#বৈধ_দৃষ্টি
#পর্বঃ০৯
#ফাতেমা_জান্নাথ
—“আমার ভাইয়া কে খু’ন করেছেন কেন রাফিয়া “?
আচমকা সাফওয়ান এর এমন কথা শুনে পিছন ফিরে তাকায় রাফিয়া। রাফিয়া এশার নামাজ পড়ে বেলকনি তে গিয়ে বাইর এর স্নিগ্ধ মনোরম পরিবেশ দেখছিলো।প্রকৃতির স্নিগ্ধ তার মাঝে যখন রাফিয়া ডুবে যাচ্ছিলো পুরো পুরি ভাবে এমন সময় পিছন থেকে সাফওয়ান এসে কথা টা বলে উঠে।রাফিয়া আচমকা সাফওয়ান আসাতে যত টা না অবাক হয়ে ছিলো তার থেকে ও বেশি অবাক হয়ে গিয়ে ছিলো সাফওয়ান এর মুখ এর তিক্ত তায় ঘেরা কথা টা শুনে।রাফিয়া মনে মনে ভাবে,”আমি সাইফ কে খু’ন করেছি?আমি কেন নিজ এর স্বামী কে খুন করবো? কি বলছে এসব সাফওয়ান “?
রাফিয়া কে কথা বলতে দেখে সাফওয়ান ভ্রুলতা কুঁচকে ফেলে। রাফিয়া এর দিকে সন্দেহী দৃষ্টি তে তাকায়।চোখ এর মাঝে রাফিয়া এর জন্য এক রাশ সন্দেহ এনে রাফিয়া এর উদ্দেশ্য করে স্বগতোক্তি করে বলে,
—কি হলো বলছেন না যে,আমার ভাইয়া কে কেন মে’রে ফেলে ছিলেন রাফিয়া? কি দোষ ছিলো আমার ভাইয়ার?
সাফওয়ান এর কথা তে রাফিয়া এর ভাবনার চাদরে ছেদ ঘটে। সম্বিৎ ফিরে এসে সাফওয়ান এর দিকে অবাক চাহনি নিয়ে তাকিয়ে বলে,
—আপনি এসব কি বলছেন?
—আমি কি বলছি আপনি বুঝতে পারছেন না?
—নাহ।দয়া করে বুঝিয়ে বলুন।
—আমি কখনো কাউ কে জিজ্ঞেস করি নি আমার ভাইয়া কি ভাবে মা’রা গেছে?কারণ আমি জানতাম আমার ভাইয়া স্বাভাবিক মৃ’ত্যু বরণ করেছে। কিন্তু আসলে তা না।আমি জানতাম তা সম্পূর্ণ ভুল।আমাকে ভুল বলা হয়েছে।আমার ভাইয়ার মৃ’ত্যুর পিছনে তো আপনার হাত আছে।আপনি আমার ভাইয়া কে খু’ন করেছেন।আমি সব জেনে গেছি।আর কত লুকিয়ে রাখবেন আমার থেকে সব কিছু?এখন বলুন কেন আমার ভাইয়া কে মে’রে ছেন?কেন এই ভালো মানুষ এর মুখোশ নিয়ে আছেন সবার সামনে?আমার ভাইয়া কে মা’রতে কি একবার ও হাত কাঁপে নি আপনার?আপনার -ই তো স্বামী ছিলো। তাহলে কি ভাবে মা’রতে পারলেন আমার ভাইয়া কে?আপনার উদ্দেশ্য কি ছিলো? আমাকে বিয়ে করা?নাকি অন্য কারো সাথে এ্যাপেয়ার ছিলো?তার জন্য- ই আমার ভাইয়া কে মে’রে ছেন।কিন্তু আপনার প্ল্যান সাকসেস হতে পারেনি আমাদের দুই পরিবার এর সিদ্ধান্ত এর জন্য।দুই পরিবার মিলে আমার সাথে বিয়ে দিয়ে দিলো। নাকি আমি- ই ছিলাম আপনার উদ্দেশ্য?
