#রাঙিয়ে দিয়ে যাও💙
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৯
___” সাদি,আপনি কি দরজা খুলবেন না?”
বারবার দরজায় করাঘাত করার পরও দরজা খুলছেন না তিনি। সেই যে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাবার নেয়ার জন্যে বের হইছিলাম,তখন দরজা লাগিয়ে ছিলেন। আর এখনো আমি প্লেট হাতে দরজা ধাক্কাচ্ছি। রুমে বসে খাবো বলে।শেষবার দরজায় আঘাত করে বললাম,
___” সাদি! দরজা খুলবেন? নাকি আমি ফুপির রুমে যাবো? পরে টেনেও পাশে ঘুম পাড়াতে পারবেন না কিন্তু । ”
কিন্তু নো রেসপন্স! তাই প্লেট নিয়ে চলেই যাচ্ছিলাম। ওমনি হঠাৎ উনি দরজা খুললেন। আমি পিছনে ফিরে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম।ওনার চোখজোড়া লাল হয়ে আছে। আর গালদুটো কেমন ফোলা। আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে উনি দরজার সামনে থেে সরে গেলেন। আমিও ভিতরে ঢুকলাম। উনি বিছানায় গিয়ে পা তুলে মুখ ঘুরিয়ে বসে পড়লেন। আমি একটু দূরত্ব রেখেই খেতে বসলাম।
ওনার বিহেভিয়ারটা বোঝার চেষ্টা করছি।গলা খাঁকারি দিয়ে বললাম,
___” আপনি কি রেগে আছেন নাকি?”
উনি আমার দিকে একনজর তাকিয়ে আবারো মুখটা ঘুরিয়ে নিলেন। এটা কেমন বাচ্চামো? আমি খেতে শুরু করলাম। খেয়াল করলাম,উনি একটু পর পর আঁড়চোখে তাকাচ্ছেন।তৎক্ষনাৎ মনে পড়লো,আমার ডক্টরটা মনে হয় আমার চিন্তায় খায়ও নি। আর আমি কত পাষাণ। আমি আবারো গলা খাঁকারি দিয়ে বললাম,
___” কেউ চাইলে এসে খেতে পারে।”
উনি কিছু বলছেন না। আমি আবারো বললাম,
___” একজনের পছন্দের বেগুন ভাজা আছে খিচুড়ির সাথে।”
উনি এবার ঘাড় ঘুরিয়ে আমার প্লেটের দিকে তাকালেন। তারপর আবার আমার দিকে তাকিয়ে মুখটা ঘুরিয়ে নিলেন। ওনার বাচ্চামো দেখে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না। ওনার একটু কাছে গিয়ে বললাম,
___” খাইয়ে দিবো।”
উনি পিছনে ফিরলেন। শান্ত চোখে তাকিয়ে থেকে হা করলেন। আমিও মিটিমিটি হেসে মুখে খাবার পুড়ে দিলাম। উনি ভ্রু কুঁচকে মুখ ভর্তি করে খাচ্ছেন নিচের দিকে তাকিয়ে। ইশ!এই লোকটা এত কিউট কেন? আমি আচমকা ওনার কপালে চুমু খেয়ে বললাম,
____” আমার কিউট বর টা।”
উনি কপালে হাত দিয়ে সেটা মুছে ফেললেন। আমি কিছু না বলে আঁড়চোখে তাকালাম শুধু। এগুলা তো ৬-৭ বছরের বাচ্চাদের কাজ। তবে কি আমার ডক্টরের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেলো?হায়রে! এখন আমার কি হবে? ওনার হু হা করায় ধ্যান ভাঙলো আমার। উনি আশেপাশে কিছু খুঁজছেন। চোখ থেকে পানি পড়ছে। আমি প্লেটটা বিছানায় রেখে ব্যস্ত হয়ে বললাম,
___” কি হয়েছে? কি খুঁজছেন আপনি?”
উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর দুহাতে গাল ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবালেন। অনুভব করছি, আমার অসম্ভব ঝাল লাগছে। তবে কি উনি ঝালে এমন করছিলেন? উনি তো আবার ঝাল সহ্য করতে পারেন না। যেটা আমি খুব পারি। তাই ওনার করা অত্যাচারটা সহ্য করে নিলাম। কিছুক্ষণ পর উনি হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন,
___” এত ঝাল কে দিয়েছে খাবারে? মা তো দেয় না। আপনিই দিয়েছেন। তাই না?”
আমি আরেক লোকমা খিচুরি ওনার মুখের সামনে ধরে বললাম,
___” না মহাশয়! আপনার রাখা নতুন কাজের বুয়া বেশি ঝাল দিয়েছে। আপনি নাকি বউ দিয়ে রান্না করাবেন না,তাই কাজের বুয়া এনেছেন। এখন এই বুয়ার খাবারে ঝাল দিয়ে অভ্যাস।”
উনি খাবার চিবুতে চিবুতে বলছেন,
___” আগামীকাল থেকে কম ঝাল দিতে বলবো।”
আমি কিছু না বলে পানি আনতে চলে গেলাম। আমিও যে কি বোকা!পানি ছাড়া খেতে বসে পড়েছিলাম। ধূর!
