এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚 #ইফা_আমহৃদ পর্ব: ২২

0
358

#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২২

দরজায় টোকা পড়তেই নিদ্রা বিদায় নিল। ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে সবকিছু ঝাপসা দেখলাম। কিছুক্ষণ সময় লাগল নিজের উপস্থিতি জানান দিতে। বেলা গড়িয়ে গেছে। সূর্যের রশ্মি হালকা হয়েছে। দরজায় টোকা বেড়ে গেল। অবিলম্বে উঠে খুলে দিলাম। মধ্যবয়স্ক এক নারী। আমাকে দেখে হেসে বললেন, “মা-শা-আল্লাহ। আমার মেয়ে দেখতে পরীর মতো।”

কিছুটা বিদ্রুপ করে বললাম, “পরী দেখেছেন কখনো?”

“না।”

“তাহলে বললেন কেন আমি পরীর মতো সুন্দর? সবাই বলে আমি আমার মায়ের মতো সুন্দর। বাচ্চা পারুল।” আমার কথায় হাসলেন তিনি। গালটা টেনে দিলেন। তাড়া দিয়ে বলেন, “তোমার বাবা ডাকছে, সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। খাবে এসো।”

আমি মাথা নেড়ে তার পিছু পিছু গেলাম। তিনি বললেন, “আমি তোমার বড়ো চাচি। আমার নাম নয়না। তোমার বাবা মেঝো। সবাই তাকে মাঝভাই বলে ডাকে। এসো সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো।”

ডাইনিং রুমে উপস্থিত হলাম। তিনজন মধ্যবয়স্ক পুরুষকে দেখতে পেলাম। বড়ো চাচা, বাবা, ছোটো চাচা। আর মাঝখানে একজন বৃদ্ধা মহিলা। গায়ের রং ধবধবে সাদা, চুলগুলো আধপাকা, পরনে সাদা শাড়ি, গায়ের চামড়া তুলনামূলক কুঁচকে গেছে, মাথায় ঘোমটা টানা, চোখে পরার উপযোগী মোটা ফ্রেমের চশমা গলায় চেইন টেনে ঝুলিয়ে রাখা, দাঁতগুলো চকচক করছে। হাত বাড়িয়ে দিয়ে আমাকে ইশারা করে বলেন, “দিদি ভাই, আমার কাছে এসো।”

নয়না চাচি ইশারা করে বলেন, “আরু যাও।”

আমি এগিয়ে যেতেই তিনি উঠে দাঁড়ালেন। আমাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বললেন, “আমার সোনার টুকরো নাতনি। কেমন আছো টুনটুনি?”

“ভালো, আপনি?”

“এভাবে বলবে না। বললে, আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। তুমি ভালো আছো দাদি মা? আমি তোমার দাদি হই। দাদি কাকে বলে, জানো নিশ্চয়ই?”

“হম।” তিনি আমাকে তার চেয়ারে টেনে বসালেন। হাত দিয়ে ইশারা করতে আরও একটা চেয়ার হাজির হলো সেখানে। দাদিমা পাশে বসলেন। সোনার প্লেটে খোদাই করা ‘আরশি মৃধা’। প্লেটে পোলাই, মাংশ নিলেন। মেখে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, “খাও। দাদিমা তোমাকে প্রথমবার নিজের হাতে খাইয়ে দিল। খেয়ে নাও। আজ থেকে তুমি এই প্লেটে খাবে, এই চেয়ারে বসবে। মনে থাকবে? (নয়না চাচিকে উদ্দেশ্য করে বললেন) তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেন? এই বাড়ির রীতি ভুলে গেছো? খেতে বসো।”

কাজের মেয়েকে বললেন মেয়েদের ডেকে আনতে। ছুটে গেল ডাকতে। চারজন মেয়ে দুইজন ছেলে এলো। তাদের ভেতরে দুজনকে আমি চিনি। মিহির ও মিহি। শহরে দেখা হয়েছিল। আমার ফুফুতো বোন‌। খাওয়া শেষ হতেই পায়েস মুখে তুলে দিল। আমি নাক ছিচকে বললাম, “আর খাবো না, দাদি মা।”

“শরীরের দিকে নজর দাও। কী চিকন দেখেছো? এই বাড়িতে তোমার দু’টো কাজ। পড়ালেখা আর খাওয়া।” বলেই দাদিমা নিজের গলা থেকে লকেট তুলে আমার গলায় পরিয়ে দিলেন। অতঃপর বললেন, “প্রথমবার নাতনির মুখ দেখে আশির্বাদ করলাম। বাকিরা ওর যত্ন নিও। (ছেলেদের উদ্দেশ্য করে) তোমরা তিনজনে আমার ঘরে এসো।”

বলেই চলে গেলেন। বাবা চাচারা উঠে চলে গেলেন দাদির পিছুপিছু। বাড়িতে প্রাণ ফিরে এলো। সবাই হেসে হেসে কথা বলছে। সবার সাথে পরিচিত হলাম। দাদি মাকে সবাই প্রচণ্ড ভয় পায়। সিঁথি, সাথি, সাবিত বড়ো চাচার ছেলেমেয়ে। মেঘলা ছোটো চাচার মেয়ে। মিহির ও মিহি ফুফাতো ভাইবোন।
__

আমাদের বাড়িটার কাছে শহরে অট্টালিকা হার মানবে। ইট পাথরের তৈরি, মামাদের বাড়িটা টিনের। আমাদের বাড়ির সামনে বালুর মাঠ। মেয়েরা সেখানে খেলতে আসে। পাশে বড়ো একটা দিঘি। এই বাড়িতে গরু নেই। গরুর গোবরের দুর্গন্ধ দাদিমার অপছন্দ। তবে হাঁস মুরগির পাশাপাশি কবুতর আছে। দিঘির পাড়ে জোড়ায় জোড়ায় উড়ছে‌। সিঁথির পোশাক পরে বালুর মাঠে খেলতে গেলাম। গাছের পাশে বসে রইলাম। সবাই কানামাছি খেলছে। সিঁথির চোখে কাপড় বাঁধা। সাথি আমাকে জোর করে খেলতে নিল। উঠতে না উঠতেই আমাকে চেপে ধরল সিঁথি। কাঁচুমাচু করে রইলাম। মেঘলা বলে, “কাকে ধরেছিস?”

