প্রেম_প্রেম_পায় #স্বর্ণালী_সন্ধ্যা পর্ব তেইশ

0
663

#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব তেইশ

২৩.
বেশ কিছুক্ষন ধরে ফায়াদের বুকে মাথা রেখে চুপচাপ বসে আছে অপরাজিতা। ফায়াদ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। চুল গুলো গুছিয়ে দিয়ে এবার বলল,
‘বাসায় যাবে না?’

বুকে মাথা রেখেই অপরাজিতা ছোট করে উত্তর দিল,
‘হুম’

ফায়াদ বলল,
‘চল আমি পৌছে দেই। তোমার কাজিন অনেকক্ষণ থেকে বাহিরে আছে.’

অপরাজিতা এবার মাথা তুলে সোজা হয়ে বসে বলল,
‘আপনার আজকে আর ডিউটি নেই?’

‘না আজ এই পর্যন্তই।’

তারা বের হলো হাসপাতাল থেকে। বাহিরে বের হয়ে দেখলো সামির একটা দোকানের সামনে দাড়িয়ে কোক খাচ্ছে। গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার সে। অপরাজিতা তাকে ডাকতেই সে অপরাজিতার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
‘হলো তোর?গরমে আমি শেষ!’

অপরাজিতা কানে ধরে স্যরি বলল।সামির এবার ভদ্র সেজে ফায়াদের সামনে গিয়ে হাত বাড়িয়ে বলল,
‘আসসালামুআলাইকুম।তখন সালাম দিতে ভুলে গিয়েছিলাম।আমি সামির হাসান।অপরাজিতার খালাতো ভাই।’

ফায়াদ হ্যান্ডশেক করে বলল,
‘আমি ড.ফায়াদ আহমেদ।অপরাজিতার—‘

সামির মুখের কথা কেড়ে নিয়ে দাত কেলিয়ে বলল,
‘জানি জানি। এই শয়’তানটার অনেক সাধনার একজন পুরুষ।’

অপরাজিতা সামিরের কথায় লজ্জা পেয়ে সামিরের দিকে চোখ গরম করে তাকালো।
ফায়াদ তাদের কান্ডে সামান্য হাসলো।ফায়াদ তাদেরকে লাঞ্চ করাতে চাইলো।সামির বলল,
‘লাঞ্চ করে আসছি ভাইয়া। এখন বাসায় না গেলে আমার মা আমাকে বাসা থেকে বের করে দিবে৷ এই মেয়েটার জন্য আমার মিথ্যা বলে ওকে এখানে আনতে হয়েছে।’

ফায়াদ অপরাজিতার দিকে তাকালো। ফায়াদের চাহনি দেখে অপরাজিতা কৈফিয়ত দেওয়ার মতো করে বলল,
‘আমার দোষ নাই।আপনার দোষ। আমার আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করতেছিল এটা তো মোটেও আমার দোষ না তাই না?’

ফায়াদ অপরাজিতার কথা শুনে চোখ ছোট ছোট করে তাকালো তার দিকে। তা দেখে অপরাজিতা স্বীকার করে বলল,
‘হ্যা হ্যা আমারই দোষ!’

বলে গাল ফোলাল সে। ফায়াদ কিছু বলল না সামিরের সামনে। তাদেরকে বলল একটু দাড়াতে। ফায়াদ তাদের পৌঁছে দিবে।গাড়ি নিয়ে আসার সময় সাথে করে আইসক্রিম নিয়ে এসেছে, আরো হাবিজাবি খাবার এনেছে ফায়াদ। তাদের হাতে দিয়ে বলল খেতে। আর বাসার বাচ্চা দের দিতে বাকি গুলো।
অপরাজিতা আইসক্রিম শেষ করে একটা চকলেট খাচ্ছিল। কি মনে করে ফায়াদকে সাধলো চকলেট টা। ফায়াদ বলল সে চকলেট খায় না৷
তাদের পৌছে দিতেই সামির আগে আগে নামলো গাড়ি থেকে।
ফায়াদ অপরাজিতার দিকে ঘুরে বলল,
‘বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুমাবা এখন। পরে সন্ধ্যার টাইমে উঠবা। যাও।এভাবে এই গরমের মধ্যে আর বের হবে না।’

অপরাজিতা মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি দিল। তারপর ফায়াদকে বলল,
‘আপনারা কয়টা বাজে আসবেন?’

