#লুকানো_অনুভূতি
#পর্বঃ১৩
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
পরের দিন সকাল বেলা ইমা আপু আসলো। খুশিতে ভরে গেলো আজকে আমাদের বাড়িটা।
আপু আমি আর রিহু রুমে বসে গল্প করছি তখন আপু বললো হুর বিয়ের পরের জীবন কেমন লাগছে?
আমার বিয়ে হয়েছে তাতো আমার মনেই হয় না। মনে হয় আমি ফুপি বাসায় ঘুরতে গেছি। তোমার কেমন লাগছে?
আমার তো বিয়ের আগের বেশি ভালো লেগেছে। এখন যে খারাপ লাগছে তা কিন্তু না কিন্তু বিয়ের আগে বাবা মার সাথে থাকতে পারতাম। যখন যা মন চায় তা করতে পারতাম কিন্তু এখন বিয়ের পরে কত দায়িত্ব।
তা ঠিক বলেছ। বিয়ের পরে তো একটু আধটু দায়িত্ব নিতে হয় এই।
রিহু তখন পাশ থেকে বলে উঠলো আজ সিঙ্গেল বলে শশুর বাড়ির গল্প করতে পারি না আমি। এই দুঃখ আমি কোথায় রাখবো?
ইমা আপু ওকে মজা করে থাপ্পর দিয়ে বলে তুই সিঙ্গেল? তুইতো আমাদের সবার আগে ডাবল হয়েছিস।
আপু আমাদের ইয়াদ ভাইয়াকে কথাটা জানানো উচিত যে রিহু নাকি সিঙ্গেল।
জানা যেয়ে, তোর ভাইকে আমি ভয় পাই নাকি।
হুর, রিহু যেহেতু সিঙ্গেল তাহলে চল ইয়াদের জন্য একটা মেয়ে খুঁজি। সবাই বিয়ে করে ফেলেছে আমার ভাইটা একা সিঙ্গেল থাকবে এটা কি হয় বল।
ঠিক বলেছো আপু ভাইয়ার জন্য একটা মেয়ে খুঁজা দরকার।
রিহু তো ক্ষেপে গেছে। আমাদের দুজনকে বালিশ দিয়ে মারা শুরু করলো।
ইয়াদ ভাইয়া কে বিয়ে দিবো তাতে তুই ক্ষেপে গেলি কেন তুইতো সিঙ্গেল।
হুরের বাচ্চা তুই চুপ করবি নাহলে খবর আছে তোর।
ইমা আপু বললো হুর তো ঠিকি বলেছে তুই ক্ষেপছিস কেনো?
আপু তুমিও, দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা তোমাদের এই বলে তিনজনে বালিশ নিয়ে একজনের গায় আরেকজনে ছুরা শুরু করলো।
রিহু ছিলো দরজার পাশে ওর দিকে বালিশ ছুরে মারলাম ঠিক সেই সময় রোয়েন ঢুকলো রুমে। রিহু সরে গেলো আর বালিশ টা যেয়ে পড়লো রোয়েন মুখে। আমি তারাতাড়ি যেয়ে ইমা আপুর পিছে লুকিয়ে পড়লাম ভয়ে।
রোয়েন ধমক দিয়ে উঠলো তোরা কি এখনো ছোট আছিস যে এভাবে মারা/মারি করছিস। ইমা তুইও? এই দুইটার মাথায় তো কোনো বুদ্ধি নেই তাই বলে এদের সাথে থেকে তুই ও বাচ্চামো করছিস।
আমি ফিসফিস করে ইমা আপুর কানে বললাম আসছে খাটাস একটা। সারা দিন ধমক দেওয়া ছাড়া কিছু বুঝে না।
কি ফিসফিস করছো, দেখে নিবো পরে তোমাকে আমি। এই বলে খাটের পাশ থেকে তার ফোন নিয়ে চলে গেলো।
ইমা আপু পাশ থেকে বলে উঠলো ওহ হোওওও এক দিনেই তুই থেকে তুমিতে চলে গেছে কি ভালোবাসা।