.
বিছানায় আধশোয়া হয়েও পেটের উপর লেপটপ রেখে কাজ করছেন সাদি। আমি এগিয়ে গিয়ে ওনার পাশে বসতেই উনি খানিকটা সরে গেলেন। আমি আরো চেপে বসে বললাম,
___” কি হলো?”
উনি কিছু বলছেন না। ইশ!এতটা রেগে গেলো। আমি ওনার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলাম। উনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললেন,
___” হোয়াট?”
___” এমন করছেন কেন?”(ঠোঁট উল্টে)
উনি লেপটপে নজর রেখেই বললেন,
___”তোর অয়নের কাছে যা।”
আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
___” এই, অয়নের কাছে যাবো কেন? অয়ন কি আমার বর? আপনি আমার বর।”
উনি চোখ লাল করে আমার দিকে তাকালেন। আমি ভড়কালাম। ঢোক গিলে ওনার বাহুতে হাতের তালু ঘষতে ঘষতে জোরপূর্বক হেসে বললাম,
___” রাগছেন কেন? ভুল কি বললাম আমি?”
উনি ঝাড়া মেরে আমার হাতটা সরিয়ে দিলেন। রেগে বললেন,
___” আমাকে না বলে যাওয়ার কি খুব দরকার ছিল? এটা ভুল নয়?আবার আম্মুকেও মিথ্যা বলে গেছিস।”
আমি মাথা নিচু করে নিলাম। উনি আবারো বলতে লাগলেন,
___” তুই তো একটা বুদ্ধিমতি মেয়ে অনু। অন্তত এসব ক্ষেত্রে। একটা বারও আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করলি না?”
আমার মাথাটা আরো নিচু হয়ে গেল। নিচে দিকে তাকিয়ে শাড়ির আঁচল মোচড়াচ্ছি। উনি আমার হাত দুটো চেপে ধরে রেগে বললেন,
___” আমি কি তোর স্বামী না? বল!! আমি তো স্বামী না?”
আমি হ্যাবোধাক মাথা নাড়ালাম। উনি গর্জে উঠে বললেন,
___” তাহলে কেন আমাকে বলার প্রয়োজন মনে হলো না? আমি না তোর গার্জিয়ান? তুই না আমার সব কথা শুনবি? এই কথাই তো ছিল।ছিল না?”
___” ছিছ… ছিল।”
___” তাহলে বলার ইচ্ছে কেন হলো না? আনসার মি!!”
বলেই উনি লেপটপটা বিছানায় ছুঁড়ে মারলেন। আমি কেঁপে উঠলাম। ভাগ্যিস!বিছানায় ছুড়েছে।আর ফুপি পাশের বাসায় গিয়ে আরো ভালো হয়েছে।নয়ত এসব শুনলে কি হত!উনি উঠে দাঁড়ালেন। রাগী গলায় বললেন,
___” তোকে কিছু বলার কোনো ইচ্ছে নাই আমার। মুখ দিয়ে এমনিতে এত কথা জড়ে। আজ আমার প্রশ্নের উত্তর কই মহারানী?”
আমার এখন ভিষণ কান্না পেতে লাগল। ওনার বকাগুলো সহ্য করতে পারছি না। ভীষণ কান্না আসছে। উনি এবার জোরেশোরে বলে উঠলেন,
___” যা গিয়ে অয়নের সাথেই বসে থাক। আমার কাছে কি? কি আমার কাছে? নাথিং!!”
আমি এবার শব্দ করে কেঁদে উঠলাম। দুহাতে মুখ চেপে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
___” আ’ম সরি। আ’ম এক্সট্রিমলি সরি। আমি বুঝতে পারিনি আমার এই ছোট্টো ভুলে এতকিছু হবে। আমার জন্যেই আজ আমার এত বড় ক্ষতি হত।”
বলেই ফোঁপাতে লাগলাম।বেশকিছুক্ষণ পর নিজেকে সাদির বুকে আবিষ্কার করলাম আমি। উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত গলায় বলছেন,
___” তুই এখন ছোট নেই অনু। মেডিকেলে উঠে গেছিস এখনও এমন বেকামি তোকে মানায় না। তুই কিভাবে পারলি এত বড় বিষয়টা আমাকে না জানিয়ে থাকতে?”
আমি চুপচাপ ফোঁপাচ্ছি। আর উনি আমার চুলে হাত বুলিয়ে বলছেন,
___” হয়েছে চুপ হয়ে যা। পাইছিস এক কান্না। আমার দূর্বলতা এটা। জেনেই এভাবে কান্না করে দিস।”
___” মোটেও না। আপনার কথায় আমার কান্না এসেছে।”(কান্না গলায়)
উনি হেসে দিলেন। শক্ত করে বুকে চেপে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
___” অয়ন তখন বদ্ধ পাগল হয়ে গেছিল। ও যদি তোর কোনো ক্ষতি করে দিত? কোনো আইডিয়া আছে তোর? আমার কতটা চিন্তা হচ্ছিল যখন দেখলাম তোর ফোন বন্ধ?”
