প্রেমের_পরশ #পর্বঃ১৪

0
199

#প্রেমের_পরশ
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ছোয়ার গলা ভয়ে শুকিয়ে যায়। জাহিদকে নিজের সামনে দেখে সে ভয়ে একদম গুটিয়ে গেছে। মনে মনে বারবার আল্লাহকে ডাকছে। এসবের মাঝেই জাহিদ বাইক থেকে নেমে এগিয়ে আসে রিকশার কাছে। অতঃপর ছোয়ার হাতটা শক্ত করে ধরে তাকে রিকশা থেকে নামায়। ছোয়া সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে যাবে তার আগেই কেউ একজন সে ছোয়াকে জাহিদের থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। ছোয়া একটু পিছনে ফিরে তাকাতেই আমানকে দেখতে পায়। স্বস্তি এসে ধরা দেয় তার মনে। ছোয়া আবেগাপ্লুত হয়ে বলে,
‘আমান ভাইয়া আপনি এসেছেন আমাকে বাচাতে।’

আমান ছোয়ার দিকে একবার শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে অতঃপর ক্রোধান্বিত দৃষ্টিতে তাকায় জাহিদের দিকে। জাহিদকে হুংকার দিয়ে বলে,
‘অনেক বেশি সাহস বেড়ে গেছে না তোর? এবার দেখ আমি কি করি।’

আমান প্রথমে ছোয়াকে রিকশাতে উঠিয়ে দেয়। রিকশাওয়ালাকে বলে,
‘আপনি ওকে নিয়ে ভার্সিটিতে যান। ফাস্ট,,,’

ছোয়া কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু কিছু বলার সুযোগই পায়না৷ তার আগেই রিক্সাওয়ালা রিক্সা চালানো শুরু করেন। ছোয়ার কিছু বলতে পারে না। ভার্সিটিতে পৌছে ছোয়া দেখতে পারে সেখানকার পরিস্থিতিও বেশ উত্তপ্ত। ভার্সিটিতে ঢুকতেই দেখে মাঠে অনেক ভাঙচুরের আলামত পড়ে রয়েছে। দেখে বোঝাই যাচ্ছে এখানে হয়তো কাল রাতে অনেক মা’রা’মারি হয়েছে।

ছোয়া তার এক ব্যাচমেটকে দেখতে পায়। তাকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করে,
‘আচ্ছা এখানে কি কিছু হয়েছে?’

মেয়েটি অদ্ভুত ভাবে ছোয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘কেন তুমি কিছু জানো না? কোন দেশে থাকো? কাল রাত থেকে তো এখানে দুপক্ষের মা’রামারি হানাহানি হয়েছে। সারা রাত কি তাণ্ডবই না চলেছে। শুনেছি তোরাব নামের একজন নাকি মারাত্মক আহত হয়েছে। আজ তো ভার্সিটিতে ক্লাস হওয়ারই কথা ছিল না। কিন্তু সকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় সবকিছু ঠিক ঠাক হয়ে গেছে।’

ছোয়া সব শুনে আতকে ওঠে। এত সব কিছু হয়ে গেছে কিন্তু তার কাছে সবটা অজানাই ছিল। তোরাবের কথাটা মাথায় আসতেই ছোয়ার চিন্তা বেড়ে যায়। ছোয়া মনে মনে বলে,
‘আমান ভাইয়া এসবের সাথে জড়িত নয় তো? তাহলে তো অনেক বড় সমস্যা হয়ে যাবে।’

ছোয়া স্থির থাকতে পারল না কিছুতেই। তার মনে এখন বিভিন্ন দুশ্চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।

২৭.
জাহিদকে আজ ইচ্ছামতো পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছে আমান। এমন শায়েস্তা করেছে যে জীবনে আর ছোয়ার নাম মুখে আনার সাহস পর্যন্ত পাবে না, সেখানে ক্ষতি করা তো দূরের কথা।

