অপেক্ষার_প্রিয়_প্রহর #পবঃ৫

0
349

#অপেক্ষার_প্রিয়_প্রহর
#পবঃ৫
#সাদিয়া_ইসলাম

পরদিন সকালবেলায়। বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে আছে ওয়াজিহা। ভার্সিটির সময় হয়ে যাচ্ছে, অথচ সে উঠছে না। ভালো লাগছেনা আজ ক্লাসে যেতে। কয়েক টা মাস আছে আর পরিক্ষা শেষ হলে বাঁচে যেনো সে। পড়াশোনা শেষ হওয়ার জন্য দিন যতোই ঘনিয়ে আসছে! ততই যেন তার বিরক্তি বেশি হচ্ছে পড়াশোনার প্রতি। রাবিয়া অনেক আগেই উঠে পরেছে। ফ্রেশ হয়ে মায়ের হাতে হাতে সকালের নাস্তা বানানোয় ব্যস্ত হয়ে পরেছে রাবিয়া। ওয়াজিহা বিছানার এপাশ ওপাশ ফিরতে ফিরতে সাড়ে নয় টায় শোয়া থেকে উঠে বসলো। বাসায় থাকলে রাফা এতক্ষণে তাকে টেনে তুলে দিতো। এখানে আসলে মিসেস আমেনা বা রাবিয়া কেউই তাকে তেমন চাপ দেয়না উঠার জন্য। নিজের মনমতোই উঠে পরে ওয়াজিহা। অনেকদিন পর শান্তি মতো তার ঘুম হলো। এ বাড়িতে আসলে, মায়ের পরশ পেলেই যেন তার শান্তি মিলে। যার ফলে রাতের ঘুম টাও শান্তিমতো হয়৷ চুলগুলো হাত খোঁপা করতে করতেই বিছানা ছেড়ে নামে ওয়াজিহা। ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই রাবিয়াকে দেখতে পায় ওয়াজিহা। হাতে চা-য়ের কাপ। ওয়াজিহা হাত মুখ মুছে এগিয়ে আসতেই রাবিয়া ওয়াজিহার দিকে চা-য়ের কাপ বারিয়ে দিয়ে বললো,

‘আজ ক্লাসে যাবি না বললেই হতো। হুদাই আমি আগে আগে উঠে গেছিলাম।’

‘এখানে আসলে একটু শান্তি মিলে। এজন্য উঠতে মন চায়নি।’

ওয়াজিহা চা-য়ের কাপ-টা নিতে নিতে বললো। রাবিয়া ওর কথার প্রতিত্তোরে বললো,

‘আমার ভাই থাকলে তোরে এখানেই রেখে দিতাম।’

‘থাক রাখা লাগবেনা। তোর বিয়ে হয়ে যেতো। এরপর এই বাসায় আমি একাই থাকি! এরথেকে দুজন সারাজীবন সিঙ্গেল থেকে যাবো। এই ভালো হবে।’

‘তোর সিঙ্গেল থাকার হলে থাক। আমি বিয়ে করবো। ‘

‘সেই আমার মতো মেয়ের সিঙ্গেলই থাকা লাগবে।’

রাবিয়া কথার এই পর্যায়ে ওয়াজিহার কথা শুনে রেগে তাকালো তার দিকে। ওয়াজিহা চা-য়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বললো,

‘এমন রেগে যাস কেনো? রাগলে তোকে একটুও ভালো লাগে না। ভয় লাগে।’

‘আমায় ভয় লাগলে ২য় বার এই কথা মনে আনবিনা। মুখে আনা তো দূর কি বাতে।’

‘বাংলা হিন্দির জগাখিচুরি করা লাগবে না তোর। যে মেয়ের একবার বিয়ের আগেরদিন বিয়ে ভাঙে। আবার বিয়ে ঠিকঠাক হয়ে মানুষজনকে দাওয়াত করার পরপর খবর হয় বিয়ে করাবেনা ছেলেপক্ষ! তাহলে তার কপালে বিয়ে আর কি করে হবে?’

‘বাদ দে। রেডি হয়ে নে। ব্রেকফাস্ট করে দুবোন মিলে টইটই করতে যাবো। ভালো লাগছেনা বাসায়।’

‘তুই রেডি হবি না?’

