#নব্যদিনের_সূচনা🌾
🍂হুমাইরা হুর🍂
(৩)
সোহান রুমের এক কোণায় ক্যামেরা সেট করল। নিজের শার্ট খুলে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল।কি হতে চলেছে তা আন্দাজ করে আমার বুকের ভিতরে হু হু করে উঠল।তবে কি আজ রক্ষে নেই?
সোহান আমার একবারে কাছে চলে আসল।সোহানের নিশ্বাস গুলো আমার মুখের উপর পড়ছিলো।সোহান শক্ত করে আমার দুই হাত দুটো চেপে ধরেছিল। তার থেকে নিজেকে বাঁচতে চেষ্টা করছিলাম কিন্তু পারছিলাম না। ঘৃণা হচ্ছিল নিজের প্রতিই যে এমন মানুষকে আমি ভালোবেসেছিলাম। নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করেছিলাম।এমন নিষ্পাপ মুখশের পিছনে যে একজন ভক্ষক আমি বুঝতে পারিনি। কি নিখুত অভিনয় ছিলো তার। কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। পুলিশদের তো` আজ পর্যন্ত আমি সম্মানের চোখে দেখতাম। তারাই তো সমাজ রক্ষা করে।আজ তারাই আবার মেয়েদের সর্বনাশ করতে দুদন্ড ভাবে না। রক্ষকই তো ভক্ষক হয়ে দাড়িয়েছে সমাজের জন্য।
কোনো মতেই সোহানের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারছিলাম না।বিশাল দেহী এই শক্তপোক্ত অমানুষের কাছে আমার শক্তি যেন কিছুই না। সোহান আমার দিকে ক্রমাগত অগ্রসর হয়ে যাচ্ছিলো।তাহলে কি আমিও আজকের পর থেকে নোংরা মেয়ে হিসেবে বিবেচিত হব? সমাজের কাছে নিজেকে বিক্রি করেতে হবে?ধ`র্ষি`তার ট্যাগ লাগাতে হবে নিজের নামের উপর।
সোহান আমার ঘাড়ে মুখ ডুবালো।বাজে ভাবে স্পর্শ করা শুরু করেছিলো।আমি যেন নরক যন্ত্রণা ভোগ করছিলাম।আল্লাহ কে বার বার ডাকছিলাম।
সেই মুহুর্তে রীতি আপু আসল।রীতি আপু এসে সোহানকে থামিয়ে দিলো।এসে যা বলল তাতে আমার কিছুটা সময় এর জন্য স্বস্তি পেলেও পরবর্তীতে তা ভেঙ্গে যায়।
রীতি আপু সোহান কে বলে যে আমারে সাথেকিছু না করতে এই মুহুর্তে। কারণ বিকেলে তাদের একজন বড়লোক কাস্টমার আসবে।যে কিনা তাদের অনেক টাকা দেয়।রীতি আপু আমার ছবি দেখিয়েছিলো তাকে।এক দেখায় লোকটার মনে ধরে যায়।তার আমাকে নাকি চাই। তাই তারা আমাকে বিক্রি করে দিবে।কিন্তু লোকটার এর শর্ত যে আমাকে তার আগে কেউ ছুতে পারবে না।আর আমাকে পেলে অনেক মোটা অংকের টাকা দিবে। অনেক টাকার কথা শুনে রীতি আপু লোভ সামলাতে না মেরে তাকে হ্যা করে দেয়।তার চোখ মুখ লোভে চিক চিক করছিলো।
রীতি আপুর কথা শুনে সোহান রাগ উঠে যায়।সে চেয়েছিলো সে আমাগে প্রথমে ভোগ করবে।কিন্তু রীতি আপু বাধা দেওয়ায় পাশে থাকা টেবিল টা লাত্থি মেরে চলে যায়।যাওয়ার আগে আমার উপর অগ্নিময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে যায়।নীলাভ চোখের এক সুদর্শন ছেলের ভেতরে যে জঘন্য এক শয়তান আছে তা সামনে থেকে দেখলে বোঝাই যায় না। রীতি আপু আমার জন্য খাবার রেখে চলে যান।আর আমাকে হুমকি দিয়ে যান।
বিছানার উপর ধপ করে বসে পড়লাম।চারিপাশ যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো। আমি এই শয়তানদের চিনতে কেন পারি নি আগে থেকে?