বি’ষাক্ত কথা গুলো বলে থামে সাফওয়ান। রাফিয়া ছলছল চোখে একবার সাফওয়ান এর দিকে তাকায় মাথা তুলে।তার চোখ জ্বালা করছে প্রচুর। চোখ ভরে উঠেছে।চোক্ষু কোটর জল কণায় টইটম্বুর হলো।সাফওয়ান এর কথা গুলো যেন বি”ষাক্ত সুচালো তীর এর মতো এসে তার দেহ বিঁধেছে। রাফিয়া নিজে কে ধাতস্থ করার প্রয়াস চালিয়ে সাফওয়ান এর উদ্দেশ্যে স্বগতোক্তি করে বলে,
—আপনি এসব কি বলছেন? আমি কেন আপনার ভাইয়া কে মা’রবো বলুন? বিশ্বাস করুন আপনি যা বলছেন তার কিছু- ই সত্যি না।আমি এসব কিছু- ই জানি না।কিছু- ই করি নি।আপনার ভাইয়া তো আমার স্বামী ছিলো। আমি কেন নিজ এর স্বামী কে মা’রতে যাবো বলুন?আপনাকে এসব কথা কে বলেছে?আপনার ভাইয়া তো অসুস্থ ছিলো। উনার পেটে তো….
রাফিয়া পুরো কথা বলার আগে- ই সাফওয়ান রাফিয়া কে থামিয়ে দিয়ে বলে,
—একদম চুপ করুন।বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে কথা বলবেন না।এখন তো নানা এক্সকিউজ দিবেন আপনি।যা আমি শুনতে চাচ্ছি না।আপনি আমার চোখ এর সামনে থেকে যান এখন।আমার মাথা এখন গরম আছে।আপনাকে আমার সামনে এখন এখানে আর এক মুহূর্ত দেখলে আমি জানি না আমি রাগ এর বশে কি থেকে কি করে ফেলি।তাই আমার সামনে থেক যান।একদম আমার চোখ এর সামনে আসবেন না।তবে ভাববেন না আপনার মতো খু’নি কে আমি এত সহজে ছেড়ে দিবো। আর যাই হোক আমার ভাইয়ার খু’নি কে এত সহজে তো আর ছাড়া যায় না।
কথা গুলো বলে সাফওয়ান থামতে -ই রাফিয়া কাঁদতে কাঁদতে বেলকনি থেকে রুম এর মাঝে চলে আসে।সাফওয়ান বেলকনি তে দাঁড়িয়ে শূণ্য দৃষ্টি তে সামনে এর দিকে চেয়ে আছে।সে নিজ এর রা’গ কে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।সাফওয়ান রুমে এসে দেখতে- ই দেখে রাফিয়া ওয়াশরুম থেকে ওযু করে বের হয়েছে।সাফওয়ান এর সাথে চোখে চোখে পড়তে- ই রাফিয়া নিজ এর নজর ঘুরিয়ে ফেলে।দৃষ্টি অন্য দিকে নেয়।সাফওয়ান সেই দিকে তাকিয়ে কোনো প্রকার বাক্য ব্যয় না করে বাহির হয়ে যায় ঘর থেকে।রাফিয়া সাফওয়ান এর যাওয়ার পানে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।সাফওয়ান তাকে ভুল বুঝেছে এটা মনে আসতে- ই যেন কান্নারা এসে দলা পাকাচ্ছে রাফিয়ার গলায়।
চোখ এর পানি মুছে জায় নামাজ টা নিয়ে নামাজ পড়তে দাঁড়িয়ে যায়।সকল কথা সকল অভিযোগ ব্যক্ত করে খোদার দরবারে। পানাহ চাইতে থাকে শ’য়তান এর প্ররোচনা থেকে।
🌸🌸