‘আ–‘

বলতে পারলো না। তার আগেই অপরাজিতা ফায়াদের মুখে চকলেট পুরে দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে বাসার ভিতর দৌড় মারলো।ফায়াদ মুখ বন্ধ করে চোখ মুখ কুচকে ফেলল।মিষ্টি তার একদমই পছন্দ নয়। ফাজিল মেয়েটা জানে এজন্যই তাকে চকলেট টা খাইয়েই ছাড়লো। তার নিষেধ করা সত্ত্বেও। ফায়াদ চকলেট টা ফেলে গাড়ি স্টার্ট দিল বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে।মনে মনে বলল,
‘এই মেয়ে আজীবন ফাজিলই থাকবে।’

অপরাজিতা বাসার ভিতর ঢুকে হাসছে। সে হাতে রেখেছিল চকলেট। সুযোগ বুঝে কাজে লাগালো।বাসায় প্রবেশ করতেই দেখলো মা, খালা সোফায় বসে আরাম করছে। অনেক কাজ করেছে তারা। আবার হয়তো কতোক্ষন পর ব্যস্ত হয়ে যাবে।
অপরাজিতা তার রুমে যেতেই দেখলো বিছানার অবস্থা ১২টা। বিছানায় আবির, সামিয়া বসে জিনিসপত্র এলোমেলো অবস্থা। সে গিয়েই আবিরের মাথায় চাটি দিয়ে বলল,
‘শ্রদ্ধেয় ছোট ভাই জান! আপনি আমার রুমে কি করেন?আর রুমের এই অবস্থা কেন করেছেন?মানা করেছিলাম না?’

আবির চিপস এর প্যাকেট খুলতে খুলতে বলল,
‘আপু সামিয়া আপু বলছে তোমার রুমে থাকবে। আমি মানা করছিলাম। শুনে নাই। আমাকেও নিয়ে আসছে।’

সামিয়া বলল,
‘আপু তোমার রুমটা ঠান্ডা তাই।’

অপরাজিতা গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তার রুমটা আসলেই ঠান্ডা। এজন্য সে এই রুম কখনো কাউকে দেয় নি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
‘আচ্ছা থাক কিন্তু বিছানা ঠিক কর!’

বারান্দা থেকে আওয়াজ আসতেই বারান্দায় গিয়ে দেখলো সামির সেখানে ফ্লোরে বসে আছে।
অপরাজিতা কোমরে হাত দিয়ে বলল,
‘এখন কি মহাশয় আপনিও এখানে দখল করবেন?’

সামির মেকি হেসে বলল,
‘এখানে বাতাস রে। অন্য রুমগুলা গরম।’

অপরাজিতা কপাল চাপড়ালো। তার রুমে বেশি মানুষের আনাগোনা তার পছন্দ নয়৷ কিন্তু কিছু করার নেই। সেও বসলো সামিরের পাশে। সামির মোবাইলে গার্লফ্রেন্ড এর সাথে চ্যাটিং করছিল। অপরাজিতাকে বসতে দেখে মোবাইল টা পাশে রেখে দিল।
অপরাজিতা তা দেখে বলল,
‘এটা কতো নাম্বার?’

সামির মাথা চুলকে হেসে বলল,
‘৮ নাম্বার।’

অপরাজিতা অবাক হলো না। এর আগের বার যখন দেখা হয়েছিল তখন ৫ নাম্বার চলছিল।সামির সিরিয়াস রিলেশনশিপ এ থাকে না। মেয়েরা তাকে প্রপোজ করে আর সে এক্সসেপ্ট করে। তার মতবাদ মেয়ে গলোকে কষ্ট দিতে মন চায় না তার।অপরাজিতা এটা শুনে জিজ্ঞেস করেছিল,
‘ব্রেকাপ যখন করিস তখন তারা কষ্ট পায় না?’

সামির ভাবলেশহীনভাবে বলেছিল,
‘না ব্রেকাপ তারা নিজেরাই করে।’

তারপর থেকে অপরাজিতা আর মাথা ঘামায় না সামিরের সো কলড রিলেশনশিপ নিয়ে।
সামির হলো একজন বন্ধুর মতো ভাই অপরাজিতার। তাদের দেখা কম হলেও যখন দেখা হয় তাদের দেখে বুঝাই যাবে না যে তারা অনেকদিন পর দেখা করেছে।
সামির আকাশের পানে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘ ভালোবাসায় কিভাবে জড়ালি তুই?আমাকে তো বলতিস তুই ছেলেদের ঘুরাবি তোর পিছে। এখন শুনছি তুই ঘুরেছিস তাকে পাওয়ার জন্য।’

অপরাজিতা ফিক করে হেসে দিল। পুরোনো কথা মনে পড়ে গিয়েছে তার। সে বলল,
‘ প্রেমে যে কিভাবে পিছলে পড়লাম। হায় আল্লাহ!’

‘কিভাবে?’

‘শুন বলি। আমার সাথে উনার দেখা হয় এক বিয়ে বাড়িতে। উনি তখন আরো ইয়াং ছিল। বিশ্বাস কর এতো সুন্দর কোনো পুরুষ লাগে নি আমার কাছে। উনার লুক, কথাবার্তা, মুখের এক্সপ্রেশন সবই আমাকে মুগ্ধ করে দিয়েছিল। আর বুঝিসই তো আরো ছিল কিশোরী বয়স আমার। ক্রাশ নামক বাশ টা খেয়েই বসেছিলাম উনার উপর। তারপর তো উনার সাথে ছোট খাটো একটা ঝগড়া করেছিলাম। তবুও উনাকে ভালো লাগা বন্ধ হয় নি। ভাবতাম ইশ আরেকবার যদি দেখা হয়, আরেকবার যদি দেখা হয়! তার গম্ভীর সেই পুরুষালি কন্ঠ বার বার শুনতে ইচ্ছা করত।ওই বয়সের মেয়েরা বুঝি এমনই হয় ক্রাশ খেয়ে মাতাল অবস্থা।’

বলে হাসতে লাগলো অপরাজিতা। সামির অপরাজিতা দিকে তাকিয়ে বলল,
‘এটা তো নি’ব্বি টাইপের হয়ে গেল!’

অপরাজিতা হেসে হেসে বলল,
‘হ্যা আমারও এখন এমনই লাগে। তারপর দ্বিতীয় বার উনার সাথে স্কুলে দেখা হয়৷ তখনও ঝগড়া হয়। তবে সেবার ঝগড়া মিটমাটও হয়।তারপর বেশ কয়েকবার দেখা হয় বিভিন্ন ফাংশনে। আমি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম। ভালো লাগতো। অসম্ভব ভালো লাগতো। উনাকে নিয়ে এতোটা ভাবা শুরু করে দিয়েছিলাম যে উনাকে না ভাবলে আর ভালো লাগতো না।তাকে নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ভাবা থেকেই ভালোবাসার সূচনা। আহামরি কোনো সিনেমাটিক কিছু ছিল না যে আমাকে বাচিয়েছে আমি প্রেমে পড়েছি বা তার একটা ভালো গুণ দেখে প্রেমে পড়েছি।আমি তাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে তাকে ভালোবেসে ফেলেছি৷ সে আমার সাথে দুটো কথা ভালোভাবে বললে মনে হতো ইশ আর কি চাই! তাকেই চাই শুধু।তার পর ঠাসঠুস বলে দিয়েছি আমি তাকে ভালোবাসি। সে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু আমি হাল ছাড়ি নি।তারপর তো এখন দেখতেই পারছিস।’

সামির অবাক হয়ে বলল,
‘তুই পারিসও বটে।’

অপরাজিতা হাসছে। সামির অপরাজিতা মাথায় টোকা দিয়ে বলল,
‘তুই দেখতে ছোট খাটো হলেও তুই কিন্তু মোটেই বাচ্চা মানুষ নয়। ভাইয়ার কাছে গেলে বাচ্চা হয়ে যাস কেন?’

অপরাজিতা সামিরের প্রশ্ন শুনে হাটু ভাজ করে বসে সামিরের কাধে মাথা ঠেকিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘তাকে আমি ভালোবাসি। তার সামনে আমি নিজেকে ম্যাচুর হিসেবে উপস্থাপন করতে পারিনা। সে শাসন করলে আমার ভালো লাগে। আর আমার বাচ্চা স্বভাবের জন্যই কিন্তু আমি এতো আদুরে সবার কাছে।দরকার ছাড়া ম্যাচুরিটি দেখাবো কি করতে?’

সামির মুখ টিপে হেসে বলল,
‘হ্যা যেমন আজ দেখালি। ইয়ানা আপুর হাত মুচড়ে!’

অপরাজিতা চোখ উল্টিয়ে বলল,
‘শাট আপ!ওই পে’ত্নীর নাম নিস না’

ফায়াদ বাসায় পৌছাতেই রাফিয়া পেছন থেকে গলা চেপে ধরলো ফায়াদের। রেগে বলল,
‘তুমি দেশে এসেছো! আমার সাথে দেখা করো নি কেন?’

রাফিয়া ভালোভাবে ধরতে পারে নি ফায়াদ কে।ফায়াদ রাফিয়ার হাত ছুটিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
‘আমি ফায়াদ!’

রাফিয়া জিবে কামড় দিয়ে বলল,
‘স্যরি ভাইয়া!’

তখনি দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে করতে ফারাজ বলল,
‘এই রাফু! আমি এখানে।’

শুনে রাফিয়া পিছনে ঘুরে ফারাজকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ভাইয়া!! তোমাকে কতো মিস করেছি!’

তা দেখে রিজু হতাশার সুরে বলল,
‘হায়রে নাটক! একটু আগে গলা টিপে ধরতে চাইছিল আর এখন গলা জড়িয়ে ধরে।’

ফারাজ হাসছে রিজুর কথা শুনে। সোফায় বসে আস্তে করে রিজুর কানে বলল,
‘ইহা হচ্ছে নারী জাতি। কি করবে নিজেও জানে না।’

রাফিয়া বলল,
‘তোমরা কানাকানি করো কেন?’

রিজু শুদ্ধ করে দিয়ে বলল,
‘কানেমুখে হবে।’

রাফিয়া ভেঙচি কেটে বলল,
‘একই’
তারপর ফারাজের উদ্দেশ্য দুঃখী চেহারা নিয়ে বলল,
‘তুমি আমার সাথে দেখা করো নি কেন?’

রিজু ফারাজের পাশ থেকে বলল,
‘সবই গিফট নেওয়ার ধান্দা।’

রাফিয়া চোখ কটমট করে তাকালো রিজুর দিকে।
এরই মধ্যে ফায়াদ ফ্রেশ হয়ে বসার ঘরে এসে উপস্থিত। ফারাজকে এভাবে বসে থাকতে দেখে বিরক্তিকর শব্দ করে বলল,
‘ফ্রেশ হচ্ছিস না কেন?’

ফারাজ মাথাটা আরেকটু এলিয়ে বলল,
‘যাচ্ছি’

ফায়াদ কোনো কথা না শুনে ফারাজকে ঘাড় ধরে দাড় করিয়ে গম্ভীরমুখে বলল,
‘এখনি যা’

ফারাজ একবার ফায়াদের দিকে তাকিয়ে রুমের দিকে যেতে যেতে তার মায়ের উদ্দেশ্যে চিতকার করে বলল,
‘মা!!তোমার ছেলেকে ডাক্তারি কে পড়াইতে বলছিল!এখন শুধু অত্যাচার করে।’

ফারাজের কথা শুনে আখি বেগম দূরে থেকেই মুচকি হাসলেন।রাফিয়ার আম্মু বললেন,
‘আপা ঘরটা আবার আগের মতো হয়ে গিয়েছে।’

আখি বেগম বললেন,
‘এভাবেই থাকুক আজীবন।’.

তখন নীতি এসে আখি বেগমকে বলল,
‘মণি দেখোতো কোনটা পড়বো আজ।’

এক হাতে কুর্তি আরেক হাতে থ্রিপিস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ২ দিন আগে মার্কেট গিয়ে বেশ কাপড় কিনেছে সে। আখি বেগম কুর্তি পছন্দ করে দিলেন।কুর্তি নিয়ে আবার রুমে ফেরত গেল।
নীতিকে দেখে রাফিয়ার মা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন।
আখি বেগম বুঝতে পেরে বললেন,
‘নীতি। ফারাজের অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিল।’

রাফিয়ার মা ওওও বলে নীতির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। তার দৃষ্টি দেখে আখি বেগম বললেন,
‘আমি জানি তুমি কি ভাবতেছো।ভুলে যাও। আমি আমার ছেলের মতের বিপরীতে কিছু করবো না।’

