#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_১১
” ভাইয়া তোমার কাছে আমার একটা প্রস্তাব আছে। তোমার যদি কোনো আপত্তি না থাকে তাহলে দুয়া মা’কে আমি আমার জাবির এর জন্য নিতে চাই। ”
ছোটখাটো বি’স্ফোরণ হলো লিভিং রুমে! উপস্থিত বাকি দু’জনে হকচকিয়ে! সাজ্জাদ সাহেব বিস্মিত কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন,
” তুই এসব কি বলছিস সাজেদা? ”
সাজেদা মুচকি হেসে বললেন,
” খুব কঠিন কিছু বলেছি কি? ”
.
ব্যস্ত জীবন। সময়ের পরিক্রমায় পেরিয়ে গেছে কয়েক মাস। দুয়া’র অনার্স প্রথম বর্ষ শেষের পথে। ছুটির দিন আজ। হঠাৎ করেই কাউকে না জানিয়ে দুপুরবেলা উপস্থিত হলেন সাজেদা। সাথে ছোট মেয়ে তানমি। সাজ্জাদ সাহেব এবং তাহমিদা তো অবাক সাথে বেশ খুশি! কতদিন পর সাজেদা এলেন! খুশি খুশি অতিথি আপ্যায়ন করলেন তাহমিদা। দুপুরটা ভালোই কাটলো। শেষ বিকেলে চা নাস্তা করার ফাঁকে হালকা উশখুশ করছিলেন সাজেদা। তা খেয়াল করে বড় ভাই বললেন,
” কি হয়েছে সাজেদা? এমন উশখুশ করছিস কেন? কিছু বলতে চাস? ”
” হাঁ ভাইয়া। ”
” হুঁ বল। ”
সাজেদা মৃদু স্বরে বললেন,
” আসলে আমি একটা প্রস্তাব দিতে চাই। আশা করি তাতে তুমি আপত্তি করবে না। ”
পাশ থেকে তাহমিদা মুচকি হেসে প্রশ্ন করলেন,
” কি প্রস্তাব আপা? বলো। ”
সাজেদা দম ফেলে বলেই ফেললেন,
” ভাইয়া তোমার কাছে আমার একটা প্রস্তাব আছে। তোমার যদি কোনো আপত্তি না থাকে তাহলে দুয়া মা’কে আমি আমার জাবির এর জন্য নিতে চাই। ”
ছোটখাটো বি’স্ফোরণ হলো লিভিং রুমে! উপস্থিত বাকি দু’জনে হকচকিয়ে! সাজ্জাদ সাহেব বিস্মিত কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন,
” তুই এসব কি বলছিস সাজেদা? ”
সাজেদা মুচকি হেসে বললেন,
” খুব কঠিন কিছু বলেছি কি? দুয়া মা’কে আমি কতটা ভালোবাসি তোমরা তো জানোই। আমার বহু পুরনো ইচ্ছে। ওকে আমার পুত্রবধূ করে নিজের কাছে নিয়ে যাওয়া। তোমরা চিন্তা করো না। দুয়া মা আমার কাছে অনেক যত্নে থাকবে। ওকে এতদিন ভাতিজি হিসেবে ভালোবেসেছি। এখন থেকে মেয়ের মতো করে ভালোবাসবো। দুয়া আমার পুত্রবধূ না। মেয়ে হয়েই থাকবে। ”
সাজ্জাদ সাহেব বিস্ময়ের রেশ কাটিয়ে কিছু বলতে উদ্যত হলেন। তখনই ওনার মোবাইলে কল এলো। উনি পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখলেন ইম্পর্ট্যান্ট কল।
” ইম্পর্ট্যান্ট কল এসেছে। এ বিষয়ে পড়ে কথা বলছি। ”
সোফা থেকে উঠে পড়লেন সাজ্জাদ সাহেব। কল রিসিভ করে কথা বলতে বলতে সেথা হতে প্রস্থান করলেন। সাজেদা হাসি হাসি মুখ করে ভাবিকে প্রশ্ন করলেন,
” ভাইয়া নিশ্চয়ই আমার প্রস্তাবে সম্মতি জানাবে, তাই না ভাবি? ”
তাহমিদা কি বলবেন ভাষা খুঁজে পেলেন না। নির্বাক তাকিয়ে রইলেন সাজেদার পানে।
•
