#লুকানো_অনুভূতি
#পর্বঃ১৬
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
গাড়ি এসে থামলো বাসার সামনে। আমাকে নিয়ে রুমে চলে গেলো কোনো কথা না বলে। রুমে যেয়ে শান্ত কন্ঠে বললো কবে থেকে ডিস্টার্ব করে ও তোমাকে?
তার কন্ঠ শুয়ে ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসলো। গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না আমার।
আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি, চুপ থাকতে বলি নি ধমকে বলে উঠলো তিনি।
কেঁপে উঠলাম আমি তার ধমকে। অনেক কষ্টে গলা দিয়ে কথা বের করে তুতলিয়ে বললাম এ..এক সপ্তাহ থ…থে..কে।
এক সপ্তাহ থেকে ডিস্টার্ব করছে আমাকে জানাও নি কেনো?
ভ..ভয়ে যানা..ই নি।
এবার তিনি আরো জোরে ধমকে বললো আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক যে ভয়ে এই কথাটা জানাতে পারো নি?
এবার ভয়ে আমার মাথা ঘুরছে কি বলবো কি করবো কিছুই খুজে পাচ্ছি না।
হুর আমার কথার এন্সার দাও চুপ থেকো না এমনি মাথা গরম আছে।
আ..আমার ভুল হয়ে গেছে আ..র এরকম ক..করবো না।
নেক্সট টাইম যেনো না দেখি আমার থেকে কিছু লুকাতে তাহলে খুব খারাপ হবে এই বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো তিনি।
তিনি যেতে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমার একটা ভুলের জন্য লোকটা কতোটা রেগে গেলো এমন ভুল আর করা যাবে না। আবার খারাপ ও লাগছে একটা ভুলের জন্য এতো বকা লাগে।
কলেজ আর আজকে করা হলো না। নিচে চলে গেলাম যেয়ে দেখি ফুপি রান্না করছে।
আমাকে দেখে বললো হ্যারে কি হয়েছে? রোয়েন রাগারাগি করলো কেনো?
ফুপিকে সব খুলে বললাম, ফুপি সব শুনে বললো থাক মা মন খারাপ করিস না। আমার ছেলেটা এমনি অল্পতে ক্ষেপে যায়।
থাক বাদ দেও, চলো আজকে তোমাকে রান্না করতে সাহায্য করি আমি।
তোর সাহায্য করা লাগবে না। আমার কাজ প্রায় শেষের দিকে, তুই যেয়ে রেস্ট কর।
আমি জোর করে ফুপিকে কাজে সাহায্য করলাম। সব রান্না কমপ্লিট হয়ে গেলে আমরা চলে গেলাম রুমে। রুমে যেয়ে সাওয়ার নিয়ে বের হলাম। রিহু নেই আজকে ভালো লাগছে না, কি করবো খুজে পাচ্ছি না তাই ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুম ভাঙলো দুপুরের দিকে রিহুর ডাকে।
আমি উঠে চোখমুখে পানি দিয়ে আসলাম। রিহু বললো ভাইয়া কি করেছিলো তোকে নিয়ে এসে?
তোর ভাই রাগ ছাড়া কি আর করতে পারে। ধমক দিতে দিতে আমার কান বয়রা করে দিয়েছে।
আমার কথা শুনে রিহু হেসে ফেললো। আমি ওর দিকে চোখ গরম করে তাকালাম। তুই হাসছিস ওইদিকে আমার ভয়ে কি অবস্থা হয়েছে তুই জানিস।
আচ্ছা বাবা সরি আর হাসবো না এবার নিচে চল আম্মু খেতে ডাকছে।
———————-
কেটে গেলো কয়েকটা দিন মনটা বিষাদে ভোরে গেছে। রাতের আকাশে দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে আছি, কিছু ভালো লাগছে না।
সেই দিনের পরে রোয়েন আর আমার সাথে ঠিক মতো কথা বলে নি। তার নিশ্চুপ থাকাটা আমি মেনে নিতে পারছি না। তার এই নিশ্চুপ থাকায় আমি বুঝতে পেরেছি লোকটাকে কতো ভালোবেসে ফেলেছি আমি। ভালোবাসার মানুষ নিশ্চুপ থাকলে বুঝি এতো কষ্ট লাগে? আমার কিছু ভালো লাগছে না, চোখ থেকে গড়িয়ে দু ফোটা পানি পড়লো। চোখের পানি মুছে রুমে গেলাম। রুমে যেয়ে দেখি রোয়েন ল্যাপটপে কাজ করছে। আমি যেয়ে তার পাশে বসলাম।
শুনছেন?
নির্লিপ্ত ভাবে বললো হুম।
আমার সাথে কাথা বলবেন না?
কি বলবো?
এরকম কেন করছেন? আমি মানছি আমি ভুল করেছি তার জন্য তো ক্ষমা চাচ্ছি আমি।
আমি তোমার কেউ হই নাকি যে আমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছো? আমি যদি কেউ হতাম এই তাহলে কিছু হলে সাথে সাথে আমাকে জানাতে।
তার কথার পৃষ্ঠে কি বলবো খুজে পেলাম না। তার কথায় স্পষ্ট অভিমান বুঝা যাচ্ছে। আমার ওতো খারাপ লাগছে তার এমন বিহেভিয়ারে। আর কোনো কথা বললাম না নিরবে যেয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম না খেয়ে।
একটু পরে রিহু এসে দরজায় নক করলো।
রোয়েন যেয়ে দরজা খুলে দিলো।
হুর কোথায় ভাইয়া?
ঘুমাচ্ছে।
রিহু অবাক কন্ঠে বললো এতো তারাতাড়ি?