ভালো ভাবে ভেবে দেখলাম সবই আমার চোখের সামনে ছিলো।অন্ধ বিশ্বাসের কারণে আমি কিছুই বুঝতে পারি নি।
রীতি আপুর বাসায় দুই রুম থাকায় এক রুমে আমি থাকতাম আরেক রুমে আপু থাকত। ঘরে কোনো সোফা ছিলো না। এদিকো সোহান তো এ বাসাই থাকত।কিন্তু রাতে কই থাকত?আর আমার রুমের দরজা প্রাই বাইরে দিয়ে লাগানো থাকত। এসব কথা কোনো দিন মাথাই আসে নি তারা এক সাথে এক বিছানায় রাত পার করত।আর আমি কি পরিমাণ বোকা যে চোখের সামনে দিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে পাত্তা ই দেই নি।আমার সামনেই ঘটছিলো সব আর আমি কিনা কিছু বুঝতেই পাটি নি।
আবার রীতি আপু যখন কলেজে পড়ত, তখন একবার শুনেছিলাম রীতি আপুর ভিডিও ভাইরাল হয়েছিলো।আমি তখন বুঝিনি ব্যাপার টা কি?সেই কথা শোনার পর রীতি আপুর যে কি কান্না। তিনি কিভাবে কিভাবে প্রমান করে দেন সেটা সে ছিলো না,এডিট করে তার মুখ বসানো হয়েছে।কিছুদিন গুঞ্জনের পর সব শান্ত হয়ে গিয়েছিলো।অনেকে আমাকে বলেছিলো রীতি আপু ভালো না। সেইসব কথা তখন পাত্তা দেই নি। কারণ পুরো কলেজে রীতি আপু ছাড়া আমার কাছের মানুষ কেউ ছিলো না।তাই অসম্ভব বিশ্বাস করতাম।আসলে মেয়েরা নাকি সহজেই বিশ্বাস করে ফেলে।আজ হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছি কোনো কিছু মিথ্যা ছিলো না।
রীতি আপুকে বিশ্বাস করা আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল ছিল তারপরে বড় ভুল ছিলো সোহানকে ভালোবাসা। ভাবতে পারিনি সবচেয়ে কাছের দুজন মানুষ আমাকে এভাবে ধোঁকা দিবে।
জীবনের সামনে যে এখনো অনেক বিপদ। এখন আমার কি করতে হবে? অন্ধকার লাগছিল চারিপাশ।এই বিপদের সময় সাহায্যের জন্য কেউ ছিলনা না।
না বসে থাকলে কোনো তো হবে না।নিজের জীবন সম্মান বাঁচানোর জন্য লড়াই করতে হবে। বিছানা ছেড়ে উঠলাম চারপাশ দেখতে লাগলাম কোনো ফোন বা টেলিফোন জাতীয় কিছু পাওয়া যায় নাকি।হন্নতন্ন হয়ে খুজলাম কোথাও কিছু পাই কি না।কিন্তু না কিছুই ছিলো না সেখানে।রীতি আপু আমাকে যে রুম দিয়েছিলেন সেখানে কোনো বারান্দা ছিলো না।ছোট একটা জানালা ছিলো। যেহেতু রীতি আপুর বাসা ৫ তালায় তাই কোনো ভাবে কাউকে ডাক দিলে শোনা যেত না।তখনই মাথায় আসলো কাগজে লিখে সাহায্য চাওয়ার কথা।তখনি আবার খুজতে লাগলাম কোনো কাগজ বা কলম আছে নাকি।অনেক খুজে একটা প্যাড পেলাম কিন্তু কোনো কলম বা পেনসিল পেলাম না। কি দিয়ে লিখব তাহলে?হটাৎ চোখে পড়ল একটা কাজল।কোনো মতে লিখলাম-
