#প্রেমের_পরশ
#পর্বঃ২০(বোনাস পর্ব)
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ছোয়া ছাদে দাড়িয়ে আমানের বলা কথা গুলো নিয়েই ভাবছিল এমন সময় কেউ তার সামনে এসে দাড়ায়। ছোয়া সেদিকে নজর দিতেই দেখে জান্নাতুল খাতুন তার সামনে দাড়িয়ে। তাকে দেখে ছোয়া কিছুটা থমকে যায়৷ অতঃপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
‘বড় আম্মু আপনি? কিছু কি বলবেন?’
তিনি গম্ভীর মুখ করে বলেন,
‘আমান তোমাকে কি বলেছে সবটাই আমি শুনেছি।’
জান্নাতুল খাতুনের কথাটা শুনে ছোয়া অস্থিরতা বোধ করতে থাকে। একেই সে নিজের চিন্তায় মগ্ন ছিল তার উপর এখন এই নতুন সমস্যার সৃষ্টি হলো যা তার জন্য খুবই চাপের। ছোয়া কিছু সময় নিয়ে বলল,
‘আসলে আমান ভাইয়া,,,,’
জান্নাতুল খাতুন তাকে থামিয়ে দিয়ে রাগী স্বরে বললেন,
‘আমি সব শুনেছি ছোয়া। তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না। আমি এমন কিছুই আন্দাজ করেছিলাম। আগুন এবং ঘি এক সাথে থাকলে এমনই হওয়ার কথা।’
ছোয়া মাথা নিচু করে থাকে। নিজের হয়ে কিছু যে বলবে তার সুযোগই পাচ্ছিল না। এরই মাঝে জান্নাতুল খাতুন বলে উঠলেন,
‘তুমিও কি আমানকে পছন্দ করো ছোয়া? কি হলো চুপ করে আছ কেন বলো।’
ছোয়া উত্তরে বলল,
‘নিজের অনুভূতি নিয়ে আমি সত্যি খুব সন্দীহান কিন্তু আমি আমান ভাইয়ার জন্য হয়তো কিছু ফিল করি।’
জান্নাতুল খাতুন এবার আদেশের সুরে বলে উঠলেন,
‘তুমি আমানকে গিয়ে না বলো। এমনটা হলেই ভালো হবে। দেখো আমানের সাথে আদরের এনগেজমেন্ট অলরেডি হয়ে গেছে। এখন যদি তোমার কারণে এই এনগেজমেন্ট ভেঙে যায় তাহলে আমার ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্ক ভেঙে যাবে৷ তুমি নিশ্চয়ই এটা চাও না? তাছাড়া তুমিই তো বললে নিজের অনুভূতি নিয়ে তুমি সন্দীহান। তাহলে আমানকে মিথ্যা আশা দেওয়ার দরকার নেই। তুমি ওকে না বলে দাও তাহলেই সব দিক বজায় থাকবে।’
ছোয়া কিছুটা সময় নিয়ে ভেবে বলে,
‘আপনি হয়তো ঠিকই বলছেন বড় আম্মু। আমি আমান ভাইয়াকে না বলে দিবো। এটাই ভালো হবে।’
জান্নাতুল খাতুন হঠাৎ এমন একটি কথা বললেন যা ছোয়াকে অনেক বেশি হতবাক করে দিল। তিনি বললেন,
‘আজ যা হলো তারপর আর তোমার এই বাড়িতে থাকতে হবে না। তুমি বাড়িতে আপাতত বলো যে, তোমার এখান থেকে ভার্সিটি যেতে অসুবিধা হয় তাই তুমি হোস্টেলে থেকে পড়বে। আমানের বিয়ের পর তুমি ফিরে আসিও। কারণ নাহলে আমানের তোমার প্রতি দূর্বলতা বৃদ্ধি পাবে।’
ছোয়া কিছুটা থমকে গেলেও জান্নাতুল খাতুনের যুক্তিকে সঠিক মনে করে এবং মেনে নেয়।
৩৯.