আমি চুপ করে ওনার কথাগুলো শুনছি। এই মানুষটাকে এতটা কষ্ট দিয়েছি আমি। তবুও বারবার আমাকে আপন করে নেয়। কতটা নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসে আমায় সে? উনি আবারো বলতে লাগলেন,
___” তোকে এতটা ভালোবাসি কি এমনি ছাড়ার জন্য? তোর সেফটির খবর রাখব না আমি?”
___” হু। ”
___” নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি তোকে। কি অবস্থা হয়েছিল আমার? বুঝতে পারছিস তুই?মাথায় আছে কিছু? স্টুপিড।”
___” সস..সরি। আর কখনো হবে না। পাক্কা প্রমিজ। ”
___” হুম।”
বলেই উনি আমাকে বুকে টেনে নিলেন। আমিও পরম নিঃশ্চিন্তে ওনার বুকে শায়িত হয়ে ভাবছি,
___” আসলেই আমি কতটা ভাগ্যবতী যে ওনার মত বর পেয়েছি। যে কিনা আমার সব ভুল শুধরে আমাকে কাছে টেনে নেয়। নাহ!আর কখনো কষ্ট দিবো না ওনাকে। কখনো না। ”
ভেবেই আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরলাম ওনাকে। উনি আমাকে ছেড়ে গালটা ধরে বললেন,
___” বেশি ব্যাথা লেগেছিল? ”
আমার মনল পড়ে গেল তখনকার চড়টার কথা। উনি গালে ঠোঁট লাগিয়ে বললেন,
___” আরেকটা দেয়ার উচিত ছিল।”
আমি ওনার থেকে সরে ভ্রু কুঁচকে নাক টানতে টানতে বললাম,
___” হু দিন।”
উনি হাসলেন। হাত উঁচু করে বললেন,
___” দিই একটা?”
আমি চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলাম। উনি আমার গাল টেনে বললেন,
___” পাগলী!”
আমি চোখ খুলে হেসে দিলাম। ওনার বুকে আবারো মাথা রেখে বললাম,
___” ভালোবাসি।”
___” উহু!নিবো না।”
___” কেন?”(অবাক হয়ে)
উনি আচমকা মুখ ফুলিয়ে ফেললেন। ওপাশে ঘুরে বললেন,
___” হাই আমি অনু। ফ্রেন্ডস? ”
এটা তো অয়নকে বলা কথাটা ছিল। আমি হা হয়ে বললাম,
___” মানে?”(অবাক হয়ে)
___” এহ!কি ঢং করে হ্যান্ডশেক করা হচ্ছিল। তাও বরের সামনে। বেশরম মাইয়া। দূরে। আমার থেকে দশ হাত দূরে। একদম আদর দেখাতে আসবি না।”
আমি আহম্মকের মত তাকিয়ে রইলাম। এতক্ষণ রাগ দেখাচ্ছিল আর এখন অভিমান। এই লোকটার এত রূপ কেন?
ভেবেই মাথায় হাত আমার।হঠাৎ ফোনে কল আসতেই সাদি আমার দিকে ফিরে তাকালো। আমি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম প্রান্তি কল করেছে। সাদি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। আমি ফোনটা পিক করে কানে ধরতেই প্রান্তির কান্নামাখা আতংকিত গলা ভেসে এলো…
___” অনু, অয়ন!”
___” অয়ন? অয়ন কি করলো আবার? আর হ্যা! তোদের কিছু বলার আছে আমার। অয়নকে নিয়ে। তুই জানিস অয়ন এতদিন কেন এমন করেছে?”
___” অনু তুই সবটা ভুল জানিস। সত্যিটা আমরা বলবো তোকে।”
___” কিসের সত্যি?”(অবাক হয়ে)
___” তার আগে তুই —- হসপিটাল চলে আয়।”
___” হসপিটাল কেন?”(আতংকিত হয়ে)
___” অয়ন যে শেষ হয়ে যাচ্ছে…”(কান্না মাখা গলায়)
___” কিহহ!!”
চলবে…..
(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। গঠণমূলক মন্তব্য আশা করছি☺️)
কিছু মানুষের মনের মত পর্ব/গল্প না হলেই গল্প বাজে হয়ে যায়।রিডিকিউলাস😄। নোংরামি হয়ে যায়।একটা-দুইটা জায়গায় এলোমেলো হতেই পারে। এতে প্যাচ খোঁজার তো কিছু নেই। তাছাড়া#রাঙিয়ে দিয়ে যাও💙
গল্পটা আর বড় করব না বলেই অয়নকে ক্ষমা করা হয়েছে। নয়ত আরো প্যাচ মেরে গল্পটা বড় করা যেত। মূলত, সামনে আমার পরীক্ষা বলেই গল্পটা শেষ করা। তারমধ্যেও অল্পসংখ্যক কিছু মানুষের ৃ
মন্তব্য মন খারাপ করার মত। আর হয়ত কিছু কিছু জায়গা অগোছালো হয়েছে,খাপছাড়া হয়েছে,তার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।ভুলক্রুটি মার্জনীয়।যাক!হ্যাপি রিডিং🙃)
(অন্তিম আসছে…)