#রহস্যময়_ঘোর (পর্ব ৬)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
ঘুম ভাঙলে সকালে ছাদে গিয়ে হাটাহাটি করছে তুষার। নিবিড় চায়ের কাপ হাতে নিয়ে তার পাশে এসে দাড়ালো। এক কাপ নিবিড়ের হাতে দিয়ে বলে,
“কিরে আজ কেমন হাসিখুশি মনে হচ্ছে তোকে। কাহিনি কি? রাতে মেয়েটাকে বাচাতে পেরেছিলি?”
তুষার একটু মাথা নাড়িয়ে বলে,
“তুই তো হারামি সুন্দরবনের কথা বলে আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি। গিয়ে দেখি তেমন কিছুই না। তবে যাই হোক। মেয়েটাকে সেখান থেকে উদ্ধার করতে পেরেছি। এটাই বড়ো বিষয়।”
নিবিড়ের মনে এবার কৌতুহল জাগলো বিষয়টা জানার। তুষারের পাশে দাড়িয়ে বলে,
“কাহিনিটা শুরু থেকে বলতো দেখি।”
তুষার সবটা বললো তাকে। শুনে নিবিড় মাথায় হাত দিয়ে বলে,
“কি সাংঘাতিক বিষয়! তুই তো স্বপ্নেই একটা ফিল্ম সাজিয়ে ফেললি। আচ্ছা সত্যিই কি এমনটা হয়? নাকি তুই আমাদেরকে নিয়ে মজা নিচ্ছিস?”
“মজা নারে ভাই। বিশ্বাস কর, আমি নিজেও বুঝতে পারছিনা এসবের মানে কি। তবে আরেকটা অদ্ভুত ঘটনা অনুভব করছি আমি।”
“কি?”
“মেয়েটাকে কেন জানি ভালো লাগতে শুরু হয়েছে। বাস্তবে ফিরলেও শুধু তার কথা মনে পড়ছে আমার।”
“ময়ায় পড়ে যাচ্ছিস?”
“সেটা আমিও বুঝতে পারছি না। শুধু বুঝতে পারি, তার সাথে সময় কাটাতে আমার ভালোই লাগছে।”
নিবিড় এবার বিষয়টা সিরিয়াসলি নিয়ে বলে,
“আচ্ছা যদি এমনটাই হয়। ধর কোনো একদিন তোর এই স্বপ্নের ঘোর টা কেটে গেলো। মেয়েটা আর স্বপ্নে আসলো না। তুইও তার মায়ায় পড়ে গেলি। এমনও হতে পারে তাকে ছাড়া কিছু ভালো লাগছে না। তাহলে কি করবি?”
তুষার নিশ্চুপ রইল এমন কথায়। তার কাছে এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। সত্যিই কি এমনটা হবে? স্বপ্নে সে হারিয়ে যাবে? নাকি এমনটাই ধারবাহিক ভাবে চলতে থাকবে। বিষয়টা যেন মাথা থেকে সরছেই না।
বিকেলের দিকে হুট করে সেই দ্বিতীয় নাম্বারের কথা মনে হলো তার। যেটা স্বপ্নে জেলখানায় ফারিহার থেকে নিয়েছিল। ঐ নাম্বারে কল দিল সে। একবার কল হতেই রিসিভ হলো ওপাশ থেকে।
তুষার মনে অনেকটাই উত্তেজনা নিয়ে বলে,
“ফারিহা বলছেন?”
ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে উত্তর এলো,
“জ্বি।”
“শুনুন ফোন কাটবেন না। যাস্ট একটা কথা বলবো।”
“বুঝতে পেরেছি। আপনি কালকের ঐ লোকটা না? যাকে ব্লক করেছিলাম।”
“হ্যাঁ আপনি কথা না শুনেই ব্লক করে দিলেন।”
“ওয়েট ওয়েট। আপনি আমার এই সিমের নাম্বার কোথা থেকে পেলেন? মানে সিমটা আমি আজকেই কিনে এনেছি। আর একটু আগেই ফোনে ঢুকিয়েছি। আমি ছাড়া এই নাম্বার আপাতত আর কারো জানার কথা না। এমনকি এই সিমের কথাও এখনো আমি দ্বিতীয় কাউকে বলিনি।”
তুষার কিছুটা হেসে বলে,
“বিষয়টা অদ্ভুত না?”