তিনি আর কিছু বললেন না।

———-

সন্ধ্যার পর পর অপরাজিতাদের বাসা ভীষণ ব্যস্ত হয়ে গেল। ফায়াদরা এসে পড়েছে প্রায়।অপরাজিতার বাবা গিয়েছে তাদের বাহির থেকে আনতে। তারা বাসায় প্রবেশ করতেই রামিসা বেগম অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। কে ফায়াদ আর কে ফারাজ বার বার গুলিয়ে যাচ্ছে তার। ফারদিন আহমেদ, আখি বেগম, রাফিয়ার আম্মু, ফায়াদ, ফারাজ, নীতি, রিজু এবং রাফিয়া এসেছে আজ। তারা সবাই বসার ঘরে বসলো।ফায়াদ আজ পড়েছে স্কাই ব্লু শার্ট। সে সোফায় বসলো তার বাবার পাশে। বসে আশে পাশে চোখ বুলালো একবার।তা দেখে রাফিয়া ফারাজের কানের কাছে গিয়ে বলল,
‘শেষ পর্যন্ত আমার স্কুলের সিনিয়র আপুকে পটাইলো।’

ফারাজ আবার রাফিয়া কে বলল,
‘তোর সিনিয়র আপু আমাদের অনেক জুনিয়র ‘

তারা ফিসিফিস করে কথা বলার মধ্যেই রামিসা বেগম বললেন,
‘রাফিয়া এবং নীতি তোমরা দুজন চাইলে অপরাজিতার কাছে যেতে পারো।’

আখি বেগম বললেন,
‘হ্যা তোমরা অপরাজিতার কাছে যাও।’

রাফিয়া ফারাজকে ভেঙচি কেটে উঠে গেল। নীতি এবং রাফিয়া গেল অপরাজিতার রুমে। রুমে গিয়ে তারা দুজনে একসাথে বলে উঠলো,
‘মাশাআল্লাহ!’

অপরাজিতা শব্দ শুনে তাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। খানিকটা লজ্জাও পেলো। এগিয়ে এসে নীতি ও রাফিয়া কে জড়িয়ে ধরলো।রাফিয়া জড়িয়ে ধরে বলল,
‘তোমাকে ভাবি হিসেবে পেয়ে আমি কি যে খুশি বুঝাতে পারবো না আপু।’

অপরাজিতা মাথা নিচু করে হাসলো। নীতি অপরাজিতা গাল টেনে বলল,
‘তোমাকে দেখে তো ফায়াদ ভাইয়ার মাথা ঘুরে যাবে।’

অপরাজিতা লজ্জা পেয়ে বলল,
‘ইশ কি যে বলো না আপু!’

নীতি সম্পর্কে ফায়াদ অপরাজিতাকে বলেছে। তাকে পরিচয় ও করিয়ে দিয়েছে। অপরাজিতা এখন নীতিকে খুব পছন্দ করে। তার কাছে নীতিকে একদম বোন ম্যাটারিয়াল লাগে।
নীতি বলল,
‘হুম হুম সত্যি বলি গো কিউটি।’

অপরাজিতা দুষ্ট হেসে বলল,
‘তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। রাস্তা ঘাটে কাউকে হার্ট অ্যা’টাক ফ্যাটাক দিয়ে এসেছো নাকি?’

বসে বসে গল্প জুড়ে দিল ৪ টা মেয়ে।
অপরাজিতার কথা শুনে অবাক হচ্ছে আবার রাফিয়ার কথা শুনে হাসিতে লুটপাট খাচ্ছে।এ যেন এক আড্ডা বসে গেল।সামির এসে বলল,
‘তোমরা অপরাজিতাকে নিয়ে এসো। সবাই ডাকছে।’

আড্ডা ভেঙে গেল। অপরাজিতাকে নিয়ে সব গুলো মেয়ে সুন্দর ভাবে বের হলো রুম থেকে।

আজ ফায়াদের যেন বড্ড অধৈর্য লাগছে। বার বার আশে পাশে তাকাচ্ছে। মন যেন কিছু একটা দেখতে চাইছে।নিজের উপর অবাক হচ্ছে সে। মেয়েটা তাকে পাগল করে দিল? তাকে দেখার জন্য ছটফট করছে ভিতরটা। অথচ আজ দুপুরেই দেখা হয়েছে।বুকের মধ্যে নিয়ে বসে ছিল মেয়েটাকে তবুও যেন মনে হচ্ছে অনেকটা সময় ধরে দেখে না।
আশে পাশে আরো একবার তাকাতে গিয়ে চোখ আটকে গেল আকাশি শাড়ি পড়া মেয়েটার দিকে। বুকের মধ্যে হৃদপিণ্ডটা যেন একবার থেমে গিয়ে আবার দ্রুতগতিতে চলতে শুরু করল।মেয়েটাকে আবারও বুকের মধ্যে চেপে ধরতে ইচ্ছে করছে। এ কী হলো ফায়াদের।অনুভূতি সামলাতে পারছে না সে। ফাকা ঢোক গিলল সে।

ফারদিন আহমেদ ছেলের দিকে তাকিয়ে গলা খাকারি দিলেন। প্রথম বারের মতো ফায়াদ তার বাবার সামনে লজ্জা পেল। লজ্জা পেয়ে চোখ নামালো সে। অপরাজিতা দেখেছে ফায়াদের সেই দৃষ্টি যখন সে বসার ঘরে প্রবেশ করে।
অপরাজিতাকে ফায়াদের পাশে বসালেন আখি বেগম। ফারদিন আহমেদ ফায়াদের পাশ থেকে উঠে ফারাজের পাশে বসলেন। অপরাজিতা মাথা নিচু করে হাল্কা হাসি নিয়ে বসে আছে। রাফিয়ার আম্মু বললেন,
‘মাশাআল্লাহ। আমার ফায়াদের সাথে কতো সুন্দর লাগছে অপরাজিতাকে।’

তা শুনে ফায়াদ আবার আড়চোখে তাকালো অপরাজিতার দিকে। তার যেন শুধু দেখতেই ইচ্ছে করছে অপরাজিতাকে।
ফায়াদকে আড়চোখে তাকাতে দেখে অপরাজিতা সবার কথা বলার এক ফাকে আস্তে করে ফায়াদকে খোচা মেরে বলল,
‘কি ব্যাপার! আজ ডাক্তার সাহেবের নজর দেখি আমার থেকে সরছেই না।’

ফায়াদ মাথা নিচু করে হালকা হেসে সেও সবার আড়ালে ফিসফিস করে বলল,
‘কেউ একজনকে দেখে আমারও আজ প্রেম প্রেম পাচ্ছে।তাই নজর সরাতেই পারছি না।’

অপরাজিতা চোখ বড় বড় করে তাকালো ফায়াদের দিকে। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে অন্যদিকে তাকিয়ে মুখ চেপে হেসে দিল।ইশ এই অনুভূতি টা এতো সুন্দর কেন?ভালোবাসার মানুষকে পেতে চললে এমন অনুভূতি হয় বুঝি?

এদিকে ১৪ বছরের কিশোরী সামিয়া ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে ফারাজের দিকে। রাফিয়া তা লক্ষ্য করে সামিয়ার কাছে গিয়ে তার পাশে দাড়িয়ে আস্তে করে বলল,
‘এভাবে তাকায় আছো কেন আমার ভাইয়ের দিকে?’

তাদের দিকে কারো নজর নেই। সবাই কথা বলায় ব্যস্ত।সামিয়া বলল,
‘দুলাভাই আর তার ভাই দুজনেই কি সুন্দর!আচ্ছা দুলাভাই তো আপুর। আরেকজন কি সিঙ্গেল?’

রাফিয়া বুঝলো এই কিশোরীর মনে লাড্ডু ফুটছে। ক্রাশ নামক জিনিসটা খেয়ে বসে আছে সে তাই বয়সও দেখছেনা। কিন্তু এরে তো এগুলো থেকে বাহির করতে হবে। রাফিয়ার মাথায় শয়’তান চাপলো।সে দুষ্ট হেসে নীতিকে দেখিয়ে বলল,
‘ওই যে সুন্দরী আপু টাকে দেখছো? সে ফারাজ ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড। তাই সে সিঙ্গেল নেই।’

শেষ কথাটা দুঃখি ভাব করে বলল রাফিয়া। সামিয়ার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সে আসলেই খুব দুঃখ পেয়েছে।সামিয়াকে সেখানে রেখে রাফিয়া নিজের আগের জায়গায় ফিরে এলো। সে তার জায়গায় দাড়াতেই শুনতে পেল,
‘বাহ আপনি তো খুব সুন্দর নাটক করেন!’

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here