#নব্যদিনের_সূচনা 🌾
🍂হুমাইরা 🍂
(৫)
রৌদ্রময় দুপুর। চারদিকে সূর্যের প্রখান্ড উত্তাপ।গা ঝলসানো রোদ যেন ভস্ম করে দেবে।এক ফোটা বাতাসের ছিটে ফোটাও যেনো নেই।
সূর্যের তাপ মাথার উপর তীর্যক ভাবে পড়ছিলো।প্রচন্ড পিপাসায় গলা যেন শুকিয়ে আসছিলো।পার্স এ হাত দিয়ে দেখলাম, কাছে চার হাজার পাঁচশ টাকার মত।পাঁচশ টাকার মত শেষ হয়ে গিয়েছে খাতা কলম খাবার সামগ্রি কিনতে গিয়ে। খুব ভেবে চিন্তে টাকা খরচ করতে হবে এটায় যেন শেষ সম্বল।বই ও কিনতে হবে আর আমার পড়া জন্য তো জামা কাপড় ও নেই।সেই একসেট জামা পড়ে এসেছিলাম কাল। কিন্তু এত কম টাকায় কিভাবে কি করব ?সেই চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছিলো মাথায়।
ক্যাম্পাসে এসে ভাবতে লাগলাম এখন কি করব আজকে একটা ক্লাস করে বেরিয়ে গেলাম, বাকি ক্লাস করার ইচ্ছে টা নেই। চারদিকে জোড়ায় জোড়ায় ছাত্র ছাত্রী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।হটাৎ কানে এক সুর ভেসে উঠল। কেউ মনে হয় গান গায়ছে। যেই হোক তার গলা টা ভীষণ সুন্দর। যেতে গিয়েও থেকে গেলাম।আমার যে ভীষণ কাজ।হাতে টাকা নেই কি থেকে করবো বুঝতেই পারছিলাম না।
হাজার এক খরচ করে কোনো মত মত দুটো
জামা কিনলাম।হাতে আছে আর মাত্র কিছু টাকা। এখনো বই কেনা বাকি।রুমমেট আমার থেকে দুই ইয়ারের সিনিয়র এক আপু ছিলো।খুব মিষ্টি ভাষি।আপু আমাকে তার বই দিয়েও হল্প করার কথা বলছিলেন কিন্তু ডিপার্টমেন্ট আলাদা থাকায় দিতে পারেন নি।কিন্তু লাইব্রেরির কথা বললেন যেখে কম দামে পুরাতন বই পাওয়া যায়।যা শুনে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠল।যাক তাহলে বই কিনতে সমস্যা হবে না তেমন।
সময় যেতে লাগল।রুমমেট আপুটার নাম ছিলো কিয়া। কিয়া আপু আমাকে ২ টো টিউশনি খুজে দিয়েছিলেন।সব মিলিয়ে ভালোই চলছিলো দিন।
একদল বন্ধু বান্ধব জুটেছিলো আমার।তাদের সাথে থেকে মনের সব দুঃখ যেনো ভুলে যেতাম।সিহা,ফিহা, রাদন,জুদান আর রিকি। সিহা ফিহা জমজ বোন।তাদের সাথে থেকে জেনে নিজেকে সেই চঞ্চল মেয়েটা মত হতো,যে হারিয়ে গিয়েছিলো।তাদের সাথে দিন গুলো ভালোই চলছিলো।পড়শোনা বন্ধু বান্ধব সব পেয়ে আতীত থেকে আস্তে আস্তে করে বের হয়ে এসেছিলাম।
হটাৎ একদিন এক স্যার অফিসরুমে ডাকলেন।তিনি সিনিয়র লেকচারার। মনে ভয় জেকে বসল।আমি তো কিছু করিনি তাহলে?কিন্তু তিনি যা বললেন তা শুনে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। তিনি বললেন
–তোমার নাম সিদরাতুল মেঘনা। তোমার বাবার নাম সায়ন আহমেদ আর মার নাম মুয়িয়া তানজুম।তোমার দাদার নাম নিশ্চয়ই আয়মান আহমেদ। তোমার বাবা ট্রেন এক্সিডেন্টে স্পট ডেড। তোমার মা দ্বিতীয় বার রিয়াদ হাসান কে বিয়ে করেছে।
স্যারের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলাম।তিনি আমার ডিটেইলস কিভাবে জানেন? যতদুর জানি মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে আর এত তথ্য তো কেউ জনার কথা নয়। আর আমি কখনো তা জানায়ও নি কাউকে।তাহলে স্যার কিভাবে জানলেন? আমার এখানে থাকার কথা তিনি আবার জানিয়ে দিবেন না ?