“হ্যাঁ অদ্ভুত এবং অসম্ভব বলেই আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম।”
“আচ্ছা কোনো ভাবে আপনার একটা ছবি দিতে পারবেন? আমি আপনাকে অন্য একটা মেয়ের সাথে মিলিয়ে দেখতাম, আপনি আসলে সে কি না।”
“আপনি তো দেখি শুধু পা’গল না, ছ্যাছড়াও আছেন।”
“আপনি যা ইচ্ছা ভাবতে পারেন। তবুও শুধু একটা পিক দিন। রহস্যের জট খুলতে হেল্প করুন আমায়। বিশ্বাস করুন, আর কোনো উদ্দেশ্য পিক চাইছি না। বিশ্বাস করতে পারেন।”
“আপনার মতো অপরিচিত একটা লোককে আমি কেন বিশ্বাস করতে যাবো?”
“আপনি আমার সমস্যা টা বুঝবেন না। এই সমস্যা আমাকে বার বার আপনার কাছেই টেনে নিয়ে যায়। এখন শুধু আমি এটা জানতে চাইছি ঐ মেয়েটা আপনি কি না।”
“কি সব পাগলের মতো বকছেন? আপনার ধান্দা আমি ভালোই বুঝতে পারছি। এসব অদ্ভুত কথা বলে আমার পিক নিবেন, তারপর আমাকে ইম্প্রেস করে ফেলবেন। তারপর রিলেশন। এসব আজাইরা প্যাঁচাল আমার ভালো লাগেনা দেখেই আমি এখনো সিঙ্গেল। সো বুঝতেই পারছেন, আপনি ভুল নাম্বারে ডায়াল করেছেন। অন্য কোথাও ট্রাই করেন। বায়।”
বলেই কল কেটে দিল ফারিহা। তুষার আবারও কল দিল। এবার ফারিহা রিসিভ করে বলে,
“আর ডিস্টার্ব করলে কিন্তু আপনার এই নাম্বার আমি থানায় দিব।”
“দাড়ান দাড়ান, একটা কথা বলুন, ফাহাদ নামের আপনার কোনো ভাই আছে?”
“হুম ছিল। এখন নেই। বাবা মায়ের কাছে শুনেছি তার কথা। আর আমি তাকে কখনো দেখিও নি।”
“সে কি হারিয়ে গেছে বা এমন কিছু?”
“এটা আমাদের রিলেটিভ সবাই জানে। হয়তো তাদের কারো কাছ থেকে এসব জেনেছেন, আর আমাকে এখন বলবেন আপনি আমার সম্পর্কে সব জানেন, ব্লা ব্লা। কিন্তু এসব বলে কোনো লাভ নেই। আর একবার ফোন দিলে কপালে দুঃখ আছে আপনার।”
এবার এই নাম্বার থেকেও তুষারকে ব্লক করে দিল সে। রাগে হাতে থাকা ফোনটা আছাড় মারতে মন চাইছে তুষারের। যেগুলো ঘটে চলছে সেগুলো কারো কাছে বললেই সবাই তাকে পা’গল ভাবছে কি আজব।
,
,
কেটে গেলো আরো পাঁচ দিন। এই সমস্যা নিয়ে মোট এক সাপ্তাহ্ পার হলো তার। এখন এটা তার কাছে আর সমস্যা মনে হয় না। বরং সবই ইনজয় করা শুরু করে দিয়েছে সে। এখন জেগে থাকার সময়টাই কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসে তার। কারণ যতক্ষণ জেগে থাকে, ঐ সময়টা ফারিহা তার পাশে থাকে না।
তাই মেয়েটা পাশে থাকার জন্য হলেও দিনে পড়ায় ১৮-২০ ঘন্টা ঘুমিয়েই কাটায় সে। গতকালও একটা ঘটনা ঘটলো।