`আমি খুবই বিপদে পড়ছি।দয়া করে আমায় সাহায্য করুন।আমি রিজিপারি ভবন এর ৫ তলায় অবস্থান করছি।এরা আমাকে বেচে দিতে চায়।দয়া করে সাহায্য করুন।`
এতটুকু লিখে সামনে থাকা বল প্লাস্টিক ফুল এর সাথে আটকিয়ে নিচে ফেলে দিলাম। পালানোর কোনো সুযোগ ই পাচ্ছিলাম না। দরজা বন্ধ।
কি করবো ভাবতে ভাবতে চোখ লেগে গেলো।হটাৎ কারো বেল্টের আঘাতে ঘুম ভাঙ্গল। দেখলাম সামনে রীতি আপু আর সোহান দাড়িয়ে।রীতি বপুর হাতে সেই প্লাস্টিকের ফুল টা। তবে কি আমি বাচতে পারব না? ভয়ে গলা শুকিয়ে গেলো।ফুলটা রীতি আপুর হাতে পড়ে গেলো।
রীতি আপু এসে আমাকে কয়েকটা থাপ্পড় দিলো।আর বিচ্ছিরি ভাষায় গালাগালি করতে লাগল।বাড়িয়ালা নাকি চিঠি এটা পেয়ে বাসায় এসেছিলো।বাড়িয়ালা রীতি আপুকে দীর্ঘ দিন ধরে চেনার কারণে কতাটা ভুয়া মনে করে। তাও রীতি আপুকে সর্তক করে দিয়ে যায়।আমার জন্য তারা ফেসে যেতে গিয়েছিলো তাই তারা আমার রুমে আসে।আর মারতে শুরু করে।রীতি আপুকে থামিয়ে সোহান একের পর এক বেল্টের বাড়ি দিয়ে যাচ্ছিলো।ব্যাথায় কাতরাতে থাকলাম।এত যত্রণা আমি কোনোদিনও সহ্য করে নি।এক পর্যায়ে যেন আমি নেতিয়া পড়লাম।রীতি আপু দৌড়ে এসে সোহানের হাত থেকে আমাকে বাচিয়ে নীলেন।আর সোহানকে গালাগালি করতে লাগলেন।কারন আমি মরে গেলে তারা টাকা কিভাবে পাবে?
সোহান বেরিয়ে গেলো।রীতি আপু আমার ক্ষত জায়গায় মলম লাগাতে শুরু করলেন।আর শান্ত হয়ে আমাকে মেনে নিতে বললেন।। আর বলতে শুরু জরলেন তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা।
রীতি আপুর বাবা মা গরীব ছিলেন।তাদের আর্থিক সমসয়া তাকার কারনে তিনি তার ফুফু বাড়ি থেকে পড়া শোনা করতেন।তখন তার বয়স সবে ১২ বছর। অবুঝ ছিলেন তিনি। তার ফুফুতো ভাই ছিলো সোহান।একদিন রাতে যখন রীতি আপু পড়ছিলো তখন তার ফুফা তার কাছে আসেন। বিভিন্ন চকলেট,খেলনা দিয়ে কাছে বসান।অবুঝ রীতি আপু তখন তার কাছে গিয়ে বসত।খালু তাকে বলত আদর করবে। তাই বলে ঐদিন রাতে সেই ১২ বছরের রীতি আপুকে ধ`র্ষ`ণ করেন। অবুজ রীতি আপুর কান্না যেনো থামছিলোই না।খালু তাকে ভয় ডর দেখিয়ে দিনের পর দিন নি`র্যাতন করতে থাকে।রীতি আপুর বসয় যখন ১৫ বছর তখন তিনি গর্ভ`বতী হয়ে যান।সকল ঘটনা তিনি তার ফুফু কে জানান। ফুফু শুনে রীতি আপুকে মারা শুরু করে।