#লুকানো_অনুভূতি
#পর্বঃ৯
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
বাহিরে বিকট শব্দে গান বাজছে আর আমরা বাসার ভিতরে সবাই রেডি হচ্ছি। একটু পরে আপুর হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।
আজকেও নিজে হালকা করে সাজতে চেয়েছিলাম কিন্তু রিহু আর ইমা আপু তা দিলো না, জোর করে পার্লার এর লোকের সামনে বসিয়ে সাজিয়ে ছাড়লো। সাজানো হলে আয়নার সামনে যেয়ে অবাক নিজেই নিজেকে চিনতে পরলাম না।
ইমা আপু পিছ থেকে বলে উঠলো হুর তোকে আজকে এতো সুন্দর লাগছে, আমি বউ আমাকে রেখে সবাই তোর দিকে তাকিয়ে থাকবে।
পাশ থেকে রিহু বলে উঠলো আজ আমার ভাই হার্ট অ্যাটাক না করে বসে তোর এই রুপ দেখে।
রুহুর কথা শুনে ইমা আপু হেসে দিলো। আমি চোখ গরম করে তাকালাম ওর দিকে।
কি সব আজাইরা কথা বলছো আপু, চলো নিচে চলো সবাই ওয়েট করছে।
আপুকে নিয়ে নিচে নেমে গেলাম আমরা। আপুকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে তার পাশে বসে আমরা ছবি তুলতে লাগলাম।
সবার আগে আপুকে বড় আম্মু হলুদ ছোঁয়াতে আসলো। হলুদ ছোঁয়ানোর সময় বড় আম্মুর চোখ ছলছল করে উঠলো। আরেকটু হলেই কান্না করে দিবে। মেয়েটা কাল অন্যের বাড়ি চলে যাবে ভাবতেই তার চোখে পানি চলে আসছে। তারাতারি স্টেজ থেকে নেমে গেলো। আর নাহলে মেয়েটার মন খারাপ হয়ে যাবে।
একে একে আম্মু, ফুপিরা সবাই হদুল ছুয়ে দিচ্ছে আপুকে।
হটাৎ রোয়েন ভাইর কথা মনে পড়লো। আশেপাশে তাকাতেই চোখ পড়লো তার দিকে। কোথাও থেকে এসেছে মনে হচ্ছে। তাকে আজকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। হলুদ পাঞ্জাবিতে অনেক মানিয়েছে তাকে।
দেখলাম তিনি স্টেজের দিকে এগিয়ে আসছে। বুকের ভিতর ধুকপুক ধুকপুক করা শুরু করে দিলো আমার।
রোয়েন ভাই এগিয়ে এসে আপুকে হলুদ লাগলো গালে, তারপর আবার চলে গেলেন।
ইয়াদ ভাইয়া এসে আপুকে একটু খানি হলুদ দিতে যেয়ে পুরো মুখ মেখে দিলো।
আপু ক্ষেপে গিয়ে বললো কি করলি এটা।
কি আবার, আটা ময়দা মাখা মুখের আসল রুপ নিয়ে আসলাম দুষ্ট হেসে বললো ইয়াদ ভাইয়া।
কি বললি দাঁড়া আজকে তোর কি অবস্থা করি এ বলে আপু হাতে হলুদ নিয়ে ইয়াদ ভাইয়ার পুরে মুখে মেখে দিলো।
ভাই বোনের খুনসুটি দেখে সবাই হেসে দিলো।
আমরা সবাই এক সাথে ফ্যামিলি ফটো তুললাম।
এবার শুরু হয়ে গেলো সবাইকে হলুদ মাখা মাখি করা।
আমি হাতে হলুদ নিয়ে আস্তে করে রিহুর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম তারপর আচমকা রিহুর মুখে হলুদ মেখে দিলাম দৌড়।
রিহুর বুঝতে একটু সময় লাগলো কি হয়েছে ওর সাথে। যখন বুঝলো কি হয়েছে তখন বললো হুর এটা কি করলি আজকে তোর খবর আছে এই বলে রিহু ও হাতে হলুদ নিয়ে হুরের পিছে ছুট লাগালো।
এদিকে হুরকে পায় কে, কোনো দিকে না তাকি ছুটা শুরু করলো। রিহুর হাত থেকে বাচার জন্য বাসার ভিতরে ঢুকে দৌড়ে উপরে উঠে রুমে ঢুকতে নিলো সেই সময় রোয়েন রুম থেকে বের হতে নিয়েছিলো। আরেই হুর এসে ধাক্কা খেলো, হঠাৎ করে এমন ধাক্কা লাগাতে রোয়েন নিজেকে সামলে নিতো পারলো না। নিচে পড়ে গেলো আর হুর পড়লো ওর উপরে।
হুর ভয়ে রোয়েনের পাঞ্জাবি খামছে ধরে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে রইলো। ভয়ে ওর অবস্থা খারাপ।
এভাবেই কি উপরে পড়ে থাকবি নাকি সরবি।
রোয়েনের কন্ঠ শুনে পিটপিট করে চোখ খুললাম। ভয় লাগছে অনেক এই বুঝি ধমক দিবে। আস্তে ধিরে তার উপর থেকে উঠে পড়লাম।
আ..আসলে আমি….
