#দাম্পত্য_জীবন
#মেহু_আপু
#পর্ব_১১
আকাশ জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে বউ? তুমি আমাকে সবার সামনে এভাবে হাগ করলে ক্যান?(ফিসফিসিয়ে বলে)
নীলা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে আকাশ মেঘ এটা কি করলো?
মেঘ যে ছেলেকে বিয়ে করছে আমি তাকে চিনি?
আকাশ বললো কিভাবে চিনো সুইটহার্ট!
নীলা বললো ওই ছেলেই হামজা। এই কথা শোনা মাত্রই আকাশের মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়লো।
মেঘ এসে বললো বড় বাবা,বাবা ও ভাইয়ারা এইটা আমার জামাই।
হামজা এসে সবাইকে সালাম দেয়।
আজগর চৌধুরী জিজ্ঞেস করে তোমার নাম কি? তোমার প্রফেশন কি?
মেঘ তখন বলে বড়বাবা, ছেলে বাংলাদেশি কিন্তু তার পরিবারের সবাই চীনে থাকে। চীনে তার ডিলারশীপের ব্যবসা আছে। আর এর নাম হামজা।
মেঘের বাবা বলে তোমাকে জিজ্ঞেস করছে তুমি ফটর ফটর করছো?
আজগর চৌধুরী বলে ভাই থাম। আচ্ছা নীলা জামাইকে নিয়ে ভিতরে যাও পরে কথা বলছি আমরা এ বিষয়ে।
আকাশ বলে দাড়া মেঘ। আমার কথা আছে।
মেঘ বলে বলো ভাইয়া।
আকাশ জিজ্ঞেস করে এই ছেলের সাথে তোর পরিচয় কতদিনের?
মেঘ বলে ভাইয়া ১০ দিনের পরিচয় আমাদের।
এই কথা শোনা মাত্রই সবাই অবাক হয়ে যায়।
আকাশ বলে ১০ দিনে তুই কিভাবে একটা ছেলেকে বিয়ে করার মতো সাহস পেলি।
মেঘ বলে ভাইয়া ও দেশে আসছে আমাকে ফ্লাইটে রিসিভ করতে ।এরপরে দুজনে সিদ্ধান্ত নিই বিয়ে করবো। তাই বিয়ে করে তোমাদের সারপ্রাইজ দিবো বলে চলে এসেছি। এরপরে আমরা চীনে স্যাডেল করবো।
ইশান বললো আকাশ কি শুরু করলি ওদের ভিতরে যেতে দে।
হামজা নীলাকে দেখে মেকি হাসি দেয়। আর মনে মনে বলে কেমন চমক দিলাম নীলা।
নীলা এইবার রাগ হয়ে হামজার কাছে গিয়ে বলো কেনো করলি তুই এরকম?
হামজা তখন ন্যাকামি করে মেঘকে বলে বেবি ইনি কে? আর আমাকে তুইতোকারি করছে কেনো?
মেঘ বলে নতুন ভাবী তুমি একে চিনো নাকি?
আকাশ তখন মেঘকে চড় দেয়। ছোট ছোটর মতো থাকবি, বিয়ের মতো ডিসিশন এইভাবে কি করে নিস?
মেঘ গালে হাত দিয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে আমি কি ভূল করলাম কিছু। তোমাদের তো সবটা বুঝিয়ে বললাম।
তখন ইশান আর ইমরান বলে তোরা দুজন এসব কি ড্রামা শুরু করলি। ছেলেটাকে কি তোরা দুজন চিনিস ভাই।
আকাশ বলে খুব ভালো করে চিনি হামজার দিকে মুখ রাগী করে বলে। 😾
হামজা ন্যাকামী করে বলে মেঘ আমি যদি জানতাম তোমার পরিবারের লোক আমাকে এভাবে অপমান করবে তাহলে কখনো আসতাম না।
আজগর আর শুকর বলে আচ্ছা হামজাকে কি করো চিনো তোমরা দুজন?
আকাশ বলে বাবা আমার নামে যে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছিলো এইটা ছিলো এই ছেলের কাজ?
সবাই একথা শুনে অবাক হয়। আর জিজ্ঞেস করে কিন্তু এই ছেলে তোমাকে না চিনেই তোমার ক্ষতি চাইবে কেনো?আর এতো চীনে থাকে আজকে নাকি ও দেশে ফিরেই মেঘকে রিসিভ করছে।
আকাশ বলে আমার প্রজেক্ট হাতছাড়া করে আমাদের কোম্পানিকে পথে বসার চাল ছিলো, এই হামজার।
মেঘ বলে কি বলছো ভাইয়া?
