#প্রেমের_পরশ
#পর্বঃ২৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি
আমানকে সাথে নিয়ে কাজি অফিসের দিকে রওনা দিলো আব্দুল হোসেন। আমান আব্দুল হোসেনকে বলল,
‘আমি তোমার আর ছোয়ার সব কথা শুনেছি আব্বু, এটা ঠিক যে আদর যা করেছে তারপর ওকে বিয়ে করা আমার ঠিক নয়। কিন্তু তাই বলে আমাকে এখন ছোয়াকে বিয়ে করতে হবে কেন?’
আব্দুল হোসেন মুচকি হেসে বললেন,
‘এই সামান্য ব্যাপারটা বুঝিস না তুই? আমি আজ কত শখ করে তোর সাথে এসেছি। কত স্বপ্ন ছিল আমার তোর বিয়ে দিয়ে নতুন বৌমা নিয়ে ঘরে ফিরব। এখন আদরের ব্যাপারে সব জানার পর ওকে তো আর বাড়ির বউ করতে পারি না। তাই ভাবলাম তোর মায়ের ভাইয়ের মেয়ে না হোক, আমার ভাইয়ের মেয়ের সাথে বিয়েটা দেই। তাছাড়া, তোর কোন সমস্যা তো এখানে হওয়ার কথা। তুই তো ভালোবাসিস ছোয়াকে। তাহলে বিয়েটা হলে তোর অসুবিধা কোথায়?’
আমান বেশ হতাশার সাথে বলে উঠল,
‘আমি ভালোবাসলে কি হবে? ছোয়া তো আমাকে ভালোবাসে না। আমি কিভাবে একটা ভালোবাসাহীন সম্পর্কে জড়াবো না।’
‘শোন, বিয়ের পর ভালোবাসা এমনিই হয়। বিয়ে একটা পবিত্র সম্পর্ক। তাছাড়া আমি তো ছোয়াকে করিনি কোন বিষয়ে। তুই আমার সাথে কাজী অফিসে চল। ওখানে গিয়ে অপেক্ষা করি। যদি ছোয়া আছে তো ভালো, না আসলে আমরা খালি হাতেই ফিরব। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে ছোয়া আসবেই। আজ তোদের বিয়েটা হবেই।’
আমানের মনে আবার নতুন করে আশার আলো জাগে৷ তার মনে হতে থাকে, এখন হয়তো একটা সামান্য আশা বেচে আছে ছোয়াকে পাওয়ার। তবে সে মন থেকে খুশি হতে পারছে না। আমানের কেন জানি মনে হচ্ছে, ছোয়া তাকে এতগুলো দিন যেভাবে কষ্ট দিয়েছে, তার অনুভূতিগুলোর দাম দেয়নি, তখন আমানের এত সহজে ছোয়াকে আপন করে নেওয়া ঠিক হবে না। কারণ কোন জিনিস সহজে পেয়ে গেলে আমরা সেই জিনিসটার মূল্য দিতে জানিনা। এই ভাবনা থেকেই আমান মনে মনে ফন্দি করে নিল,
‘যদি আজ আমাদের বিয়েটা হয়েও যায়, তবুও এত সহজে আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না। তোর পাথ্র হৃদয়ে আগে আমার জন্য অনুভূতি তৈরি করব ছোয়া। তারপর তুই যখন নিজে তোর অনূভুতিগুলো স্বীকার করবি, তখনই আমার প্রেমের পরশে ঢেকে ফেলবো আমি তোকে, তার আগে নয়।’
৪৫.
কাজি অফিসের সামনে এসে থামলো আমান ও আব্দুল হোসেনের গাড়ি। অতঃপর দুজনেই গাড়ি থেকে নামল। আমান গাড়িতে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে বলল,
‘তুমি তো বলছ যে ছোয়া আসবে, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে ও আসবেনা।’
‘এমন মনে হওয়ার কারণ জানতে পারি?’
