তুমি_আমার_মুগ্ধতা #পার্ট:০৪ #Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

0
422

#তুমি_আমার_মুগ্ধতা
#পার্ট:০৪
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

২০.

“আপ্ আপনি দরজা বন্ধ করলেন কেন? আমি এই বিয়ে মানিনা। একদ্ এ্ একদম আমার কাছে আসবেন না বলে দিলাম।”

অর্ষা পা পিছুতে পিছুতে কথাগুলো বললো প্রান্তিক’কে। অর্ষা এক পা পিছুচ্ছে তো প্রান্তিক এক পা এগোচ্ছে। অর্ষা ভীত চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে প্রান্তিকের দিকে। না এইবার বুঝি আর রক্ষে নেই তার।

“বউউ..এইভাবে দূরে দূরে থাকলে আ’দ’র শেখাব কিভাবে তোমাকে?”

“আমি চাইনা আপনার ওই অ’স’ভ্য আ’দ’র। একদমম কাছে আসবেন না। খুব খা’রা’প হয়ে যাবে কিন্তু।”

“আচ্ছা তাই? তাহলেতো কি খা’রা’প হয় তা একটু দেখতেই হয়।”

অর্ষা অবস্থা বেগতিক দেখে, কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি বের করল। ছু’রি দেখিয়ে বললো,

“আমার কাছে আসলে একদম পে’টে ছু’রি বসিয়ে দিব। বুঝতে পেরেছেন?”

প্রান্তিক পা থামিয়ে একটা ডন্ট কেয়ার নিশ্বা’স ফেলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। তারপর ভাব নিয়ে বললো,

“ওকে ট্রাই বউ…”

“এই একদম আমাকে বউ বউ ডাকবেন না। য’ত্ত’স’ব অদ্ভুত ব্যাপার স্যাপার।”

“বউকে বউ ডাকব না তো শা’লী’কা ডাকব? আমার তো বোধহয় শা’লী’কা আছে তাইনা বউউ?”

কথায় কথায় প্রান্তিকের এই বউ বউ ডাক বিরক্ত লাগছে অর্ষার। প্রান্তিক দেখল অর্ষা কোনো একটা ভাবনায় মশগুল। তাই ধীরে ধীরে গিয়ে ধ’রে ফেলে অর্ষাকে। হাত থেকে ছু’রি’টা কেঁড়ে নেয় সে৷ তারপর অর্ষাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। অর্ষার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,

“আমার পে’টে ছু’রি বসিয়ে দিবে তাইনা? এখন..তোমার গা’লে আমার…..”

এইটা বলেই মিনমিনিয়ে হাসে প্রান্তিক। অর্ষা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে প্রান্তিকের দিকে। ‘কি বলছে এই ছেলে! মাথা টাথা বোধহয় ছেলেটার সত্যিই গেলো। কি অ’স’ভ্য লোক!”

২১.

“অর্ণব..প্রান্তিক’কে আমার জালে ফাঁ’সা’তে পারলাম কোথায়? এর আগেইতো প্রান্তিক অন্য মেয়েকে বিয়ে করে ফেলেছে।”

ফোনে কথাগুলো বলতেই ওপাশ থেকে অর্ণব বলে উঠল,

“লাখ লাখ টাকার মালিক প্রান্তিক চৌধুরী। আর তুমি তাকে ফাঁ’সা’তে পারলেনা বেবি? লিসেন, আমাদের টাকা দরকার টাকা। ওকে ফাঁ’সা’ও যেভাবেই হোক। ওর সব প্রোপার্টি নিজের হাতে আনো। এরপর আমরা দুজন এই সিটি থেকে বাইরের কান্ট্রিতে চলে যাব।”

কথাটি বলেই বি’শ্রী’ভাবে হেসে ফেলে টয়া আর অর্ণব।

২২.

“কিরে ছোট কিছু খাচ্ছিস না যে?”