‘উঠছিস কিনা! দেখতে এসে দেখলাম ফ্রেশ হতে গেলি। এজন্য চা আনলাম। বাবা অফিসে চলে গেছে। মা একা সব সামলে উঠতে পারছিলো না বলে সাহায্য করলাম। আর অল্প একটু বাকি আছে। শেষ করে আসি। তুই একেবারে গোসল দিয়ে বের হ। এরপর আমি গোসল দিবো।’

রাবিয়া কথাটুকু বলেই চলে যায়। ওয়াজিহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। চোখ বন্ধ করে কয়েক বার ফাঁকা ঢোক গিলে নিজের মনকে শান্ত করার চেষ্টা করে। বিরবির করে বলে,

‘মা, মা গো। তুমি চলে যাওয়ার সাথে সাথে আমার সুখ শান্তি-ও আমার জীবন থেকে বিদায় নিয়েছে। আমার প্রচন্ড কষ্ট হয় মা। আমি মুক্তি চাই সবকিছু থেকে। এভাবে পালিয়ে বেড়াতে বেড়াতে আমি হাঁপিয়ে উঠলাম। জীবন-টা সুন্দর হওয়ার বদলে এত দুঃখে ছেয়ে যাচ্ছে কেন মা? তুমি তো বলতে আমায় কখনও কোনো মানুষ অপছন্দ করবেনা। তাহলে ঐ মানুষগুলো আমায় অপছন্দ করে এত কষ্ট কেন দিলো মা! আমি না এসব প্রশ্নের উত্তর পাই না। আমার বড্ড জানতে ইচ্ছে করে। ঐ মানুষগুলোকে গিয়ে বলতে ইচ্ছে করে, আমার চরিত্র খারাপ নয়, আমি খারাপ নই। মা মরে গেছে, বাবা অনত্র্য বিয়ে করেছে বলে আমি বপড়ে উঠতে নিজের চরিত্রের বলি দেইনি৷ আমার দম-টা আঁটকে আসে মা। তোমায় জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে।’

ওয়াজিহা আপন এসব আওড়াতে আওড়াতে কেঁদে ফেলে। দু চোখের কার্ণিশ বেয়ে জল গড়াচ্ছে। খানিক সময় যেতেই ওয়াজিহা নিজে-ই চোখ মুছে নেয়। নিজের মনকে শক্ত করে ভাবে,

‘মানুষ কি ভাবলো না ভাবলো তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি তো জানি আমার চরিত্র কেমন! তাই তাদের করা অপমানরেও জবাব আমি আমার যোগ্যতায় দিবো। উপহাস নয় আফসোস হবো। সময়ের সাথে তা যদি না বুঝিয়েছি! তো আমিও ওয়াজিহা আহমেদ নই!’

এরপর সে চলে যায় গোসল দেওয়ার উদ্দেশ্য। আজ কিছু সময় হোক তার একান্ত। নিজেকে সময় দেওয়ায় বড্ড জরুরী।

…….
সকালের খাবার-দাবার সেরে সোফায় বসে আছেন রাফার শাশুড়ি মিসেস আলেয়া।অলি দাদীর পাশে বসে কোলে মাথা রেখে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে। অলির অপরপাশে বসে আছে রাফার শ্বশুড় মশাই আজমির সাহেব। ছোট্ট বেলায় দাদা-দাদীকে কাছে পাওয়ার যে আনন্দ! তা ডাইনিং টেবিলে বসে খেতে খেতে খেয়াল করছে রাফা। সবাইকে খাওয়ানের চক্করে তার নিজেরই খাওয়া হয়ে উঠেনি। সেজন্য সবার শেষে খেতে বসেছে সে। খাওয়া শেষ হতেই রাফা হাত ধুয়ে সব গুছিয়ে শ্বশুর-শ্বাশুড়ির কাছে আসতেই মিসেস আলেয়া বললেন,

‘তোমার দেবর কোথায় গেলো খেয়ে উঠে? কিছু বলেছে তোমায়? খাওয়ার মাঝেই উঠে চলে গেলো, জিগাসা করতেও পারলাম না কোথায় গেলো!’

‘আমি জানিনা মা। আমাকেও তো কিছু বলেনি।’

রাফা নিচু স্বরেই উত্তর দিলো। অলি কথার ফাঁকে বলে উঠলো,

‘চাচ্চু তো আমায় চকলেট দিতে চেয়েছিলো। আমার জন্য চকলেট আনতে গিয়েছে নিশ্চয়!’