পাশের বাসার নীলারা দুপুরের খারারে দাওয়াত করেছিল তাদের। নিবিড় ফরিদা আন্টি সবাই মিলে ঘুম থেকে টেনে তুলে নীলাদের বাসায় নিয়ে গিয়েছিল তাকে। বেচারা ওদের বাসায় গিয়েও সোফায় বসে ঘুমিয়ে গেলো।
খাওয়া শেষে বাসায় ফিরলেও ঘুমিয়ে গেলো সে। দুপুর বেলা রোদে উত্তপ্ত হয়ে আছে চার দিক। নিবিড় এসি অফ করে দরজা জানালা বন্ধ করে বাইরে চলে গেলো। তার ধারণা এই গরমে তুষারও অতিষ্ঠ হয়ে ঘুম বাদ দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসবে। কিন্তু এমন কিছুই হলো না।
ঘরে ফিরে দেখে গরমে তুষারের শরির ঘামে ভিজে একাকার অবস্থা। তবুও বেচারার ঘুম ভাঙলো না।
তুষার এখন এতটাই মায়ায় আসক্ত হয়ে গেলো, ইদানিং ঐ মেয়েটা কে দেখার জন্য হলেও ঘুমিয়ে পড়ে সে। স্বপ্নের সেই ঘোরটা তার কাছে এখন একটা বাস্তব পৃথিবী মনে হচ্ছে। ঘোর টা এখন ড্রাগস এর মতো কোনো ভয়াবহ নেশায় রুপ নিয়েছে হয়তো। তাই তো এই সন্ধা কালেও নিবিড় একটু বাইরে থেকে হেটে আসার কথা বললে সে বলে, ফারিহার জন্য ফুল কিনেছিল সে। সেগুলো ফারিহাকে দিতে হবে।
,
,
নিবিড় ও ফরিদা আন্টি বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করে ডাক্তার দেখানোর সিদ্ধান্ত নিল। কারণ এগুলো মোটেই কোনো ভালো লক্ষণ না। নিবিড় ভালোই বুঝতে পারলো তুষার খুব ভালো ভাবেই ঐ মেয়ের মায়ায় জড়িয়ে গেছে। আর প্রথম প্রেমের অনুভূতি গুলো খুব বেশিই মারাত্মক হয়।
এদিকে ডাক্তারও কোনো রোগ ধরতে পারলো না তার।
রেজোয়ান এসব জেনেও কাউকেই কিছু বলেনি এই সম্পর্কে। কারণ পনেরো দিন পার হওয়ার এখনো এক সাপ্তাহ বাকি আছে।
নিজের ল্যাব-এ এসেছে সেই অনেক্ষণ হলো। হাতে ছোট একটা কাঁচের শিশি হাতে নিয়ে ওটা ভালোভাবে লক্ষ করছে সে। তার ভেতরে কিছু তরল পদার্থ। যেগুলো ইনজেকশন এর মাধ্যমে মানুষের শরিরে পুশ করার জন্য তৈরি। অনেক বছরের চেষ্টার ফল এটা। যেটা সে গত এক সাপ্তাহ্ আগে তুষারের শরিরে পুশ করেছিল।
আজ এক সাপ্তাহ্ পূর্ণ হলো সেটার। আজকের পর থেকে তুষার আর স্বপ্নের মাঝে সেই ঘোরে ফিরে যাবে না। চাইলেও ফিরতে পারবে না। ঘুমটা পূর্বের ন্যায় স্বাভাবিকই হবে। আজকের পর থেকেই কেটে যাবে সেই ঘোর। রেজোয়ানের প্রথম সাপ্তাহ্ ভালো ভাবেই সাক্সেস হয়েছে। এখন দ্বিতীয় সাপ্তাহের অপেক্ষা। আর এই ঘোর টা হবে বাস্তবিক।
To be continue…………..
~ আর দু’এক পর্ব হবে হয়তো। তাই দিনে দুই পর্ব করে দিয়ে তাড়াতাড়ি শেষ করে দিচ্ছি।