#স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
#পর্ব_০৭
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
রাতের আঁধার কেটে গিয়ে নতুন প্রভাতের আলো ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। সুখ যেমন সবার জন্য স্থায়ী হয় না। ঠিক তেমনই আঁধার কেটে গিয়ে আলোর দেখা সবার মিলে না। নিস্তব্ধ প্রভাত। দূর গাছের ডাল থেকে পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। পরিবেশ কেমন থম মেরে রয়েছে। এ যেন ঝড় আসার পূর্বাভাস। রোকেয়া বেগম রান্না করার জন্য উঠেছিলেন। স্বামী হাঁটতে যাওয়ার জন্য দশ মিনিট ধরে ডাকছেন। কিন্তু স্বামীর থেকে কোনো সাড়া শব্দ আসছে। ভয়ে অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো রোকেয়া বেগমের। বাক্য গুলো কণ্ঠনালী পর্যন্ত এসে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। স্বামীর নিরবতা ভেতরটায় ভয়ে কুঁকড়িয়ে দিচ্ছে। নিজেকে দমিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। সহ্য করতে না পেরে, দুই ছেলের নাম ধরে চিৎকার দিয়ে উঠলো।
আরাভ নিয়ম করে সকালে উঠে হাঁটতে যাওয়ার জন্য বাহিরে বের হচ্ছিল। এমন সময় মায়ের চিৎকার কর্ণকুহরে এসে পৌঁছালো। দ্রুত গতিতে মায়ের রুমের দিকে অগ্রসর হচ্ছে আরাভ। বিছানায় আসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে দেখে চিন্তিত হয়ে পড়লো আভার মায়ের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করল,
–কি হয়েছে আম্মু? তুমি এভাবে কান্না করছো?
–তোর আব্বু কথা বলছে না। অনেকক্ষণ ধরে ডেকেছি। কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ করছে না। মানুষটা কোনোদিন এমন করে না। প্রতিদিন সকালে আমার আগে উঠে। মায়ের কথায় চিন্তিত হয়ে বাবার দিকে দৃষ্টিপাত করল আভার। বাবার হাত ধরে পালস চেক করে, বাবাকে ওঠাতে লাগলো। মুনিয়া বেগম আরাভকে সাহায্য করল।
বাহিরে বাবাকে নিয়ে এক হাতে দাঁড়িয়ে আছে আরাভ। অতিরিক্ত সকাল হওয়ায় গাড়ির দেখা মিলছে না। মিললেও ফাঁকা গাড়ি পাচ্ছে না। এমন সময় আবিদ রহমান বাসা থেকে বের হচ্ছিলেন। আরাভদের দেখে তাদের দিকে এগিয়ে আসলো। কিছুটা চিন্তিত হয়ে প্রশ্ন করল,
–কি হয়েছে বাবা? ভাইকে নিয়ে এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
–বুঝতে পারছি না আংকেল। আব্বু সকাল থেকে কথা বলছে না। আম্মু অনেক ডেকেছে। কোনোদিন এমন করেন না। কোনো তো একটা সমস্যা হয়েছেই। যার জন্য আব্বু কথা বলছে না। হসপিটালে গেলেই জানা যাবে।
–তাহলে তাড়াতাড়ি নিয়ে যাও। এখানো দাঁড়িয়ে আছো কেন?
–গাড়ির জন্য আংকেল। আরাভের কথা শুনে, আবিদ রহমান হাক ছেড়ে কাকে জানি ডাকলেন। মুহুর্তের মধ্যে একটা সাদা রঙের গাড়ি এসে তাদের সামনে দাঁড়ালো।
–আর বিলম্ব করো না। তাড়াতাড়ি তোমার বাবাকে গাড়িতে তুলো। ভাবি আপনি আগে উঠে বসেন। গাড়িতে উঠে ভাইকে ধরে নিবেন। আরাভ বিলম্ব করল না। বাবাকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে, সবাই মিলে গাড়িতে উঠে বসলো।
ক্লান্ত দুপুর বিষন্ন মন নিয়ে সবাই হসপিটালে বসে আছে। এমন সময় ডক্টর এসে আরাভকে ডেকে বলল,
–তোমার আব্বুর জ্ঞান ফিরছে। তোমার আম্মুকে খুঁজছে। তোমার আব্বু এইবার দিয়ে দুইবার স্ট্রোক করল। আর একবার স্ট্রোক করলে উনাকে বাঁচানো মুসকিল হয়ে যাবে। তোমাদের বারবার করে বলেছি। তোমার আব্বুকে চিন্তা করতে দিবে না। তবুও কেনো চিন্তা করতে দাও? অতিরিক্ত চিন্তা করার কারনে স্ট্রোক করেছে তোমার আব্বু। ডক্টরের কথায় আরাভ নিরুত্তর রইলো। রোকেয়া বেগম বিলম্ব করল না। দ্রুত পায়ে স্বামীর কেবিনের দিকে এগিয়ে গেল। অভ্র ডক্টরের কথা শুনে অপরাধীর ন্যায় মাথা নুইয়ে আছে। আজকে তার জন্যই তার বাবার এমন অবস্থা। নিজের ওপরে নিজের ভিষণ ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। এমন সময় মুনিয়া বেগম সবার জন্য খাবার নিয়ে আসলো। আবিদ রহমান সকাল থেকেই আরাভদের সাথে বসে আছে।
