কি_নেশায়_জড়ালে #পর্ব_৯

0
512

#কি_নেশায়_জড়ালে
#পর্ব_৯
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

রূপা অফিসে এসে অবাক হয়।আহনাফ অফিসে কি করছে..?
রূপা আহনাফ কে ওয়েটিং রুমে দেখেও না দেখার মতো চলে গেলো।
আহনাফ মোবাইলে কারো সাথে কথা বলছে তাই সে রূপাকে খেয়াল করেনি।

রূপা আজকে সময়ের আগেই চলে এসেছে। কাল লেইট করে এসে অনেক শাস্তি পেতে হয়েছে।

নিজের ডেস্কে গিয়ে বসে ভাবতে লাগলো। আহনাফ কি জেনে গেছে রূপা এই অফিসে কাজ করে .? অনেক হয়েছে আর নয়। আহনাফ যদি এবার বাড়াবাড়ি করে রূপাও ছেড়ে দিবে না। এতো দিন শান্ত ভাবে বুঝিয়েছে৷ আহনাফ এর ভাই রূপার জন্য মা’রা গেছে। রূপা নিজেকে এখনো আহনাফ এর ভাই এর খু’নি মনে করে।
হঠাৎ মনে পড়ে যায় সেই চার বছর আগের কথা। পুরো তিন মাস রূপা কারো সাথে কথা বলেনি সব সময় দরজা বন্ধ করে অন্ধকার রুমে নিজেকে আটঁকে রেখে ছিলো।
এক নিজেকে একজন খু’নি মনে হতো আরেক আহনাফ এর সেই কথা গুলো রূপা কে ভেতর থেকে ভেঙে দিয়ে ছিলো। আহনাফ অভিনয় করে ছিলো কিন্তু রূপার ভালোবাসা সত্যি ছিলো। রূপা কলেজ যেতে পারতো না। সেই ভিডিও দেখে সবাই হাসতো। নানা কথা বলে মজা নিতো। রূপার জীবন একজন পাগলে পরিণত হয়ে ছিলো। কতোটা ভয়ংকর ছিলো সেই এক একটা দিন। ফ্রেন্ডসার্কেলের সবাই তাকে খু’নি বলতে শুরু করলো। আশেপাশের মানুষে পাগল বলতে শুরু করলো, রাতের আঁধারে আহনাফ এর সেই তিক্ত কথা গুলো মনে পড়ে চিৎকার করে কান্না শুরু করতো। ভাবতেই রূপার চোখ ভিজে উঠলো।

সাজ্জাদ আহনাফ কে দেখে অবাক হয়ে বললো,’ তুই এখানে..? ‘
আহনাফ সাজ্জাদ কে কিছু না বলে সাজ্জাদের পিছু পিছু হাঁটা ধরলো।
সাজ্জাদ নিজের ক্যাবিনে ঢুকতে আহনাফ আগে আগে সাজ্জাদ এর চেয়ারে বসে পরলো।
সাজ্জাদ আহনাফ এর দিকে তাকিয়ে হেঁসে বললো, ‘ বড় হবি কবে হ্যাঁ এখনো সেই বাচ্চাদের মতো বিহেভিয়া।
আহনাফ হেঁসে বলে উঠলো, ‘ ভাই তোমার জিনিস মানেই আমার। আর তোমার জিনিস নেওয়ার মজাই আলাদা।
সাজ্জাদ আহনাফ এর কথা শুনে কিছুই বললো না। এক কথায় সে আহনাফ এর এইসব কথা শুনতে শুনতে অবস্তু।

আহনাফ সাজ্জাদ এর ক্যাবিন থেকে সামনা সামনি তাকাতেই অবাক হয়ে বলে উঠলো” রূপা”

সাজ্জাদ কিছু দরকারী ফাইল এর জন্য রূপাকে ডাকলো।

রূপা পারমিশন নিয়ে সাজ্জাদ এর কাছ থেকে ফাইলগুলো নিতে আসলো।
আহনাফ কে দেখেও না দেখার মতো ফাইল নিয়ে চলে গেলো।
আহনাফ এক দৃষ্টিতে রূপার দিকে তাকিয়ে আছে।

সাজ্জাদ একবার আঁড়চোখে আহনাফ এর দিকে তাকালো।

আহনাফ এখনো রূপার দিকে তাকিয়ে আছে।

সাজ্জাদ গম্ভীর কন্ঠে আহনাফ কে বলে উঠলো, ‘ হঠাৎ কেনো অফিসে..? ‘

আহনাফ রূপার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ ভাই আমি আজ থেকে ভেবে নিয়েছি তোমার অফিসে জব করবো।’

সাজ্জাদ শান্ত দৃষ্টিতে আহনাফ এর দিকে তাকালো। আহনাফ এর চোখ এখনো রূপার দিকেই। আহনাফ কে এভাবে রূপার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাজ্জাদ বলে উঠলো, ‘ তোর নিজের কোম্পানি থাকতে আমার কোম্পানিতে জব করবি কেনো..?’