আর কিছু বলার আগে ওকে থামিয়ে দিয়ে রোয়েন বললো আসলে নকলে পরে করিস আগে আমাকে উঠতে সাহায্য কর এই বলে হাত বাড়িয়ে দিলো।
আমি তাকে হাত ধরে উঠিয়ে আস্তে ধিরে বেডে নিয়ে বসালাম। কোমরে বেশ ভালোই ব্যথা পেয়েছে।
নিজেকে অনেক অপরাধী মনে হচ্ছে আমার জন্য তিনি ব্যথা পেলো। অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
পানি টা দে।
আমি তড়িঘড়ি করে পানিটা এগিয়ে দিলাম তার কাছে।
ব্যথা কি বেশি লেগেছে? আমি বিচলিত হয়ে বললাম।
উনি কোনো কথা না বলে আমার দিকে এক ধেনে তাকিয়ে রইলো।
ক…কি হয়েছে? কথা বলছেন না কেনো?
উনি এবারো কোনো কথা না বলে আমার হাত ধরে পশে বসিয়ে দিলো।
রিলাক্স আমার কিছু হয় নি, মন খারাপ করা লাগবে না।
আসলে আমি খেয়াল করি নি আপনাকে, সরি প্লিজ।
তিনি আমার গালে হাত রেখে বললো বলেছিতো আমার কিছু হয় নি। মন খারাপ করবে না, তোমার এই মুখে হাসিটাই মানায়।
তার কথা শুনে মুচকি হাসলাম আমি।
আর এইদিকে রিহু হুরের পিছে ছুটে আসতে ছিলো তখন ইয়াদ ওকে টান দিয়ে রুমে নিয়ে গেলো।
আমাকে ধরলে কেনো? হুরতো চলে যাবে।
যাক।
কি বললে। যাক মানে, দখছো আমাকে ভূত বানিয়ে ফেলেছে। ওকে ছেড়ে দিবো নাকি।
তোমাকে এই রুপে অনেক সুন্দর লাগছে জানো তুমি।
চোখ পাকিয়ে তাকালো রিহু। মজা নিচ্ছ তাইনা দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। এই বলে হাতের হলুদ ইয়াদের পুরো মুখে মেখে দিলো।
ইয়াদ কিছু বললে না, রিহুর পাগলামি দেখছে আর হাসছে।
———————————
রাত দেরটা বাজে আমরা কেউই এখনো ঘুমাই নি, নাচ গান হৈ-হুল্লোড়ে মেতে রইলাম সবাই।
স্টেজে অনেকে নাচতেছে তা চেয়ারে বসে বসে দেখছি। তখনই পাশে কেউ বসলো। তাকিয়ে দেখি রোয়েন ভাই বসেছে।
তকে দেখে একটু ঠিকঠাক হয়ে বসলাম।
কালকে যেনো বেশি ছুটা ছুটি করতে আমি না দেখি।
আচ্ছা। ছোট করে বললাম আমি।
রাত অনেক হয়েছে, যেয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুম দে। এখানে আর থাকা লাগবে না।
আরেকটু থাকি না, সবাই আছে তো।
তিনি কিছু বললো না, তাই আর গেলাম না নাচ গান দেখতে লাগলাম।
আচমকা আমার হাতটা আলতো করে তার হাতের মুঠোয় ঢুকিয়ে নিলো তিনি।
আমি চমকে তাকালাম তার দিকে। কিন্তু এই দিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, সে সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন এমন একটা ভাব যেনো কিছুই জানে না তিনি।
আমিও আর কিছু বললাম না। থাকি না কিছু সময় এমন, ভালোই লাগছে।
এভাবে অনেক সময় কেটে গেলো এবার ঘুম ঘুম পাচ্ছে।
ঘুম পাচ্ছে?
একটু একটু পাচ্ছে।
যা রুমে যেয়ে ঘুম দে।
আচ্ছা বলে উঠতে নিলে হাতে টান পড়লো।
পিছে তাকিয়ে দেখি উনি এখনো আমার হাত ধরে আছে।
কি হয়েছে?
না কিছু না, যা তুই। এই বলে হাত ছেড়ে দিলো।
আমি এসে পড়লাম, এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
চলবে?