স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি #পর্ব_০৯

0
699

#স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
#পর্ব_০৯
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

সারাদিকে কোলাহলে পরিপূর্ণ পরিবেশটা রাত গভীর হবার সাথে সাথে নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে। মাঝে মধ্যে গাছের দু’একটা পাতা হেলেদুলে পড়ছে। চারদিকে শীতলতা ছড়িয়ে পড়েছে। স্রুতির বেলকনির সামনে এসে অভ্র দাঁড়িয়ে আছে। স্রুতি বিষন্ন মন নিয়ে বেলকনিতে এসে, তার শখের ফুল গাছ গুলোকে ছুঁয়ে দেখছিল। এমন সময় চক্ষুদ্বয় জোড়া স্থির হয় একটি নিদিষ্ট স্থানে। অভ্র মলিম মুখ করে স্রুতির দিকে চেয়ে আছে। স্রুতি অভ্রের মুখশ্রী উপেক্ষা করে নিজের কক্ষে চলে আসলো। পাত্রপক্ষ আসতে আসতে সকাল হবে। তাই নিজের কক্ষে এসেছে নিদ্রা দেশে তলিয়ে যাবার জন্য। মনে শান্তি না থাকলে, দু’নয়নে কি আর নিদ্রা আসে? স্রুতি একটা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বিছানার দিকে এগিয়ে গেল। চক্ষুদ্বয় জোড়া বন্ধ করতেই অভ্রের মুখশ্রী ভেসে উঠলো। স্রুতি তড়িৎ গতিতে নিজের আঁখি জোড়া মেলে তাকালো। মানুষটাকে নিয়ে সে ভাবতে চায় না। তবুও কেনো মন মানে না? এত বেহায়া কেন মন? ভালোবাসার মানুষ সামনে আসলে, প্রতিটি মানুষের মনই কি এতটা বেহায়া হয়ে যায়? আমি তো এত বেহায়া নই? তাহলে আমার মন কেনো আমাকে বেহায়া করে তুলছে? কেনো নিষিদ্ধ আবদারের আনদোলন শুরু করেছে? যেটা কখনো সম্ভব নয়। সেটা মন চাইলেই হয়? উত্তর মেলে না স্রুতির। আবার আঁখি জোড়া বন্ধ করে, চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেল।

নতুন প্রভাতের আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। দূর গাছের ডাল থেকে পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ কর্ণকুহরে ভেসে আসছে। রাতের আঁধার ডুবে গিয়ে, সূর্য পুরো পৃথিবীকে করেছে আলোকিত। যেখানে নিস্তব্ধতার প্রভাত হওয়ার কথা ছিল। সেখানে কোলাহল দিয়ে পরিপূর্ণ। রাতের শেষ প্রহরে পাত্রপক্ষ স্রুতিদের বাসায় এসেছে। তারা সবাই নিদ্রা দেশে তলিয়ে আছে। স্রুতি বেলকনি দিয়ে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ভোরের শীতল হওয়া স্রুতির মন ও পুরো শরীর শীতল করে তুলছে। অন্যদিন ভোরের শীতল হওয়া স্রুতির মন ভালো করে দেয়। তবে আজ কেনো বিষাদে তার মনটা ছেয়ে গিয়েছে? জেদের বশে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না তো আবার? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করল স্রুতি। অভ্রের সাথে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার পরে এক মুহুর্ত শান্তি পায় না সে। শান্তি জিনিসটা তার ভেতরে থেকে উঠে গিয়েছে। ভোরের আলো ফুটতেই রহমান শেখ আসলেন স্রুতিদের বাসায়। আবিদ রহমানের পাশে বসে, ধরা কণ্ঠে বলে উঠলো,

–শুনলাম মেয়ের বিয়ে নাকি অন্য কোথাও দিচ্ছেন? কাজটা কি ঠিক হচ্ছে ভাই? আমার ছেলের সাথে আপনার মেয়ের বিয়ে ঠিক হলো। আংটি পর্যন্ত পড়িয়ে রেখে গিয়েছি। আমাদের আত্নীয় স্বজন কম বেশি সবাই জানে, স্রুতির সাথে আমার অভ্রের বিয়ে হবে। এভাবে আমার সন্মান নষ্ট করে দিবেন? আমি ভেবেছি। আপনি হয়তো সময় নিবেন। কিন্তু হুট করে এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে নিবেন। কখনো কল্পনাও করতে পারি নাই। রহমান শেখের কথায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন আবিদ রহমান। ছেলে হিসেবে অভ্রকে তার বেশ পছন্দ। যেখানে তার মেয়ে অভ্রকে বিয়ে করতে চায় না। সেখানে তিনি আর কথা বাড়াতে চান না।