আহনাফঃ ভাই ইচ্ছে হলো। আমি এখন আসি। কাল থেকে আমিও তোমার অফিসে জব করবো।
সাজ্জাদঃ আমার অফিসে এখন লোক নেওয়া হবে না।
আহনাফ সাজ্জাদকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো, ‘ প্লিজ ভাই প্লিজ..!
সাজ্জাদ আর আহনাফ কে না করতে পারলো না।

সাজ্জাদ নিজের ক্যাবিন থেকে বেরিয়ে রূপার সামনে আসলো।
সাজ্জাদঃ ফাইল দেখা হয়েছে..?
রূপা মাথা নিচু করে বলে উঠলো, ‘ না স্যার। আসলে স্যার এই দিকটা আমি বুঝতে পারছি না। ‘

সাজ্জাদ রূপার পেছনে গিয়ে সুন্দর করে সবটা দেখিয়ে দিচ্ছে।
রূপা থম মেরে বসে আছে। সাজ্জাদ ঝুঁকে রূপাকে সবটা বুঝিয়ে দিচ্ছে।
হঠাৎ সাজ্জাদের হাত রূপার হাতে লাগতেই সাজ্জাদ সরে গেলো।
রূপাকে জিজ্ঞেস করলে সে কি বুঝেছে..? রূপা মাথা নেড়ে বুঝালো সে বুঝেছে।
আসলে তো সে কিছুই বুঝেনি। সাজ্জাদ যতক্ষন ওর পাশে ছিলো দমবন্ধ হওয়ার মতো অবস্থায় ছিলো রূপা।

ভেতর থেকে সবটা দেখলো আহনাফ। কেনো জেনো রূপার পাশে সাজ্জাদকে একদম সহ্য হয় না আহনাফ এর। কেমন জেনো ভয় কাজ করে ।

রূপা কাজ করছে এই সময় একটা মেয়ে এসে বললো,’ হায় আমি দিনা।
রূপা হেঁসে বললো,’ আমি রূপা.. ‘

কিছু সময়ের মধ্যে রূপা আর দিনার মধ্যে অনেকটা বন্ধুত্য হয়ে গেলো।’

দিনার কথায় বুঝা গেলো সে সাজ্জাদ কে অনেক আগে থেকে পছন্দ করে । কিন্তু কখনো বলার সাহস হয়নি।
রূপা বুঝে পেলো না কি দেখে এতো সুন্দর একটা মেয়ে এই সাজ্জাদ এর প্রেমে পরলো।

রূপা আবার ভাবলো সাজ্জাদ ফর্সা মুখে চাপ দাঁড়ি, হাইট 6ফুট, সিল্কি চুল, হ্যাডসাম পুরুষ। হুম একদম ঠিক আছে দিনার সাথে। মেয়েটাও ফর্সা কিউট, দুইজন কে খুব ভালো মানাবে।

আহনাফ কফি খেয়ে বিভিন্ন কথা বলে বেরিয়ে গেলো।

রূপার ডেস্কের সামনে এসে বলে উঠলো, ‘ আদের আবার দেখা হয়ে গেলো। শুধু আজ নয় এখন থেকে প্রতিদিন নিয়ম অনিয়মে দেখা হবে। ‘

রূপা বিরক্তকর দৃষ্টিতে তাকালো আহনাফ এর দিকে।
এই ছেলের সাথে দেখা হলেই কি আর না হলেই কি। মানে এতো দিন একটায় হয়নি এখন দুইটাই জ্বলানোর জন্য একি অফিসে!!