‘কারণটা খুব পরিস্কার, ছোয়া আমাকে চায় না। সেদিন তো তোমাকে স্পষ্টভাবেই বলে দিল সেটা৷ তাছাড়া আমি যখন ওর কাছে নিজের মনের অনুভূতি গুলো তুলে ধরেছি তখনও ছোয়া আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এত কিছুর পরে আমার অন্তত মনে হয়না ছোয়া আসতে পারে বলে।’
আব্দুল হোসেন অনেকটা আত্মবিশ্বাসের সাথেই বলে উঠলেন,
‘আমি বাজি ধরে বলতে পারি ছোয়া আজকে আসবেই। এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।’
আমানের মন চাইছিল তার বাবার কথা বিশ্বাস করতে, কিন্তু মস্তিষ্ক সায় দিচ্ছিল না। তবুও নিজের মনের কথা শুনে অপেক্ষার প্রহর গুনতে লাগল সে।
আধ ঘন্টা এভাবে অপেক্ষা করতে করতেই চলে গেলো। আমানের চোখে মুখে ফুটে উঠল বিরক্তির ছাপ। আব্দুল হোসেনের কপালেও চিন্তার ভাজ ফুটে উঠল। আমান আর অপেক্ষা করতে পারছিল না। তার ধৈর্যের বাধ পুরো ভেঙে যাচ্ছিল। আমান নিজের রাগ সম্বরণ করতে না পেরে বলে উঠল,
‘অনেক হয়েছে আব্বু আর না। ছোয়ার আসার হলে এতক্ষণ এসেই যেতো। আমি তো তোমাকে আগেই বলেছিলাম ছোয়া আসবে না। মিথ্যা আশা দেখিও না। এখন চলো এখান থেকে।’
আব্দুল হোসেন কিছুক্ষণ ভেবে বললেন,
‘আরেকটু অপেক্ষা করে দেখি। হয়তো কোথাও আটকে গেছে ছোয়া।’
‘আর কত অপেক্ষা করব আব্বু? এত টুকু পথ আসতে তো এত সময় লাগার কথা না। আমি নিশ্চিত ছোয়া আসবে না। তাই অপেক্ষা করার কোন মানেই হয়না। চলো এখনই চলে যাব আমরা।’
আমান আর এক মুহুর্ত সময় নষ্ট করলো না। গাড়িতে উঠে পড়ল। অতঃপর গাড়ির দরজা লাগাতে যাবে এমন সময় ছোয়া হাফাতে হাফাতে গাড়ির সামনে এসে দাড়ালো। অনেক ক্লান্ত লাগছে তাকে। আমান তাকালো ছোয়ার দিকে। তার পুরো শরীর ঘামে ভিজে গেছে। ছোয়াকে দেখে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো আমান। অতঃপর ছোয়াকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আব্দুল হোসেন ছোয়ার কাছে এসে বলল,
‘এত দেরি হলো কেন তোর? আমরা তো ভেবেছিলাম তুই আসবি না। এক্ষুনি তো চলে যেতাম আমরা।’
ছোয়া ক্লান্ত গলায় বলে ওঠে,
‘রাস্তায় জ্যামে আটকে গিয়েছিলাম। তাই আসতে একটু দেরি হয়ে গেল।’
হাবিবও এসেছে ছোয়ার সাথে। হাবিবকে দেখে আব্দুল হোসেন বললেন,
‘এই কি সেই ছেলে যার কথা তুই বলছিলি?’
‘জ্বি, বড় আব্বু।’
আব্দুল হোসেন হাবিবের কাছে এসে তার দিকে ভালো ভাবে তাকিয়ে বললেন,
‘দেখে তো ভালো ঘরের ছেলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু তোমার শিক্ষার আমি বড্ড অভাব দেখতে পাচ্ছি। কিভাবে অবিবাহিত অবস্থায় কোন মেয়ের সাথে মেলামেশা করো তুমি? আবার তাকে প্রেগন্যান্টও বানিয়ে দাও!’
