#প্রেমের_পরশ
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ছোয়া স্পষ্টভাবে তোরাবকে জানিয়ে দেয়,
‘আমার পক্ষে আপনার সাথে রিলেশনে যাওয়া সম্ভব নয়৷ আমি এই শহরে একটা উদ্দ্যেশ্য নিয়ে এসেছি, পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাড়ানোর জন্য। আর এইসব হারাম রিলেশনে যাওয়ারও আমার ইচ্ছা নেই। তাই ভালো হবে আপনি যদি আমাকে ভুলে যান।’
তোরাব নিজের হাতের মুঠো শক্ত করে নেয়। তার এত পরিকল্পনা, এত চেষ্টা সব কিনা শেষে ব্যর্থ হলো! এত কিছু করেও ছোয়ার মনে নিজের প্রতি অনুভূতি তৈরি করতে পারল না।
ছোয়া তোরাবের দিকে পুনরায় না দিকেই বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। ছাদে দাড়িয়ে এতক্ষণ সবকিছু দেখছিল আমান। আজ সে ভীষণ খুশি। প্রথমে তো খুব ভয় পেয়ে গেছিল যে ছোয়া আবার হ্যা না বলে দেয় কিন্তু ছোয়া নাই বলল। যা স্বস্তি এনে দিল আমানের মনে। আমান তোরাবের নাম্বারে ফোন করে। শত্রুকে টিজ করার এই সুযোগ তো আর হাতছাড়া করা যায় না।
তোরাব নিজের গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময় তার ফোন বেজে ওঠে। তোরাব ফোনটা বের করতেই আমানের নাম্বার দেখেই বিরক্ত হয়। কল কে’টে দিতে গিয়েও কি মনে করে যেন রিসিভ করে। ফোনটা রিসিভ করা মাত্রই আমান তাচ্ছিল্য করে বলে,
‘কি হলো মিস্টার রোমিও? জীবনে প্রথমবার রিজেক্ট হয়ে কেমন লাগছে? খুব অহংকার ছিল না তোর নিজের উপর। দেখতে একটু সুন্দর আর মিষ্টি ব্যবহার দিয়ে তো মেয়েদের মন নিয়ে খেলিস। তাদের ভালোবাসার জালে ফাসিয়ে অতঃপর নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করে তাদের ছু’ড়ে ফেলিস। আজ দেখ তোর সাথে কি হলো।’
তোরাব কর্কশ গলায় বলল,
‘তুই আমাকে নিয়ে মজা করছিস আমান? শোন একদম বাড়াবাড়ি করবি না। ভুলে যাবি না আমি তোরাব চৌধুরী। আমার ক্ষমতা কতটুকু সেটা দেখাতে বাধ্য করিস না।’
আমান ভাবলেশহীন গলায় বলে,
‘তোর পাওয়ার দেখার অপেক্ষায় রইলাম। ও হ্যা, তুইও এটা মনে রাখিস আমি আমান হোসেন। আমার পাওয়ারের কাছে তুই কিছুই না।’
আমান ফোনটা রেখে দেয়। তোরাব ফোনটা আছা’ড় মা’রে অতঃপর নিজের গাড়িতে কয়েকটা ঘু’ষি দিয়ে রাগ সম্বরণ করার চেষ্টা করে। রাগে ক্রোধে ক্রমশ কাপছে তোরাবের পুরো শরীর। তোরাব বেশ জোর গলায় বলল,
‘আমাকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে তুই খুব বড় ভুল করলি আমান। আমি যে কি করতে পারি এবার তুই সেটা দেখবি। তোর সর্বনাশ না করা পর্যন্ত আমার শান্তি নেই। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।’
২৫.
ছোয়া ডাইনিং টেবিলে চুপচাপ বসে ভাত খাচ্ছে। সবার খাওয়া হয়ে গেছে শুধু আমান, ছোয়া আর আলিয়াই বাকি আছে। বাকি সবাই খাওয়া দাওয়া করে নিজের রুমে চলে গেছে।
ছোয়া নিজের খাওয়া সম্পূর্ণ করে যেতে নিতেই আমান বলে,
‘একটু অপেক্ষা কর। আগে তোর বিচার করি তারপর যা।’
ছোয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমানের দিকে তাকালো। আমানকে আজ বেশ শান্ত লাগছে। তার এই শান্ত রূপ যেন ছোয়াকে আরো বেশি ভাবিয়ে চলছে। কারণ রাগী মানুষেরা যখন এমন শান্ত ব্যবহার করে তখন তার মানে সেটা ঝড়ের পূর্বাভাস। বড় ঝড়ের আগে যেমন প্রকৃতি শান্ত স্থির থাকে এক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তেমনই।
ছোয়া নিজের কৌতুহল মেটাতে প্রশ্ন করে,
‘কিসের বিচার ভাইয়া?’
আমান এক গ্লাস পানি খেয়ে বলে,
‘আজ তুই বাসায় কাউকে কিছু না বলে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলি কেন? গেলি তো গেলি একা সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছিলি কেন?’
