#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই
#পর্বঃ৩
#Jhorna_Islam
“তুমি নারী নাকি পরী?”
এই গান তো মেয়েদের জন্য গাওয়া হয়েছে। তাই আমি আপনার জন্য গাইলাম।কতো কষ্ট করে মাথা খাটিয়ে বের করেছি বলেন তো।
“আপনি পুরুষ নাকি পরা?”
সৌন্দর্য আর তালহা চোখ মুখ কোচকে ফেলে ইসরাতের কথা শুনে। এই মেয়েটার নির্ঘাত মাথায় সমস্যা আছে। নয়তো কিসব আবোল তাবোল বলে চলেছে।
নূর আর সহ্য করতে পারলো না ইসরাতের কথা।নিজের বান্ধবী কে স্পেশাল চাইল্ড বলে সম্বোধন করেছে সেই দিকে খেয়াল ও দিলো না। আর পড়ে যেতে নিয়েছে একবার জিজ্ঞেস ও করলো না ঠিক আছে কি না। যদি ইসরাত ধরতো ও পড়ে যায় সময় তাহলে কি লোকটা এই কথা বলে ওকে অপমান করতে পারতো? মন থেকে যেনো উত্তর এলো উহু কখনো না। মুহূর্তের মধ্যে মনটা খারাপ হয়ে যায়। সরি বলার কথাটা ভুলে গিয়ে ইসরাতের উপর অভিমান করে সেখান থেকে চলে যায়।
ইসরাতের কথায় তালহা একটু রা’গী স্বরে বলে, এই মেয়ে কি বলছো মাথা ঠিক আছে তোমার? আর আমি তোমার কি হই?
— কেনো স্যার হোন।
তাহলে স্যারের সামনে এসব কি করে বলছো তুমি? পরাণে ভয় ডর বলতে কি কিছু নেই? ঠাটিয়ে কানের নিচে একটা দিলে পরী,পরা, জিন,ভূত সব ছুটে যাবে।
যাও এখান থেকে।
ইসরাত মুখ ভেংচি কাটে।যেতে যেতে বলে,,, নিজে তো আমায় পাত্তা দেয় না। এখন অন্য কাউকে পটাবো তার সুযোগটা ও দেয় না। বা’জে লোক একটা।আরো নানান কথা বলতে বলতে সেখান থেকে চলে যায়।
সৌন্দর্য তালহার দিকে তাকিয়ে বলে,,
কিরে বেটা তোর পাখি দেখি অন্য ডালে বাসা বাঁধতে চায়। সময় থাকতে নিজের খাঁচায় বন্দী করে ফেল।নয়তো উড়ে গিয়ে অন্যের খাঁচায় বন্দী হবে আর তুই তখন বসে বসে আঙুল চু’ষ’বি।
ছিঃ সৌন্দর্য এসব কি বলছিস তুই? ও আমার ছাত্রী। আর ছাত্রী আর স্যারের সম্পর্ক টা তো তুই জানিসই। আর কিছু তালহা বলার আগেই সৌন্দর্য থামিয়ে দেয়।
প্লিজ ভাই অফ যা বস্তা পঁচা ডায়লগ মারিস না।
আচ্ছা মারলাম না যা। তুই এটা বল আমায়,,নূর কে তুই স্পেশাল চাইল্ড বললি কেন?
“যে যেটা তাকে সেটা বলবো না?”
কোন দিক দিয়ে ওরে তোর স্পেশাল চাইল্ড মনে হয় বলতো?
“সবদিক দিয়েই।যদিও বা ভালো না দেখিনি।” কিন্তু তুই আমাকে দেখতে পারিস।প্রথমে মুখ আর ঘার।আর এখন ডিরেক্ট বুকে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে সৌন্দর্য। ”
এটা এক্সিডেন্ট ছিলো সৌন্দর্য। ও তো আর ইচ্ছে করে করেনি। আর তুই ভালো করে না দেখে ভুল করেছিস।বাদ দিলাম সে সব কথা। তুই কি জানিস আমাদের কলেজের সবচেয়ে ব্রাইট স্টুডেন্ট হলো নূর। এইবার আমি সিউর দিয়ে বলতে পারি রেকর্ড করবে সে। তোর রেজাল্টের রেকর্ড টা ভাঙবে।ভেবেছিলাম তুই মনে হয় একটা পড়াকু এলিয়েন,যে সব সময় বইয়ের ভিতর মুখ লুকিয়ে থাকতো। কিন্তু না ভাই তোর মতো আরেকটার সন্ধান পেয়েছি। আর এমন করে বলিস না মেয়ে টা অনেক সহজ, সরল ও নরম মনের মানুষ। তারপর বিরবির করে বলে,, শুধু যার সাথে চলে সে ছাড়া।
—————————-
নূর একা একা ঘুরে চলেছে। পিছন পিছন ইসরাত কখন থেকে সরি বলে চলেছে তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না।
দোস্ত তুই রেগে আছিস কেন বলতো?
নূর আশেপাশে চোখ বোলাতে বোলাতে বলে,,আমি কি একবার ও বলেছি আমি রে’গে আছি?
তোর বলতে হবে কেন? আমি এমনিতেই বুঝতে পারি।
বলনা দোস্ত।
আমি ঐ গম্ভীর মুখু লোকটা কে সরি বলতে গিয়েছিলাম। গাড়িতে হয়ে যাওয়া ঐ ঘটনার জন্য। কিন্তু সরি বলতে গিয়ে আরেক বিপত্তি ঘটিয়ে ফেললাম। আমার ইচ্ছে করছে আমার হাত গুলো কে একটা কঠোর শাস্তি দিতে।
এতে তোর তো কোনো দোষ দেখছি না। পরে সরি৷ বলে দিস।
লোকটা আমাকে খারাপ ভাবছে ইশু। ঐসময় বাসে ম্যানার্সলেস বলেছে। আর তখন স্পেশাল চাইল্ড বলেই মুখটা কে ছোট করে করুন দৃষ্টিতে তাকায় ইসরাতের দিকে। আমি এখন লোকটার সামনে গিয়ে সরি বলতে৷ ও পারবো না।
কেন?
দেখিস না লোকটার কাছে গেলেই কিসব কান্ড ঘটে। জীবনে যেগুলো হয়নি সেগুলোই হয়।
এতো মন খারাপ করিস না দোস্ত। আমি একটা বুদ্ধি দেই?
কি? কিন্তু কোনো শ/য়তানি বুদ্ধি দিবি না আগেই বলে দিচ্ছি।
আরে আগে শোন আমার কথা। না শুনেই কেন তুই কমপ্লিমেন্ট দিয়ে দিচ্ছিস।
“আচ্ছা বল শুনি।”
ঐ পাকা তালের কাছে বলে দে।ঐ বেটা গিয়ে বলে দিবে সিম্পল।
ছিঃ ইশু। উনি তোর স্যার হয়।এমনিতেই তুই লোকটা কে প্রচুর জ্বালাস। তার উপর উনার সুন্দর নাম টা কে কেনো বিকৃতি করছিস?
আরে রাখ।উনি তো আর শুনতে পাচ্ছে না। এসব রেখে এবার বল আইডিয়া টা কেমন দিলাম?
মন্দ বলিস নি।আমি তাহলে তালহা ভা,,, না মানে স্যারকে বলে দিবো আমার সরি টা যেনো ঐ লোক টা কে দিয়ে দেয়। এই প্রথম তুই একটা ভালো আইডিয়া দিলি।
আমি সব সময়ই তোকে ভালো আইডিয়া দেই।তুই আমার গুরুত্ব বুঝিস না মন খারাপ করে বলে ইসরাত।
নূর কিছু বলতে নিবে তার আগেই,,, ওদের সামনে রিতা আর তার সঙ্গী সাথীরা ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়।
কিরে সুন্দরী রমনীরা কি নিয়ে আলাপ চলছে শুনি?
ইসরাত একটু সামনে এগিয়ে এসে বলে তোকে বলবো কেন? আর অবশেষে স্বীকার করলি আমরা সুন্দরী। এবার না হয় নিজের অহংকার টা একটু কমিয়ে করিস ঠিক আছে?
তোর মুখ টা একটু বেশিই চলে ইসরাত।
কি করবো বল রিতা কিছু কিছু মানুষ কে দেখলে আমার মুখ টা কনট্রোল হারা হয়ে যায়।
তা সারাদিনই তো দুইটা তালহা স্যারের পিছনে পরে থাকিস। এখন নতুন জনকে দেখে যেমন আরেকটু বেশি আদিখ্যেতা করছিস। ভুলেও ন’জর দিবি না। সৌন্দর্য স্যারের উপর আমার ন’জর পরেছে। সো তাকালে ও দুলাভাই নজরে তাকাবি বুঝলি? রিতা বলে।
ইসরাত কিছু বলতে নিবে তার আগেই নূর ইসরাতের হাত আকড়ে ধরে। মাথা নাড়িয়ে ইশারায় কিছু না বলতে বলে। এসব ঝামেলা নূরের একদম ভালো লাগে না। তার উপর রিতা যা মেয়ে কি না কি বলে বা করে বসে।
দুইজন ই অন্যদিকে চলে যায়।
সৌন্দর্য ঘুরে ঘুরে সবকিছুর ছবি আর ভিডিও করছে।যদিও বা এসব তার কাছে নতুন কিছু না। অনেকবার এসেছে।কিন্তু বাড়িতে তো একজন আছে না আসতে পেরে অর্ডার দিয়ে দিয়েছে সবকিছু যেনো ভিডিও করে সেন্ড করে।
ইসরাত একের পর এক সেলফি ক্লিক করে চলেছে। মাঝে মাঝে নূর কে ও ডাকছে আসার জন্য। একসাথে তুলবে। নূর একটা তুলেই সরে গেছে।
চারিপাশ টা ঘুরে ঘুরে দেখে উপভোগ করছে। মাঝে মাঝে নিজের সাইড ব্যাগ টা থেকে মিনি ডায়রী বের করে কি যেনো লিখছে।
এইইই নূর আয় না দোস্ত। এখানে পিছনের ভিউ টা অনেক সুন্দর। দেখ সেলফি সুন্দর আসছে। কিছু টা জোরেই বলে ইসরাত।
তুই তোল তোর সেলফি। আমি এমনিতেই উপভোগ করছি।এসবের চক্করে আসল জিনিস মিস করছিস তুই। এসব স্মৃতি মোবাইলে না রেখে নিজের মনে গেঁথে রাখ। যখন মন খারাপ হবে চোখের সামনে ভেসে উঠবে।কৃত্তিমত্তা ছেড়ে নিজের চোখ আর মন জুরিয়ে নে।
সৌন্দর্য পাশেই ছিলো কথা গুলো শুনতে পায়।নিজের ফোন টা কি যেনো ভেবে পকেটে ঢুকিয়ে অন্য দিকে চলে যায়।
———————————
ঘুরাঘুরি করে সকলেই রিসোর্টে ফিরে এসেছে। আগামীকাল তারা রওনা দিবে।সকলেই খাবার খেয়ে যে যার রুমে বিশ্রাম নিচ্ছে।
তালহা সৌন্দর্যের রুমে এসেছে। সকলের সাথে গ্রুপ কলে কথা বলবে। সৌন্দর্য ফোনের কাছে নিজের মুখটা নিতেই তার এক বন্ধু বলে উঠে,,,
“কিরে চাঁদের গায়ে কলঙ্ক লাগিয়েছে কে?”
#চলবে,,,,,,
কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ।
আসসালামু আলাইকুম। কেমন হয়েছে জানাবেন।