জাহিদকে হাসপাতালে রেখে এসে সবেমাত্র বাইকে এসে বসল আমান। এমন সময় দেখতে পেল একটা সাদা গাড়ি এসে থামলো হাসপাতালের সামনে। কিছু মুহুর্তের মাঝেই সেই গাড়ি থেকে নেমে এলেন এমপি লতিফ চৌধুরী। যিনি সম্পর্কে তোরাবের মামা হন। লতিফ চৌধুরীকে দেখে তার কাছেই এগিয়ে যায় আমান। লতিফ চৌধুরী আমানকে দেখে রাগী গলায় বলে,
‘কাজটা তুমি ভালো করলে না আমান। আমার ভাগ্নের গায়ে হাত তুলেছ। তাকে মারাত্মক জখম করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছ। এর ফল তো তোমায় ভোগ করতেই হবে।’

আমান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
‘আমি আপনাকে ভয় পাইনা এমপি সাহেব। সরোজ ভাই আছেন তো। তিনিই আমাকে বাচিয়ে নেবেন।’

আমানের কথা শুনে বিশ্রীভাবে হাসেন লতিফ চৌধুরী। অতঃপর নিজের সান গ্লাসটা খুলে নিজের কূর্তার পকেটে রেখে বলেন,
‘সো পোর অফ ইউ আমান। তুমি এখনো মানুষ শিখতে শেখোনি। যেই সরোজ ভাইকে তুমি নিজের রক্ষাকর্তা ভাবছ সেই তো নিজের পিঠ বাচাতে তোমাকে ফাসিয়ে দিয়েছে।’

আমান নিজেকে সামলাতে পারে না। লতিফ চৌধুরীর দিকে আঙুল তুলে বলে,
‘একদম আমাকে ভুল বোঝাতে আসবেন না৷ সরোজ ভাই আপনার মতো নয়। উনি কখনো আমার সাথে এমন করতে পারেন না।’

লতিফ চৌধুরীর গার্ডরা এগিয়ে আসতে চাইলে তিনি ইশারা করে তাদেরকে থামিয়ে দেয়। অতঃপর নিজের ফোন বের করে একটা ভিডিউ দেখায় আমানকে। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সরোজ খান এই স্বীকারোক্তি দিচ্ছেন যে, তিনি নিজের চোখে দেখেছেন আমানই ঝামেলা শুরু করেছে এবং সেই তোরাবের এই অবস্থার জন্য দায়ী।

ভিডিওটা দেখে আমান যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা। য্বি সরোজ ভাইয়ের জন্য সে এত কিছু করল আজ সেই কিনা আমানকে এভাবে পিছন থেকে ছু’রি মারল। আমান তো গতকাল রাতে সরোজ খানের ফোনকল পেয়েই দৌড়ে এসেছিল। সরোজ খান আকাশকে ফোন করে বলেছিল, তোরাব এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা তাদের দলের কিছু ছেলে-পেলেদের ধরে মা’রছে এমনকি সরোজ খানের গায়েও হাত তুলেছে। এসব শুনে তো আমান নিজেকে স্থির রাখতে পারেনি।

আমানের হতবিহ্বল চেহারা দেখে লতিফ চৌধুরী তাচ্ছিল্য হেসে বলেন,
‘এরই নাম রাজনীতি আমান। তুমি এখনো রাজনীতির ব্যাপারে কিছু জানোনা। রাজনীতির মঞ্চে কেউ কারো আপন হয়না, সবাই এখানে নিজের স্বার্থটাই দেখে। নিজের স্বার্থে প্রতি মুহূর্তে রং বদলায়।’

লতিফ চৌধুরী তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করল তোরাবকে দেখতে যাওয়ার জন্য। এদিকে আমান এখনো ঘোরের মধ্যে। যে সরোজ ভাইকে নিজের আদর্শ মানত,যার জন্য এই রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছে আজ সেই কিনা তাকে এভাবে ফাসিয়ে দিল নিজের স্বার্থের জন্য!