আহনাফ ডেভিল একটা হাসি দিয়ে রূপাকে চোখ মেরে চলে গেলো।
রূপা রাগে সামনে থাকা ফাইলটা চেপে ধরলো।

আহনাফ কিছু দূর গিয়ে আবার ফিরে আসলো।
সাজ্জাদ ভেতর থেকে সবটাই দেখছে।
আহনাফ রূপার সামনে এসে বলে উঠলো, ‘ আই লাভ ইউ রূপা। তুমি যেখানে আমিও সেখানেই। আমি তোমার পিছু ছাড়বো না।’

রূপা বসা থেকে দাঁড়িয়ে আহনাফ এর সামনে এসে মুচকি হাসলো।
আহনাফ রূপার মুখে হাসি দেখে বুঝলো রূপা ওকে ক্ষমা করে দিয়েছে। রূপা হাসছে মানে ওর রূপা ওর কাছে খুব তারাতারি ফিরে আসবে।

রূপা আহনাফ এর সামনে গিয়ে ঠাসসসস করে ওর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। কলার চেপে ধরে বলে উঠলো, ‘ দ্বিতীয় বার আমার আশেপাশে আপনার এই বিশ্রী চেহারা দেখলে পরিণাম ভালো হবে না। এতোদিন ছেড়ে দিয়েছি বলে ভাববেন না সব সময় আপনাকে ছাড় দিবো।’
কাল থেকে আসেন না হলে আজকেই অফিসে এসে বসে থাকেন। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। শুধু এই থাপ্পড়টার কথা মনে রাখবেন। ‘

অফিসে সবাই অবাক হয়ে রূপা আর আহনাফ এর দিকে তাকিয়ে আছে।
(বেটা যা বলার বলে গেছোস আবার কেন আইছোস থাপ্পড় খাইতে)
সাজ্জাদ মুচকি হেসে মুখে হাত দিয়ে আছে।

সাজ্জাদ ম্যানেজার কে ফোন দিয়ে কিছু একটা বললো।

ম্যানেজার সবার সামনে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ এখানে কি হচ্ছে..? যাও যে যার কাজ করো গিয়ে। ‘

আহনাফ রেগে সেই কখন বেরিয়ে গেছে।
রূপা শান্ত দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকিয়ে নিজের কাজে বসে পরলো। জেনো এখানে কিছুই হয়নি।

__________

কেটে গেছে বেশ কয়েকদিন আহনাফ কে এই কয়দিন কোথাও দেখা যায়নি।তাতে রুপার কিছু যায় আসে না।

রূপা আর মাহি রাতে বের হলো ফুচকা খেতে।

মাহিঃ আচ্ছা দোস্ত আমি তো দশ দিনের ছুটিতে ছিলাম। তোর কোনো সমস্যা হয়নি তো..?
রূপাঃ না..
মাহিঃ আহনাফ কোথায়..?
রূপাঃ আমি কিভাবে জানবো। আমি কি ওর বডিগার্ড নাকি।
মাহিঃ রেগে জাস কেনো।

রূপাঃ বেশি কথা না বলে ফুচকা খা।

মাহিঃ এই মামা ঝাল করে দুই প্লেট ফুচকা দেন তো।

~ মামা আমাকেও দুই প্লেট দেন।

রূপা আর মাহি পেছন ফিরে তাকালো।

রিধি দাঁড়িয়ে আছে।
রিধি কে দেখে রূপা হেঁসে বললো, ‘ রিধি কেমন আছো..?’
রিধিঃ জ্বি আপু আলহামদুলিল্লাহ। তুমি..?
রূপাঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
মাহি বিরক্ত হলো রিধি কে দেখে।
রিধি রূপার পাশে বসে বলে উঠলো, ‘ আপু তুমি তো ঝাল খেতে পারো না। একদম ঝাল খাবে না। অনেক দিন পর তোমার সাথে দেখা। আজ অনেক আড্ডা দিবো।
রূপাঃ তুমি তো চাইলে বাসায় আসতে পারো।
রিধিঃ আপু দাদিমা বাসা থেকে বের হতে দেয়না।
মাহি বিরবির করে বলে উঠলো, ‘ মিথ্যাবাদী মেয়ে। তুই এটা বললি আর আমরা বিশ্বাস যাবো। সারা শহর হাতে রাখে তাকে নাকি বাসা থেকে বের হতে দেয়না ‘

রিধি মাহির দিকে তাকিয়ে বললো,’ কিছু বললেন আপু..?’
মাহি গম্ভীর কন্ঠে বললো, ‘ না..’