ছোয়া ঢোক গিলে বলে,
‘আমি যেতে চাইনি। নাদিয়াই জোর করে নিয়ে গেছিল। মাঝপথে ওর জরুরি কাজ থাকায় সিনেমা পুরো না দেখেই চলে আসে। কিন্তু আমার সিনেমাটা খুব ভালো লাগছিল তাই,,,’
ছোয়ার কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই আমানের রাগী দৃষ্টি দেখে থেমে যায় সে। আমান ছোয়াকে বলে,
‘এত পাকনামি করে একা আসতে গিয়েছিলি কেন? আমাকে ফোন করতে পারতি, আমি গিয়ে নিয়ে আসতাম।’
‘আসলে আমার ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেছিল। আমার পার্সটাও কোথাও যেন হারিয়ে গেছিল। তাই বাধ্য হয়ে হেটে হেটেই,,’
আমানের রাগ সপ্ত আসমানে উঠে গেল৷ সে নিজের ভাতের প্লেটটা জোরে শব্দ করে মেঝেতে ফেলে দেয়। আলিয়া, ছোয়া দুজনেই ভয় পেয়ে যায় প্রচুর। আমান রাগী গলায় বলে,
‘তোর এত বাড়াবাড়ি আমার সহ্য হয়না। তুই এত বেশি বুঝিস কেন? কারো ফোন নিয়ে ফোন করলেই হতো।’
ছোয়া আমতাআমতা করে বলে,
‘এই কথাটা আমার মাথায় আসে নি।’
আমানের রাগ কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছিল না। তবুও সে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলায়। অতঃপর ছোয়াকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘তুই এখনই আমার সামনে থেকে চলে যা। নাহলে আমি খুব খারাপ কিছু করে ফেলব। গবেট একটা।’
ছোয়া এই অপমান হজম করার মেয়ে নয়৷ কিন্তু আমানকে রেগে থাকতে দেখে ভয়ে কিছু বলল না। হাজার হোক দোষটা তো তারই ছিল।
২৬.
ভোরে ফজরের আযানের শব্দে ঘুম ভেঙে যেতেই ছোয়া নামাজ পড়তে উঠে পড়ে। অতঃপর নামাজ আদায় করে নিয়ে পুনরায় শুয়ে পড়ে। একটু আরাম নিয়েই পড়তে বসে। পড়াশোনা শেষ করে নিচে নেমে আসে।
নিচে আসতেই দেখতে পায় জান্নাতুল খাতুন, আব্দুল হোসেন সবাই চিন্তিত হয়ে সোফায় বসে আছে। তাদের চিন্তিত মুখ দেখে ছোয়া প্রশ্ন করে,
‘কিছু কি হয়েছে?’
জান্নাতুল খাতুন উদ্বীগ্ন স্বরে বলেন,
‘কাল রাতে আমান একটা ফোনকল পেয়ে কোথায় যেন বেড়িয়ে গেল। তখন থেকে সারারাত আর ফেরেনি। এখন ওর ফোনও বন্ধ বলছে৷ আমার খুব চিন্তা হচ্ছে। ছেলেটার কোন বিপদ হলো নাতো!’
জান্নাতুল খাতুনের কথা শেষ হতেই আব্দুল হোসেন হতাশা মিশ্রিত কন্ঠে বলেন,
‘ছেলেটা এত অবাধ্য হয়েছে যে বলার কতো নয়। কি দরকার ছিল এত রাতে বাইরে যাওয়ার। এই ছেলেটাকে আর মানুষ করতে পারলাম না।’
জান্নাতুল খাতুন আব্দুল হোসেনকে কথা শুনিয়ে বলে,
‘তুমিই তো আদর দিয়ে বাদর তৈরি করেছ। এখন আর বলে কি হবে?’
এসব কথার মাঝেই ছোয়া বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে নেয়। মতিয়া বেগম তাকে পেছন থেকে ডেকে বলে,
‘এভাবে খালি পেটে কই যাচ্ছিস? কিছু খাইয়া যা।’
ছোয়া দ্রুত গলায় বলে,
‘এখন সময় নেই। আমি বাইরে খেয়ে নেব।’
ছোয়া দ্রুত হেটে যেতে থাকে। বাইরে এসে একটা রিক্সা নিয়ে নেয়৷ তার মনে হচ্ছে আমানের সাথে যা হয়েছে তার সাথে তোরাবের জড়িত থাকার সম্ভাবনা আছে। কারণ তোরাবের ব্যবহারে তার এমনিতেই সন্দেহ হয়৷ গতকাল রাতে যেই ছেলেগুলো তাকে আক্রমণ করেছিল তারাও যে তোরাবের ভাড়া করা সেটাও ছোয়া জানত। কারণ কাল ছেলেগুলোর থেকে পালানোর সময় ছোয়া শুনতে পেয়েছিল একটা ছেলে বলছে,
‘মেয়েটাকে ধর। নাহলে তোরাব ভাই রেগে যাবে।’
অতঃপর যখন তোরাব ছোয়াকে আগ বাড়িয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে তখন তার অভিসন্ধি বুঝতে আর বাকি ছিল না ছোয়ার। তবুও বিপদ এড়াতে ছোয়া সবকিছু না জানার ভান করে। আর খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে তোরাবকে রিজেক্ট করে দেয়।
ছোয়ার এসব ভাবনার মাঝেই আচমকা রিক্সাওয়ালা রিকশা থামিয়ে দেয়। ছোয়া জিজ্ঞেস করে,
‘রিকশা থামালেন কেন?’
রিকশা ওয়ালা ছোয়ার দিকে তাকিয়ে সামনের দিকে ইশারা করে। ছোয়া সামনে তাকাতেই দেখতে পায় একজন বাইকে করে হেলমেট পড়ে রিক্সার সামনে এসে দাড়িয়েছে।
লোকটি হেলমেট নামাতেই ছোয়া ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে,
‘জাহিদ,,,’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨✨