তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম #তাহিরাহ্_ইরাজ #পর্ব_৩৭ ( তূর্ণয়া স্পেশাল )

0
544

#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৩৭ ( তূর্ণয়া স্পেশাল )

মেয়েটির মুখশ্রীতে লাজুকতা। দৃষ্টি নিবদ্ধ সম্মুখে হাঁটু গেড়ে বসে থাকা মানবের পানে। তার কোমল দু’টো হাত আবদ্ধ তূর্ণ’র হাতের মুঠোয়। নয়নে নয়ন রেখে প্রেমিক পুরুষটি বলতে লাগলো। তার পুরুষালি ভারিক্কি স্বরে উচ্চারিত হতে লাগলো তাহসান এর গানের কিছু শব্দমালা,

” তুমি ভাবনায় ডুবে থাকা
দূর আকাশের নীলিমায়
তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম
মিশে থাকা গভীর মুগ্ধতায়

তুমি এলে মন ছুঁলে
অন্যরকম হয়ে যাই
ইচ্ছে গুলো জড়োসড়ো
ভালোবাসি বলে তাই

আমার আমি বলতে তোমায় জানি
ঐ আকাশ জানে তুমি আমার কতখানি। ”

কোমল হাতের ত্বকে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো তূর্ণ। আঁখি জোড়া নিমীলিত হলো মেয়েটির। রূক্ষ হাতের মুঠোয় পেলব হাত দু’টো আঁকড়ে ধরে উঠে দাঁড়ালো তূর্ণ। এগিয়ে এলো সন্নিকটে। দু’জনার মধ্যকার দূরত্ব প্রায় শূন্যের কোঠায়। একান্ত জনের উপস্থিতি অনুভব করে নেত্র মেলে তাকালো দুয়া। চোখে চোখ রেখে মানুষটি বলতে লাগলো,

” তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম আমার
যারে সযতনে আগলে রেখেছি অজস্র কাল।
হবে কি আমার মাইরা?
রাঙাবে কি নিজেকে আমারই রঙে?
কথা দিচ্ছি ভালোবাসার রঙধনুতে রাঙাবো তোমায়
আগলে আগলে রাখবো আগামী সহস্র কাল। ”

মেয়েটির আঁখি জোড়া নোনাজলে পূর্ণ হলো। চোখেমুখে তৃপ্তির আভা। নিজে থেকে আরেকটু এগিয়ে এলো দুয়া। ঘুচিয়ে দিলো সমস্ত ব্যবধান। নিজের হাত দু’টো মুক্ত করলো স্বামীর বাঁধন হতে। দু কপোলে দু হাত রেখে মিহি স্বরে বলতে লাগলো,

” অপেক্ষায় রয়েছি বহু পূর্ব হতে। আর যে সহে না প্রিয়। আমি তো তোমারই। তবে কিসের এত দ্বিধা? আমায় রাঙিয়ে তোলো তোমারই রঙে। আমি যে শুধু তোমাতেই রঙিন হতে চাই। ”

সম্মতি পেয়ে গেল মানুষটি। মুখশ্রীতে ছড়িয়ে পড়লো ঝলমলে আভা। আর বিলম্ব সইলো না। তৎক্ষণাৎ টেনে নিলো তার মাইরা’কে। দু হাতের মধ্যিখানে আবদ্ধ করে নিলো। দুয়াও সযতনে লেপ্টে গেল মানুষটির সুঠাম বক্ষপটে। দু হাতে আঁকড়ে ধরলো পৃষ্ঠদেশ। মুখ লুকালো গলদেশে। তূর্ণ’র বাঁ হাতটি দুয়া’র পিঠে লেপ্টে তো আরেক হাতে আবদ্ধ ঘাড়। অর্ধাঙ্গীর কাঁধে লুকানো তার মুখশ্রী। কাঁধে উষ্ণ জলের ছোঁয়া পেয়ে ঘাবড়ে গেল মেয়েটি। নিজেকে সরিয়ে নিলো। বাহুবন্ধনে আবদ্ধ থেকেই দু হাতের আঁজলায় ভরে নিলো অর্ধাঙ্গের মুখখানা। লক্ষ্য করলো মানুষটির নেত্রে নোনাজল। নোনাজল থাকবে না? তার এত বছরের হৃদয়ে লুকানো প্রেম যে আজ স্বার্থক। পূর্ণতার পথে। আবেগী হয়ে পড়লো দুয়া। এই একটি মানুষের ভালোবাসার পরিমাণ এতটাই প্রশস্ত যে তা মাপা কঠিন। তার ভালোবাসার সামনে দুয়া অতি নগণ্য। সাধারণ। দুয়া আজ স্বার্থক। ভাগ‌্যবতী। এই প্রেমিক পুরুষের ভালোবাসায় সিক্ত তার তনুমন। আর মাত্র কিয়ৎক্ষণ। অতঃপর তূর্ণ’র ভালোবাসায় রাঙা হতে চলেছে সে!