২৮.
আমান দ্রুত বাড়িতে ফিরে যায়। জান্নাতুল খাতুন, আব্দুল হোসেন সবাই ড্রয়িংরুমে বসেছিল৷ আমানকে বাড়ি ফিরতে দেখে তারা যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়। জান্নাতুল খাতুন এগিয়ে এসে আমানকে প্রশ্ন করে,
‘তুই সারারাত কোথায় ছিলি আমান? আর তোর ফোন বন্ধ ছিল কেন? জানিস আমরা কত টেনশনে ছিলাম।’

আমান এমনিতেই খুব অস্থির ছিল। তাই এখন এত প্রশ্নের উত্তর দিতে তার ইচ্ছা করছিল। সে কারণে আমান বিরক্তিভাজন স্বরে বলে,
‘আমি অনেক টায়ার্ড। এখন কিছু বলতে পারছি না। রেস্ট নিতে চাই।’

‘জেলে গিয়ে যত রেস্ট নেবার নিন। চলুন এখন আমাদের সাথে।’

কারো কন্ঠস্বর কানে আসতেই আমান দরজার দিকে তাকায়৷ পুলিশ সদস্যদের দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে সে। আব্দুল হোসেন বসা থেকে উঠে দাড়ান। পুলিশকে দেখে তিন বেশ ঘাবড়ে গেছেন। তিনি আতঙ্কিত গলায় প্রশ্ন করেন,
‘আপনারা কেন এসেছেন?’

একজন পুলিশ অফিসার বলেন,
‘আপনার সুপুত্রকে গ্রেফতার করার জন্য এসেছি।’

‘কি অপরাধ তার?’

‘সেটা আপনার ছেলেকেই জিজ্ঞেস করুন। ভার্সিটিতে গিয়ে মা’রামারি করেছে। এমপির ভাগ্নেকে মে’রে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। তার অবস্থা এখন গুরুতর। এমপি নিজে মামলা করেছে আপনার ছেলের নামে।’

পুলিশ অফিসারের কথা শুনে আতকে ওঠেন জান্নাতুল খাতুন। আব্দুল হোসেনও হতবাক দৃষ্টিতে তাকান আমানের দিকে। অতঃপর ধীর পায়ে হেটে এগিয়ে যায় আমানের দিকে। আমানের গালে জোর চ’ড় বসিয়ে দিয়ে বলেন,
‘যেই কাজটা অনেক আগে করা উচিৎ ছিল সেটা আজ করলাম। তোকে আমার অনেক আগেই শাসন করা উচিৎ ছিল। তোর মা ঠিকই বলে, আমি তোকে আদর দিয়ে বাদর করেছি। তাই আজ এই দিন দেখতে হচ্ছে। এতদিন ধরে নিজের যে সম্মান আমি তৈরি করেছি আজ এক নিমেষেই তুই সব শেষ করে দিলি। আজ তোর জন্য বাড়িতে পুলিশ এলো। এই দিন দেখাই বাকি ছিল আমার।’

আমান মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। আজ সত্যিই অনেক লজ্জিত সে। শুধুমাত্র তার জন্য তার পরিবারের মান সম্মান নষ্টের পথে। রাজনীতি নামক অভিশাপে নিজেকে জড়িয়ে আজ নিজের জীবনে এত বড় সমস্যা তৈরি করে ফেলল সে।

পুলিশ এগিয়ে এসে আমানের হাতে হাতকড়া পড়ায়। আব্দুল হোসেন মুখ ফিরিয়ে নেন। জান্নাতুল খাতুন কান্না করে দেন নিজের ছেলের এই পরিস্থিতি দেখে। আব্দুল হোসেনের কাছে এসে বলেন,
‘তুমি কিছু করো, ওরা আমানকে নিয়ে যাচ্ছে।’

‘ওনাদেরকে ওনাদের কাজ করতে দাও।’

জান্নাতুল খাতুন আর বলার মতো কিছু খুজে পেলেন না।

পুলিশ আমানকে হাতকড়া পড়িয়ে নিয়ে যেতে লাগল। সদর দরজায় পা রাখতেই আমান ছোয়াকে দেখতে পেল। ছোয়া সবেমাত্র ভার্সিটি থেকে ফিরল। আমানকে এভাবে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে দেখে চমকে গেল ছোয়া৷ তার ভয়ই তবে সত্যি হলো!

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here