রিধি মাথা ঘামালো না। সে ভালো করেই জানে মাহি ওকে পছন্দ করে না।

এভাবে অনেক কথা বললো।
ওদের জন্য ফুচকা আসতেই মাহি বলে উঠলো, ‘ তুমি একটা মেয়ে এক সাথে দুই প্লেট খাবে!!??
রিধিঃ না আপু। আমার সাথে অন্য একজন এসেছে।
মাহি ফুচকা মুখে দিয়ে বলে উঠলো, ‘ মামা তো ফুচকা অনেক ঝাল দিয়ে ফেলেছে। রূপা তুই খেতে হবে না। ‘

রিধি বলে উঠলো, ‘ আপু আমার পার্টনার। ‘

রূপা আর মাহি তাকালো। আহনাফ দাঁড়িয়ে আছে।
মাহি অবাক হয়ে বললো” আহনাফ ”
আহনাফ হেঁসে রিধির কাছে এসে বললো,’ আমার কাজ শেষ বাসায় চলুন..’
রূপা আহনাফ কে দেখেও না দেখার মতো একের পর এক ফুচকা খেতে শুরু করলো।
মাহি রেগে বলে উঠলো, ‘ পাগল হয়েছিস রূপ কি শুরু করেছিস। এতো ঝাল ফুচকা খেতে কে বলেছে।
রূপা ফুচকা খেয়ে হাসি দিয়ে রিধি কে বিদায় জানিয়ে হাঁটা ধরলো।
মাহি টাকা দিয়ে রূপার পিছু পিছু হাঁটা ধরলো।
আহনাফ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে রূপার দিকে। খোলা চুল, কালো শাড়ি,খালি হাত, খালি গলা, কানে ছোটো টপ জিনিস। শ্যামবর্ন গায়ের রং। কি মায়াবী লাগছে রূপাকে। মুহূর্তে আহনাফ এর সব রাগ উড়ে গেলো এক রাশ মুগ্ধতা এসে ভির জমালো চোখে মুখে।

রূপা কিছু দূর আসতেই একটা গাড়ি দেখে থেমে গেলো।

ঝালে রূপার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরছে।

মাহিঃ বলে ছিলাম খাস না তাও খেলি পানি তো খা।
রূপা মাহি কে কিছু না বলে সামনে এগিয়ে গেলো।
সাজ্জাদ বিরক্ত মুখে গাড়িতে বসে আছে।
রূপা গিয়ে গাড়ির কাঁচে আঘাত করলো।
সাজ্জাদ কাচ নামিয়ে রূপাকে দেখে অবাক হয়ে বললো,’ তুমি এখানে..? ‘
রূপাঃ আমারও একি প্রশ্ন আপনি এখানে..?
সাজ্জাদঃ গাড়ির টায়ার নষ্ট হয়ে গেছে।
রূপাঃ এখন বাড়িতে যাবেন কিভাবে..?
সাজ্জাদ রূপার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ সেটাই ভাবছি। ডাইভার আঙ্কেল কে কল দিয়েছি বলেছে আসতে দেরি হবে। আমার এখন বাড়িতে যাওয়া খুব বেশি প্রয়োজন।
রূপাঃ কিছু না মনে করলে আপনাকে আমার স্কুটারে করে পৌঁছে দিয়ে আসতে পারি৷
সাজ্জাদ যেনো এই কথার অপেক্ষায় ছিলো।
রূপা বলতেই সে রাজি হয়ে গেলো।
রূপা মাহিকে বললো বাড়িতে চলে যেতে। সে সাজ্জাদ কে নামিয়ে দিয়ে চলে আসবে।

সাজ্জাদ রূপার দিকে একটা পানির বোতল এগিয়ে দিলো।
রূপাঃ প্রয়োজন নেই স্যার তবে ধন্যবাদ।

মাহি সাজ্জাদ আর রূপার দিকে তাকিয়ে হাসলো।

এই যে কালো শাড়ি এটা মাহি আজ রূপাকে দিয়ে বলে ছিলো। শাড়ি পড়ে ফুচকা খেতে যাবো রেডি হয়ে নে। রূপার ও কালো শাড়ি খুব পছন্দ। তাই কিছু জিজ্ঞেস না করে পড়ে নিয়েছে। মাহি জোর করেও রূপাকে সাজাতে পারেনি।

কিছু আসলেই কি এই শাড়ি মাহি দিয়েছে নাকি অন্য কেউ!!?।

সাজ্জাদ কখনো স্কুটারে উঠেনি তাই ভয়ে রূপার কাঁধে হাত রাখলো।
পেছন ফিরে মাহির দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো।

স্কুটার চলে গেলো মাহির চোখের আড়ালে।

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here