বড় জা’য়ের কথার কোনো উত্তর দিলেন না মিসেস নিশিতা মির্জা। শাফওয়াত আর নিজের ছেলের দিকে তাকান তানিশা মির্জা। শাফওয়াত মায়ের দৃষ্টি বুঝতে পেরে নিশিতা মির্জাকে বললো,

“ছোট মা, খেয়ে নাও। নয়তো, সিক হয়ে পড়বে। আর তুমি সিক হয়ে পড়লে আমরা সবকিছু একা সামলাতে পারবনা।”

“কি করে খাই শাফওয়াত? অর্ষা কোথায়, কি করছে, কি খাচ্ছে? কেমন আছে? আদৌ ঠিক আছে কিনা, তাতো জানতে পারছিনা।”

নিজের চশমাটা খু’লে খাবার টেবিলে রাখলেন মিসেস নিশিতা মির্জা। চোখের আলতো পা’নি মুছে বিষন্ন ভাবে বলেন,

“অর্ষার বাবা যখন মা’রা যায়, তখন আমার বাবার বাড়ির মানুষ বলেছিল, ” ওখানে থেকে কি করবি? চলে আয়। তোর’ওতো একটা জীবন আছে। মেয়ের কথা ভেবে নিজের জীবন ন’ষ্ট করে দিবি? তা কেমন করে হয়? কিন্তু আমি সেদিন যাইনি। বলেছিলাম, ‘মির্জা বাড়ি’ই আমার সব। অর্ষাকে ঘিরেই আমার জীবন। কিন্তু আজ আমার সেই জীবন তো তার মায়ের মর্ম বুঝেনি শাফওয়াত।”

টেবিলে বসা সবাই চুপ। নিশিতা মির্জা ভুল কিছু বলেনি। সবচেয়ে খা’রা’প লাগছে আফ্রা’র। সে অর্ষার ভালো চাইতে গিয়ে কোনোভাবে, ক্ষ’তি করে বসলোনাতো?

আফ্রা’র মা মিসেস মির্জা নিশিতা মির্জার কাঁধে হাত রাখলেন। তারপর শান্তনা দিয়ে বললেন,

“অর্ষা ঠিক আছে ছোট। চিন্তা করিসনা। ওকে খোঁজার চেষ্টাতো আমরা করছি। ঠিক পেয়ে যাব।”

দূর্জয় মির্জাও বললেন,

“হ্যাঁ ভাবী। তুমি চিন্তা করোনা। তাছাড়া গার্ড’রা’তো দিন রাত এক করে দিচ্ছে অর্ষাকে খুঁজতে। কাজেই খুব তাড়াতাড়ি বাড়ির মেয়ে বাড়ি ফিরে আসবে। আফ্রা মনে মনে ভাবলো,

” নাহ, এখন বোধহয় একবার অর্ষার সাথে দেখা করতেই হয়।”

২৩.

অর্ণীক শুয়ে শুয়ে দেখছিল ভাইয়ের বিয়ের রিসিপশনের ডেকোরেশন কেমনভাবে করবে। সবগুলো থিম দেখছে একটাও তার মনের মতো হচ্ছেনা। এদিকে সময় একদম নেই বললেই চলে। হঠাৎ ফোন আসে তার ফোনে। ফোনের স্কিনে ভেসে উঠে, ‘মম’

অর্ণীক ভাবছে কল রিসিভ করবে নাকি করবেনা। ক্ষাণিক ভেবে কল ধরল। ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে বললো,

“তুমি কোথায় অর্ণীক? বন্ধুদের সাথে’ই কি সারা জীবন থাকবে? বন্ধু’রা তোমার জীবন পাড় করে দিবে? বিজনেসেও জয়েন করছনা। তোমাকে নিয়ে সংকটে পড়তে হবে দেখছি।”

“কাম অন মম, এইসব জ্ঞান শুনতে আর ইচ্ছে করছেনা। এর জন্যই ব্রো চলে এসেছে ও বাড়ি থেকে। এখন আমি ও বাড়িতে না গেলেই বেঁচে যায়।”

“কি! কি বললে তুমি?!”

আহানা চৌধুরী অবাক হয় ছেলের কথা শুনে। সাথে হ’তা’শও হয়। দুই ছেলের মধ্যে তার এই বিজনেস কতোটা দূরত্ব বাড়িয়ে দিচ্ছে!”

অর্ণীক হাঁফ ছেড়ে বেঁচে যায়, কল কে’টে দেওয়ার পর। সে আবার ফেইসবুকে ঢু’ক’লো। হঠাৎ চোখে পড়ে, একটা নীল লেহেঙ্গা পড়ার মেয়ের প্রোফাইল পিকচার। তবে মুখটা স্টিকার দিয়ে ঢা’কা। সে আইডিতে ঢু’কে ঘুরতে থাকে পুরোটা আইডি। সব পিক এই মুখে মাস্ক পড়া কম বেশ।

“ওয়াও..কি সুন্দর মেয়েটা।!”