–তোমাকে কত করে নিষেধ করেছি। একদম চিন্তা করবে না। তুমি আমার কথা শুনো না কেনো বলো তো? আল্লাহ ভাগ্যে যা রেখেছেন। তাই হবে চিন্তা করে শুধু নিজের শরীরে ক্ষতি। রোকেয়া বেগমের কথায় রহমান শেখ একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লেন। ললাটে একটা ঠেকিয়ে ওপরের দিকে দৃষ্টিপাত করল,
–যখন নিজের ছেলে আমাদের কথা ভাবে না। আমার চিন্তার কারন হয়। আমার সমানের কথা ভাবে না। নিজের জেদ ধরে রাখার জন্য, আমার করা পছন্দ মেয়েকে ডেকে নিয়ে এসে নিজের মন মতো কথা বলে, সেই বাবা কি আদৌও সুস্থ থাকতে পারে। অভ্র যেন আমার সামনে না আসে। অভ্র যদি ভুল করে-ও আমার সামনে এসেছে। তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
–এত কথা বলো না তো৷ তোমার শরীর ভালো না। আরাভ বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। অভ্র চাইলেও আরাভ অভ্রকে আসতে দিবে না। আমার আরাভের ওপরে ভরসা আছে। অর্ধাঙ্গিনীর কথায় হালকা হাসলো রহমান শেখ। মুখশ্রীটা কেমন মলিন হয়ে আছে। দু-চোখে রাজ্যের চিন্তা। অর্ধাঙ্গিনীর করুন মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে, চক্ষুদ্বয় জোড়া বন্ধ করে নিল।
অভ্র আর স্রুতি একটা রেস্টুরেন্টে পাশাপাশি বসে আছে। স্রুতি তার বান্ধবীদের খেতে এসেছিল। তখনই অভ্র এসে, স্রুতির বান্ধবীদের সরে যেতে বলে, এতে স্রুতি বেশ বিরক্ত হয়েছিল। রাগান্বিত হয়ে অভ্রকে চার কথা শুনিয়ে চলে যাচ্ছিল। এমন সময় অভ্রের একটা কথা কর্ণকুহরে আসতেই থেমে যায় স্রুতির দু’টি চরন। তার জন্য অভ্রের বাবার হসপিটালে, তার কি দোষ ছিল। সে সত্যি কথা বলেছে। নিজে খারাপ হয়ে অন্যকে ভালো সাজাবো। এতটা মহান এখনো হয়ে উঠতে পারি নাই। অভ্র স্রুতির থেকে বিশ মিনিট সময় চেয়ে নিয়েছে। নিরবতা কাটিয়ে অভ্র বলে উঠলো,
–স্রুতি তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে?
–না। স্রুতির সোজাসাপটা উত্তরে হতাশ হলো অভ্রের মুখশ্রী। সে জানতো স্রুতির দিক থেকে এমন কিছুই আসবে। নিজেকে শক্ত রেখে, নরম কণ্ঠে বলে উঠলো,
–দেখ যেদিন আমি রাগের বশে তোমাকে উল্টা পাল্টা কথা বলে ফেলেছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। প্লিজ বিয়েটা ভেঙে দিও না। মানুষ মাত্রই ভুল করে। আমিও ভুল করেছি। আমার এই ভুলটা মাফ করে দেওয়া যায় না।
–আপনি ভুল করেছেন। তাতে আমার কি? আমার কোনো যায় আসে না৷ আপনার বাবা অসুস্থ হয়েছে। আপনার বাবার কথা চিন্তা করে আপনি আমাকে বিয়ে করছেন। বিয়ের পরে আমি আদৌও স্বামীর ভালোবাসা পাব। আপনি হয়তো লোক দেখানো ভালোবাসা আমাকে দেখাবেন। আমিও মনে করবো। আপনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন। আপনি কি সত্যি আমাকে মন থেকে ভালোবাসবেন। শুনেছি মানুষ রাগে বশে সত্যি কথা বলে, আপনি সেদিন সত্যি কথায় বলে ছিলেন। আমি সবকিছু জানার পরে-ও আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না। দরকার পড়লে আমি রাস্তার ছেলেকে বিয়ে করবো। তবুও আপনাকে বিয়ে করবো না। কথা গুলো বলেই স্রুতি স্থান ত্যাগ করল।
চলবে…..
(২১ তারিখ থেকে পরীক্ষা। তাই অনিয়মিত হয়ে পড়েছি। ৬ তারিখে পরীক্ষা শেষ হবে। এই ক’টাদিন একটু অনিয়ম হবে। সবাই একটু কষ্ট করে মানিয়ে নিবেন। পরীক্ষা শেষ হলে, নিয়মিত গল্প দেওয়ার চেষ্টা করবো। রিচেক করা হয় নাই। ভুল ত্রুটি থাকতে পারে, সেগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)