#স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
#পর্ব_০৮
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
বিষন্ন মন নিয়ে পুকুরের মাঝ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে স্মৃতি। চারিদিকে উঁচুনিচু সারিসারি নারিকেল দাঁড়িয়ে আছে। হিমেল হওয়ায় গাছের পাতা গুলো হেলেদুলে পড়ছে। শীতল হওয়া এসে স্মৃতির পুরো শরীর শীতল করে তুলছে। স্মৃতির অবাধ্য চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে। আজ তিন দিন হলো স্মৃতি নানির বাসায় এসেছে। স্রুতির বিয়ের কথা বার্তা চলছে। এর মাঝে কেটে গিয়েছে, বেশ কয়েকটি দিন। সবাই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। তবে অভ্রের বাবার আর অভ্রের সম্পর্কে এসে তিক্ততা। এত কিছুর মাঝে-ও বাবা ছেলের মনমালিন্য মেটেনি। স্রুতিকে বাহিরে থেকে শক্ত মনে হলেও, ভেতর থেকে সে গভীর ভাবে আহত। যা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ জানে না। মন তো আল্লাহ একটাই দিয়েছে। সেটাও সে অভ্রকে দিয়ে ফেলছে। চাইলেই তো আর সবাইকে মন দেওয়া যায় না। কিন্তু নিজের কথা ভেবে বাবা-মাকে কষ্ট দিতে পারবে না। যে মানুষটা তাকে ভালোবাসতে পারবে না। সেই মানুষকে সে কিভাবে বিয়ে করবে? কিন্তু অভ্র তো একটা সুযোগ চেয়েছিল। সে কি আদৌও সুযোগ চেয়েছিল? নাকি বাবা-মায়ের কথা ভেবে অভিনয় করতে এসেছিল? উত্তর মেলে না স্রুতির। একদিকে বাবা-মা অন্য দিকে না হওয়া প্রিয় মানুষ। স্রুতির মনে আজ জমেছে বিশাল হাহাকার। কিছু হাহাকার মৃত্যুর চেয়েও বেশি ভয়ংকর। পরিবারের দিকে তাকালে নিজে শেষ। আর নিজের দিকে তাকালে পরিবার শেষ। এই কথা ভাবতে ভাবতে কেটে যায় স্রুতির প্রহর।
অন্য দিকে স্রুতিকে কয়েকদিন ধরে দেখতে না পাওয়ায় অভ্রের মন অস্থির হয়ে উঠেছে। সে শুনেছিল স্রুতির বিয়ের কথা চলছে। স্রুতির যদি বিয়ে হয়ে যায়। সে একটি ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে ফেলবে। সে সাথে হারাবে বাবা-মায়ের ভালোবাসা। আবেগে পড়ে এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ হয় নাই। কথায় আছে না। ভাবিয়া করিও কাজ। করিয়া ভাবিও না। আজকে কথাটার ব্যাখ্যা অভ্র হারে হারে উপলব্ধি করতে পারছে। সময় যে ফুরিয়ে যাবার পথে, তবে কি এখানেই সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। নাকি নতুন করে কোনো অধ্যায় শুরু হবে। উত্তর মেলে না অভ্রের। বিষন্ন মন নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
ঘড়ির কাঁটায় রাত দশটা ছুঁই ছুঁই। স্মৃতিরা গ্রাম থেকে বাসায় এসেছে। এসেই সবাই থেমে নেই। সবাই নিজেরদের মতো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আজকে রাতেই স্রুতির বিয়ে হবে। স্রুতির মামা নিজে স্রুতির জন্য ছেলে দেখেছে। ছেলে আমেরিকায় থাকে। বিয়ের পরে স্রুতিকেও আমেরিকায় নিয়ে যাবে। এই লোভ সামলাতে পারলেন না স্রুতির মামা। সুযোগ বুঝে ভাগ্নিকে ছেলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাইছেন। স্রুতির মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে স্মৃতির ভিষণ মন খারাপ হলো,