অর্ণীক দেরি করেনা। মেসেজ দেয় মেয়েটিকে।

“হেই মিসেস বিউটিফুল গার্ল।”

২৪.

খাবার সেরে রুমে আসে আফ্রা। বসে বসে পড়ছিল সে। তখনি, মেসেজ আসে তার ফোনে। হাতে নেয় ফোনটা। ফোনের স্কিনে মেসেঞ্জারের মেসেজ দেখে সে। লেখা,

“হেই মিসেস বিউটিফুল গার্ল।”

ফিক করে হেসে ফেলে আফ্রা। ছেলেটা কি বোকা! আমাকে দেখে কি বিবাহিতা মনে হয়! আজব!। আফ্রা রিপ্লাই দেয়,

“মিসেস না, মিস হবে। আর আমি বিউটিফুল তা আমি জানি, বলতে হবেনা।”

সাথে সাথে সিন করে ছেলেটি। তারপর ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসে,

“সরি সরি..মিস…”

“আফ্রা, আফ্রা মির্জা।”

“ইয়েস মিস আফ্রা মির্জা। আমি অর্ণীক চৌধুরী।”

“তো? তো আমি কি করব?”

“প্রেম করবেন।”

২৫.

সকালের স্নিগ্ধ আলো চোখের উপর পড়তেই ছোট ছোট করে চোখ মেলে অর্ষা। কারো বু’কে আবদ্ধ পরখ করতেই লাফিয়ে উঠে সে। বিছানায় সেই সুদর্শন যুবকটাকে দেখে চমকে উঠে সে। তড়িঘড়ি করে নিজেকে পরখ করে। না, শাড়ি টারি সব ঠিকিই আছে। অর্ষা মাথায় হাত রেখে ভাবতে থাকে গতকাল রাতের ঘটনা।

গতকাল রাতে..
“বউ…এই জুসটা খেয়ে নাও। ভাল লাগবে। গ’র’মে বোধহয় তোমার ঠান্ডা কিছু খাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে। তুমি না বললেও আমি বুঝতে পারি।”

অর্ষা অবাক হয় ছেলেটার কথা শুনে। আসলেইতো..এখন তার সত্যিই আইস জাতীয় কিছু খেতে ভীষণ ইচ্ছে করছিল। ছেলেটা বুঝল কেমন করে? অর্ষার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে ছিল প্রান্তিক। সে যেনো অর্ষার মনের প্রশ্নটি শুনতে পেলো। চুলগুলো আয়নার সামনে গিয়ে পেছনে নিতে নিতে বললো,

“আই নো, আই নো, যে আমি ওভার ব্রিলিয়ান্ট। কাজেই অবাক হওয়ার কিছুই নেই৷ তাই তোমার মনের সব কথা জানা অস্বাভাবিক কিছু নয়।”

“নিজের ঢো’ল নিজে পে’টা’নো উচিৎ নয়।”

“তুমি কি খাবে? নাকি আমিই খেয়ে ফেলব বউ? যা গ’র’ম পড়েছে।”

অর্ষা চ’ট করে জুসটা নিয়ে নেই। এক ঢো’কে সম্পূর্ণ’টা শে’ষ করে সে। ব্যাস! এরপরই তার আর কিছু মনে নেই।

রাতের কথা ভাবতেই চিৎ কা র করে উঠে অর্ষা। অর্ষার চি ৎ কা রের শব্দে নড়েচড়ে উঠে প্রান্তিক। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,

“কি আজব! এখন কি ঘুমাতেও দিবেনা আমায়? সারারাত ঘুমোতে পারিনি।”

“কি! সারা রাত ঘুমোতে পারেননি মানে?”

চোখ ঢ’লে শুয়া থেকে উঠে বসে প্রান্তিক।

“সকাল সকাল কি শুরু করলে বউ? তোমার জন্য কি এখন শান্তিতে একটু ঘুমাতেও পারবনা?”

“এই সকাল সকাল আপনার এই বউ বউ ন্যাকামো ডাকা অফ করে বলুন, আমার সাথে গতকাল রাতে কি করেছেন? বলুনন..”

“আমার বউয়েরতো দেখছি আজকাল স্মৃতিশক্তি কম। ইতিমধ্যেই ভুলে গেলে?”

“বলুন…কি করেছেন?”

“কি আবার? রোমাঞ্চ।”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here