ছোয়া অনেক ভেবে অবশেষে আমানের রুমে আসে। আমান সবেমাত্র গোসল করে বাথরুম থেকে বাইরে এলো। এমন সময় ছোয়াকে দেখে সে বলে ওঠে,
‘অবশেষে তাহলে তুই এলি। বল তোর সিদ্ধান্ত কি? তুই কি সিদ্ধান্ত নিয়েছিস বল আমায়।’
ছোয়া একটু নার্ভাস ছিল। আমানকে কিভাবে নেতিবাচক উত্তর দেবে সেটাই ভাবছিল সে। তাই সহজে কিছু বলতেও পারছিল না। ছোয়ার এই নিশ্চুপ অবতার আমানকে আরো ধাধায় ফেলে দেয়৷ তার অস্থির মন ক্ষণে ক্ষণে আরো বেশি অস্থির হয়ে উঠছিল। তাই সে বেশ উদ্দীপনার সাথে ছোয়ার হাতটা শক্ত করে ধরে বলে,
‘তুই দয়া করে আর আমায় এমন অস্থিরতার মধ্যে রাখিস না। হ্যা বা না যাই বলিস না কেন একটু তাড়াতাড়ি বল।’
ছোয়া চোখ বন্ধ করে নিজের মনে শক্তি জোগায়৷ অতঃপর বেশ শক্ত গলায় বলে,
‘দুঃখিত আমান ভাইয়া। আমার উত্তর ইতিবাচক নয়। আপনি যথেষ্ট বড় হয়েছেন, তাই আপনি বুঝবেন জোর করে ভালোবাসা হয় না। আমাকে আমার মতো থাকতে দিন। আর আপনিও নিজের জীবন নিজের মতো করে গুছিয়ে নিন। আমার হাতটা ছাড়ুন লাগছে আমার।’
আমান তার হাতের বাধন হালকা করে বলে,
‘যাকে ধরে রাখার সাধ্য নেই তার হাত ধরে আর কি করবো৷ যা তোকে আজ আমি মুক্তি দিলাম। তোর উত্তর যখন না-বাচক তখন আমিও তোর থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। তুই নিজের মতো থাক।’
কথাগুলো বলার সময় আমানের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়ে যাচ্ছিল। নিজের বুকে পাথর চেপে তাকে কথাগুলো বলতে হচ্ছিল। ভালোবাসার মানুষকে এত কিছু বলার পরেও যখন সেই মানুষটা ভালোবাসা বুঝতে পারে না, অবহেলা করে অনুভূতি গুলোকে তখন যে মন ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। তেমনটাই ঘটল আমানের সাথে।
এতকিছুর পরেও ছোয়া শক্ত খোলসে আবৃত রাখার চেষ্টা করল নিজেকে। যেন সে এক শক্ত মানবী। তবে মনের দিক থেকে তার অবস্থাও ভালো না। তার মনে চাপ পড়ছে প্রচুর। আমানের প্রতি তো তারও কিছু অনুভূতি রয়েছে। যা সে উপলব্ধি করতে পারছে কিন্তু পরিস্থিতির চাপে স্বীকার করতে পারছে না। ছোয়ার মনে হতে থাকে জান্নাতুল খাতুন যখন চান না তখন এই বিষয়ে না আগানোই ভালো। শুধু শুধু পারিবারিক ঝামেলা তৈরি হবে। যেখানে তারা ছোয়ার এই অসময়ে তাকে আশ্রয় দিয়েছে তখন এভাবে তাদের মধ্যে পারিবারিক ঝামেলা তৈরি করে অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দিতে পারবে না ছোয়া। তাই আপাতত নিজের মনের অনুভূতি গুলোকেই সযত্নে ব’লিদান করে দিল।
৪০.
ছোয়া আব্দুল হোসেনকে তার হোস্টেলে যাওয়ার ব্যাপারে বলে। আব্দুল হোসেন অমত করে বলেন,
‘এমন কি জরুরি পড়ল যে তোকে হোস্টেলে গিয়ে থাকতে হবে?’
ছোয়া নম্রভাবে বলল,
‘খুব জরুরি জন্যই যেতে চাচ্ছি৷ শুধু তো এক সপ্তাহেরই ব্যাপার।’
আব্দুল হোসেন কিছুতেই রাজি হন না কিন্তু এমন সময় জান্নাতুল খাতুন এসে বলেন,
‘ও যখন যেতে চাইছে তখন তুমি আর আপত্তি করো না। হয়তো খুব বেশি দরকার জন্যই ও যেতে চাচ্ছে।’
জান্নাতুল খাতুন এভাবে বলায় আব্দুল হোসেন আর আপত্তি করতে পারলেন না। ছোয়াকে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলেন। ছোয়া ঘরে এসে নিজের প্রয়োজনীয় সবকিছু গোছাতে লাগল। মতিয়া বেগম তাকে বললেন,
‘তোর এহন হোস্টেলে যাওনের কি দরকার ক তো আমায়?’
ছোয়া বলে,
‘অনেক বেশি দরকার।’
মতিয়া বেগম আর কিছু বললেন না। এর মধ্যেই ছোয়া তৈরি হয়ে বের হলে আব্দুল হোসেন বলেন,
‘তোর একা যাওয়ার দরকার নেই। আমান তোকে পৌছে দিবে।’
ছোয়া অমত করতে চেয়েও পারে না। বাধ্য হয়ে আমানের সাথেই আসে। আমান গাড়িতে করে ছোয়াকে পৌছে দেয়। পুরো রাস্তায় সে কোন কথাই বলে না ছোয়ার সাথে। যা ছোয়াকে অবাক করে। এমনকি ছোয়াকে নামিয়ে দিয়েও আমান কিছু না বলে চলে যায় গাড়ি নিয়ে। ছোয়া হোস্টেলের সামনে দাড়িয়ে অস্ফুটস্বরে বলে,
‘এত অভিমান আপনার আমান ভাইয়া!’
এদিকে আমান গাড়িতে করে যাওয়ার সময় বলে,
‘যে আমার থেকে এক হাত দূরত্ব তৈরি করে তার থেকে আমি দশ হাত দূরে সরে আসি ছোয়া। ‘
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨✨