অমানিশায়_সেই_তুমিই #লেখায়_তেজস্মিতা_মর্তুজা ১১.

0
414

#অমানিশায়_সেই_তুমিই
#লেখায়_তেজস্মিতা_মর্তুজা

১১.

দুপুর প্রায় দু’টোর কাছাকাছি। ইরাজ গোসল শেষে রুমে এসে আয়নার সম্মুখে দাঁড়াল। গলায় টাওয়াল ঝুলছে, অর্ধভেজা চুল, মুখটা মাত্রাতিরিক্ত ভারী লাগছে দেখতে।
মেঘালয়া সবে তৈরী হয়ে এসে দাঁড়িয়েছে পেছনে। তা দেখে ইরাজ জিজ্ঞেস করল,

‘কোন বাণিজ্যে বের হবি তুই?’

এটা কোন প্রশ্নের ধরন হলো? মেঘালয়া এর চেয়ে বেশি কিছু অবশ্য আশাও করেনা ওই ঘাঁড় ত্যাড়ার কাছে।অসন্তুষ্ট নজরে চেয়ে বলল, ‘আব্বুর কাছে যাব।’

ইরাজ বলল, ‘তো?’

‘আপনি সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন। আর এর বিপরীতে কোন উল্টোপাল্টা কথা নয়।’

ইরাজ এ পর্যায়ে কিছু বলল না। মাথায় কয়েকবার টাওয়াল চালিয়ে টাওয়ালটা ছুঁড়ে মারল কোন একদিকে। এমন একটা দৃশ্য দেখে, রাগ উঠল মেঘালয়ার। কিছুক্ষন আগে ইরাজের অবুঝের মতো আচরণে এমনিতেই চটে আছে মেঘালয়া। এখন আবার এমন একটা কাজ। প্রায় চিৎকার করেই বলল,

‘আপনি গণ্ডমূর্খের চেয়েও অতি মূর্খ। টাওয়ালটা কোথায় ফেললেন, আর পড়লই বা কোথায়? সারাদিন রুমে থাকি আমি, রুমটাকে গুছিয়ে রাখি আমি। তা লণ্ডভণ্ড করেন আপনি, রুমের দাবিও করেন আপনি। যুক্তির বড়োই অভাব আপনার কর্মকান্ডে।’

ইরাজ ঘুরে তাকায়। ভাবলেশহীনভাবে আবার সামনের দিকে ফিরে তাকিয়ে নির্লিপ্তভাবে বলল, ‘এক্সাক্টলি। রুমটা তো আমার, অথচ থাকিস তুই। এর ভাড়া তো আর তোর বাপে দেয় না। ভাড়ার বদলে রুমটা গুছিয়ে রাখিস। এ নিয়ে প্যানপ্যান করলে কানটা এক চড়ে গরম করে দেব।’

বলেই বিছানার ওপর থেকে ব্লেজারটা তুলে মেঘালয়ার ওপর ছুড়ে দিয়ে বলল, ‘এটা আয়রন কর।’

মেঘালয়া সেটা হাতে ধরে বলল, ‘পারব না। আমি আপনার বেতনভুক্ত কর্মচারী না। আর আপনার এই মরুভুমি মার্কা বাড়িতে ভাড়া দিয়ে থাকার মতো বোকা আমি নই। আজই যাচ্ছি আমার বাপের বাড়ি।’

শেষের কথাটিতে ইরাজ উপহাস করে হেসে ওঠে। বলল, ‘তা যা। আমার রুম খালি হোক, হাওয়া বাতাস আসুক। তবে এ কদিন যে থেকেছিস বিনা পয়সায়, তার বদলে আমার ব্লেজার আয়রন করে রেখে আস্তে করে চলে যা।’

মেঘালয়া কপাল জড়িয়ে ফেলল। ব্লেজার হাতে নিয়ে ইরাজের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, ‘যাচ্ছেন কোথায়?’

‘জবাবদিহি করতে পারব না।’

‘আমিও।’

ইরাজ ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘আমিও কী?’

‘আয়রন করতে পারব না।’

‘সময় খুব কম। কাজ না হলে তোর ঘটে শনি আছে।’

মেঘালয়া বলে উঠল, ‘ শনি থাক অথবা রবি। আমি যাব আপনার সঙ্গে।’

ইরাজ ঘুরে তাকাল। মেঘালয়াকে দেখল পরখ করে। অতঃপর খানিকটা পেছনে সরে গিয়ে দাঁড়িয়ে দুপাশে দু’হাত ছড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘আমি তোর থেকে যথেষ্ট দূরে। তোকে ধরে রেখেছি বলে তো মনে হয় না।’

মেঘালয়া গম্ভীর স্বরে বলল, ‘আপনি সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন। নয়ত কোথাও একা বের হব, যা নয় তা কথা শুনতে হবে। এখন থেকে আপনার সঙ্গে বের হব।’ মেঘালয়ার কথায় চাপা ক্ষোভ ঝরে পড়ে।

ইরাজ তা বুঝেও বুঝল না যেন। উল্টো ওকে খোঁচা দিয়ে বলল, ‘তোর বাপের রাখা রক্ষী আমি তোর?’

মেঘালয়া আওয়াজ সামান্য নিঁচু করে বলল, ‘আপনি কী, তা আপনার নিজের জানা উচিত।’

বলেই ব্লেজারটি নিয়ে আয়রন করতে বসে গেল। ইরাজ বিছানায় বসে রিমোট হাতে তুলে নিয়ে এসির টেমপারেচার কমিয়ে দেয়। চারদিকে গুমোট গরম। পরিবেশ কেমন থেমে আছে। গাছের পাতা ভুলেও নড়ছে না। শান্ত পরিবেশে গরমটা প্রকট লাগছে। ইরাজ অতিষ্ট হয়ে তাড়া দিয়ে বলল,

‘দ্রুত কর, লেইট হচ্ছি আমি।’

মেঘালয়ার কিছুক্ষন ধরেই কিছু বলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। জিহ্বা দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে ইরাজকে উদ্দেশ্য করে বলল,

‘আমি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করতে চাই।’

ইরাজ উপহাস করে, ‘তোর রেজাল্ট কি আসবে কোন আইডিয়া আছে?’

