#অমানিশায়_সেই_তুমিই
#লেখায়_তেজস্মিতা_মর্তুজা
১০.
ইরাজ ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে রইল নির্বিকার চিত্তে। আনতারা খানম থমথমে চেহারা, অপ্রসন্ন নজরে পরখ করে দেখলেন মেঘালয়ার আপাদমস্তক। চরম অনীহার সঙ্গে ওকে উপেক্ষা করে হেঁটে এসে দাঁড়ালেন ইরাজের পাশে। মেঘালয়া মুখটা ছোটো করে মাথাটা নত করে নিলো। ঘুরে দাঁড়িয়ে সিঁড়ির দিকে অগ্রসর হলো। এরই মাঝে ইরাজের চড়া কণ্ঠস্বর ভেসে এলো,
‘মেঘ!’
মেঘালয়া খানিক সময় নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল তবে পিছনে ফিরল না। ইরাজ স্বাভাবিক স্বরেই আদেশ করল,
‘আব্বুকে ডেকে নিয়ে আয়, জলদি যা।’
মেঘালয়ার ভিতরে তোলপাড় চলছে। যা শুরু হয়েছে আনতারা খানমের চোখে ভেসে থাকা আক্রোশের আগুন থেকে। ইরাজের কথা অমান্য করে এবার আর তামাশা বড়ো করতে চাইল না মেঘালয়া। এমনিতেই এ বাড়ির এমন কঠোর নিরবতা ওর চঞ্চলতা কেঁড়ে নিতে যথেষ্ট। হাতে থাকা ফুসকার প্যাকেটটি পাশে রেখে ইমতিয়াজ সাহেবের রুমের দিকে অগ্রসর হলো।
আনতারা খানম বসলেন ছেলের মুখোমুখি। খানিক বাদে ভরাট গম্ভীর গলায় বললেন, ‘রাজ! তুই কি মেনে নিয়েছিস পরপুরুষের সঙ্গে ভেগে যাওয়া ওই মেয়েটিকে?’
ইরাজ চেপে চোখদুটো বন্ধ করে নেয়। ভারী এক ঢোক গিলে, চোখ খুলে তাকাল। শান্ত স্বরে বলল, ‘আমার চেয়ে সম্মানের পরোয়া তুমি বেশি করো, মম!’
‘মম’ ডাকটা ইরাজ ছোটো বেলা থেকেই ক্ষেপে গেলে বা অসন্তুষ্ট হলে ডাকে। আর ইমতিয়াজ সাহেবকে ড্যাড ডাকে যতক্ষন মনটা ভালো থাকে। তা আনতারা খানম বেশ জানেন। ইরাজের ‘আম্মা’ ডাকে মধু মিশ্রিত থাকলেও, ‘মম’ ডাকে আনতারা খানম কেবলই ছেলের সঙ্গে নিজের দুরত্বের বহিঃপ্রকাশ দেখতে পান। আচমকা তাকালেন তিনি ছেলের দিকে। চোখে চোখ পড়ে যায়। ইরাজ অদ্ভুত ভঙ্গিতে চেয়ে আছে তারই দৃষ্টি বরাবর। আনতারা খানম কিছু বলার আগেই ইরাজ বলল,
‘কদিন আগে বিয়ে করে বউ ঘরে তুললাম, তারপর কোমরে লাথি দিয়ে সেই বউ বিদায় করব। লোকে কারন জানতে চাইলে বলব, বউ লোকের সাথে ভেগে গিয়েছিল। তা অবশ্য জানতাম আগে, তবে খারাপ লাগাটা বিয়ের পর কাজ করেছে তাই বউ বাড়ির বাইরে। ঠিক আছে না মম?’
আনতারা খানম চাপাস্বরে অভিযোগ করে, ‘তোরা বাপ-ছেলে জানলেও আমি জানতাম না। আর জানলে..
কথা শেষ করতে না দিয়ে ইরাজ বলে উঠল, ‘এজন্যই জানানো হয়নি তোমায়। রাত দুটো পার হয়ে যাচ্ছে। খাবার দেবে অথবা আমি রুমে যাব!’