–আপনি চুপ করে আছেন কেনো ভাই? আপনার মেয়ের হাতে এখন পর্যন্ত আমার ছেলের হাতে পড়িয়ে দেওয়া আংটি রয়েছে। আপনার কি এতটুকু মনে হয় না। আপনার মেয়ে কোনো অজানা কারনে বিয়েটা ভেঙে দিয়েছে। কিন্তু আপনার মেয়ে আমার ছেলেকে মনে মনে ভিষণ পছন্দ করে। রহমান শেখের কথা শুনে স্রুতি দরজার কাছে থেকে উত্তর দিল,

–আপনি যেমনটা ভাবছেন। তেমন কিছুই না। আমি নিজ থেকেই আংটি টা ফিরিয়ে দিয়ে আসতাম। আপনি যখন চলে এসেছেন। আপনার হাতেই দিয়ে দিচ্ছি। কথাটা বলেই কাঁপা কাঁপা হাতে আংটি টা খুলে রহমান শেখের কাছে দিল। রহমান শেখ আর কোনো উত্তর করল না। উঠে দাঁড়ালো। যাবার আগে একটা কথাই বলে গেল। স্রুতি মা তুমি হতে অভ্রের অর্ধাঙ্গিনী। একজন প্রেমিকা আর অর্ধাঙ্গিনী কখনো এক হতে পারে না। একজন স্ত্রী যা করতে পারে। একজন প্রেমিক তা করতে পারে না। তুমি চাইলে অভ্রকে বদলে দিতে পারতে। সুন্দর একটা জীবন দিতে পারতে। মানুষের জীবনে অনেক ভুল থাকে। আমার ছেলের জীবনেও একটা ভুল আছে। সে যখন ভুলটা উপলব্ধি করতে পেরেছে। তখন বারবার তোমার কাছে মাফ চেয়েছে। তোমার মনের মতো হবার চেষ্টা করেছে। আমি আমার ছেলের চক্ষুদ্বয় জুড়ে বিশাল আক্ষেপ দেখেছি। হেরে যাবার হাহাকার আমার ছেলেকে দুমড়ে মুচড়ে ফেলছে। আমার পাথরের ন্যায় ছেলেকে অশ্রু ফেলতে দেখেছি। তবে তোমাকে পাবার জন্য অশ্রু ফেলেনি। ফেলেছে একটা সুন্দর জীবনের আশায়। একটা ভালোবাসার মানুষ পাবার আশায়। বাবা-মাকে কষ্ট দিয়ে, সে গভীর ভাবে অনুতপ্ত। আমার ছেলেটা ভিষণ একা জানো তো। তাকে বোঝার মতো কেউ নেই। তাকে তার মতো করে সঙ্গ দেওয়ার কেউ নেই। তাই ছেলেটা আমার ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছে। গুছিয়ে দেওয়ার কেউ নেই। তোমাকে দেখে ভেবে ছিলাম। তুমি আমার ছেলেটাকে গুছিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু মা মনের ওপরে দিয়ে কিছু হয় না। আমি চাই না তুমি জোর করে আমার সংসারে আসো। দোয়া কি মা সুখী হও। আল্লাহ তোমার ভালো করুন। কাজের দিনে তোমাদের বিরক্ত করে ফেলছি। আবার পরে কোনো এক সময় কথা হবে। বিয়ের পরে জামাই বাবাকে নিয়ে, আমাদের বাসায় এসো। কথা গুলো বলেই চলে গেলেন রহমান শেখ।