দুয়া স্বামীর অবস্থা অনুধাবন করতে সক্ষম হলো। নিজেকে এগিয়ে নিলো একটুখানি। ললাটে ছুঁয়ে দিলো কোমল ওষ্ঠ। তূর্ণ হৃদয়ের অন্তঃস্থল হতে পবিত্রতম ছোঁয়াটুকু উপলব্ধি করলো‌। নিজেও দু হাতের আঁজলায় ভরে নিলো মাইরা’র মুখখানি। দু ভ্রুয়ের সন্ধিস্থলে ছুঁয়ে দিলো ওষ্ঠ। নিম্নে ধাবিত হলো ওষ্ঠ। দু নেত্রপাতায় একে একে ছুঁয়ে দিলো। সুডৌল নাকেও ছোঁয়া লেপ্টে গেল। অতঃপর ওষ্ঠ আরো নিম্নে নেমে এলো। কোমল ওষ্ঠের উপরিভাগে মানুষটির তপ্ত প্রশ্বাস। শিউরে উঠলো দুয়া। দু হাতে আঁকড়ে ধরলো অর্ধাঙ্গের কাঁধ। তাতেই বেসামাল হলো পৌরুষ চিত্ত। নিভৃতে আরো সান্নিধ্যে এলো। ঘুচে গেল সবটুকু দূরত্ব। সন্ধি হলো অধরে অধরে। আঁখি জোড়া মুদিত করে দুয়া আঁকড়ে ধরলো অর্ধাঙ্গের গলদেশ। তূর্ণ’ও আগলে নিলো তার মাইরা’কে।

অধর সন্ধি বিচ্ছেদ শেষে লাজুক মেয়েটি মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়ালো। ঘন শ্বাস পড়ছে তার। মানুষটির অধরকোলে লেপ্টে তৃপ্তির আভা। সে এক পা দু পা করে দুয়া’র পানে অগ্রসর হতে লাগলো। তা অনুধাবন করে সরে গেল দুয়া। সেথা হতে সরে যাওয়ার উদ্যোগ নিতেই থমকে গেল। বাঁ কাঁধে অনুভব করলো শক্তপোক্ত হাতটি। তাকে থামিয়ে দিলো তূর্ণ। এগিয়ে এসে ঘুচিয়ে দিলো মধ্যকার দূরত্ব। মানুষটির বক্ষদেশে মিশে কোমল কায়া। তূর্ণ’র ডান হাতটি আস্তে ধীরে দুয়া’র উদরে স্থাপিত হলো। অর্ধাঙ্গিনীর ডান কাঁধের উন্মুক্ত অংশে অঙ্কন করতে লাগলো ওষ্ঠ স্পর্শ। শিহরিত মেয়েটি উদরে স্থাপিত হাতটি আঁকড়ে ধরলো। মুদিত হয়ে এলো নেত্রপল্লব।

শুভ্র বিছানায় শায়িত দুয়া। বিপরীতে উপস্থিত মানুষটি। ললাটে চুমু এঁকে দিলো তূর্ণ। নে.শাক্ত স্বরে বলতে লাগলো,

” মাইরা! আমার মাইরা। জানো কেন তোমায় ডাকি এ নামে?”