আনতারা খানম ছেলের গম্ভীর মুখের দিকে চেয়ে রইলেন। বুঝতে চেষ্টা করলেন ছেলের ভেতরে প্যাচ লেগে থাকা জটিলতাকে। বরাবরের মতোই ব্যর্থ তিনি।
ইমতিয়াজ সাহেব এসে বসলেন চেয়ারে। যে কারনে মা-ছেলের আলাপে সমাপ্তি ঘটে। তাকে দেখেই আনতারা খানমের মুখ শক্ত হয়ে ওঠে। তিনি মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কাজের ব্যস্ততা দেখালেন। মেঘালয়া পেছন থেকে চলে যেতে নেয়। তখনই ইরাজ ডেকে উঠল,
‘এদিকে আয়।’
মেঘালয়া নিচু স্বরেই দিল, ‘ক্ষুধা নেই তেমন। আ তাছাড়া..
ইরাজ মেঘালয়ার দিকে চোখ ঘুরিয়ে তাকালে, মেঘালয়া কথার মাঝেই চুপ হয়ে গেল। ইরাজ ঘাঁড় ঘুরিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোকে এদিকে আসতে বলেছি। তুই ক্ষুধার ফিরিস্তি শোনাচ্ছিস কোন সুখে?’
সেসময় ইমতিয়াজ সাহেব ধমকে উঠলেন, ‘মেঘা! ক্ষুধা নেই এটা কেমন কথা? আর ক্ষুধা না থাকলেও খেয়ে ঘুমাবে। এদিকে এসো।’
মেঘালয়া অগত্যা এসে দাঁড়াল সেখানে। আর তখনই আনতারা খানম এক অদ্ভুত কাজ করে বসলেন। মেঘালয়া এসে দাঁড়াতেই তিনি সকলকে উপেক্ষা করে হনহন করে নিজের রুমের দিকে চলে গেলেন। ইমতিয়াজ সাহেব কেবল এক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মেঘালয়া মাথাটা নত করে দাঁড়িয়ে রইল। ইরাজ আচমকা ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। মুখ-চোখ শক্ত করে করে ধমকে উঠল,
‘মাঝরাতে ইন্ডিয়ান ড্রামা সিরিয়াল দেখতে টেবিলে বসলাম নাকি? খাবার দিবি তো দে জলদি, বা ল ডা।’
মেঘালয়া দ্রুত ইরাজের দিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখল। চোখে-মুখে এক অবর্ননীয় ক্ষুদ্ধতাকে ঠেসে বসে রয়েছে ইরাজ। খাবারের ঢাকনা উঠিয়ে দেখল, দুরকমের তরকারী। সেটা ইরাজের প্লেটে উঠিয়ে দেওয়ার সময় আগে বড়ো চিংড়ি মাছের তরকারীটাই উঠিয়ে দিল। ইরাজ খাওয়া থামিয়ে দেয়। মেঘালয়া একটু থমকে উঠল। না জানি আবার কি কথা শোনাবে। ইমতিয়াজ সাহেব দ্রুত বলে উঠলেন,
‘রাজের এলার্জি আছে পাগলী। চিংড়ির গন্ধও সহ্য করতে পারবে না।’
তিনি একটু ভয় পেলেন। এমনিতেই ছেলের মন মেজাজ ভালো নয়, তা তার অজানা নয়। এখন আবার মেঘালয়াকে উল্টোপাল্টা কিছু বলে না বসে! অথচ এমন কিছুই হলো না। ইরাজ নির্বিকার শান্তভাবে নিজের প্লেটটি বাবার দিকে সরিয়ে দিয়ে, বাবার প্লেট টেনে নিলো। ইমতিয়াজ সাহেব মেঘালয়াকে ইশারা করলেন, অন্য পাত্রে থাকা মুরগীর মাংস ইরাজকে উঠিয়ে দিতে।