তাহলে কি আবার আমার বিপদ? স্যার আমাকে শান্ত হয়ে বসতে বললেন।মনে ভয় আবার জেকে বসলো। অতীত কি আমার পিছু ছাড়বে না তাহলে?
স্যার আবার যা বললেন তা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলেন।
তিনি বললেন আমার বাবা, তিনি আর রিয়াদ আংকেল একসাথে স্কুল কলেজ শেষ করেছেন।তারা তিন জন বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলেন।কিন্তু রিয়াদের নজর আমার বাবার সকল জিনিসের উপর ছিলো। আমার বাবার যা পছন্দ হতো রিয়াদের ও সেই জিনিস ই পছন্দ হতো।রিয়াদ এর পরিবার গরিব ছিলো। এমনকি রিয়াদের লেখাপড়ার খরচ টাও স্যার আর আমার বাবা মিলে চালাতেন।রিয়াদ যা চাইত আমার বাবা তাই দিয়ে তা দিয়ে দিতেন ততক্ষণাৎ।
একদিন গ্রামে টুরে গেলে আমার বাবার চোখে পড়ে আমার মাকে।প্রথম দেখায় আমার মাকে তিনি ভালোবেসে ফেলেন।সেই কথা তিনি রিয়াদকে আগে বলেন। রিয়াদের ও ভালো লেগে যায় আমার মাকে।তিনি তখন কিছু বলেন না। পারিবারিক সম্মতি না থাকায় আমার বাবা আমার মাকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেন।পরে অবশ্য পরিবার মেনে নিয়েছিলো আমি হওয়ার পর।কিন্তু আমাকে কখনোই রাজশাহী।
কথাগুলো বলে থামলেন।তিনি আরো বললেন পালিয়ে বিয়ে করার পর আমার বাবা খুব কষ্টে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন। স্যার তখন উচ্চ ডিগ্রির জন্য আমেরিকায় গিয়েছিলেন।তাই কোনো সাহায্য তিনি আমার বাবাকে করতে পারেন নি।যতদিনে তিনি দেশে ফিরে আসেন জানতে পারে আমার বাবা মারা গিয়েছেন আর মা রিয়াদ হোসেনকে বিয়ে করেছেন।স্যারের কিছু করার ছিলো না ততদিনে।
স্যার কথা গুলো শুনে চোখ গুলো ঝাপসা হয়ে আসে।আসলেই আমার বাবা মানুষটা সরল ছিলেন।মানুষ টা নিজের বন্ধুর জন্য সব করতে রাজী ছিলো।তাই কাছের বন্ধু ই তাকে ধোঁকা দিয়ে দিয়েছে।কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম স্যার আমাকে চিনলেন ই বা কিভাবে?
স্যার বললেন আমার চেহারার সাথে নাকি আমার বাবার চেহারার মিল রয়েছে।আমাকে দেখলেই নাকি আমার বাবার কথা মনে পড়ে যেতো।তিনি এই কথা প্রথমে গুরুত্ব দেন নি।পরে একদিন আমার নাম শুনে তিনি আমার ভার্সিটি ভর্তি কাগজ চেক করেন।ফলে তিনি সিউর হয়ে যান আমিই তার বন্ধুর মেয়ে।
স্যার আমার মাথার উপর তার স্নেহ ভরা হাত রাখেন।আর জীবনে এগিয়ে যেতে বলেন।স্যারকে আমার দাদাবাড়ী সম্পর্কে জিগ্যেস করতেই তিনি বলেন বাংলাদেশ আসার পর তিনি সেখানে গিয়েছিলেন পড়ে জানতে পারেন আমার দাদা বাড়িটা বিক্রি করে রাজশাহীরই কোথাও নতুন বাড়ি করেছেন। তাই তিনি আর খোজ পান নি।যা শুনে আমার মনে আশার আলো নিভে গেলো।কিন্তু পরমুহূর্তেই স্যার বললেন আমার বড় চাচার ছেলে আফনান এই ভার্সিটিতেই পড়েন।কথা টা শুনে আমার খুশিতে আমার মন ভরে উঠে।তাহলে কি আমি আমার দাদাবাড়ী সাথে যোগাযোগ করতে পারব?