ছুটির দিনটা অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশ আলাদা। সারাটা দিন বন্ধুবান্ধব কখনোবা পরিবারের সাথে এনজয় করে থাকে জাহিরাহ্ দুয়া। আজকের দিনটা বন্ধুদের তরে! দিনভর এখানে সেখানে ঘোরাঘুরি। মজাদার খাবার ট্রিট। বেশ ভালো সময় কেটেছে। দুয়া এখনো জানে না ফুপু আর ফুফাতো বোন তানু এসেছে। সাজেদা ই নিষেধ করেছে তাহমিদাকে। সারপ্রাইজ দিতে চায় কিনা! ঘোরাঘুরি শেষে ক্লান্ত দুয়া খালামণির বাসায় এলো। খালামণি খুব করে বলেছে। সে না এসে পারলো না।
তৃষার সাথে সোফায় বসে বেশ কিছুক্ষণ খুনসুটি করলো দুয়া। একপর্যায়ে তৃষা বললো,
” তুই একটু বস। আমি আসছি। ”
” আচ্ছা। ”
সেথা হতে প্রস্থান করলো তৃষা। দুয়া মনোযোগ দিলো হাতে থাকা মোবাইলে। একের পর এক লাইকি ভিডিও দেখছে এবং হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। মোবাইলে মগ্ন মেয়েটা টেরও পায়নি কখন তার ডান পাশের জায়গাটি কেউ দখল করে নিয়েছে। হাসতে হাসতে দুয়া’র পেটে খিল ধরে যাচ্ছে। হঠাৎ কর্ণ কুহরে পৌঁছালো পুরুষালি কণ্ঠস্বর,
” আর কত হি হি করবি? এবার তো থাম। ”
চমকালো দুয়া! ডান পাশে তাকিয়ে দেখলো তূর্ণ বসে। দৃষ্টি নিবদ্ধ মোবাইলে। সেভাবেই বলে উঠলো,
” সোফার ওপর যেভাবে লাফালাফি ফালাফালি করছিস বেচারা সোফা অক্কা পেলো বলে। ”
” ফালাফালি? এটা আবার কোন দেশীয় শব্দ? ”
দুয়া খানিকটা বিস্মিত! তূর্ণ এবার মোবাইল থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ওর দিকে তাকালো।
” ছিঃ ছিঃ! বাঙালী হিসেবে তোর তো লজ্জায় ছেঁড়া গামছা দিয়ে মুখ লুকানো উচিত। তোদের মতো নতুন প্রজন্মের জন্য কিনা ভাষা শহীদরা আত্মত্যাগ করলো? তোরা তো উঠতে বসতে তাদের লজ্জিত করছিস। ”
দুয়া সরু চোখে তাকিয়ে বললো,
” আচ্ছা? আর তোমার মতো বুড়ো প্রজন্ম বুঝি দেশের মানসম্মান এভারেস্ট অবধি নিয়ে যাচ্ছে? ”
তূর্ণ এমনভাবে তাকালো যেন তার মাথায় সপ্ত আসমান ভেঙে পড়েছে। চক্ষু বড় বড় করে শুধালো,
” আমি বুড়ো? বুড়ো চিনিস তুই? ”
” আলবাত চিনি। বুড়ো তো তোমার মতোই হয়। মেহেদী রাঙা লালচে চুল। চোখে চশমা। একদম খাঁটি বুড়ো। ”
তূর্ণ সোফায় আয়েশ করে বসলো। ওকে বললো,
” আমাকে যে বুড়ো বলেছিস। তোর কোনো ধারণা আছে আমার লেডিস ফ্যানরা এই খবর জানতে পারলে কি করবে? ”
” কি করবে? ” ভ্রুক্ষেপহীন প্রশ্ন।
” তোর কুদ্দুস বয়াতির মতো স্পেশাল চুলগুলো কেটেকুটে কেজি দরে বিক্রি করে দেবে। ”
হতবিহ্বল মেয়েটা কিছু বলতেই ভুলে গেল। আনমনে হাত পৌঁছে গেল নিজ কেশে। কাঁদো কাঁদো মুখ করে শুধালো,
” আমার চুল কুদ্দুস বয়াতির মতো? এত বড় কথাটা তুমি বলতে পারলে? ”
” অফকোর্স পারলাম। আর ভুল কিছু বলেছি কি? ”
” তুমি তুমি আস্ত এক খা টা শ! দেখে নিয়ো তোমার বউয়ের চুল হবে সবচেয়ে বি শ্রী। একদম ফুলঝাড়ুর মতো। ”
এবার ক্ষে পে গেল মশাই।
” খবরদার পুতলা। আমার আদুরে পেয়ারি বিবিকে নিয়ে একটাও বাজে কথা বলবি না। ”
” বলবো। একশো বার বলবো। হাজার বার বলবো। কি করবে তুমি? ”