আনতারা খানম রুমে এসে ধপ করে বসে পড়লেন বিছানার ওপর। চোখ দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ে। বুকটা আজ কেনো জানি জ্বলছে ভীষন। বুকে হাত রেখে কিছুসময় চোখ বন্ধ করে অনুভব করলেন বুকের জ্বলন। একসময় আবিষ্কৃত হয় তার এই জ্বলন, ইরাজকে হারিয়ে ফেলার ভীতি থেকে জন্মেছে। ইরাজের আগে ও পরে বহুবার গর্ভপাত হওয়ায়, ইরাজ ভাই-বোনহীন একা আজ। ওই ইরাজ যে কতটা দামে কেনা কলিজার একমাত্র রত্ন তা কেবল আনতারাই জানেন। এজন্যই তো ছোটবেলা থেকে ইরাজকে কোনদিন কোনকাজে বাঁধা প্রদান করেননি। যা যখন যেভাবে চেয়েছে ইরাজ কেবল তা হাজির করা হয়েছে ওর সম্মুখে। আজ হঠাৎ-ই সেই ইরাজকে হারানোর আশংকা জেগেছে মায়ের মনে।
ইরাজ কোথায় হারিয়ে যাবে? বউয়ের মায়ায়! মন সায় দেয় আনতারার— একদম তাই। ইরাজ মেঘালয়াকে এ কদিনে আনতারার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে। বউয়ের জন্য মায়ের সাথে নিরবে লড়ছে। মেঘালয়াকে যেন আজ তার চেয়েও অধিক প্রাধান্য দিয়েছে ইরাজ! আনতারা খানম হঠাৎ-ই এক ভাবনায় আবারও থমকে উঠলেন, বুকটা ভার হলো। তিনি যখন চলে এলেন ডাইনিং রুম থেকে, তখনও ইরাজ তাকে থামায়নি! গভীর এক ক্ষত অনুভূত হলো বুকের ভেতরটায়। প্রায়প্রিয় পুত্র রত্নকে হারানোর এক নিরব আর্তনাদ বুকটা ছিদ্র করে চাইল যেন!
রুমে এসে রোজকার মতোই সিগারেটের প্যাকেট হাতে নিয়ে বেলকনিতে চলে যায় ইরাজ।
মেঘালয়া বুকে পাথর চেপে আছে। সে আসলেই জানত না সাংসারিক জীবনটা এমন নিষ্ঠুর আর কঠিন। কেমন যেনো লাগছে সবকিছু। এসবের সাথে মেঘালয়া একদম পরিচিত নয়। সে তো আব্বুর কাছে দেবীর মতো ছিল। যাকে আব্বু মুরগীর ডিম থেকে ফোঁটা সদ্যজাত ছানার মতো পাখার নিচে আগলে রেখেছিল। অথচ এই ভালোবাসাকে তাবির বলেছিল— ব্যাটারি চালিত পুতুল। আজ আরও একবার ঘৃনা হলো তাবিরের ওপর। খুব মন চাইল, আব্বু নামক ওই রাগী মানুষটির পাখার তলে গুটিশুটি মেরে আরও একবার আশ্রয় গ্রহন করতে। আবারও আব্বুর পুতুল হয়ে থাকতে। তবে কি মেঘালয়া আসলেই নির্বোধ! নিজের সুখের মহল হারিয়ে এই চারদেয়ালের শশুরবাড়ি নামক নিষ্ঠুর আলয়ে বন্দিনী হয়ে গিয়েছে? কুশনে মুখ চেপে চাপাস্বরে আর্তনাদ করে ওঠে। অস্পষ্ট স্বরে ‘আব্বু’ বলে ডেকে উঠল। ওপাশ থেকে আব্বুর জবাব নেই। খুব জানতে ইচ্ছে হলো, একাকী আব্বুটাও কি এখন এই মাঝরাতে মেঘালয়ার কথা ভেবে ছটফট করছে!