আমি মুখ ভেঙিয়ে বললাম আসছে ভালোবাসা, সারা দিন ধমক দিয়ে পায় দিশে আবার বাসবে ভালো হুহ।
আমার কথা শুনে ইমা আপু আর রিহু হেঁসে উঠলো জোরে।
আপু চলো ছাঁদে যেয়ে গল্প করি রুমে এখন ভালো লাগছে না।
ঠিক বলেছিস চল যাই এই বলে আমরা তিনজন ছাঁদে চলে গেলাম।
ছাঁদে যেয়ে তিনজন বসে বসে গল্প করছিলাম তখন ছাঁদে আসলো রোয়েন, ফাহিম ও ইয়াদ। তারাও এসে আমাদের সাথে বসলো।
ইয়াদ ভাইয়া এসেই বলে কিরে ফকিন্নির দল কি করিস তিন পেত্নী একসাথে বসে।
আমরা সবাই ক্ষেপে গেলাম, ইমা আপু বললো ইয়াদের বাচ্চা তুই ফকিন্নি তোর বউ ফকিন্নি। যা এখান থেকে, আসছে আমাদের জ্বলাতে।
তোদের মতো পত্নীর সাথে আড্ডা দিতে আমার বয়েই গেছে। আসছিলাম একটা সুখবর দিতে।
আমি বললাম ভাইয়া বিয়ে টিয়ে করে ফলেছো নাকি আমাদের না জানিয়ে? তার খবর দিতে আসলা নাকি বলে মুখ টিপে হেসে বললাম রিহুর দিকে তাকিয়ে। রিহু আমার দিকে চোখ গরম করে তাকালো।
হুর তুই কিন্তু মাইর খাবি আমার মতো পিওর সিঙ্গেল একজন মানুষের নামে এগুলো কি অপবাদ দিচ্ছিস।
রিহু চোখ পাকিয়ে তাকালো ইয়াদের দিকে। ইয়াদ ভয়ে মনে মনে ভাবলো কি বলতে কি বলেছি। মহারানী আমাকে একা পেলে আস্ত রাখবে না।
ইমা আপু বললো তুই সিঙ্গেল? হুর দেখছিস আজকে মজার মজার জোক্স শুনিতেছি আমরা।
সবাই হেসে উঠলাম আপুর কথা শুনে।
তখন ফাহিম ভাইয়া বলে উঠলো তোমরা ঝগড়া থামাও মেইন কথা শুনো আগে।
আমরা সবাই হাসি থামালাম সিরিয়াস হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।
আজকে বিকেলে সবাই মিলে ঘুরতে যাওয়ার প্লান করেছি তোমরা যাবে নাকি।
রিহু লাফ দিয়ে উঠে বললো অবশ্যই যাবো এবং আপনার পকেট ও আজকে খালি করবো দুলাভাই আমাদের ট্রিট পাওয়া একদম বাকি।
রিহুর সাথে আমিও তাল মেলালাম ঠিক বলেছিস রিহু একদম।
ট্রিট শুধু আমার থেকে পাবে না শালিকারা, রোয়েন ও কিন্তু আছে সেটা মনে রেখো।
ইমা আপু বললো ভালো কথা মনে করিয়েছ, রোয়েন ভাই আজকে কিন্তু কোনো সুযোগ ছাড়ছি না আমরা।
রোয়েন ভাই হাসলো। দেখা যাবে আজকে কতো দূর খেতে পারিস। যা চাবি তাই দিবো।
ইয়াদ বলে উঠলো এ কথা বলিও না বন্ধু এরা এক একটা রাক্ষসী পরে দেখা যাবে তোকে পথের ভিখারি বানিয়ে দিছে।
আবারো আমাদের ক্ষেপিয়ে দিলো ইয়াদ ভাইয়া।
ইমা আপু রেগে বললো এবার কিন্তু তোর খবর আছে। তুই সবসময় আমাদের পিছে লেগে থাকিস কেনো? তোর কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি আমরা?
