#ভেজাগোলাপ❤️
#লেখিকা-মালিহা খান❤️
#পর্ব-৯
জানালা ভেদ করে সকালের রোদ মুখের উপর পরতেই ঘুম ভেঙে যায় রোদ্রির।চোখমুখ কুচকে পাশ ফিরে শোয় সে।কাল রাতে মাথাব্যাথার কারণে তাড়াহুড়ো করে শুয়ে পরেছিল,তাই হয়তো পর্দা লাগাতে ভুলে গিয়েছিল।নীরাদের কথা অনুযায়ী,”সত্যিই কালকে কান্না করার ফলে প্রচন্ড মাথাব্যাথা উঠেছিল তার”।উঠে গিয়ে ওষুধ খাওয়ার শক্তি ছিলোনা।ঘোরের মধ্যই কখন ঘুমিয়ে গিয়েছিলো মনে নেই।মাইগ্রেনের সমস্যা আছে রোদ্রির।
তবে এখন একটুও ব্যাথা নেই।বেশ হাল্কা লাগছে তার।আড়মোড়া ভেঙে উঠে পাশের টেবিলে চোখ পরতেই দেখলো সেখানে মাথা ব্যাথার ওষুধের পাতা রাখা।হাত বাড়িয়ে নিতেই দেখলো একটা ওষুধ নেই।
ভ্রু কুচকে এলো রোদ্রির ভাবলো ভাবি হয়তো ঘুমের মধ্যেই ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে।কিন্তু ভাবি কেমনে জানলো ওর মাথা ব্যাথা করছে?প্রশ্ন টা মাথায়ই থেকে গেলো ওর।
ধীরপায়ে ভাইয়ের রুমে ঢুকলো রোদ্রি।কেমন যেন অপরাধবোধ কাজ করছে।মনে হচ্ছে সে খুব করে একটা ভুল করে ফেলেছে।
-এখানে বসো।বলে নিজের পাশে ইশারা করে রিদান।
ভাইয়ের মুখে “তুমি”সম্মোধন শুনে প্রচন্ড খারাপ লাগে রোদ্রির।মৃদু কন্ঠে বলে,
-ভাইয়া,তুমি রেগে আছো?
রোদ্রির কথায় নড়েচড়ে বসে রিদান।রাগ ঝেড়ে একেবারেই শান্ত কন্ঠে বলে,
-আমি রাগি আর যাই করি তাতে কি তোমার কিছু আসে যায়?তুমি কি আমাদের আদৌ আপন ভাবো?
রিদানের শান্ত কন্ঠেও চরম অশান্ত হয়ে ওঠে রোদ্রির মন।
-ভাইয়া প্লিজ..এভাবে বলোনা।ভাবি তুমিতো বুঝো এটলিসট।চোখ দিয়ে একফোটা পানি গড়িয়ে পরে তার।
রিদান আর রাগ ধরে রাখতে পারেনা।উঠে যেয়ে রোদ্রির মাথায় হাত রাখে।একহাত দিয়ে চোখ মুছিয়ে দেয়।
নরম সরে বলে,
-তুই যদি আমাকে একটাবার বলতি বোন যে ফারহানকে তোর ভালো লাগেনা বা ও তোর সাথে মিসবিহেভ করে তাহলে তোদের বিয়ে তো দূর,আমি ওর ছায়াটাও তোর উপর পরতে দিতাম না।আমার কাছে তোর ভালো থাকাটা জরুরি বোন।কাল যদি নীরাদ না থাকতো তাহলে কি হতো একবার চিন্তা করেছিস?