লাজে রাঙা মেয়েটির আঁখি যুগল নিমীলিত। কিচ্ছুটি বললো না সে। কর্ণে অনুভব করলো উষ্ণ শ্বাস।

” কেননা তুমি আমার প্রিয়তমা। বাংলায় প্রিয়তমা। আরবিতে মাইরা। আমার হৃদয়ে লুকানো প্রেম। ”

কর্ণপাতায় ঠোঁটের ছোঁয়া এঁকে দিলো তূর্ণ। সময়ের সঙ্গে ঘুচে যেতে লাগলো সবটুকু দূরত্ব। পরিপূর্ণতা পেল আজ তূর্ণ’র হৃদয়ে লুকানো প্রেম। দুয়া’তে নিমজ্জিত হলো মানুষটি। রাত্রি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একত্রিত হলো দু’জনে। তূর্ণ’র ভালোবাসায় রাঙা হলো দুয়া।

আদিত্যর কিরণে আলোকিত ধরনী। নিজস্ব ফ্লাটের কক্ষে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে নিশাদ। মন খারাপের মেলা বসেছে তনুমনে। গতকাল তাকে হসপিটাল হতে ডিসচার্জ করা হয়েছে। কয়টা দিন সে শুধু অপেক্ষার প্রহর গুণে গেছে। মন বলেছে এই বুঝি এলো নি ষ্ঠু র মেয়েটি। তার সনে সাক্ষাৎ হবে। ভালো লাগায় ছেয়ে যাবে অন্তঃস্থল। কিন্তু না। এলো না মেয়েটি। তার সনে দেখা তো দূরের কথা। বিন্দুমাত্র আলাপণ অবধি হলো না। হবে কি করে? সেই নি ষ্ঠুর রমণীর হৃদয়ে তো তার ঠাঁই নেই। সে তো সম্পর্কে শুধুমাত্র বড় ভাইয়ের বন্ধু। এমন জনের জন্য কেউ বুঝি উতলা হয়? হয় না তো। তবে সে কেন উতলা হবে? না হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। তবুও এই স্বাভাবিক বিষয়টি কেন মানছে না হৃদয়! কেন ছু*রিকাঘাতে ক্ষ তবিক্ষত হচ্ছে অন্তঃপুর? কেন? জানা নেই তার। মনটা আরো খারাপ হলো। সবটা অসহ্য, বিরক্তিকর লাগছে। কিচ্ছুটি সহ্য হচ্ছে না। বিরক্ত হয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো নিশাদ। পা বাড়ালো ডাইনিংয়ে। খিদে পেয়েছে খুব। সকাল থেকে অভুক্ত যে।

উন্মুক্ত বেলকনিতে রাখা চেয়ার। তাতে বসে তূর্ণ। তার বুকে পৃষ্ঠদেশ ঠেকে মাইরা’র। দু’জনে উষ্ণ চাদরের অন্তরালে। মেয়েটির এলোকেশ নিয়ে দুষ্টুমিতে মত্ত তূর্ণ। কখনো চুলগুলো কাঁধ হতে সরিয়ে অধর ছুঁয়ে দিচ্ছে। কখনোবা অপরিপক্ক হাতে চুলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বেনুনি করার চেষ্টা করছে। মেকি বিরক্তি প্রকাশ করলো দুয়া।

” উফ্! কি করছো চুল নিয়ে? লাগছে তো। ”

” খুব লেগেছিল? ”

কণ্ঠস্বরে কেমন ভিন্নতা। দুয়া ডান কাঁধে মুখখানি এনে স্বামীর পানে তাকালো। মানুষটির চোখেমুখে এখন দুষ্টুমির ছাপ। সবটা বোধগম্য হতেই লালিমায় আচ্ছাদিত হলো মুখশ্রী। দৃষ্টি সরিয়ে মৃদু স্বরে বললো,

” বেশরম পুরুষ! ”

সশব্দে হেসে উঠলো তূর্ণ। দুয়াকে গাঢ় আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে বললো,

” বিবিজান। পৃথিবীর সকল পুরুষই তার অর্ধাঙ্গীর কাছে বেশরম। বেলাজ। নইলে মানবসভ্যতা এগোবে কি করে? হুঁ?”

