#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই
#পর্বঃ৪
#Jhorna_Islam
“কিরে চাঁদের গায়ে কলঙ্ক লাগিয়েছে কে?”
রোহাননের কথায় সকলেই ভালো করে সৌন্দর্যের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
এবার সকলেই বলে উঠে তাইতো।
এই সৌন্দর্য তুই লুকিয়ে চুরিয়ে কি করেছিস আমাদের বল বলছি। লক্ষন তো ভালো মনে হচ্ছে না মামা। শেষ মেষ তুই কি করলি? আমাদের বলছিস না কেন? রোহান কৌতুক করে বলে।
এই তোরা চুপ যা সবাই। আমাদের চাঁদের গায়ে কলঙ্ক লাগতে যাবে কোন দুঃখে বলতো?
“চাঁদের গায়ে নূরের ছোয়া লেগেছে। ”
বুঝলি সবাই? তালহা বলে।
কি রে সৌন্দর্য ঘুরতে গিয়ে তুইও জুটিয়ে ফেললি।হায় হায় আমার এখন কি হবে রে? আমি তোকে কতো ভালোবাসি এতোদিন যাবত।তুই কিনা আমাকে ঠকিয়ে দিলি? বলেই কান্নার অভিনয় শুরু করে রোহান।
সৌন্দর্য এদের মজা আর নিতে পারলো না।
ওয়ে ড্রামাবাজ তোর ড্রামা অফ কর। দিশানী কি জানে তুই শা* একটা গে। না জানলে সমস্যা নেই আমি নিজ দায়িত্বে তাকে এই কথাটা জানিয়ে দিবো।
দিশানীর নাম্বার টা জানি কতো? উমমম মনে পরেছে লাস্টে 223।
সৌন্দর্যের কথায় রোহানের মুখ টা ছোট হয়ে যায়। এই ছেলেটার সাথে একটু মজা ও নিতে পারে না। কি করে যেনো সিক্রেট গুলো খুঁজে খুঁজে বের করে ফেলে।
ভাই আমিতো ওর কথা তোদের কাউকে বলিনি।তুই কি করে ওর কথা জানলি?
টপ সিক্রেট বলেই সৌন্দর্য চোখ মারে।
এবার জানা কথা সকলে রোহানের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। সৌন্দর্য টুক করে কল কেটে দিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস নেয়। তারপর তালহার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,, তুই কি করে টিচার হলি?
এ-এটা আবার কি রকম প্রশ্ন?
কি রকম প্রশ্ন তাই না? তুই টিচার হয়ে এসব কি করে বলিস? নিজের ছাত্রী কে নিয়ে এসব কথা বলতে তোর মুখে বাঁধে না? কথাটা বলেই সৌন্দর্য তালহার উপর চড়াও হয়।
আহ্ ভাই ছাড় প্লিজ। তোর এই বডিবিল্ডার শরীর দিয়ে কি করে তুই আ’ঘাত করতে পারিস আমাকে?
অনেক কষ্টে নিজেকে সৌন্দর্য্যের হাত থেকে ছাড়ায় তালহা। তারপর নিজেের চুল ঠিক করতে করতে বলে,কোথায় তুই হাতি আর আমি মশা। নিজের দিকে তাকিয়ে তারপর আমার দিকে তাকাবি দেন মারতে আসবি। তারপর নিজের কাঁধে হাত বুলিয়ে আহ বলে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
———————————-
সকাল সকাল ইয়ানূূর উঠে একটু বাইরে বের হয়। নাস্তা করেই তারা রওনা দিবে। তাই ভাবলো আশেপাশের জায়গা টা একটু চোখ বুলিয়ে দেখবে। তারউপর কাল আসার সময় রিসোর্টের গেইটের বাইরে একটা বকুল ফুল গাছ দেখেছিলো। বকুল ফুল আবার নূরের খুব পছন্দ। তাই পা টিপে টিপে বের হয়। আশেপাশে তেমন কেউই নাই। সকলে ঘুমে বিভোর। এই সময় টা নূরের খুব ভালো লাগে। কেমন জন মানবহীন থাকে। কোনো কোলাহল নেই শুধু পাখির কিচিরমিচিরের শব্দটা। ফুরফুরে মন নিয়ে রিসোর্ট থেকে বের হয়ে আসে নূর।চারদিকে একবার দৃষ্টি বুলিয়ে গাছের নিচে চলে যায়।
তেমন একটা ফুল পরেনি। তাও নূর খুশি মনে বসে কুড়াতে থাকে। নিচু স্বরে গুনগুন করে গান ধরে,,,
“বকুলের মালা শুকাবে রেখে দিবো তার সুরভি।
দিনে গিয়ে রাতে লুকাবে,মুছোনাকো আমারি,,,,,
বাকিটুকু শেষ ও করতে পারে নি নূর।উপর থেকে যেনো ফুলের বৃষ্টি এসে ওর উপর পরছে। নূর ফুল কুড়ানো বাদ দিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। ওর মুখের উপর ও পরছে কি সুন্দর ঘ্রাণ বের হয়েছে। হুট করে এতো ফুল পড়ার কারণ টা বুঝতে পারলো না নূর। এখন তেমন বাতাস ও নেই।
নিজের ভাবনার ব্যাঘাত ঘটে কারো গম্ভীর কন্ঠ স্বর শুনে।
” এই পিচ্চি মেয়ে এখানে একা একা কি করতে এসেছো? যদি ছেলেধরা এসে নিয়ে যায়? তারউপর আবার তুমি সাধারণ না।স্পেশাল কেয়ার ছাড়া কেন বের হয়েছো? দ্রুত নিজের রুমে যাও,ফাস্ট। ”
কথাগুলো এক নিশ্বাসেই শেষ করে সৌন্দর্য। নূর আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে। কিছু বলতেও পারলো না। কি করেই বা বলবে, সে তো নূরের সামনে দিয়ে জগিং সুট পরে চলে যাওয়া লোকটা তো কোনো সুযোগ ই দিলো না। তবে অপমাণ করতেও ছারলো না।
সকাল সকাল লোকটার কি এসব কথা না বললে চলছিলো না নাকি। নিচে পরে থাকা ফুলের দিকে তাকিয়ে নূরও রিসোর্টের দিকে হাঁটা দেয়। কেন যে লোকটার সাথে দেখা হয়েছে।
————————————————–
বাসে যে যার সিটে বসে আছে। আজ ইসরাত জানালার পাশের সিটে বসেছে। সেই কখন থেকে সে বকবক করে চলেছে থামার নাম নেই। নূর চুপচাপ বইয়ের দিকে একবার তো ইসরাতের দিকে একবার তাকাচ্ছে।
মেয়েটার বকবকানি তে কিছুতেই মন বসাতে পারছে না সে।
কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে বিষম লেগে যায় ইসরাতের পানির বোতল বাসের উপরে ব্যাগে নিয়েছিল।
নূর উঠে তারাতাড়ি ব্যাগটা নিচে নামায়। চেইন খুলে পানির বোতল নিয়ে ব্যাগের ভিতর কিছু একটা দেখে ব্রু কোঁচকায়। পানির বোতল নিজের হাতে নিতেই ইসরাত তরিঘরি করে পানি খায়।
নূর ব্যাগ থেকে জিনিস টা হাতে নিয়ে ইসরাতের সামনে বাড়িয়ে ধরে। ইসরাত পানির বোতল রেখে তারাতাড়ি জিনিস টা নিজের কাছে নিয়ে নেয়।
নূর একই ভাবে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। ইসরাত নূরের দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলে,,, কি- কি হয়েছে দোস্ত? ত-তুই এমন করে তাকিয়ে আছিস কেন?
এটা কি?
কেন চিনিস না তুই? আজব এটা একটা মেচ।
সেটা আমিও জানি। কিন্তু এটা এখানে কি করছে সেটাই জিজ্ঞেস করছি। বাই এনি চান্স তুই?
এইই না না বোন ভুলেও ওসব কিছু ভাবিস না।আমি সিগারেট খাওয়ার জন্য নেই নি। আসলে হয়েছে কি আমার না খুব ভূ’ত, প্রে’তে’র ভয় লাগে দোস্ত।। তাই নিয়ে রেখেছি বিশ্বাস কর আমায় ঠোঁট উল্টে বলে ইসরাত।
ইসরাতের এসব কথা শুনে ইয়ানূর কি বলবে ভেবে পায় না। ভূ’ত প্রে’তে’র ভয়ের জন্য কিনা মেচ কিনে নিয়েছে। এটাও তাকে শুনতে হলো।
নূর নিজের সিটে বসে ইসরাতের কপালে হাত রেখে বলে,ইশু বোন আমার তোর মাথা এতোদিন অর্ধেক নষ্ট ছিলো।এখন মনে হচ্ছে পুরোই হয়ে গেছে। লোকে এসব শুনলে হাসবে।এতোদিন দেখতাম প্রেগন্যান্ট মহিলারা মেচ নিয়ে ঘুরে। কিন্তু এই প্রথম তোকে এসব করতে দেখলাম।
ইসরাত মিনমিনিয়ে বলে চুপ যা দোস্ত। কাউকে এসব বলিস না।
এর মধ্যে হুট করে বাস অফ করে।ওরা এতে মাথা ঘামায়নি। নূরের ও পানি পিপাসা পেয়েছে তাই বোতল টা হাতে নেয়।
সৌন্দর্য নিজের গাড়ি আনিয়েছিলো যাওয়ার জন্য। কিন্তু হুট করে গাড়িটা খারাপ হয়ে যায়। এতে ওর বেশ মে’জা’জ চটে আছে। তালহা কে বলে বাস থামিয়ে আবার উঠে বসে। কিন্তু সামনের সিট গুলো বুকিং। তালহা চেয়েছিলো সামনে জায়গা করে দিতে কিন্তু সৌন্দর্য জানায় তার দরকার নেই। সে পিছনেই বসবে।
বাসে উঠে পিছনে যেতে গিয়ে টে’র পায় জোতার ফিতা খুলে গেছে। বসে সেটাই লাগায়।কিন্তু হুট করে উঠতে গিয়ে থমকে যায় সে।
নূর মুখে পানি নিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে লোকটা নিচে বসে আছে। বাসে দেখেনি আগে। তাই হুট করে দেখে নিজে কি করে ফেলল বুঝতে ও পারে নি। নূরের মুখের সব পানি ছিটকে পাশে থাকা সৌন্দর্যের উপর গিয়ে পরে।
#চলবে,,,,
কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ।
কেমন হলো জানাবেন।🤭