দাম্পত্য_জীবন #মেহু_আপু #পর্ব_06

0
366

#দাম্পত্য_জীবন
#মেহু_আপু
#পর্ব_06

রিয়া বলে কি করছেন ছাড়ুন। ইমরান বলে আমি তোমাকে ভালোবাসি রিয়া। রিয়া বললো কি বললেন ভেবে বললেন তো? ইমরান বললো হ্যা ভেবেই বলেছি। রিয়া নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আমার সময় লাগবে বলেই উপরে চলে যায়।

সেদিন বিকালে ইশান আকাশকে ফোন করে অফিসের প্রেস মেটিং আছে বলে। আকাশ তখন নীলাকে বলে তৈরি হও বাড়ি যেতে হবে। নীলা বললো আজকেই যাবো? আকাশ বললো আমার কাছে সময় নেই অফিসের এক ডিলের ব্যাপারে প্রেস মিটিংয়ের আয়োজন আছে আমাকে যেতেই হবে। কারণ সকাল 9.00 টায় এখান থেকে অফিসে ঢুকা সম্ভব হবেনা। তুমি যদি না যেতে চাও বলো পরে তোমাকে নিয়ে যাবো।

নীলা বললো আচ্ছা ঠিক আছে আমি তৈরি হচ্ছি আপনি ইমরানকে যেয়ে বলেন তৈরি হতে। আকাশ ইমরানের কাছে যায় ইমরানকে বের হতে বলে। ইমরান অবাক হয়ে বলে তুই চলে যা আমি আর ভাবী কয়দিন থেকেই যাই। ভাবীকে আমি সঙ্গী করে নিয়ে যাবো। আকাশ তখন বলে তোর ভাবী বের হচ্ছে চলে যাবে। ইমরান তখন মন খারাপ করে বলে আচ্ছা বের হচ্ছি গাড়ি বের করো।

আকাশ নিচে যায়। তানিয়া বেগম বলে কোথায় যাচ্ছো বাবা। আকাশ বলে মা আমার প্রেস মিটিং আছে তাই অবেলায় চলে যেতে হচ্ছে। তানিয়া বলে এটা কেমন কথা বাবা নতুন নতুন বিয়ে করলা কয়টা দিন ছুটিতে রাখবানা। আকাশ বলে না মা কালকে আমাকে উপস্থিত থাকতেই হবে। নীলা আর ইমরান ল্যাগেজ নিয়ে নিচে আসে। রিয়া তা দেখে মন খারাপ করে। ইমরান ইশারা দিয়ে বলে ফোন দিলে ধইরো। রিয়া হ্যা সূচক সম্মতি দেয় মাথা নেড়ে। তানিয়া বেগম বলে নীলা ওই বাড়ির সবার খেয়াল রাখিস জামাই গাড়ি দেখে শুনে চালাইয়ো। লিটন এসে কিছু বললে আমি কি কৈফিয়ত দিবো জামাই। আকাশ বলে বাবাকে আমি সবটাই জানাইছি ইমেইলের মাধ্যমে অনি জরুরি কাজে আটকা পড়েছে তাই আমাদের যেতে বললো।

গাড়ি নিয়ে রওনা দিলো আকাশ। নীলা আম্মুকে আর রিয়াকে টাটা দিলো। ইমরান গাড়িতে মন খারাপ করে বসে আছে। তা দেখে নীলা জিজ্ঞেস করলো তোমার মন খারাপ কেনো ইমরান? ইমরান বললো তোমাদের বাড়ি আসলাম আর আমার ভাই একদিন না যেতেই নিয়ে গেলো তাই মনটা খারাপ। আকাশ বললো চুপ থাক হারামজাদা আমি সব বুঝি বাড়িতে যেয়ে তোর মন খারাপের ডোজ দিচ্ছি ওয়েট। নীলা গাড়িতে চুপচাপ হামজার সাথে প্রতারণার কথা মনে পড়ে মন খারাপ করে বসে আছে।

চৌধুরী মঞ্জিলে ঢুকলো আর্জিনা আর উষশী নীলাকে যেয়ে বললো এত তাড়াতাড়ি চলে এলে। ইশান এসে বললো আমি ওদের ঢেকেছি।উষশী বললো তুমিও পারোও বটে কালকের দিনটা কোনোভাবে ম্যানেজ হতোনা। ইশান তখন বললো কালকে যে ক্লাইন্ট আসবে সে আকাশের কনফারেন্স পছন্দ করে তাই ডাকা।

