর্ক। নিজের থেকেও বেশি তাকে আমি বিশ্বাস করতাম। আমাদের সম্পর্কের কথা রীতি আপুও পর্যন্ত জানতো।। এর মাঝে আমি ভার্সিটি এডমিশন এর প্রস্তুতি নিতে থাকি। তিনি আমাকে সাহায্য করতেন। রীতি আপু আমাকে তিনটি টিউশনি খুজে দিয়েছিল। তিনি আমাকে বাইকে করে আমাকে সেখান দিয়ে আসতেন।হাজারো অভিযোগের ঝুড়ি নিয়ে তার কাছে বসতাম।নিজেকে খোলা পাতার ন্যায় তার কাছে উপস্থাপন করেছিলাম।
কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আরকি ভালোবাসাও আমার ভাগ্যে ততদিন জুটলো না। ভেবেছিলাম তিনি হয়তো আমাকে ভালোবাসেন আমাকে কখনো ধোকা দিবেন না। কিন্তু না তিনি আমার বাবা মায়ের মতো আমাকে ধোকা দিলেন ।
নিজের ভালোবাসার মানুষ কে অন্য এক মেয়ের সাথে ঘ`নি`ষ্ঠ অবস্থায় দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। মাথায় আমার কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল আর মেয়েটা যে রীতি আপু হতে পারে তা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি র।রীতি আপু আমার সাথে এমনটা করবেন তা আমার পক্ষে ভাবা অসম্ভব ই ছিলো।তিনি তো আমার বোনের মত ছিলেন। কিন্তু দুইজন তো ভাই-বোন তাহলে তাদের মধ্যেই নোংরা সম্পর্ক কিভাবে সম্ভব? আমার মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিল।
তাদের একেবারে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে আমি এসে পৌঁছে ছিলাম। বাসার চাবি থাকায় ঢুকতে সমস্যা হয় নি আমার।টিউশন যাওয়ার পর শরীর টা ভালো লাগছিলো না তাই একটা টিউশন না করে চলে এসেছিলাম তাড়াতাড়ি বাসায়।নিজের রুমে যাওয়ার সময় অস্পষ্ট কিছু শব্দ শুনতে পাই।কি হয়েছে তা দেখার জন্য সামনে যেতেই যে এমন অবস্থা দেখব তা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি তখন । তারা অসম্ভব নোংরা ভাষায় কথা বলছিলো।তাদের কথাবার্তা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে যাই।
কথা গুলো এমন ছিলো যে সোহান আমাকে কখনেই ভালোবাসে নি। আমাকে ভোগ করার জন্য এমন করেছে।আর সোহান আর রীতি আপু ভাইবোন ও না।তারা হলো এসব নোংরা কাজে একে অপরের পাটনার।রীতি আপু মেয়েদের ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে আসে।আর সোহান তাদের সাথে প্রেমের নাটক করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে তার ভিডিও বানিয়ে রাখে। পরে মেয়েদের কে ব্লাকমেইল করে তারা দিয়ে নোংরা কাজ করায়।আর আমি নাকি তাদের পরবর্তী শিকার।তাদের কথা না শুনলে মেয়েদের বয়স্ক লোকের কাছে বেঁচে দেন।
কথা গুলো শুনে আমার ভয়ে গা কাপতে লাগল।এ কোন নরকে এসে পৌছেছি। এক নরক থেকে বের হয়ে সেধে সেধে আর নরকে এসেছি?রীতি আপুকে ভালো ভাবতাম আর তিনিই আমাকে এ জঘন্য কাজের সাথে যুক্ত করতে চান। ভেবেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো আমার। হটাৎ করে রীতি আপু আমাকে দরজার পাশে দেখে ফেললেন।তৎক্ষনাৎ সে সোহানকে ঠাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে দিয়ে আমার কাছে আসতে লাগলেন। রীতি আপুকে আমার দিকে আসতে দেখে আমি পালাতে চেষ্টা করলাম।কিন্তু ভাগ্য সহায় হলো না। রীতি আপু আমার চুলের মুঠি ধরে চেপে ধরল।আমি ছাড়াতে চেষ্টা করলে সোহান এসে আমাকে জোরে কয়েকটা থাপ্পড় দিল।আমি যেনো নেতিয়ে পড়ালাম।রীতি আপু আর সোহানের এই রুপ যেনো কোনো মতেই আমি মানতে পারছিলাম না। আমি রীতি আপুর কাছে ভয়ে আকুতি মিমতি করতে থাকি আমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য।কিন্তু তারা আমাকে ছাড়তে নারাজ।আমাকে দিয়ে নাকি অনেক টাকা কামাই করতে পারবে।রীতি আপু আমার চুলে মুঠি ধরে আমি যে রুমে থাকতাম সেই রুমে নিয়ে গেলেন। আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে দরজা আটকে দিলেন।কি করবো আমি বুঝতে পারছিলাম না। এ কোথায় এসে পড়লাম? যেই সম্মান হারানোর ভয়ে নিজের বাড়ি থেকে চলে আসলাম সেই সম্মান এখন বেচতে হবে আমার?
এসব ভাবতে ভাবতে চোখ লেগে গেলো।দরজার খোলার শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুলে দেখি সোহান এসেছে।হাতে একটা ক্যামেরা। বুঝতে পারলাম না সোহান কি করবে এটা দিয়ে।মনে ভয় দানা বাঁধতে থাকল। সোহান রুমের এক কোণায় ক্যামেরা সেট করল। করে নিজের শার্ট খুলে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল।কি হতে চলেছে তা আন্দাজ করে আমার বুকের ভিতরে হু হু করে উঠল।তবে কি…
চলবে?