তূর্ণ পকেটে মোবাইল রাখতে রাখতে বললো,
” কি করবো দেখতে চাস? ওয়েট। ”
ভাবসাব সুবিধার ঠেকছে না। তূর্ণ উঠে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই উধাও দুয়া। সোফায় মোবাইল রেখে মেয়েটা দিয়েছে উসাইন বোল্ট মার্কা দৌড়। পিছু নিয়েছে তূর্ণ।
” পুতলা আজ তোকে হাতের কাছে পেয়ে নিই। দাঁড়া বলছি। দাঁড়া। ”
” নো নেভার। পারলে ধরে দেখাও। হা হা হা। ”
হাসতে হাসতে লিভিং রুম জুড়ে চক্রাকারে ছুটে বেড়াচ্ছে দুয়া। পিছু পিছু ছুটছে তূর্ণ। দুই দিকে দাঁড়িয়ে দুই পক্ষ এই দৃশ্য দেখে স্তব্ধ! এসব কি দেখছে তারা? সবুজাভ টি শার্ট এবং থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে ছুটে বেড়াচ্ছে তূর্ণ। সামনে দৌড়াচ্ছে দুয়া। পড়নে তার নীল রঙা চুড়িদার জামা। দু হাতে পোশাক সামলিয়ে খিলখিল করে হাসতে হাসতে দৌড়ে চলেছে মেয়েটা। তৃষা সিঁড়ির উপরিভাগে দাঁড়িয়ে বড় করে শ্বাস ফেললো। এ আর নতুন কি? পুরনো দৃশ্য। সে ওখান থেকে হাসিমুখে চলে গেল। ওদিকে তূর্ণ’র বন্ধুরা? তারা তো হতবিহ্বল! বন্ধুর নতুন রূপ দেখে কি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে বুঝতেই পারছে না।
তূর্ণ প্রায় খপ করে মেয়েটাকে ধরে ফেলবে ঠিক তখনই দৃষ্টি পড়লো বন্ধুদের দেখে। মুহুর্তের মধ্যেই দাঁড়িয়ে পড়লো সে। টি শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বেশ ভাব নিয়ে সোফায় বসলো। পেছনে কারোর উপস্থিতি টের না পেয়ে দুয়া থেমে গেল। হাঁপাতে হাঁপাতে পিছু ঘুরে অবাক হলো! তূর্ণ ভাইয়া কোথায়? পাশে দৃষ্টি ফেরাতে লক্ষ্য করলো মশাই সোফায় বসে মোবাইল টিপছে।
” আশ্চর্য! আমাকে ইচ্ছামত দৌড়ানি দিয়ে সে এখন রেস্ট করছে! দেখাচ্ছি মজা। ”
দুয়া বেশ প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল হঠাৎ থমকে গেল। তূর্ণ ভাইয়ার বন্ধুরা দাঁড়িয়ে! থতমত খেলো মেয়েটা। মেকি হেসে হাত নেড়ে হাই জানালো। দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা বন্ধুরা এতক্ষণে হুঁশ এ ফিরলো। পাতলা দেহের অধিকারী লম্বা চওড়া টগর! সে-ও হাত নেড়ে হাই জানালো।
” আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। আপুরা। কেমন আছেন সবাই? ”
দুয়া’র প্রশ্নে মিষ্টি হেসে উঠলো দিবা এবং মনিকা।
” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আমরা আলহামদুলিল্লাহ্ আছি। বিজি লাইফ। বুঝতেই পারছো। ”
মনিকার কথার রেশ ধরে দিবা প্রশ্ন করলো,
” তুমি কেমন আছো দুয়া? ”
দুয়া মিষ্টি হেসে বললো, ” আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। ”
” গুড! ”
তূর্ণ এবার দুয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বললো,
” তুই ভেতরে যা। আম্মুকে বল ওরা এসেছে। ”
মাথা নাড়িয়ে সেথা হতে প্রস্থান করলো দুয়া। তৎক্ষণাৎ বন্ধুরা বাজ পাখির নজরে তাকালো আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ’র দিকে।