আর্জিনা বললো যাও রাত হয়ে গেছে রুমে যেয়ে চেঞ্জ করে সবাই খেয়ে নাও।

ইমরান বললো কলিজা টা রেখে এসেছি আর কি খাবো।

উষশী বললো কি বলছো তুমি? ইমরান বললো কিছু না। আকাশ বললো জাদু তোমার ব্যবস্থা করছি। এই বলে আকাশ আর নীলা উপরে চলে যায়।

—— রাত 10.00 ——

সবাই খেয়ে নিলো। এরপরে যার যার রুমে গেলো। ওই বাড়ি থেকে আসার পর নীলা আকাশের সাথে একটা কথাও বলে নাই। আকাশ জিজ্ঞেস করলো কথা বলছো না ক্যান? আমি কি তোমাকে আসতে বলেছি। নীলা বললো কাল আপনার মিটিং আছে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ুন সকালে উঠতে হবে আপনাকে। আকাশ বললো মন খারাপ কেনো? নীলা বললো মন খারাপ না প্রতারণার স্বীকার আমি। আকাশ বললো কে করলো প্রতারণা। নীলা বললো সবটা জানাবো আপনাকে আগামীকালের পর এই সময়টুকু চাই আপনার কাছ থেকে। আকাশ ভাবতে লাগলো কে করলো প্রতারণা এসব মাথায় ঘুরতে ঘুমিয়ে গেলো। নীলাও মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। কিছুতেই নীলার ঘুম আসলো না মাথায় খালি প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে পুরুষ মানুষের মনে কি থাকে বোঝাই মুশকিল। হামজা তার সাথে প্রতারণা করলো। এখন আকাশকে ভরসা করে যদি ঠকে যায় এসব চিন্তা করতে করতে ঘুমাই গেলো রাত ২.০০ টার দিকে।

সকাল হলো আকাশের ঘুম ভাঙলো জানালা দিয়ে নীলার মুখে এক চিলতে রোদ পড়েছে। রোদের আলোয় নীলার মুখ জ্বল জ্বল করতেছিলো।নিষ্পাপের মতো ঘুমাচ্ছিলো নীলা, আকাশ ভাবতে লাগলো কাল রাতে নীলা কি বলতে চাইছিলো। এরপরে আকাশ বলে যাই বলুক তার জন্য যেনো ভালো হয়। এরপরে নীলার ঘুম যেনো ভেঙে না যায় তার জন্য জানালা বন্ধ করে দিলো।

আকাশ সাওয়ার নিয়ে পরিপাটি হয়ে ইশান সহ হালকা নাস্তা করে অফিসে চলে যায়।

অফিসে যেয়ে দেখে ভালোভাবেই আয়োজন করা হয়েছে ক্লাইন্ট আসার সময় হয়েছে। আকাশ সব কিছু আরেকবার দেখে নিলো। আকাশ নিজের চেম্বারে একাই বসে আছে তা দেখে তার পার্সোনাল পিয়ে ইরাবতী রুমে ঢুকে। আকাশ বলে ইরাবতী তুমি এখানে কিছু চাই নাই তো আমি। ইরাবতী রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়। আকাশ বললো কি করছো তুমি। এরপরে আকাশের কাছে গিয়ে নিজের জামা ছিড়ে আকাশকে জড়িয়ে ধরে আর চিল্লায় আমাকে বাঁচাও বাঁচাও। আকাশ বলে কি করছো তুমি বলেই ইরাবতরকে ছাড়িয়ে দেয়। ইরাবতী আবারো জাপটে ধরে চিল্লাতে থাকে। এরপরে অফিসের কর্মচারীরা দৌড়ে ঢুকে আকাশের রুমে যেয়ে এই অবস্থা দেখে ছি! ছি! করে অফিসের কর্মকর্তারা। এমন সময় ক্লাইন্ট ঢুকে আকাশের এই অবস্থা দেখে ইশানকে বলে এই ডিল ক্যান্সেল। ভাবতেও ঘৃণা লাগছে এইরকম অফিসে আমরা কাজ দিই 🙄

ইশান বললো স্যার আপনারা ভূল ভাবছেন আকাশ দৌড়ে যায় যেয়ে বলে স্যার এটা মিসআন্ডারএস্টাটিং। ক্লাইন্ট বলে কোনটা মিসআন্ডারএস্টিং আকাশ। নারীদের নিয়ে শ্লীলতাহানি করা। তখন ইরাবতী বলে আমার সম্মান নিয়ে খেলা করছেন এই আকাশ স্যার। এমন সময় নিউজ পোর্টাল এসে নিউজ বানিয়ে টিভিতে সরাসরি টেলিকাস্ট করে।