–আপু এখনো সময় আছে। তুমি বলে দাও। তুমি বিয়ে করবে না। আমি জানি তুমি অভ্র ভাইয়াকে ভালোবাসো। একজনকে মনে রেখে, অন্য জনের সাথে কখনো সংসার করা যায় না। তুমি অভ্র ভাইয়াকে ভালোবাসো না। এই কথাটা অস্বীকার করতে পারবে না। তুমি যদি অভ্র ভাইয়াকে ভালোই না বাসো। তাহলে অভ্র ভাইয়া ছবি তোমার ফোনের ওয়াল পেপারে দিয়ে রাখছো কেনো? অভ্র ভাইয়ার দুইশো আটটা ছবি তোমার ফোনে কেনো? কেনো অভ্র ভাইয়াকে নিয়ে তোমার এত অভিযোগ? স্মৃতির কথা শুনে স্রুতি কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
–তুই জানিস না কারো অনুমতি ছাড়া কারো জিনিসে হাত দেওয়া উচিত নয়। তুই এখন বুঝবি না। যেদিন প্রেমে পড়বি? সেদিন বুঝতে পারবি। কেনো এত অভিযোগ? কেনো এত অভিমান। আমার তার প্রথম ভালোবাসা কেনো হতে পারলাম না স্মৃতি। নারী তার পছন্দের পুরুষের পাশে একশো বছরের পুরনো নারীর কঙ্কালকেও সহ্য করতে পারে না। সেখানে আমি যাকে ভালোবাসি। তার মনে অন্য কেউ। এটা ভাবতেই আমার বুকের মাঝে অসংখ্য ছিদ্র তৈরি হয়। আমি মেনে নিতে পারি না। আমার জন্য বাবা-মাকে লোকের কাছে অনেক কথা শুনতে হয়। বয়স হয়ে গিয়েছে। বুড়ি হয়ে গিয়েছি। দু’দিন পরে আমাকে কেউ বিয়ে করবে না। আব্বু আম্মু মনে মনে প্রচুর কষ্ট পায়। সেটা আমাকে বুঝতে দেয় না। কিন্তু আমি তো এতটাও অবুঝ না। যে বাবা-মায়ের কষ্টটা অনুভব পরতে পারবো না। আমার জন্য বাবা-মায়ের চোখে বিশাল চিন্তা দেখেছি। বাবা-মায়ের দু-চোখ বড্ড ক্লান্ত। এবার তাদের বিশ্রাম দিতে চাই। তুই আমাকে আর কিছু বোঝাতে আসিস না। বহু কষ্ট নিজের মনকে মানিয়ে গুছিয়ে নিয়েছি।
–আপু জীবনে সঠিক মানুষ আসলে প্রথম আর দ্বিতীয় বলে কিছু নেই। যে তোমাকে বুঝবে। তোমার মতো করে তোমাকে ভালোবাসবে। তোমার সাথে তাল মিলিয়ে চলবে। তোমাকে দেখার জন্য যার দুনয়ন তৃষ্ণার্থ হয়ে থাকবে। তোমাকে এক পলক দেখার জন্য ছটফট করবে। তোমার সাথে কথা বলার জন্য পাগলামি করবে। তোমার নিরবতায় অস্থির হয়ে উঠবে। তোমার মন খারাপে, তার মনও বিষন্ন হয়ে উঠবে। সে-ই তো তোমার প্রিয় মানুষ। তোমার কাছের মানুষ। তোমার আপনজন। অভ্র ভাইয়া ভুল করেছে। সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে। সে তোমার কাছে বারবার মাফ চাইছে। একটা সুযোগ দিয়েই দেখো না। হতেও পারে। তুমিই একদিন তোমার স্বামীকে নিয়ে ভিষণ অহংকার করবে। মানুষ ভালোবাসা দিয়ে সবকিছু জয় করতে পারে। আমি ভুল না হলে, তুমিও পারবে। অভ্র ভাইয়ার মন জয় করতে। স্মৃতির কথায় তাচ্ছিল্য করে স্রুতি বলে উঠলো,
–যার মন বহু আগেই অন্য কেউ দখল করে নিয়েছে। তার মন নতুন করে কিভাবে আমি দখল করতে পারবো বল? যার পুরো পৃথিবী জুড়ে অন্য কেউ রাজত্ব করছে। তার রাজ্যের রাণী আমি কিভাবে হব? আমাকে যে সবাই শুধু রাজার বউ রাণী হিসেবেই চিনবে। আমি পরিচিতি নিয়ে কি করবো? যদি স্বামীর ভালোবাসাই না পাই? স্বামীর ভালোবাসা একটা মেয়ের জন্য অহংকার। একটা মেয়ের গর্ব। যার ভালোবাসা পেলে আরো দু’টো দিন বেশি বাঁচতে ইচ্ছে করে, সেই তো আমাদের প্রিয়জন। আমার প্রিয় মানুষের থেকে যদি, আমি ভালোবাসাই না পাই। তাহলে এমন প্রিয় মানুষ থাকার থেকে, না থাকা অনেক ভালো। ছোট ছোটোর মতো থাকবি। একদম আমাকে জ্ঞান দিতে আসবি না। আমার সাথে বেশি কথা বলতে আসলে, আম্মুকে বলে তোর ব্যবস্থা করবো। স্রুতির কথায় হতাশ হলো স্মৃতি। হতাশ হয়ে উঠে চলে গেল। বেলকনিতে গিয়ে দেখলো অভ্র রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো স্মৃতির জন্যই অপেক্ষা করছিল।
চলবে…..