প্রেমের_পরশ #পর্বঃ১৬

0
198

#প্রেমের_পরশ
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি

আমান নিজের বিয়ের সিদ্ধান্তে যে নারাজ সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আব্দুল হোসেন আমানের মুখের অভিব্যক্তি দেখে কিছু আন্দাজ করতে পারলেন। তাই তিনি আমানকে উদ্দ্যেশ্য করে বললেন,
‘কি হয়েছে আমান? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? তুমি কি আদরকে বিয়ে করতে রাজি নও? তোমার কি কাউকে পছন্দ করা আছে নিজের স্ত্রী হিসেবে?’

আমান কিছু বলতে যাবে তার আগেই জান্নাতুল খাতুন বলে ওঠেন,
‘ওর আবার কি পছন্দ থাকবে? যদি থাকতো এত দিনে তো জানতেই পারতে। আমার মনে হয় আমানের জন্য আদরের থেকে ভালো মেয়ে আর পাওয়া যাবে না। কালকেও ভাইয়ের সাথে এই ব্যাপারে কথা বললাম। এখন আমরা দুই পরিবার মিলে বসে কথা বলে সব কিছু ঠিকঠাক করে নেই।’

আমানের ধৈর্যের সীমা ভেঙে যায়। সে আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা করতে চাইল না। দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। আমানের বেরিয়ে যাওয়া দেখে আব্দুল হোসেন বললেন,
‘আমার মনে হয় আমান বিয়েতে রাজি নয়। দেখলে না কিভাবে বিয়ের কথা শুনে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।’

জান্নাতুল খাতুন অমত করে বলল,
‘তুমি ভুল ভাবছ। ও হয়তো লজ্জা পেয়েছে তাই এভাবে বেরিয়ে গেল। আদরকে তো তুমি দেখেছ। যেমন দেখতে সুন্দর, তেমনই সুন্দর ব্যবহার। এমন মেয়েকে বউ হিসেবে পাওয়াই তো সৌভাগ্যের ব্যাপার।’

‘কিন্তু,,,’

‘না আর কোন কিন্তু নেই। আমি নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে ফেলেছি। এখন তুমি যেহেতু আমানের বাবা তাই তুমি চাইলে এই বিয়েটা নাই দিতে পারো কিন্তু আমিও তো ওর মা। আমার পছন্দটাও একটু ভেবে দেখো।’

আব্দুল হোসেন আর কিছু বললেন না। নিজের স্ত্রীকে তিনি চেনেন। তিনি যখন পছন্দ করেছেন তখন আদরের সাথে আমানের বিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি আদা জল খেয়ে নামবেন। তবে আব্দুল হোসেন মনে মনে বললেন,
‘তুমি যতো যাই বলো না কেন আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমান এই বিয়েতে রাজি হয়। ও হয়তো সত্যিই অন্য কাউকে পছন্দ করে। এই ব্যাপারে আমাকে আমানের সাথেই সরাসরি কথা বলতে হবে। আমি চাই না, আমার ছেলের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে কারো সাথে ওর বিয়ে দিতে। যেমনটা আমার সাথে হয়েছিল।’

৩১.
আমান নিজের ঘরে মন ভাড় করে বসে আছে। তার সাথে এটা কি হয়ে গেল সেটা নিয়েই ভাবছে সে। কোথায় আমান ভেবেছিল যে, ছোয়াকে নিজের মনের কথা বলবে অতঃপর নিজের পরিবারের সবাইকে রাজি করিয়ে ছোয়াকে বিয়ে করে নেবে। আর এদিকে তার মা তার অজান্তেই তার বিয়ে পর্যন্ত ঠিক করে নিল। আমানের খুব অসহ্যকর লাগছে সব কিছু। কিন্তু সে ঠিক করে নিল, আর চুপ থাকবে না। যদি নিজের মনের কথা মনেই রাখে, তাহলে ছোয়াকে চিরকালের মতো হারিয়ে ফেলবে। ছোয়াকে পাওয়ার জন্য আমান সবকিছু করতে রাজি আছে।

যেই ভাবনা সেই কাজ। আমান আর দেরি না করে ছোয়ার রুমের দিকে পা বাড়ালো৷ ছোয়ার রুমের সামনে এসে দেখল দরজাটা খোলাই আছে। এমনটা দেখে সে ভাবল ছোয়া হয়তো এখন ঘরেই আছে। তাই সে রুমে প্রবেশ করল। রুমে ঢুকতেই দেখতে পেল ছোয়া ঘুমিয়ে আছে। আমান ছোয়াকে এভাবে শান্তিতে ঘুমাতে দেখে কোমড়ে হাত দিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
‘এদিকে আমি অশান্তিতে ডুবে যাচ্ছি। তোকে হারিয়ে ফেলার ভয় আমাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। আর তুই এখানে শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছিস। নাহ, তোকে আজ আমি সব কিছু জানাবোই।’

ছোয়াকে ডাকতে গিয়েও কেন জানি থেমে গেল আমান। কিছু মুহুর্ত চিন্তা করে দেখল, ছোয়ার এখন পরীক্ষা চলছে। মেয়েটা এমনিতেই রাত জেগে পড়াশোনা করে। এখন হয়তো ক্লান্ত হয়ে একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছে। তাই আমানের উচিৎ নয় তাকে বিরক্ত করা। এই ভাবনা থেকেই আমান ছোয়ার ঘুম আর ভাঙ্গায় না। ছোয়ার কপালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
‘শান্তিতে ঘুমা ছোয়া। তবে তোকে আর গোপনে ভালোবেসে যেতে পারবো না আমি। যথেষ্ট সময় নষ্ট করে ফেলেছি কিন্তু আর নয়। এবার আমার মনের অনুভূতি গুলো তোকে জানানোর উপযুক্ত সময় এসে গেছে। আমি এবার তোর কাছে এই লুকানো অনুভূতি গুলো ব্যক্ত করব। আমাকে যে খুব করে টানছিস তুই। আমার প্রেমের পরশে রাঙিয়ে দিতে চাই তোকে। এবার তোকে সেই সূযোগ আমায় দিতে হবে।’