_
সপ্তাহখানেক ওভাবেই কেটে গেছে। এ বাড়িতে নিতান্তই আবর্জনার মতো রয়ে গেছে মেঘালয়া। ইরাজকে বুঝতে পারে না মেঘালয়া। আনতারা খানম সর্বদা মেঘালয়াকে এড়িয়ে নিরবে নিজের দায়িত্ব পালন করেন নিত্যদিন। যেন এ বাড়িতে মেহমান তিনি, কেবলই সবটা দায়িত্ব তার। মন থেকে কিছু করেন না মোটেই।
মেঘালয়াথ রাতে দেরীতে ঘুমানো আজকাল প্রায় অভ্যাসই হয়ে গিয়েছে। সকালে ঘুম থেকে জাগ্রত হতে বেলা দশটা বেজে গেল। উঠে দেখল রুমের জানালার পর্দা বাতাসে সরে যাওয়ার কারনে ঘরজুরে সূর্যের ঝাঁঝাল আলোয় মাখামাখি। সে নিজে এবং ইরাজও আলোতে খুব একটা আরামবোধ করে না। একবার তাকাল ঘুমন্ত ইরাজের দিকে। আলোতে নাক ছিটকে চোখ জড়িয়ে বিরক্ত মুখে শুয়ে আছে উপুর হয়ে। নিরস মুখে ইরাজকে দেখে নিয়ে আস্তে করে হেঁটে গিয়ে জানালার পর্দাগুলো টেনে দিল। ঘড়িতে দশটা পার হচ্ছে।
দ্রুত কোনমত চোখে-মুখে পানি দিয়ে নিচে নেমে এলো। রান্নাঘরে এককোনে গিয়ে দাঁড়াল। আনতারা খানম তার সহকারীকে নিয়ে রান্নায় ব্যস্ত। মেঘালয়াকে দেখেও গ্রাহ্য করলেন না। মেঘালয়া কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইল নিরবে। আনতারা খানম কাজের মেয়ে আয়েশাকে কিছু আদেশ করলে, মেঘালয়া ইশারায় আয়েশাকে থামিয়ে দিল। নিজে তা করতে যায়। তখনই আনতারা খানম কঠিন স্বরে বললেন,
‘মেঘা! আদিক্ষেতা দেখিও না তো মা। দেখছ তো সাহায্য করার লোক আছে। আর না থাকলেও আমি নিজের কাজ করে নিতে পারি। উপরে যাও। এ বাড়ির কোনকাজে প্রয়োজন নেই তোমাকে।’
মেঘালয়ার কাছে কথাগুলো বড্ড অগোছালো লাগল। শান্ত শীতল স্বরে প্রত্যাখান জানালেন আনতারা। পা উঠল না তার সেখান থেকে। এই আনতারার নিজের মেয়ে ছিল না। তেমনই মেঘালয়ার মা ছিল না। তবে যতবার, যতক্ষণ সময় মেঘালয়া আনতারা সহচর্যে থাকত, সে কখনোই মায়ের অভাব বোধ করেনি। আজ হঠাৎ-ই ভাবনায় এলো, তবে কি সম্পর্ক বদলেছে! আগে আনতারা মামনি ছিল। আজ কি শাশুড়ি হয়ে গিয়েছে! কয়েক দিনের ব্যাবধানে সবকিছু এভাবে পাল্টে যায় নাকি? আব্বু তবে ঠিকই
বলত— মেঘালয়া দুনিয়াটাকে কিঞ্চিত পরিমাণও জানে না। তবে এখন ধীরে-ধীরে জানতে শুরু করেছে। সেই ভুলে ভরা রাতের পর থেকে মেঘালয়ার জীবনে কেবলই বাস্তবতার কঠোর তাণ্ডব চলছে। আব্বুর কথা মনে পড়ল। দেখতে ইচ্ছে করল মানুষটিকে আজ। বুকে হামলে পড়ে অভিযোগ করতে ইচ্ছে করল,
‘আব্বু! তুমি না মেয়ের ভালোর জন্য সবটা করলে! তবে কেন তোমার মেয়ে একদমই ভালো নেই? শশুরবাড়ি তো ভালো থাকার জায়গা নয়, আব্বু। তার ওপর তোমার মেয়ের করা ভুল পিছুই ছাড়ছে না।’
গলার কাছে আটকে এলো ব্যথাগুলো জড়ো হয়ে। ধীর-স্থির পা ফেলে সেখান থেকে চলে এলো মেঘালয়া। রুমে এসে দেখল ইরাজ বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াল। সেখানেও রোদ। রুমে ফিরে এসে সোফাতে বসল। আজকাল মেঘালয়ার বারবার একই কথা মনে হয়, সেই আহ্লাদী মেঘালয়া খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে অনেক বেশি বড়ো হয়ে গিয়েছে। বুক ফুলিয়ে বড়ো করে এক শ্বাস নেয় সে। যন্ত্রনাগুলো ভেতরে কবর দেওয়ার চেষ্টা করে। হঠাৎ-ই উঠে ইমতিয়াজ সাহেবের রুমের দিকে গেল। তবে ব্যর্থ হলো। তিনি নেই অর্থাৎ আজ হয়ত জরুরি কাজ পড়ায় জলদি বেরিয়ে গেছেন।