” কি? এভাবে কি দেখছিস? প্রথমবার দেখছিস মনে হয়? ”
নিশাদ সোফায় দেহ এলিয়ে দিলো। বললো,
” প্রথমবার তো বটেই। আমাদের গম্ভীর ভাবওয়ালা দোস্ত দাঁত কেলিয়ে হাসছে। কাজিনের পেছনে ছোটাছুটি, দৌড়াদৌড়ি করছে। প্রথমবার ই তো দেখছি। ”
তূর্ণ মোবাইলে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে গম্ভীর স্বরে বললো,
” যা দেখেছিস ভুলে যা। ওটা জাস্ট ফান ছিল। ”
রাজীব আপত্তি জানিয়ে বললো,
” উঁহু উঁহু। সবসময় সবকিছু চাইলেও ভোলা যায় না। বিশেষ করে এমন মিষ্টি মিষ্টি খুনসুটি তো আরো নয়। ”
মনিকা দুষ্টু হেসে বললো,
” দোস্ত কি চলছে? হুঁ হুঁ? কুচ কুচ হোতা হ্যায় কেয়া? ”
” দানিশ তোর বউ আজকাল পরপুরুষে বেশি ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছে। সময় থাকতে সামলা। নইলে পেয়ারি বিবি হাতছাড়া। ”
দানিশ কিছু বলবার পূর্বেই মনিকা বললো,
” এহ্! এখন কথা ঘুরানোর চেষ্টা করছে। ”
টগর হাসি হাসি মুখ করে শুধালো,
” দোস্ত! ছোট বোনটাকে ভাবি ডাকা প্রাকটিস শুরু করবো কি? ”
তূর্ণ এমন চাহনিতে তাকালো যে টগর দাঁত কেলিয়ে হাসলো। ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করলো,
” ডাকবো? ”
তূর্ণ হাঁ বা না কিছুই বললো না। এতে লাই পেয়ে দানিশ স্ত্রীকে বললো,
” মনি! বিয়ের শপিং শুরু করে দাও। অবশেষে দোস্তের ব্যাচেলর লাইফের দ্যা এন্ড হতে চলেছে। ”
তূর্ণ ওদের সবার খুশি খুশি ভাব দেখে এক বালতি পানি ঢেলে দিলো।
” ইয়াহ। তোর দ্বিতীয় বিয়ের জন্য পাত্রীর খোঁজ চলছে। শীঘ্রই পেয়ে যাবো। ”
হতবিহ্বল হলো দানিশ! মনিকা গাল ফুলিয়ে বললো,
” নিজে তো চিরকুমার। এখন আমার বরের দিকে কুনজর দিচ্ছিস? ”
টগর পাশ থেকে বলে উঠলো,
” আহা গো! টুরু লাভ! এই আনন্দে ট্রিট চাই। ”
দানিশ বললো,
” চিকনা থেকে মোটকা হ। দেবো নে। ”
” হুহ্! লাগবে না তোর ট্রিট। তূর্ণ দেবে নে। ”
রাজীব হেসে বললো,
” হাঁ। তূর্ণ তো তোর জন্য ভার্সিটিতে ক্যান্টিন খুলছে। যখন তখন খাদ্য সাপ্লাই। ”
মৃদু হাসলো তূর্ণ। তখন অতিথিদের জন্য নাস্তা নিয়ে হাজির হলেন তাসলিমা। সাথে হেল্পিং হ্যান্ড। কুশলাদি বিনিময় হলো। কয়েক সপ্তাহ বাদে বন্ধুরা বন্ধুরা দারুণ সময় কাটালো।
•
তমসায় আবৃত বসুন্ধরা। এতদিন বাদে ফুপুকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা দুয়া। ফুফাতো বোন তানুর সাথে দুর্দান্ত সময় কাটছে। তানজিনা সে-ও শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে এলো। রাতে খাওয়াদাওয়ার পর তিন বোনের মধ্যে কয়েক ঘন্টাব্যাপী আড্ডা চললো। এসবের ভিড়ে সাজেদা আর বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু বলার সুযোগ পেলেন না। নির্বিঘ্নে অতিবাহিত হলো রাত্রি। তবে পরেরদিন হলো এক অনাকাঙ্ক্ষিত কাণ্ড।