অতঃপর আমান রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

৩২.
আজকের দিনটা শুরুই হলো সূর্যের প্রখরতা দিয়ে। আজকের আবহাওয়া বেশ উষ্ণ। এই উষ্ণ আবহাওয়া যেন আমানের মনকেও উষ্ণ করে তুলছে। সে শুধু সুযোগ খুজছে ছোয়াকে নিজের মনের কথা বলার। কিন্তু ভাগ্য যেন কিছুতেই তার সহায় হচ্ছে না। যতবার ছোয়াকে কিছু বলার চেষ্টা করছে, কিছু না কিছু বাধা আসতেই আছে। যাতে বিরক্ত হয়ে গেল আমান।

আমানের ছটফটানি আব্দুল হোসেনের নজর এড়ালো না। তিনি আজ সকাল থেকেই লক্ষ্য করে চলেছেন আমান বেশ কয়েকবার ছোয়াকে কিছু বলতে চাইছে। কিন্তু কখনো জান্নাতুল খাতুন চলে আসছেন, তো কখনো মতিয়া বেগম, আবার কখনো ছোয়া নয়তো আমানের ফোন বেজে উঠছে। এখন তো আবার সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে পড়েছে ব্রেক ফাস্ট করার জন্য।

ব্রেক ফাস্টের সময়ও আব্দুল হোসেন খেয়াল করলেন আমান বারংবার ছোয়ার দিকে তাকাচ্ছে। এসব দেখে তার অবচেতন মনে সন্দেহের সৃষ্টি হলো। আমানের চোখের ভাষা যেন স্পষ্ট বুঝতে পারছিলেন আব্দুল হোসেন। আব্দুল হোসেন বুঝে গেলেন আমান ছোয়াকে পছন্দ করে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মৃদু হাসলেন তিনি। এখন দেখা যাক তার পরবর্তী পদক্ষেপ কি হয়।


আমান ও আব্দুল হোসেন আজ একসাথে গাড়িতে করে অফিস যাচ্ছে। আব্দুল হোসেন বেশ কয়েকবার আমানের দিকে তাকাচ্ছেন। আমান কিছুটা অস্বস্তি বোধ করে বলে,
‘তুমি আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছ কেন আব্বু?’

আব্দুল হোসেন কিছুক্ষণ নীরব থেকে বললেন,
‘ভাবছি তোকে বলা ঠিক হবে কিনা। হাজার হোক,তুই আমার ছেলে। কথাটা বলতে আমি একটু বিব্রতবোধই করছি কিন্তু তবুও বাবা হিসেবে তোর ভবিষ্যতের জন্য প্রশ্নটা আমায় করতেই হবে। তুই কি ছোয়াকে পছন্দ করিস আমান?’

আমান কোনরকম বিব্রতবোধ না করেই অকপটে স্বীকার করে নিল,
‘হ্যা, আমি ছোয়াকে পছন্দ করি। এখন কি তুমি বাংলা সিনেমার বাবাদের মতো ডায়লগ দেবে নাকি?’

আব্দুল হোসেন ঠোট টিপে হেসে বলেন,
‘এমন কিছু না। আমি তো তোর ভবিষ্যত গুছিয়ে দেব।’

‘কিভাবে?’

‘তোর ওয়কাত আমার বোঝা হয়ে গেছে, আজ অব্দি তুই ছোয়াকে কিছু বলতে পারলি না। তাই এবার লাজলজ্জার মাথা খেয়ে আমাকেই বলতে হবে কথাটা ছোয়াকে।’

‘তুমি বলবে?’

‘বাবা যখন হয়েছি এটুকু করতেই হবে।’


আব্দুল হোসেন সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফেরেন। আমানও তার সাথেই ফিরে আসে। আব্দুল হোসেন বাড়িতে ফিরেই প্রথমে ছোয়ার রুমে যান। তার সাথে জরুরি কথা বলতে। আমান বাইরে দাড়িয়ে থাকে৷ আব্দুল হোসেনকে রুমে দেখে ছোয়া বলে,
‘বড় আব্বু তুমি। কিছু বলবে?’

আব্দুল হোসেন কিছুটা অস্বস্তিবোধ করেন। তবে নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন,
‘তুই কি আমানকে পছন্দ করিস?’

এহেন প্রশ্ন শুনে ছোয়া থতমত খেয়ে যায়৷ মাথা নিচু করে বলে,
‘এটা কেমন প্রশ্ন বড় আব্বু? আমান ভাইয়া তো আমার ভাইয়ার মতো। তাকে পছন্দ করার ব্যাপারটি ঠিক বুঝলাম না।’

‘আমি জানতে চাই, আমানকে কি তুই স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবি? মানে আমি যদি তোদের বিয়ে দিতে চাই তাহলে কি তুই বিয়েট করবি?’

ছোয়া বলে,
‘আমি আমান ভাইয়াকে সেই নজরে দেখিনি কখনো।’

দরজার বাইরে দাড়িয়ে থাকায় আমান সব শুনতে। রাগে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয় সে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here