শ্রাবণী নামটা কর্ণকুহরে আসতেই চমকে উঠলো অন্ধকার রুমে বৈঠকে বসে থাকা আগন্তুক। চক্ষুদ্বয়ের সামনে ভেসে উঠছে এক রমণীর আত্মচিৎকার। সেই রাতের কথা মনে হতেই, শরীরের শিরা-উপশিরায় কাঁপুন ধরছে। সে কি ভয়ানক রাতের কথা। আরাভ কথা দিয়েছিল। সে প্রতিশোধ নিবে। তাই বহু বছর ধরে নিজের বোনকে আড়ালে রেখেছে। ছেড়েছে নিজের মাতৃভূমি। একবার যদি আরাভ আমাদের কথা জানতে পারে, তাহলে আমার বোনকে কিভাবে বাঁচাবো? আমাকে খুব দ্রুত কানাডা চলে যেতে হবে। দরকার পড়লে আরো একটা খু*ন* আমি করবো। তবুও আমার বোনের নিরাপত্তা চাই। সেই রাতে পরে আমার জীবনে আলো এসেছিল। কিন্তু শ্রাবণীর জীবনের আঁধার কেটে গিয়ে আলো আসেনি। শ্রাবণীর বেলায় আমার ভেতরে মায়া মনুষ্যত্ব কাজ করেনি। তবে এতগুলো বছর পরে, আমি কেনো অপরাধ বোধে দগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। অপরাধ বোধ আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। নিজের বোনের সাথে এমন কিছু ঘটবে, এটা ভাবতেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। তাহলে আরাভ ও তার পরিবার কিভাবে সহ্য করেছিল। পাপ আমি করেছি। আমি পাপী। আমার পাপের শাস্তি যেন আমার বোনকে পেতে না হয়। আগন্তুকের ভাবনার মাঝেই, কালো পোশাক পরিহিতা রমনী আসে। আগন্তুককে উদ্দেশ্য করে বলে,

–ভাইয়া আমরা বাসায় যাব না? কতদিন হলো নিজের দেশটা ঘুরে দেখি না। আমার এই অন্ধকার রুমে থাকতে ভালো লাগছে না। প্লিজ আমাকে আব্বুর কাছে নিয়ে চলো। আমি বহু দিন আম্মুর কবরের কাছে যাই না। বাসায় গিয়ে দূর থেকে আম্মুকে দেখে আসবো। আমাকে এভাবে বন্ধী করে রেখো না ভাইয়া। এক কক্ষে থাকতে থাকতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। তুমি কি চাইছো? এই চার দেওয়ালের আবদ্ধ কক্ষে থেকে আমি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করি? বোনের কথায় কপট রাগ দেখিয়ে আগন্তুক বলে উঠলো,

–একদম বাজে কথা বলবি না। আর একবার বাজে কথা বললে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। আমি তোকে যা যা বলবো। তুই যদি আমার কথা মেনে চলিস। তাহলে কালকেই তোকে আব্বুর কাছে নিয়ে যাব। আগন্তুকের কথা শুনে আগন্তুকের বোন হাসোজ্জল মুখশ্রী করে বলে উঠলো,

–আমাকে কি করতে হবে? একবার বলেই দেখো না। আমি সবকিছু করতে পারবো। তুবও নিজের বাসায় ফিরতে চাই। বাংলাদেশে এসে যদি নিজের বাড়িই যেতে না পারি। তাহলে বাংলাদেশে এসে আমার লাভ কি হলো? বোনের কথায় স্তব্ধ হলো আগন্তুক। গভীর চিন্তায় মত্ত হয়ে উঠলো।

চলবে…..

(পরীক্ষার চিন্তায় দেখলাম গল্পটাকে একদম সাধারণ করে ফেলছি। মনে হচ্ছে গল্পটা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। এবার সামনের দিকে এগোনো দরকার। আমার গল্পে রহস্য থাকবে না। তাই কখনো হয়। তাই গল্প নিয়ে চলে আসলাম নতুন টুইস্ট। সামনে রহস্য গভীর থেকে গভীর হতে চলেছে। কালকে গল্প দিয়ে আপনাদের সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু চাইলেই কি সব হয়। আজকে বড় করে দিতে চেয়ে ছিলাম। তা আর হলো না। আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। তবে আগে গল্প দিয়েছি। কেউ রাগ করিয়েন না। ৫ তারিখ পর থেকে নিয়মিত দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here