সিঁথি আমাকে আরেকটু চেপে ধরে বলে, “আমাদের ভেতরে এত তুলতুলে শরীর কারো নেই। একজনের হতে পারে। আমাদের আরুর।”

বলেই কাপড় খুলে ফেলল। আমার কাঁচুমাচু মুখ দেখে হেসে ফেলল। পুনরায় আমার চোখে কাপড় বেঁধে দিল।

হালকা ঘুড়িয়ে দিয়ে বলে, “কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে পাবি তাকে ছোঁ।”

অন্ধকারে কাউকে দেখতে পেলাম। চোখটা একটু ফাক করে দেখার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সম্ভব হলো না। মোটা কাপড়ে শক্ত গিঁট দেওয়া। কিছুক্ষণ এভাবে হাত দিয়ে ছোঁয়ার চেষ্টা করলাম। সম্ভব হলো না। একপর্যায়ে একজনকে জড়িয়ে ধরলাম। হুট করেই শরীরটা অবস হয়ে এলো। সরে দাঁড়ালাম । চোখের বাঁধন খুলে ফেললাম। অপূর্ব ভাই দাঁড়িয়ে আছেন সামনে। আমার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল। হুট করে জড়িয়ে ধরলাম অপূর্ব ভাইকে। তিনিও জড়িয়ে ধরলেন। ধীরে ধীরে আওড়ালাম, “অপূর্ব ভাই, আপনি এসেছেন? এসেছেন? এসেছেন? আমি জানতাম, আপনি আসবেন।”

“আরু মানুষ আছে, ছাড়।” আমি ছাড়লাম না। অপূর্ব ভাই নিজেই ছাড়িয়ে নিলেন। তার উপর অভিমান জমে উঠল। মুখটা ফিরিয়ে নিলাম। দাঁড়ালাম না। উল্টো হাঁটা দিলাম। অপূর্ব ভাই রিনরিনে গলায় বললেন, “তুর শেফালী এসেছে। তোকে ছাড়া ওরা থাকতে পারে না। তাই দেখা করতে এসেছে। যাবি না।”

উত্তেজিত হয়ে আশেপাশে নজর বুলিয়ে বললাম, “কোথায় তুর, কোথায় শেফালী বলুন না?”

ঝোপের দিকে ইশারা করে বললেন, “ঐ দিকে। আয়।”

অপূর্ব ভাই তার পা জোড়া গতিশীল করে সেদিকে এগিয়ে গেলেন। আমিও অগ্ৰসর হলাম সেদিকে। তৎক্ষণাৎ হাতটা বন্দি হলো অদৃশ্য শক্তিতে। থেমে গেল পা। ঘাড় কাত করে দেখলাম, মিহির ভাই দাঁড়িয়ে আছেন। থমথমে গলায় বলেন, “আর খেলতে হবে না। বাড়িতে চল সবাই।”

“আমার বোনেরা এসেছে, আমি দেখা করব।” নম্র গলায় বললাম।

“মৃধা বাড়ির সাথে আহসান বাড়ির শ/ত্রু/তার কথা তোর অজানা নয়। দাদি মায়ের কড়া নির্দেশ ঐ বাড়ির কারো সাথে যোগাযোগ না রাখা।” হাতটা ধরে বাড়ির দিকে রওনা দিলেন। আমার চোখ দুটো অপূর্ব ভাইয়ের গমন পথের দিকে। আর কখনো দেখা হবেনা, কথা হবেনা। ১৬ বছরের চিরচেনা সেই পরিবেশে কখনো আর ফিরে যেতে পারব না।
ডানহাতটা অপূর্ব ভাই টেনে ধরলেন। বামহাতটা তখনও মিহির ভাইয়ের হাতে বন্দি। দু’জনে দুজনার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অপূর্ব ভাই শান্ত অথচ ভয়ংকর গলায় বললেন, “আরুর হাতটা ছাড়ো মিহির।”

“সেদিন একবার কথা বলতে চেয়েছিলাম, কী করেছিলে মনে আছে? ধরে নিয়ে গিয়েছিলে। এবার দেখি কিভাবে ওকে নিয়ে যাও।”

অপূর্ব ভাই হুংকার দিলেন, “আমি ওর হাতটা ছাড়তে বলেছি মিহির।”

“আরু আমাদের মৃধা বাড়ির মেয়ে, আমার বোন। আমার বোনের হাত আমি ধরেছি। তুমি ছাড়ো।”

আমি পড়লাম ফ্যাসাদে। দু’জনে দুইদিক থেকে টেনে চলেছে। এভাবে টানতে থাকলে আরু দুই খণ্ড হয়ে যাবে যে।

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]

রেসপন্স করার অনুরোধ রইল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here