নীরাদ যদি কাল আমাকে আর মিরাকে সব খুলে বলেছে।তুই তো কখনোই সংকচের জন্য বলতে পারতিনা।
কথাগুলো বলে থামলো রিদান।খুব আদরের বোন তার।কখনো চোখে পানি আসতে দেয়নি।
-আচ্ছা,বাদ দাও এসব কথা রিদান।আর রোদ্রি তুইও এসব নিয়ে আর কোনো চিন্তা করবিনা।তোদের বিয়েটা রিদান ভেঙে দিয়েছে।..আর এখন নিচে চলো দুই ভাইবোন।নাস্তা দিচ্ছি আমি।বলে নিচে চলে গেল মিরা।
রোদ্রি নিচে নেমে রান্না ঘরে ঢুকে।দেখে মিরা খাবার বারছে।মিরার পাশে যেয়ে দাড়ায় সে।পাশ থেকে একটা পাত্রে পানি বসায় চুলায়।উদ্দেশ্য চা বানানো।
-তোর মাথা ব্যাথা কমেছে?নাকি এখনো আছে?
রোদ্রি এবার আশ্বস্ত হয় সে ভাবিই ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে।
-না নেই।তুমি ওষুধ খাইয়ে দিয়েছিলে না রাতে।
-আমি দেইনি।নীরাদ ওষুধ নিয়ে গিয়েছিলো তোর রুমে।বললো,তোর নাকি মাথা ব্যাথা।তুই জেগে ছিলি না?
-না।
-ওহ্।ছেলেটা হয়তো ঘুমের মধ্যেই তুলে খাইয়ে দিয়েছে।…তুই টেবিয়ে আয়,চা আমি বানিয়ে দিচ্ছি।
-না হয়ে গেছে।আমি আসছি।
নীরাদের কথা ভেবে আনমনেই হেসে উঠে রোদ্রি।লোকটা যে কেনো ওর এতটা কেয়ার করে?
বুঝতে পেরেও বুঝতে চায়না রোদ্রি।কিছু কিছু জিনিস হয়তোবা না বোঝাই ভালো।
_______________
হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে ফারহান।অবস্থা বেশি ভালোনা তার।সবাই জানে মাতাল অবস্থায় ড্রাইভ করে এক্সিড্যানট হয়েছে তার।
কিন্তু আসল ব্যাপার এইটা না।নীরাদের লোকেরা তাকে আগেই একটা গো-ডাউনে নিয়ে গিয়েছিল।
গতকালকে রোদ্রির বাসা থেকে বেরিয়ে ফারহানের কাছে যায় নীরাদ।
বেদমভাবে মারে তাকে।নিজের রাগ মিটিয়ে তবেই ক্ষান্ত হয়।একপর্যায়ে ফারহানের অবস্থা বেশি
খারাপ হয়ে গেলে কয়েকজন মিলে আটকায় তাকে।।তারপর নীরাদের নির্দেশে একসিডেন্ট কেস সাজিয়ে হসপিটালে দিয়ে আসে।
নীরাদের এমন রাগি রুপটা খুব কম মানুষই দেখেছে।অযথা অকারণে সে কখনোই রেগে যায়না।
অফিসে নিজের রুমের চেয়ারে গা এলিয়ে বসে আছে নীরাদ।চোখের মনিগুলো স্হিরভাবে ফোনের স্ক্রীনে আটকে আছে।স্ক্রীনে ভাসছে রোদ্রির ঘুমন্ত একটি ছবি।স্লাইড করে পরের ছবিটা দেখেই হাসলো নীরাদ,তার বুকে রোদ্রির মাথাটা পরম যত্নে রাখা।
গতকাল রাতে যখন রোদ্রিকে তুলে ওষুধ খাওয়াচছিল তখনই ছবি দুটো তুলেছিলো সে।
ভাগ্যিস মেয়েটা ঘুমিয়ে ছিল নয়তো আর ছবি তুলে মুহুর্তটা স্বৃতিতে বন্দি করে রাখতে পারতোনা।ফোনটা বন্ধ করে পাশে রাখলো।কাজে মন দিতে পারছেনা সে।একহাত দিয়ে মাথার চুল চেপে ধরলো নীরাদ।
রোদ্রি নামক “ব্যাধি”টা আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে প্রবলভাবে।
চলবে…
[ভুল-ক্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,নীরাদ-রোদ্রির জুটি কেমন লাগছে কমেন্টে জানাবেন অবশ্যই❤️
কালকে সকালে আরেকটা পার্ট দিবো।]
[আগের পর্বের লিংক কমেন্টে]