নীলা বলে ঠিক বলছে মেঘ। আমাদের এ কথা যে সত্যি এবার সবার সামনে প্রমান হবে।
হামজা বলে বেবি আমি এদেরকে আজ প্রথম দেখলাম। আর আমি কিভাবে তোমাদের কোম্পানির লোকসান চাইবো।
মেঘের মা শায়লা চৌধুরী শুকরকে যেয়ে বলো ওগো লাষ্ট পযন্ত আমাদের মেয়ে চিটারকে বিয়ে করে ঘরে তুললো।
হামজা এবার চাপার জোড়ে নীলাকে বলে আমি এসব করছি তার প্রমান কি করে করবেন? শুধু শুধু আমার নামে ব্লেম করছেন?
আকাশ বলে আমার নীলা কখনো ভূল কিছু বলেনা।
হামজা মনে মনে বলে সাব্বাস আকাশ চৌধুরী ১৫ দিনেই নীলাকে ভালো করে চিনার জন্য? চমক তো আরো বাকি আমি ডুবলে তোমার বউকে নিয়াও ডুববো।
নীলা এবার দরজার দিকে চোখ বুলিয়ে বলে কই তুমি ভিতরে আসো?
ইরাবতী ভিতরে আসে। ইরাকে দেখে সবাই অবাক হয় কারণ এই মেয়ে শ্লীলতাহানির মানহানিতে জেলে ছিলো
ছাড়া পেলো কিভাবে?
হামজা ইরাকে দেখে মনে মনে বলে উঠে আমি শেষ, এ তাহলে সব বলে দিয়েছে।
ইরা এসে হামজাকে বরবেশে দেখে অবাক হয়। ইউ চিটার,লোফার,ছোটলোক আমাকে এভাবে ঠকানো বের করছি এসব কথা হামজা ইরাকে বলে।
এইবার বাড়ির সবাই রেগে যেয়ে বলে এসব কি হচ্ছে আকাশ?
আকাশ তখন বলে প্রমান সবার সামনে আশা করি রহস্য ক্লিয়ার হবে? আকাশ ইরাকে বলে আপনি এই হামজাকে কি করে চিনেন বলে ফেলেন?
ইরা বলে এই হামজা হলো একজন ফ্রট যে মেয়েদের মন নিয়ে ভালোবাসার খেলা খেলে। যখন প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় ওই মেয়েকে টিস্যুর মতো ফেলে দেয়। ঠিক এভাবে ০৬ মাস আগে আমাকে ফাঁসাইছিলো। আমি এর প্রেমে পড়ে এর কথামতো আকাশ স্যারকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে ফাঁসাই। ভাগ্যিস নীলা ম্যাম ছিলো তাই সব রহস্য ক্লিয়ার করে আমাকে জেল থেকে মুক্তি দেয়।
মেঘ একথা শুনে এসব কি বলছে হামজা তোমার নামে ! এই তোমার ব্যবসা? তাহলে চীনে তুমি কি করো?
হামজা বলে বেবি ওরা আমাকে ইচ্ছে করেই ফাঁসাই দিচ্ছে তোমার আর আমার মাঝে সম্পর্ক খারাপের জন্য?
আকাশ বলে তোমাকে ইন্টেনশনালি ফাঁসিয়ে আমাদের কি লাভ?
বাড়ির সবাই শোকাহত ভাবে এসব শুনেই যাচ্ছিলো।
নীলা আকাশকে যেয়ে বলে আমাদের বিষয়টা সবাইকে আজকে জানাই আকাশ। নাহলে এই ছেলে কবে কাকে কিছু দেখিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়। আমি তোমাকে হারাতে পারবো না আকাশ। আমি সবটা বলতে চাই।
আকাশ বলে যত যাই হোক কখনো তোমাকে অবিশ্বাস করবো না এসব বলার জায়গা এটা না। তোমার অতীত আমি জানি তাই কেউ প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাবে না। কথা দিলাম কেউ প্রশ্ন তোলার আগে তোমার হাতদুটি শক্ত করে ধরবো।
নীলা বলে ধন্যবাদ আকাশ।
এইবার আর্জিনা চৌধুরী বলে নীলা এই ছেলের আসল পরিচয় কি?