মারতে মারতে আধমরা করে ফেলেন রীতি আপুকে।। আর ঐ অধমরা রীতি আপুকে ডাক্তারে কাছে নিয়ে যায় আর বাচ্চা টা নষ্ট করিয়ে ফেলেন সমাজের ভয়ে।এসব কিছুই দেখছিলো সোহান।সমাজের ভয়ে রীতি আপুর ফুফু ও চুপ থাকেন। রীতি আপুর বাবাকে কি করে বলবেন তাই তিনি রীতি আপুকে নিজের কাছে রাখেন।ফুফার অত্যাচার কমলেও রীতি আপুর ফুফু রীতি আপুকে অমানুষিক অত্যাচার করতেন।মাঝে মাঝে ফুফু না থাকলেও ফুফা আবার ও তার নোংরা কাজ করতেন।একদিন সোহানের কাছে হাতে নাতে ধরা পড়েন।ছেলের কাছে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারতেন না তিনি। ততদিনে সোহান রীতিকে ভালবাসতে শুরু করেছিলো।রীতিকে সোহান বাচানোর পর থেকে রীতিও সোহান কে ভালোবাসতে শুরু করে। সোহান রীতিকে পালিয়ে ঢাকা নিয়ে আসে।
সব কিছু ভালোই চলছিলো রীতি সোহানকে ভালোবাসায় নিজেকে বিলিয়ে দেয় সোহানের কাছে।সোহান ও যেন রীতিকে ভালোবাসত।তারা বিয়েও করে।কিন্তু রক্ত বলে কথা আছে না? বাপের মত ছেলে। সোহান এর মেয়ের নেশা ছিলো। সে রীতি ভালোবাসলেও মেয়েদের নিয়ে ব্যাবসা করত।সোহানের জন্য রীতি আজ মুক্ত।আর রীতি সেহানে ভালোবাসে বলে এই অন্যায়ের সাথে যুক্ত।
শুনে আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল।রীতি আপুও যে এতটা অসহায় ছিলো তা ভাবতেও পারি নি।রীতি আপু চলে গেলে রেখে গেলেন আমাকে এক গোলক ধাধায়। কিছুক্ষণ পর সোহান আসল।কিছু জামা কাপড় আমার সামনে রাখল।আর পরে বললেন।আমি না পড়ায় সোহান আমাকে জোড় করে পড়িয়ে দিতে গেলে রীতি আপু বাধা দেয়। সোহান কে যেতে বলে চুপচাপ আমাকে জামাগুলো পড়তে বলেন।
আমাকে সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়ে রীতি আপু আর সোহান এক বয়স্ক লোক এর সামনে বসালেন।বয়স্ক লোকটা আমাকে দেখে আমার গায়ে হাত দেওয়ার চেস্টা করলেন। আমি সরে যেতেই আমার দিক হেসে তাকিয়ে বললেন
`পাখি যত উরার উর।একটু পর আমার খাঁচায় বন্দি হবি। `
আমি তখনো পালানোর কথা ভাবছিলাম। রীতি আপু আমাকে সুন্দর একটা রুমে বসিয়ে রেখে গেলেন।আর বলে গেলেন চুপচাপ যা হচ্ছে মেনে নিতে।রীতি আপু যেতে না যেতেই বয়স্ক লোকটা আমার কাছে এগিয়ে আসতে লাগল। আমার গায়ে থেকে ওড়না টান দিয়ে ফেলে দিলো মাটিতে।তাহলে কি….
চলবে?
(আজকের পর্ব টা ১৪০০+ শব্দের। বড় করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।আপনারা রেসপন্স করে আমার উৎসাহ বাড়ে লেখার প্রতি।হ্যাপি রিডিং)