হুম।
খাবে না তোমরা? আম্মু ডাকছে তো।
না। আম্মুকে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তে বল।
রিহু আর কথা বাড়ালো না, বুঝেছে হুর আর তার ভাইয়ের ভিতরে কিছু একটা হয়েছে তাই চুপচাপ চলে গেলো।
হুর যেতেই রোয়েন দরজা আটকে কিছু একটা করতে লাগলো।
————-
রাত বাজে ১১:৫৫ মিনিট। রোয়েন এবার হুরের কাছে এগিয়ে গেলো। কপালে একটা চুমু খেয়ে আলতো করে হুরকে ডাকলো।
হুর ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো কি হয়েছে ডাকছেন কেনো?
রোয়েন কিছু বললো না হুরকে আস্তে করে ধরে বসালো।
চারে দিকে অন্ধকার শুধু চদের আলোতে রুমটা হালকা আলোকিত, হুর বললো কি হলো কথা বলছেন না কেনো? উঠে বসালেন কেনো আমাকে?
রোয়েন কোনো কথা বললো না। ঘড়ির কাটা ১২ টায় যেয়ে ঠকতেই রোয়ে হুরের দুগালে হাত রেখে বলে উঠলো হ্যাপি বার্থডে হুর পরী।
হুরের ঘুম ছুটে পালালো আজকে ও বার্থডে? কত তারিখ আজকে? তারিখ মনে করতেই খেয়াল আসলো আজকে ওর জন্মদিন। অবাক চোখে রোয়েনের দিকে তাকিয়ে রইলো। ও নিজের জন্মদিন নিজে ভুলে গেছে আর এই মানুষটা তা মনে রেখেছে।
রোয়েন বললো কি হলো চুপ কেনো এতো।
আপনার মনে ছিলো আজকের আমার জন্মদিন? অবাক কন্ঠে বললাম।
তোমার কি মনে হয় আমি ভুলে যাবো? আমার হুর পরীর জন্মদিন আর তা আমি মনে রাখবো না এটা কি হয়?
তার কথা শুনে অবাকের উপরে অবাক হচ্ছি। তখন মনে পরলো সেতো আমার সাথে রাগ করে আছে তাহলে এতো সুন্দর করে কথা বলছে কি মনে করে?
আপনি তো আমার উপরে রাগ করে আছেন তাহলে এখন কথা বলছেন কেনো? আমি নাকি আপনার কেউ না। অভিমান নিয়ে বললাম।
কে বলেছে তুমি আমার কেউ না, তুমি আমার সব। তখন রাগ করাটা ছিলো তো অভিনয় যাতে তোমাকে রাতে সারপ্রাইজ দিতে পারি। তবে প্রথমে তোমার উপরে খুব রাগ হয়েছিল কেনো আমাকে প্রথমে সব ঘটনা খুলে বললে না কিন্তু পরে তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছিলে এই জন্য কোনো রাগ ছিলো না।
তারমানে আপনি অভিনয় করেছিলন? কপাট রাগ দেখিয়ে বললাম।
দুষ্ট হাসি দিয়ে রোয়েন বললো তা নয়তো কি? আমার হুর পরীর উপর আমি রাগ করে থাকতে পারি নাকি বলেই জড়িয়ে ধরলো।
আমার সাথে কথা বলবেন না আপনি ছাড়ুন আমাকে। আপনি জানেন আপনার বিহেভিয়ারে আমার কতটা খারাপ লেগেছিলো।
সরি আমার মিহি পরী, আর এরকম করবো না প্রমিজ। রাগ করে না বউ।
তার মুখে মিহি ডাক আর বউ ডাক শুমে থমকে গেলাম আমি। এই প্রথম বউ বলে ডাকলো তিনি। তার উপর মিহি বলে আমাকে তেমন কেউ ডাকে না। তার মুখে মিহি ডাক শুনে অন্য রকম লাগলো।
কি ভাবছো মিহি পরী?
এই নামেতো কেউ আমাকে ডাকে না। আপনার মুখে এই নাম শুনে অন্য রকম লাগলো।
এই নামটা শুধু আমার জন্য বুঝেলে তাই কেউ ডাকে না। এবার উঠতো কাজ আছে।
আমি অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে বললাম এই মাঝ রাতে কি কাজ আছে?
রোয়েন আমার গালে টুক করে একটা চুমু খেয়ে আমাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। তারপরে হাতে একটা শপিং ব্যাগ বাড়িয়ে দিয়ে বললো যাও এটা পরে আসো।
কি আছে এটায়?
কোনো কথা না যা বলছি করো এই বলে হুরকে ধরে নিয়ে ওয়াশরুমের ঢুকিয়ে দিলো।
হুর ওয়াশরুমের ঢুকে ব্যাগ খুলে দেখে হোয়াইট কালারের উপরে ব্লাক স্টোনের কাজ করা খুব সুন্দর একটা জরজেট শাড়ি। শাড়ির সাথে প্রয়োজনীয় সব কিছু ছিলো।
আমি আগে থেকেই শাড়ি পরতে জানি তাই আজকে শাড়ি পরতে বেশি কষ্ট লাগলো না। শাড়ি পরে সব ঠিকঠাক করে ওয়াশরুমের দরজা খুলে বাহিরে আসতেই আমার চোখ ছানাবড়া, এ কি দেখছি আমি? ভুল দেখছি নাকি এ ভেবে চোখ হাত দিয়ে কচলে আবার সামনে তাকালাম। নাহ আবারো একি জিনিস দেখছি তার মানে ভুল দেখছি না সব সত্যি?
চলবে?