ইসস সত্যি কথা বললেই খালি দোষ।
ভাইয়া তুমি চুপ করবে এবার কিন্তু তোমার খবর আছে।
থাক বাবা চুপ করে যাই আর নাহলে দেখা যাবে তিন পেত্নীর হাতে ইয়াদ নামের একটা ভদ্র ছেলে আহত হয়েছে।
রোয়েন ইয়াদের পিঠে চাপড় মেরে বললো শালা পরিস ও কম না বচ্চা মানুষদের ক্ষেপাচ্ছিস।
তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলাম তার কথায়। আমরা মোটেও বাচ্চা না।
ওহ রিয়েলি? বাচ্চা না হলে ওর কথায় ক্ষেপছো কেনো? আবার রুমের ভিতরে বসে তিনটায় মারামারি করো এগুলো কি বড়রা করে?
ফাহিম বললো থাক এসব কথা রাখো এখন। তোমরা যাবে তাহলে যেয়ে রেডি হও তোমাদের রেডি হতে তো আবার কত সময় লাগে।
ইয়াদ পাশ থেকে খোঁচা মেরে বললো আটা ময়দার বস্তুা নিয়ে বসলে সময় লাগবে নাতো কি লাগবে।
ভাইয়া এবার তোমার খবর আছে এই বলে আমরা তিনজন উঠে ভাইয়ার পিছে ছুট লাগালাম।
জীবন বাচাতে হলে পালাই এ বলে ইয়াদ দৌড় লাগালো।
এদের কান্ড দেখে রোয়েন ফাহিমকে বলে উঠলো পরেও কম না এরা। এতো এনার্জি যে কোথায় পায় এরা।
ঠিক, কারো থেকে কেউ কম না। ইয়াদ পারেও বটে সব সময় এদের পিছে লেগে থাকে।
ইয়াদ দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে গেলো। দৌড়ে এসে রোয়েনের পিছে লুকালো। তুই আমার বন্ধু নাকি শত্রু দেখছিস তিন ডাইনি আমার পিছে পড়েছে আর তুই দাঁড়িয়ে আছিস।
ঠিক আছে একদম ক্ষেপানোর সময় এই কথা খেয়াল ছিলো না?
কানে ধরছি ভাই আর ক্ষেপাবো না। এবারের মত বাচা।
হুর ইয়াদকে ধরতে আসলে রোয়েন হুরের হাত ধরে ফেললো। হয়েছে অনেক ছুটাছুটি করেছ এবার চুপ করো।
হুর থেমে গেলো সাথে রিহু আর ইমাও।
ফাহিম বললো যাও রেডি হও তোমরা।
তিনজন নিচে গেলো, ঠিক করলো শাড়ি পরবে তিনজন।
পরে তিনজন মিলে ইমা আপুর রুমে চলে গেলাম।
আমি কালো শাড়ি পরলাম। রিহু পেঁয়াজ কালার আর ইমা আপু আকাশি কালার শাড়ি পরলো।
পরে তিনজন শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে সাজলাম। আমি আমার রুমে চলে গেলাম ফোন আর ব্যাগ আনতে। রুমে যেয়ে দেখি উনি বসে আছে।
আমি আসতে এক ধেনে তাকিয়ে রইল। একটু একটু করে আমার সামনে এগিয়ে আসলো। গালে আলতো করে হাত রেখে বললো সুন্দর লাগছে তোমাকে অনেক।
লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিলাম। এই প্রথম তিনি আমার প্রশংসা করলো।
আমার জামা কাপড় দেও রেডি হতে হবে তো।
আমি লাগেজ খুলে তার জন্য আমার শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে কালো শার্ট প্যান্ট বের করে তার কাছে নিয়ে দিলাম। মুচকি হেসে তিনি নিলো। আমিও হালকা হাসলাম।
চলবে?