রাত সাড়ে এগারো টা বাজে।সাফওয়ান তার বাবার গাড়ি টা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে।নিজে- ই ড্রাইভিং করছে।অনুশোচনা এর গন্ধ যেন তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বয়ে ভেড়াচ্ছে। রাফিয়া এর সাথে সে এমন ব্যবহার করতে চায়নি। কিন্তু নিজ এর রা’গ কে কন্ট্রোল করতে পারেনি।
ভেবে ছিলো শান্ত ভাবে- ই রাফিয়া কে সব কিছু জিজ্ঞেস করবে।কিন্তু রাফিয়া এর সামনে যেতে- ই আয়ান এর বলা প্রতি টা কথা যেন কান এর মধ্যে পুনরায় বাজ ছিলো। কান এর মধ্যে যেন পুনরায় বাজছিলো রাফিয়া ভাইয়ার খু’নি। ভাইয়া কে রাফিয়া মে’রে ফেলেছে।এসব মনে হতে- ই তো নিজ এর রা’গ কে কন্ট্রোল করতে না পেরে রাফিয়া কে ওই ভাবে বলে ফেলেছে।
দুপুরে আয়ান যখন এসে বলে ছিলো,
—শেষ পর্যন্ত নিজ এর ভাইয়ার খু’নি কে বিয়ে করলে তুই”?
কথা টা শুনতে -ই যেন সাফওয়ান থমকে গেছে।এসব কি বলছে আয়ান।বিশ্বাস করতে পাচ্ছে না।সাফওয়ান আয়ান কে বলে উঠে,
—কি বলছিস কি তুই আয়ান?রাফিয়া কেন ভাইয়া কে খু’ন করতে যাবে?
—কেন তুই জানিস না?
—নাহ।কারণ ভাইয়া যখন মা’রা গিয়ে ছিলো তখন আমি সিঙ্গাপুর ছিলাম।ভাইয়া মা’র যাওয়ার তিন মাস পরে- ই তো আমি বাড়ি তে আসি।মা বলে ছিলো ভাইয়া অসুস্থ ছিলো। এর বেশি কিছু তো আমি জানি না।আর ভাইয়ার মা’রা যাওয়া নিয়ে ও আমি কোনো কথা বলিনি। তাই কেউ বলে ও নি।কিন্তু রাফিয়া যে ভাইয়ার খু’ন করেছে সেটা তুই জানলি কি ভাবে?
সাফওয়ান এর কথা তে তাল মিলিয়ে নয়ন বলে উঠে,
—হ্যাঁ, রাফিয়া ভাবি যে খু’নি তা তুই কি ভাবে জানিস?
আয়ান তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে বলে,
—আমাকে জিসান বলেছে।যেই দিন সাইফ ভাইয়া মা’রা গিয়ে ছিলো তার পর এর দিন তোকে আমি বার বার ফোন দিই।তোকে ফোনে না পেয়ে আমি তোর ফুফাতো ভাই জিসান কে ফোন দিই।আর জিসান কে ফোন দিয়ে তোর খবর জিজ্ঞেস করতে- ই জিসান বলে বড় ভাইয়া মা’রা গেছে।তাই তুই আপসেট হয়ে আছিস।হয়তো ফোন ভাইব্রেট করে রেখেছিস।আমি যখন আবার জিসান কে জিজ্ঞেস করি,ভাইয়া কি ভাবে মা’রা গিয়েছে?” জিসান আমার প্রশ্ন এর প্রতি উত্তরে বলে ছিলো, “রাফিয়া ভাবি নাকি ভাইয়া কে মে’রে ফেলেছে”।আমি জিসান এর মুখে রাফিয়া ভাবির কথা শুনে অবাক হয়ে গিয়ে ছিলাম।তবু ও নিজে কে ধাতস্থ করে জিসান কে ফের প্রশ্ন করি,”কিন্তু রাফিয়া ভাবি কেন ভাইয়া কে মা’রতে যাবে”। ও পুনরায় বলে ছিলো, “ভাইয়ার সাথে ভাবির কিছু নিয়ে রাগা রাগি হয়ে ছিলো। আর রাগা রাগির বিষয় ছিলো ভাবির নাকি বিয়ের পর ও কোথাও রিলেশন ছিলো তা নিয়ে- ই ভাইয়া ভাবির সাথে রাগারাগি করেছিলো। আর তাতে- ই ভাবি রা’গ এর বশে পরের দিন ভাইয়া কে কোন ভুল ওষুধ খাইয়ে অসুস্থ করে ফেলে।এর পর হসপিটালে নিয়ে গিয়ে ডাক্তার দের দ্বারা ভাইয়া কে মে’রে পেলে”।