দুপুরের ভোজন সম্পন্ন করে লিভিং রুমে সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছিলেন সাজ্জাদ সাহেব। তখন সেখানে উপস্থিত হলেন সাজেদা। তাহমিদা এবং তানজিনা টেবিল গুছগাছ করছে। দুয়া ভার্সিটি থেকে এখনো ফেরেনি। জাহিন ও তানু রুমে কম্পিউটারে গেমস খেলছে। সাজেদা উশখুশ করে প্রশ্ন করলো,
” ভাইয়া কিছু তো বললে না। ”
পত্রিকায় দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই সাজ্জাদ সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,
” কোন বিষয়ে? ”
” ওই যে। দুয়া মা আর জাবিরের বিষয়ে। ”
তাহমিদা এবং তানজিনা কাজের ফাঁকে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। দু’জনের কান ই সজাগ। সবটা শুনছে। সাজ্জাদ সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে পত্রিকা ভাঁজ করে টেবিলের ওপর রেখে দিলেন। নরম স্বরে বললেন,
” দেখ সাজেদা। তুই যে প্রস্তাব দিয়েছিস তা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল। তবে মেয়ে বড় হলে এমন প্রস্তাব অহরহ আসে। স্বাভাবিক। ”
” হুম। ”
” তবে আমি এই মূহুর্তে দুয়া’র বিয়ে নিয়ে কিছু ভাবছি না। মেয়েটার বয়স কম। পড়ালেখা করছে। করুক। বিয়েশাদী নিয়ে পড়ে ভাবা যাবে। ”
” হাঁ ঠিক আছে। এখুনি বিয়েশাদীর মধ্যে জড়াতে হবে না। আমি চাইছিলাম ওদের সম্পর্কের একটা নিশ্চয়তা। ধরো এনগেজমেন্ট কিংবা আকদ করিয়ে রাখা হলো। সময় হলে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়েটা হবে। ”
তাহমিদা এবং তানজিনা কাজকর্ম সেরে এখানে উপস্থিত হলো।
” এনগেজমেন্ট কিংবা আকদ! এসব কি বলছিস? ছেলেমেয়ে রাজি কিনা জানি না। অভিভাবকের সম্মতি আছে কি নেই। তুই এতদূর অবধি ভেবে ফেলেছিস! ”
সাজ্জাদ সাহেবের কণ্ঠে বিস্ময়!
” কেন ভাইয়া? ভাবতে কোনো অসুবিধা আছে কি? একদিন না একদিন তো হবেই। ক’দিন আগে হলে কি এমন সমস্যা? ”
সাজ্জাদ সাহেব মৃদু স্বরে বললেন,
” আগেভাগেই এত ভাবিস না বোন। ভাবনা বাস্তবে রূপান্তরিত নাও হতে পারে। তখন খারাপ লাগবে। ”
” ভাইয়া তুমি এসব ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কি বলছো? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। তুমি কি এই প্রস্তাবে রাজি নও? ”
তাহমিদা এবং তানজিনা কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে সাজ্জাদ সাহেব এর পানে। সাজ্জাদ সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
” তোর প্রস্তাবটা ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে বোন। মন খারাপ করিস না। ”
হতভম্ব হলেন সাজেদা!
” কেন? ”
” কারণ আমি ইতিমধ্যে কারো কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ”
চরম আশ্চর্যান্বিত হলেন সাজেদা এবং তানজিনা! সাজেদা বুঝতেই পারছেন না ওনার কিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা উচিত। তার এতদিনের স্বপ্ন এভাবে ভেঙে গুঁড়িয়ে যাবে!
চলবে.