লাজে রাঙা মেয়েটি উদরে রাখা হাতে চিমটি কাটলো। ক্ষীণ স্বরে বললো,

” ইশ্! থামবে তুমি? ”

কর্ণে অধর ঠেকিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো তূর্ণ,

” শুরু করার পূর্বেই থামতে বলছো? তবে কি ইনিয়ে বিনিয়ে শুরুয়াতের ইশারা দিলে? ”

আর সহ্য করা সম্ভব হলো না। লাজুক মেয়েটি তড়িঘড়ি করে উঠতে চাইলো। কিন্তু বাঁধাপ্রাপ্ত হলো তৎক্ষণাৎ। ওকে নিজ বাহুডোরে আবদ্ধ করে রেখেছে মানুষটি। টুপ করে ফুলো ফুলো কপোলে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। ভদ্র কণ্ঠে বললো,

” আচ্ছা। থেমেছি। এবার চুপটি করে বসো। আর উপভোগ করো দিবালোকের সৌন্দর্য। ”

আর দিরুক্তি করলো না দুয়া। স্বামীর বক্ষদেশে দেহ এলিয়ে দিলো। নীরবে উপভোগ করতে লাগলো ভিনদেশের সৌন্দর্য। দূরের পাহাড়ে নিবদ্ধ হলো দৃষ্টি।

সিলিংয়ের অংশবিশেষ লাল রঙে আচ্ছাদিত। মধ্যখানে ঝাড়বাতি। পুরো হল জুড়ে অসংখ্য চেয়ার – টেবিল। লাল রঙের মধ্যে কারুকার্য খচিত চেয়ার, সোফাগুলো দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। কৃত্রিম আলোয় নজরকাড়া পরিবেশ। দুয়াকে একটি চেয়ারে বসিয়ে বিপরীত দিকের চেয়ারে বসলো তূর্ণ। অর্ডার প্লেস করা হয়ে গেছে।

” হোটেলের এই অংশটা খুব সুন্দর তাই না? দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। ”

মোবাইল স্ক্রল করতে করতে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো তূর্ণ। আশপাশে চোখ বুলাতে লাগলো দুয়া। হঠাৎ স্তব্ধ হলো! ছিঃ এসব কি? চোখমুখ বিকৃত করে ফেললো মেয়েটি। মোবাইলে দৃষ্টি নিবদ্ধ স্বত্ত্বেও তা অনুধাবন করতে পারলো তূর্ণ।

” হোয়াট হ্যাপেন্ড? মুখ এমন করে রেখেছিস কেন? ”

” ও-ও কিছু না। ”

নেতিবাচক জবাবে তূর্ণ চোখ তুলে তাকালো। বুঝতে পারলো না ঠিক কি হয়েছে।

” কি হয়েছে? বলবি তো। না বললে বুঝবো কি করে? আমি তো আর অন্তর্যামী নই। ”

” আরে এর মধ্যে অন্তর্যামী টেনে আনছো কেন? ”

” তাহলে? বল কি হয়েছে। ”

স্বল্প ঝুঁকে গেল দুয়া। ক্ষীণ স্বরে বললো,

” তেমন কিছু না। ভিনদেশী রো মা ন্স চলছে আর কি। তাই..”

হেসে উঠলো তূর্ণ। মোবাইলে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বললো,

” এজন্য এই অবস্থা? ”

দুয়া কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে বললো,

” তুমি হাসছো? আমি রিয়েক্ট করবো না তো কি করবো? এভাবে ওপেন প্লেসে এসব ঠিক? ”

” ওরা বিদেশী। ওদের সংস্কৃতিতে এসব একদম নরমাল। ওরা এতে অভ্যস্ত। ”

দুয়া চোখমুখ কুঁচকে ফেললো। বিষয়টি তার মোটেও পছন্দ হয়নি। যদিওবা তাদের কি বলবে? সংস্কৃতি, পারিবারিক শিক্ষা বলেই তো এসব হচ্ছে! ওসবে আর মাথা ঘামালো না সে। কিছুক্ষণ বাদে ওদের অর্ডারকৃত খাবার চলে এলো। এগ অ্যান্ড বেল পেপার্স শাকশুকা উইদ বার্লে অ্যান্ড ফেটা। মজাদার লাগছে দেখতে। খেতেও নিশ্চয়ই সুস্বাদু হবে! ভোজনের পূর্বের দোয়া পড়ে ওরা খেতে শুরু করলো।

চলবে.

[ একটু ছোট হলো পর্বটি। তবে কেমন লেগেছে? মন্তব্য আশা করছি। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here