উষশী,আর্জিনা,নীলা টিভির চ্যানেল ঘুরাতেই এই অবস্থা দেখে তাদের মাথা ঘোরে যায়।উষশী আর আর্জিনা বলে এই কাজ আমার ছেলের দ্বারা কখনো হতে পারেনা। ওই মেয়েটাকে দিয়ে এই কাজ কেউ করাচ্ছে। উষশী বলে এই ক্লাইন্ট ছাতছাড়া হলে আমাদের ৫০% লস হবে মা। নীলার মাথা ঘোরছিলো এমন সময় মনে পড়লো রিসেপশনিস্ট ম্যানেজার গাজীর কথা অনি বলেছিলেন কোনো মেয়ে আকাশের বিয়েতে আসেনাই তার কারণ সে সবার ক্রাস ছিলো এই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে কেউ আসে নাই। তখন নীলা ভাবলো আকাশ যদি ফালতু হতো তাহলে তো এই সুযোগ গুলো কাজে লাগাতো। উষশী বলে নীলা তুমি চুপ কেনো? তুমি কি বিশ্বাস করো আকাশ এই কাজ করতে পারে। নীলা বলে ভাবী সেইটা পরের কথা আগে ওখানে যেতে হবে তুমি আমাকে ওখানে নিতে পারবে। উষশী বললো পারবো কিন্তু ওখানে যেয় কি করবে? এতো কিছু এক্সপ্লেশন করার সময় নাই ভাবী দ্রত নিয়ে চলো ভাবী। আর্জিনা বেগম ড্রাইভার দিয়ে উষশী আর নীলাকে পাঠিয়ে দেয়। গাড়ির পথে নীলা জিজ্ঞেস করে এই ক্লাইন্টের নাম কি ভাবী? উষশী বলে বজোহরি রায়।

ইরাবতী বলে আমি সুষ্ঠু বিচার চাই। আকাশ বলে কি চাও তুমি। কিসের জন্য এমন করলা। তখন নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিক পুলিশকে ফোন করে পুলিশ ডাকে।

নারীরা কেনো বসদের কাছে সংক্ষরিত নয়? এই অপবাদ রটায় দেয় আকাশের নামে।

ক্লাইন্ট কে খুব হাত জোড় করে ইশান কিন্তু ক্লাইন্ট তাদের নাখোশ করে চলে যেতে লাগলো। এমন সময় নীলা এসে বললো দাড়ান বজোহরি রায়! বজোহরি বলে কে আপনি আমাকে দাড় করার আপনি কে?

নীলা বলে আমি আকাশ চৌধুরীর স্ত্রী। আর আকাশ যে নির্দোষ তা আমি এক্ষুনি প্রমান করে দিবো। বজোহরি বললো কিভাবে? নীলা বললো আপনি আমাকে ২০ মিনিট সময় দেন শুধু ২০ মিনিট আমাদের জন্য ওয়েট করবেন কথা দেন? বজোহরি বললো আচ্ছা দিলাম সময় কিন্তু মিসেস চৌধুরী আপনি যদি ২০ মিনিটে প্রমান করতে না পারেন আপনার স্বামী নির্দোষ তাহলে শ্লীলতাহানির উভয়ে আপনাকেও জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করানো হবে। নীলা বললো বেশ এই বলে আকাশের দিকে এগিয়ে যায়। ইশান বললো উষশীকে কি করে প্রমান করবে, ও যে ভাই নির্দোষ। উষশী বললো আমি জানিনা ও শুধু আসতে চাইছিলো তাই আমি নিয়ে এসেছি।

আকাশ মনে মনে বললো নীলা আমাকে অবিশ্বাস করে নাই কিন্তু ও প্রমান করবে কিভাবে এতো কনফিন্ডেস পেলো কিভাবে। অবাক হয়ে নীলাকে দেখতে লাগলো।

নীলা আকাশের হাত ধরে চেম্বারে নিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।

চলবে,,,

[ নীলা কি আসলে প্রমান করতে যে আকাশ নির্দোষ? আর শ্লীলতাহানির ঘটনার আসল মাফিয়া কে? তা জানতে হলে বেশি বেশি করে রিয়াক্ট ও কমেন্ট করুন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here