বিশ্বাস কর দোস্ত জিসান এর মুখে পুরো কথা গুলো শুনে আমি যেন নিজ এর কান কে বিশ্বাস করতে পারি নি।রাফিয়া ভাবি যে এমন কিছু করবে তা আমার ধারণা তেই ছিলো না।একবার মন বল ছিলো জিসান হয়তো মিথ্যে বলছে।পরোক্ষণে- ই মন আবার বলে উঠেছে তোর ফুফাতো ভাই আর গুলোর কথা বিশ্বাস না করলে ও জিসান তো আর মিথ্যে বলবে না।তাই নিমিষেই ওর কথা বিশ্বাস করে নিয়েছি।সাথে এটা ও মেনে নিয়েছি রাফিয়া ভাবি- ই সাইফ ভাইয়া কে খু’ন করেছে। আর সেই নিজ এর ভাই এর খু’নি কে তুই বিয়ে করেছিস””।
আয়ান এর কথা গুলো শুনে সাফওয়ান পুরো স্তম্ভিত হয়ে গেছে।সে নিজ এর কান কে ও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না।রাফিয়া খু’নি? নাহ আর ভাবা যাচ্ছে না।।
দুপুর এর কথা গুলো মনে পড়তে- ই সাফওয়ান তপ্ত নিশ্বাস ফেলে।তার খারাপ লাগছে।অনুশোচনা ঘিরে ধরেছে।অনুতপ্ত হচ্ছে সে।শেষে কিনা সে ও শ’য়তান এর প্ররোচনায় জড়িয়ে গেলো এক মুহূর্ত এর জন্য ও।ফন্ট সিটে পড়ে থাকা ফাইল টার দিকে তাকিয়ে আরো একবার অনুশোচনা এর নিশ্বাস ত্যাগ করে।
হঠাৎ ফোন টা বেজে উঠতেই সাফওয়ান ডান হাতে গাড়ির স্টেয়ারিং ঘুরানোয় মনোযোগ দিয়ে বাম হাতে প্যান্ট এর পকেট থেকে মোবাইল টা বের করে দেখে “জিসান” নামটা স্কিনে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে।সাফওয়ান তপ্ত নিশ্বাস ত্যাগ করে ঠোঁট এর কোণে সুক্ষ্ম হাসির রেখা টেনে ফোন টা রিসিভ করে।অপর পাশে জিসান এর কথা গুলো শুনে রাস্তার পাশে- ই গাড়ি টা ব্রেক করে দাঁড়ায়। রাগ আরো একবার উঠতে চাইলে ও নিজে কে কন্ট্রোল করে।জিসান এর সব কথা শুনে আবার বাসার পথ ধরে যাওয়ার।
চলবে ইনশাল্লাহ
ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন। শুধরে নিবো ইনশাল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম।রিচেক দেওয়া হয় নি।
নোট:রাগ উঠলে সব সময় “আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম” পড়বেন।আর না হয় রাগ উঠার সাথে সাথে ওযু করে আসবেন বা দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বেন। ইনশাল্লাহ রাগ কমে যাবে।একটা কথা মনে রাখবেন রাগ শ’য়তান এর থেকে আসা প্ররোচনা।