হাবিব লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। আমতাআমতা করে বলে,
‘আমি আদরকে খুব ভালোবাসি। ওকে আপন করে নিতে চাই। কিন্তু আমি এখনো স্টুডেন্ট। তাই ওর সাথে কিছুতেই আমার বিয়ে দেবে না ওর ফ্যামিলি। আমরা যৌবনের উত্তাল ঢেউয়ে বেসে একে অপরকে সামলে রাখতে পারিনি। আর তাই,,,,’
‘থাক আর কিছু বলতে হবে না। এটা কোন ভুল নয়, এটা অন্যায়। তোমাদের যুগে এটা এখন এমন ভাবে হচ্ছে যেন কোন ম্যাটারই না। আমাদের সময় হলে বুঝতে। যাহোক, অন্যায় যখন করে নিয়েছ আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে নিও। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল এবং পরম দয়ালু। আর এবার আদরকে বিয়ে করে নিয়ে হালাল ভাবে সংসার শুরু করো। নিজেদের সন্তানকেও একটা পরিচয় দেও৷’
হাবিব মাথা দুলিয়ে হ্যা বোধক সম্মতি জানায়। অতঃপর আব্দুল হোসেন বলেন,
‘তুমি আর বেশি চিন্তা করো না। আগে আমার ছেলের বিয়েটা দিয়ে নেই। তারপর তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করছি।’
৪৬.
আব্দুল হোসেন ছোয়া ও আমানকে উদ্দ্যেশ্য করে বললেন,
‘কি হলো দাড়িয়ে আছিস কেন তোরা? কাজি অফিসের ভেতরে চল। বিয়েটা তো করতে হবে নাকি?’
ছোয়া সামনের দিকে পা বাড়ালে আমান তার হাত ধরে থামিয়ে দেয়। অতঃপর নিজের বাবাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘আব্বু তুমি ভিতরে গিয়ে বিয়ের যা ব্যবস্থা করার করো। আমরা একটু পরেই যাচ্ছি।’
আব্দুল হোসেন আর কথা বাড়ালেন না। তিনি সোজা কাজি অফিসে প্রবেশ করলেন। হাবিবও গেল তার সাথে।
সবাই যাওয়ার পর আমান ছোয়াকে জিজ্ঞেস করল,
‘আচ্ছা ছোয়া তুই সত্যি করে একটা কথা বল তো, তুই কি মন থেকে এই বিয়েতে রাজি আছিস?’
ছোয়া কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বলল,
‘আমি যদি রাজি না থাকতাম, তাহলে নিশ্চয়ই এখানে আসতাম না। আমি বিয়েটা করতে রাজি জন্যই তো এসেছি।’
আমান এবার সরাসরি ছোয়াকে বলে দিল,
‘শোন বিয়ে কিন্তু কোন ছেলে খেলা নয়। আমরা আজ থেকে একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছি। সেখানে একটা বোঝাপড়া দরকার। তুই যদি মন থেকে রাজি না থাকিস তাহলে ফিরে যেতে পারিস।’
ছোয়া এবার জোর দিয়ে বলে,
‘আমি মন থেকেই রাজি আছি।’
আমানের ঠোটের কোনায় এবার হাসি ফুটে উঠল। সে ছোয়ার হাতটা খুব সুন্দর করে ধরল। অতঃপর বলল,
‘তাহলে চল আমার সাথে। এখান থেকেই আমাদের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨✨
>>আজকে আমান ও ছোয়ার বিয়েটা দিতে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভাবলাম, আপনাদের তো দাওয়াত দিতে হবে। তাই বিয়েটা একটু পিছিয়ে নিলাম। আগামীকাল ইনশাআল্লাহ আমান ছোয়া এবং আদর-হাবিবের বিয়ে হবে। আপনাদের সবাইকে দাওয়াত দিলাম। বিয়েতে আপনাদের সবার উপস্থিতি অবশ্যই কাম্য ❤️✨