#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২৪
ঘরের বসে বসে ফোনে গেমস খেলছি। অপূর্ব ভাই যাওয়ার পূর্বে তার ব্যবহৃত স্মার্টফোন আমাকে দিয়ে গেছেন। সাথে লুকিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি মনমরা হয়ে গেম খেলতে খেলতে পার করছি। এমন সময়ে পাশের ঘর থেকে থেকে গানের সুর ভেসে এলো। ফোনটা লুকিয়ে রেখে সেই ঘরের দিকে গেলাম। সিঁথি সাথি ও মেঘলা নাচছে। সাথে একজন নাচের শিক্ষিকা। কীভাবে স্টেপ ফেলতে হয় সবাইকে শেখাচ্ছেন। আমি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছি। মামা বাড়িতে নাচ নিষিদ্ধ থাকলেও এই বাড়িতে সবার শীর্ষে। আমাকে দেখে সিঁথি নাচ থামিয়ে বলে,
সিঁথি: ভেতরে এসো আরু।
আমি ভেতরে গেলাম। নাচের শিক্ষিকার নাম ইতিকথা সরকার। হিন্দু তিনি। সিঁথি কলেজে পড়ে। দ্বিতীয় বর্ষে। তাদের কলেজে ফাংশান রয়েছে। সেই ফাংশানে অংশ নিতে দুই বোন চেষ্টা করছে। আমারও শখ জাগলো। ছুটে গেলাম দাদি জানের কাছে। দাদি জান পান খাচ্ছেন। আমাকে দেখে বললেন, “কী হয়েছে আরু? দৌড়াচ্ছো কেন?”
“পাশের ঘরে সিঁথি আপু ও সাথি নাচ শিখছে, আমিও শিখব।” আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম। দাদিজান পান চিবুতে চিবুতে বললেন, “যাও। ইতিকথাকে বলো, তুমিও নাচ শিখবে।”
“আমার ভয় করছে, তুমি চলো না প্লীজ?”
“আচ্ছা চলো।” বলে দাদি জান আমায় নিয়ে পূর্বের কক্ষে ফিরত এলেন। নাচের শিক্ষিকাকে বুঝিয়ে বললেন আমাকে নাচ শেখাতে তিনিও আমাকে নাচ শেখাতে শুরু করলেন।
__
যদি রাত পোহালে শোনা যেতো, বঙ্গবন্ধু মরে নাই।
যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো, বঙ্গবন্ধুর মুক্তির চাই, মুক্তি চাই
তবে বিশ্ব পেতো এক মহান নেতা, আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা।
যদি রাত পোহালে শোনা যেতো বঙ্গবন্ধু মরে নাই।
আজ ১৫ ই আগষ্ট। পতাকার আদলে গড়ে উঠেছে কলেজের চত্ত্বর। লাল সবুজ রঙের আলো। ভিড় জমেছে কলেজ চত্ত্বরে। তিনটা গাড়ি এসে পরপর থামল কলেজের সামনে। দাদি জান সবার আগে নেমে দাঁড়ালেন। তারপরে বাকি সদস্যরা। হা/ম/লা করার ভয়ে সবাই একসাথে আসেনি। দাদি জান প্রধান অতিথির ভূমিকায় রয়েছেন। দুই পাশে মানুষ ভাগ হয়ে আমাদের বরণ করে নিল। আমরা প্রথম সারিতে বসলাম। প্রধান শিক্ষক তখন মাইক্রোফোনে বলছেন, “ইতোমধ্যে কলেজ চত্বরে এসে পৌঁছেছে আমাদের প্রধান অতিথি সাহারা মৃধা। আমরা তাকে বরণ করে নিয়েছি। এবার আমরা যাবো মূল অনুষ্ঠানে।”
গান দিয়ে শুরু হলো মূল অনুষ্ঠান। দেশত্ববোধক গান, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান। অতঃপর শুরু হলো গ্ৰুপ নাচ। মাইক্রোফোনে ডেকে উঠল, “সিঁথি, সাথি ও আরু।”
আমরা একসাথে উঠলাম স্টেজে।
পাগলা হাওয়ার বাদল নেমে
পাগল আমার মন জেগে ওঠে,
চেনা শোনার কোন বাইরে, যেখানে পথ নাই, নাইরে।
চেনা শোনার কোন বাইরে, যেখানে পথ নাই, নাইরে।
সেখানে চল যাই ছুটে।
পাগলা হাওয়ার বাদল নেমে
পাগল আমার মন জেগে ওঠে।
গানের তালে কোমর দুলিয়ে চলেছি আমি। হাজার হাজার দর্শক দেখে যাচ্ছে আমাদের। দাদি জান সামনের সারিতে বসা। আমার নাচে বাহবা দিতে একমাত্র তিনিই করতালি দিচ্ছেন। নাচ শেষ হতেই স্টেজ থেকে নেমে গেলাম। দাদিজান আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “খুব ভালো হয়েছে।”
“মোটেও ভালো হয়নি। তুমি আমাকে শান্তনা দিয়েছ।” আমার উত্তরে দাদি জান টু শব্দটি করলেন না। আলগোছে গাল ছুঁয়ে উঠে চলে গেলেন।
প্রথমবার নেচেছি, তেমন ভালো হয়নি। কিছু কিছু জায়গা স্টেপ ভুলে গিয়েছিলাম। তখন থেমে গেছি আবার শুরু করেছি। একে একে সবাই নাচ পরিবেশন করল। গ্ৰুপ চ্যাম্পিয়ান হয়েছি আমরা ও প্রথম পুরস্কার পেয়েছি আমি। চমকে উঠলাম তখন যখন পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আমার নাম ঘোষণা করল। পিলে চমকে দাদি জানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি স্বাভাবিক। একজন শিক্ষিকা বেশ কয়েকবার আমার ডাকল।
“আরশি মৃধা আরু কে আছেন? তাড়াতাড়ি স্টেজে আসার জন্য অনুরোধ করা গেল।” দাদি জান ততক্ষণে এসে নিজের জায়গা দখল করেছেন। আমাকে বললেন, “কী হয়েছে আরু, তোমাকে ডাকছে। যাও পুরষ্কার নিয়ে এসো। বলেছিলাম না, তুমি ভালো নেচেছ।”
আমি স্টেজে গিয়ে পুরষ্কার নিলাম। আড়চোখে প্রতিযোগীদের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তাদের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। আমাকে খেয়ে ফেলার মতো। আমি হেসে পুরষ্কার গ্ৰহণ করে নেমে এলাম। নামার সময় এক অভিভাবক বললেন, “এই মেয়েটা কি নাচল আপনারাই বলুন। দু/র্নী/তি হয়েছে
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বড়ো বাড়ির মেয়ে বলে ক্ষমতা দেখিয়ে পুরষ্কার হাসির করে নিয়েছে।”
আমার মন ভেঙে গেল। নিজেকে ছোটো লাগল। আমার মুখে হাসি ফোটাতে দাদিজান এমন করেছেন এতে সন্দেহ নেই। আমার সম্মান যে খোয়া গেল। আমারই ভুল হয়েছে নাচে অংশগ্রহণ করতে চাওয়া।
___
বিছানায় শুয়ে আছি। ঘুম আসছে না। নিঃপ্রান লাগছে। দাদি জানের সাথে শুয়েছি আজ। দাদি জান চুলে বিলি কে/টে দিতে দিতে বললেন, “আমার নাম সাহারা মৃধা। এই নিয়ে কখনো কোনো প্রশ্ন কেন করলে না নাতনি? মেয়েরা বাবার পরিচয়ে পরিচিত হয়, আমি কেন স্বামীর বাড়ির টাইটেল ব্যবহার করছি।
“কেন?”
“কারণ আমার বিয়ে হয়েছে চাচাতো ভাইয়ের সাথে, তাই। আমি তোমার নানা ভাইকে ভালো..
আর বলতে পারলেন না। আবুল চাচা হাজির হলেন তৎক্ষণাৎ। ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললেন, “করিম চৌধুরী এসেছে তার মেয়ের বিয়ের দাওয়াত দিতে। আপনার সাথে দেখা করতে চাইছেন বেগম সাহেবা।”
“তাকে বসতে বল। আমি আসছি।”
আবুল চাচা চলে গেলেন। দাদি জান আমাকে ঘুমাতে বলে তিনিও চলে গেলেন। চোখের আড়াল হতেই দৃষ্টি সরু করলাম। লুকিয়ে রাখা মুঠোফোন বের করলাম। অচেনা নাম্বার থেকে পনেরোটা মিসড কল। পুনরায় আবার বেজে উঠল। কাঁথা মুড়ি দিয়ে রিসিভ করলাম। ফিসফিস করে বললাম, “আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন?”
“ওয়া আলাইকুম সালাম। ফোন রিসিভ করতে দেরি হলো কেন?” অপূর্ব ভাইয়ের গলা। নিজেকে সামলে বললাম, “দাদি জান ঘরে ছিলেন।”
“এখন নেই?”
“না।”
“তোর দাদি জানের একটা শাড়ি বারান্দার রেলিং-এ গিঁট দিয়ে নিচে ফেল। আর দরজাটা বন্ধ করে নিস।”
“আপনি নিচে।”
“কথা না বলে যা বলেছি, তাই কর।” অপূর্ব ভাইয়ের কথা মেনে আলমারি থেকে শাড়ি নিয়ে বারান্দার রেলিং-এ গিঁট দিয়ে নিচে ছুড়ে দিলাম। অপূর্ব ভাই দাঁড়িয়ে ছিলেন নিচে। শাড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলেন। কড়া গলায় বললেন, “তোকে নিজের ফোন দিয়ে কোনো লাভ হয়নি। বরং আমার ক্ষতি হয়েছে। এখন থেকে বাঁশি বাজলে দিঘির পাড়ে চলে আসবি।”
“আমার কাছে এত কীসের প্রয়োজন আপনার? মামাতো বলেই দিয়েছিলেন, আমি আহসান বাড়ির কেউ নই। তাহলে কেন আসেন।
অপূর্ব চুপ করে আছেন। মুখটা লুকিয়ে গেছে। নীরবতার পেরিয়ে গেল কিছুক্ষণ। প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন,
“শুনলাম, তুই না-কি প্রথম পুরস্কার পেয়েছিস? কথাটা কী সত্যি?”
মন খা/রা/প হয়ে গেল। মাথাটা আলতো নিচু করে নিলাম। অপূর্ব ভাই উদ্বিগ্ন হয়ে গেলেন। গালে হাত দিয়ে বললেন, “কী হয়েছে আরু? মন খারাপ কেন?”
আমি কেঁদে ফেললাম। অপূর্ব আবদ্ধ করে নিলেন নিজের সাথে। শীতল সেই স্পর্শ। দরজার খোলার শব্দ পেলাম।
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]
[রেসপন্স করার অনুরোধ রইল]
পরবর্তী পর্বে কি-যে অপেক্ষা করছে। 😙😙