সময় বহমান।কারো জন্য থেমে থাকে না। দেখতে দেখতে আমার ভার্সিটি লাইফের একটা বছর কেটে গেলো।সোহান নামক অধ্যায় যেনো কবেই ভুলে গিয়েছিলাম। বন্ধু বান্ধব এর সঙ্গ যেন এর জন্য অনেক অংশে দায়ী। তারা না থাকলে কখনোই নিজের মত বাচতে পারতাম না আমি।প্রথম প্রথম হতাশা কাজ করত মনে।কিন্তু তাদের সঙ্গ আর কিয়া আপুর সহযোগীতায় যেনো আবার বাচার আশা খুজে পেলাম। আফনান , আমার বড় চাচার ছেলে তাকে আমি খুজে পাই নি হাজারো ছাত্র-ছাত্রী মাঝে। স্যার যতদিন বেঁচে ছিলেন আমাকে মেয়ের মত ই দেখেছেন।যথা সম্ভব সাহায্য করেছেন।তার সাথে পরিচয় হওয়ার ২ মাসের মধ্যেই স্যার হার্ট অ্যাটাক এ মারা যান। নিজেকে যেন অসহায় লাগছিলো।মনে হয়েছিলো আরেক পিতৃছায়া থেকে বঞ্চিত হয়েছিলাম সেদিন।তাই আফনান কে খুজে পেতে কোনো সাহায্য তিনি করতে পারেন নি।
এভাবে জীবন চলছিলো আমার।তবে সখ্য গড়ে উঠেছিলো মুগ্ধ ভাইয়ার সাথে। তার সাথে আমার যেন টমেন জেরির মত ঝগড়া। তিনি আমাকে আর আমি তাকে দুচক্ষে সহ্য করতে পারতাম না।তিনি আমার পিছনে লেগেই থাকতেন। উহ ভাবছেন মুগ্ধ টা আবার কে? মনে আছে ঐ যে যেদিন পালিয়ে রাজশাহী এসেছিলাম যে ছেলেটা আমাকে সাহায্য করেছিলো। এমনকি চিমটিও কেটে ছিলো সেই মুগ্ধ। আমার থেকে তিন ইয়ারের সিনিয়র মুগ্ধ। মুগ্ধ আর তার দল আমাদের পিছনে পড়েই থাকত। সব মিলেয়ে দিন ভালোই কাটছিলো।
ঈদের ছুটি দিয়ে দিয়ে দিয়েছিলো।হল গুলো যেন ফাকা হয়ে আসছিলো।একদিন ফোনে একটা আননোর নম্বর দিয়ে কল আসল।কোনো কিছু না ভেবে কল টা রিসিভ করলাম। কল রিসিভ করতেই পরিচিত এক পুরুষালী কন্ঠস্বর ভেসে আসল।সে বলল,
–আমি রাজশাহী আসছি মেঘনা।
মুখ থেকে অজান্তেই বেরিয়ে আসলো
–সোহান
তবে কি বিপদ শেষ হলো মেঘনার জীবনে? নাকি ক্ষণিক সময়ে আগমন ছিলো সুখের?
চলবে?
(আজকের পার্ট টা একটু সাদামাটা কমন টাইপ লাগতে পারে। দুঃখকর সময় ছাড়াও তো সুখের কিছু সময় আসে জীবনে।সেগুলো নিয়েই আজকের এই পর্ব টা।)