নীলা বলে এই ছেলের নাম হামজা। আমাদের পাশের গ্রামে থাকে মিডিল ক্লাস ফ্যামিলি বেকার ছেলে।
মেঘ বলে এসব কি হামজা তুমি বিদেশে থাকোনা আমাকে এসব মিথ্যা কথা বলছো ক্যান? আর ওই ইরা কে? আর কি বলছে এসব।
হামজা এবার অভিনয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। যেকোনো উপায়ে এই বাড়িতে ঘরজামাই থাকতে হবে আর সবাইকে বুঝাতে হবে সে মেঘকে কতোটা ভালোবাসে। আমাকে মাফ করবেন আপনারা। আসলে আমি শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছিলাম এই কারণে আমার মা হসপিটালে ভর্তি ছিলো। আমার মায়ের টিউমার হয়েছিলো পেটে অপারেশনের জন্য ২ লক্ষ্য টাকা লাগবে। আমার কাছে কোনো টাকা ছিলো না! তখন আমার কাছে এক ব্যাক্তি আসে মুখোশ করে কালো কাপড় বাঁধা। সে এসে আমাকে বলে আমি যদি আকাশ ভাইয়ের নামে এইরকম শ্লীলতাহানির অভিযোগে ফাঁসাতে পারি তাহলে আমাকে ২ লক্ষ্য টাকা দিবে। উপায় না পেয়ে আমি রাজি হয়ে যাই আর আকাশ ভাইকে এভাবে ফাঁসাই। কারণ তখন মনে হয়েছিলো আমার মায়ের জন্য সব করতে পারি। সন্তান হিসাবে এই চাওয়াটা কি ভূল আপনারাই বলেন? আর ইরাবতী আমার ভালোলাগা ছিলো কখনো তাকে বলি নাই আমি তাকে ভালোবাসি। কিন্তু সে মনেই করে নিছে আমি তাকে ভালোবাসি। সে কি প্রমান করতে পারবে আমি তাকে ভালোবাসি?
আর মায়ের জীবনের বিনিময়ে এসব করছি। একজন সন্তান হিসাবে সৎপথ না পেলে আমি এভাবে আমার মায়ের প্রান বাঁচাইছি আমি কি ভূল করেছি। এই কথা বলে সবার স্যামপ্যাথি অর্জন করে।
নীলা ইরাকে বলে তুমি প্রুভ করতে পারবা হামজা তোমার সাথে প্রেমের সম্পর্কে ছিলো।
ইরা বলে ওর সাথে যখনি দেখা হতো আমার ফোনের সব এসেমেস ডিলিট করে দিতো। আর পিক আছে কিন্তু প্রমানসরুপ না। নীলা বলে আচ্ছা তুমি যাও।
এইবার হামজা মনে মনে বলে আমাকে চিটার প্রমানিত করতে হলে তোমার সত্যি ও সামনে আনতে হবে। কিন্তু নীলা এটা তুমি পারবা না।
নীলা আকাশকে বলে কি করবো আকাশ এবার। আকাশ বলো চুপ থাকো আমি বলছি।
আকাশ বলে মেঘ বিয়ে করার আগে ছেলেকে জানতে হয়। আর তুমি ১০ দিনে এমন কি জানলা যে চিটারকে বিয়ে করে ঘরে তুললা। ও তো তোমার সাথে প্রতারণা করেছে তুমি ওকে কি শাস্তি দিতে চাও। তুমি নিজেই ডিসাইড করো।
হামজা বলে দেখো মেঘ আমি ভয় পেয়েছিলাম, কারণ তুমি না আমাকে ছেড়ে যাও। এরজন্য তোমাকে এসব মিথ্যা কথা বলেছি আমাকে মাফ করো। আসলে আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমায় যদি সত্যি টা বলতাম তাহলে তুমি আমাকে বিয়ে করতা না এইভেবেই মিথ্যা বলছি। আসলে আমি ধনী ব্যাক্তি না জবলেস ছেলে।এই দেশেই থাকি।
আজগর চৌধুরী রাগী মুখে সবাইকে বলে অনেক হয়েছে ড্রামা এবার সবাই থামো। মেয়ে যেহেতু আমাদের ভূল করেই ফেলেছি এখানে ছাড়ার কোনো উপায় নাই। সো সবকিছু ভূলে তাকে মেনে নাও সবাই। এইটায় আমার শেষ ডিসিশন। কারন বাঙালি মেয়েদের বিয়ে একবারই হয়। মেঘ হামজাকে রুমে নিয়ে যাও। হামজা রুমে ঢোকার আগে নীলাকে চোখ টিপি মারে।
নীলা বলে আকাশকে মেঘ এটা কোন আপদ ঘড়ে তুললো আকাশ। সব হলো আমার জন্য আমি এখানে তোমার সাথে বিয়ে না করে আসলে এসব হতো না আকাশ।
আকাশ বলে পাগলী বউটা বাদ দাও ও আর কি করবে আমরা মোকাবিলা করে ওকে শুধরে দিবো। তুমি শুধু আমাকে ভালোবাসো আমি থাকতে আমার বউয়ের ক্ষতি করার ক্ষমতা কারো নাই!!
চলবে,,,,