মিসেস আলেয়া হাসলেন নাতীর কথা শুনে। অলির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

”দাদুভাই, যত চকলেট লাগে এনে দিবেনি তোমার চাচ্চু। বাসায় ফিরতে দাও তাকে।’

আজমির সাহেব কথার মাঝে বললেন,

‘তোমার গুণধর সুপুত্র দেখো কোন চিপায় গিয়ে সিগারেট টানছে। এসে থেকে বাসায় আটক। সিগারেট ফুরিয়েছে হয়তো।’

মিসেস আলেয়া একটু রেগে গেলেন। বিরক্ত হয়ে বললেন,

‘সব-টা সময় ছেলে-টার পিছনে না লাগলে তোমার হয়না? কেন যে ওর পিছে লাগো তুমি? মনে হয় ছেলে-টা আমার একার-ই, তোমার নয়!’

‘মা-বাবা আপনারা থামুন দয়া করে। কি বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছেন?’

রাফা খানিকটা শাসনের সুরেই বললো। মিসেস আলেয়া পুত্রবধুর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,

‘সব-ই তো তোমার রুপবতী বোনের কৃতিত্ব বউমা। সেই ঘটনার পরপরই তো দেখছি তোমার শ্বশুরের চোখের বিষ ছেলে-টা।’

রাফা মাথা নিচু করে নেয়। এই কথার জবাবে কিছু বলার মতো খুজে পেলো না রাফা। আজমির সাহেব ক্ষিপ্ত স্বরে বললেন,

‘কথায় কথায় মেয়ে-টাকে টানো কেন তুমি?’

‘ তুমি কেন তবে আমার ছেলেকে টানো?’

‘যেমন মা, তেমনই ছেলে। শুধু নির্দোষ মানুষকে দোষী বানাতে পারলেই যেনো বাঁচে।’

আজমির সাহেব সোফা ছেড়ে উঠে চলে যেতে যেতে কথাটা বললেন। অলি গালে হাত দিয়ে বসে বসে বড়দের কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করছে। বড়দের ঝগড়া যে বাচ্চা ছেলের উপর ইফেক্ট ফেলবে বুঝতে পারে। এজন্য রাফা ছেলের কাছে গিয়ে হাত ধরে বললো,

‘বাবা, তুমি ঘরে গিয়ে গোসল করে কি কাপড় পরবে, সেসব বের করে রাখো। আমি আসছি। গোসল করিয়ে দিবো।’

অলি মায়ের কথা শুনে একছুটে রুমে চলে যায়। রাফা শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

‘আমার বোন-টা আপনারা যেন ক’টা দিন শান্তিতে থাকতে পারেন! এজন্য বাসা ছেড়ে অন্যের বাসায় উঠেছে। সেখানে তাকে টেনে এনে ঝগড়া করার কোনো দরকার নেই মা। অনুরোধ রইলো।’

মিসেস আলেয়া মুখ বাঁকালেন। ব্যঙ্গ করে বললেন,

‘যে মেয়ের জন্য আমার বড় ছেলে আমার থেকে দূরে! সেই মেয়ে আবার আমায় শান্তি দিতে চায়? ভালোই নাটক পারো তোমরা দুবোন।’

উনার কথা ফুরোতেই বাসার কলিং বেল বেজে উঠে। রাফা আর কোনো পাল্টা জবাব দিলো না। যে মানুষ সত্যি টা জেনেও, স্বীকার করতে চায় না! তাকে জোড় করে মানানোর দরকার মনে করলো না। কে এসেছে? এটা দেখতে রাফা পা বাড়ালো দরজার পানে।

চলবে?

আসসালামু আলাইকুম। অনিয়মিত দিচ্ছি বলে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি গল্প লেখার আগের থেকেই অসুস্থ মানুষ। পুরো বাসায় একা থাকতাম। সময় টা বোরিংনেসে কাটতো। সেজন্য শখের চোটে সময় কাটাতে লিখতে শুরু করি। কিন্তু লেখা শুরু করার পরপরই অসুস্থতা যেন ক্রমশ বাড়ছে। ইনশা আল্লাহ আগামী কাল হতে নিয়মিত দেওয়ার চেষ্টা করবো। আমার জন্য দোআ করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here