আবারও রুমে ফিরে এসে বসে পড়ল সোফায়। অনেকটা সময় কেটে গেল। আনতারা খানম মোটেই ডাকতে এলেন না সকালের খাবারের জন্য। মেঘালয়ারও ক্ষুধা মরে যায়। সে নিস্তব্ধতার চাদরে নিজেকে ঢেকে বসে রইল নির্বিকার বহুক্ষন। বেশ অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পর সম্বিত ফিরল। আচমকা উঠে ওয়ারড্রোব থেকে নিজের নিত্য পরিহিত কাপড় নিয়ে গোসলে ঢুকল।
খুব শীঘ্রই যোহরের আজান হবে। সেসময় ঘুম ভাঙে ইরাজের। উঠে বসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে নিজের ওপরই বিরক্ত হয় সে। মুখে ‘চ্যাহ’ এর মতো শব্দ করে বসা থেকে দাঁড়াল। নিজের টাওয়াল খুঁজল। পেল না। মেজাজ আরও চটে যায় এবার। বাথরুমের দিকে নজর যেতেই দেখল তা ভেতর থেকে লক করা। এবং সেখান থেকে শাওয়ারের শব্দ আসছে। ভ্রু জড়িয়ে দাঁতে দাঁত পিষে চেয়ে রইল সেদিকে। ভারী পায়ে হেঁটে গিয়ে বাথরুমের দরজায় কষে থাবা মারল। ভেতর থেকে মেঘালয়া চমকে ওঠে প্রথমে। পরে যখন বুঝল, চিৎকার করে বলে ওঠে,
‘কী সমস্যা আপনার? দরজা ভাঙার পরিকল্পনা আছে নাকি?’
ইরাজ চিবিয়ে জবাব দেয়, ‘আমার সমস্যা তুই। আর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে যদি বের না হোস, বিনা পরিকল্পনায় দরজা ভেঙে ফেলব।’
মেঘালয়া চোখ উল্টিয়ে, মুখ বেঁকিয়ে বলল, ‘ভেঙে ফেলুন। বাবাই আবার একটা লাগিয়ে দেবে।’
ইরাজ ক্ষেপে ওঠে এবার, ‘মেঘ! অতিরিক্ত সাহস দেখাবি না মোটেই। বের হলেই তোকে আমার হাতে পড়তে হবে, ডোন্ট ফরগেট ইট।’
‘আপনি কি মূর্খ! ডিগ্রি তো ভালোই অর্জন করেছেন, অথচ মগজ খালি। এখানে ঘুমোতে তো আর আসিনি নিশ্চয়ই! গোসল করতে করতে কি করে বের হওয়া যায়?’ শেষের কথাটা চিল্লিয়ে বলে মেঘালয়া।
ইরাজ দাঁতের মাড়ি শক্ত করে বলে, ‘সেটা তুই ভাব, ড্যাম!’
‘আর কিছুক্ষন লাগবে আমার, ততক্ষণ ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন বাইরে।’
ইরাজের সচেতন নজরে তাকাল বাথরুমের দরজার দিকে। আচমকা দুটো লাথি বসাল দরজায়। ধমকে ওঠে, ‘জ্ঞান দিচ্ছিস আমায়? এখনই তোকে গোসলে ঢুকতে হলো? জীবনে তো গোসল করতে দেখিনি। আমার বাড়িতে এসে তোর গোসলের শখ হয়েছে, তাও আবার যখন আমি ঢুকব তখন?’
এমন একটা কথার কী জবাব দেবে মেঘালয়া। চুপ রইল।
ইরাজ রুমের মধ্যে পায়চারী করতে শুরু করে। বিরবির করে বলল,
‘বা লে র বিয়ে না করে একটা গরুর খামার দিলেও পারতাম। গরুর দুধ বিক্রি করে বড়োলোক হওয়া যেত। এসব মেয়েলোক ঘরে এনে এক্সট্রা ঝামেলা পোহানোর প্লান কোন শালার মাথায় এসেছিল?’
চলবে…
[ আজ থেকে ইনশা-আল্লাহ নিয়মিত হব। আপনারা দোয়া করবেন🙂🤐 ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করবেন।]