এ কথা শুনে মেঘালয়া থমকে যায়। নিজেও চিন্তিত হয়ে উঠল। ইন্টারমিডিয়েট লাইফটায় সে আসলেই বড্ড অমনোযোগী ছিল। সর্বক্ষন তাবিরের জ্বালাতনে পড়ালেখার মানসিকতা থেকে বেড়িয়ে এসেছিল। এসব ভাবতে ভাবতেই ততক্ষনে হাত থেমে গেছে ওর। ইরাজ তাকিয়ে দেখল মেঘালয়ার উদাসীন ভাব। ভেতরে কেন জানি জ্বলে উঠল বোধহয়! ক্ষিপ্র গতিতে দ্রুত পায়ে উঠে এসে তড়াক করে ওর হাত থেকে আয়রন কেড়ে নিল। থাপ্পড় মারার ভঙ্গিতে হাত এগিয়ে নিয়ে যায়। মেঘালয়া চমকে উঠে ঘাঁড় কাঁত করল। ইরাজ কিছু একটা বলে বকে উঠল অস্পষ্ট স্বরে। ব্লেজারটা যদিও পুড়ে যায়নি তবে তা ছুঁড়ে মারল মেঝেতে। তা আর গায়ে চড়াল না। ক্ষুব্ধ স্বরে বলল,

‘আমার কোন কিছুতেই তুই মনোযোগ দিতে পারিস না, না? আমি তোর কাছে চিরদিন গুরুত্বহীনই থেকে গেলাম?
বা লে র একটা ছোট্র কাজ দিলাম, তার মধ্যে অন্য ভাবনার সাগরে ডুব দিয়েছিস? ডুবে মরে যাসনি?’

বলেই শার্ট তুলে কাঁধে চড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। মেঘালয়া কেবল মেঝের দিকে চেয়ে রয় নিরবে। ইরাজ কি বুঝাতে চায়! ইরাজ কি চায়! ইরাজ আচমকা ক্ষেপে ওঠে, কখনও স্বাভাবিক, কখনও দুষ্ট তো কখনও কেমন জটিল হয়ে ওঠে। এতসবের মাঝে মেঘালয়ার নিজেকেই কেমন উন্মাদ উন্মাদ লাগে। ক্ষুধাও লেগেছে এবার। সকাল থেকে কিছুই খাওয়া হয়নি। আর বসে রইল না, রুম থেকে বেড়িয়ে ডাইনিং রুমে এলো। ততক্ষনে ইরাজ আপন মনে খেতে বসেছে। তবে আজ আরআনতারা খানমকে প্রতিদিনের মতো পাশে দাঁড়িয়ে আহ্লাদের সঙ্গে ইরাজকে খাওয়াতে দেখা গেল না। মেঘালয়া এসে দেখল, খাবার সব সাজিয়ে রাখা আছে। সে দীর্ঘশ্বাসটুকু গোপন করে নিরবে খেতে বসল।

গাড়ি চলছে নিজ গতিতে। ইরাজের চেহারা গুরুগম্ভীর। স্থির চোখদুটো সামনের গাড়ির কাঁচ ভেদ করে রাস্তা মেপে গাড়ি চালনায় ব্যস্ত। মেঘালয়া দেখল, ইরাজ ওদের বাড়ির দিকে গাড়ি ঘুরিয়েছে। আর চুপ করে থাকা হলো না। জিজ্ঞেস করল,

‘এদিকে কেন? আব্বু তো এখন অফিসে..

ইরাজের কথায় থেমে গেল, ‘আজ বাড়িতে আছে।’ সংক্ষিপ্ত জবাব। শীতল স্বর। মেঘালয়া একবার তাকাল ইরাজের দিকে। দেখে মনে হচ্ছে যেন এই মুহূর্তের সকল মগ্নতা ড্রাইভিংয়ে। অথচ মেঘালয়ার অন্য কিছু মনে হয়। যেন ইরাজ কোন এক অজানা উদাসীনতায় বুদ হয়ে আছে।

মেঘালয়াদের বাড়ির সম্মুখে এসে গাড়ি থামল। মেঘালয়া নিঃশব্দে নেমে দাঁড়াল। তবে ভেতরে যেতে অগ্রসর হলো না, আর না ইরাজ গাড়ি স্টার্ট করল। সামান্য কিছুসময় দুজনেই নিরবতায় কাটিয়ে, তা ভঙ্গ করতে চায় মেঘালয়া। ঠোঁট দিয়ে অপর ঠোঁট চেপে ধরল। কিছু বলার জন্য হাঁ করেও আবার থেমে যায়। ইরাজ অদ্ভুত আওয়াজে জিজ্ঞেস করে ওঠে,

‘একা ফিরতে পারবি?’

মেঘালয়া পূর্ণদৃষ্টি মেলে তাকাল ইরাজের দিকে। ইরাজও ঠিক ওই মুহুর্তে ওর দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে যায় অপরিকল্পিত ভাবে দুজনের। মেঘালয়া দ্রুত চোখের নজর নত করল। আস্তে ধীরে দু’দিকে ঘাঁড় নাড়ল। ইরাজ আচমকা শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করে ধমকে ওঠে,

‘একা বাড়ি ছেড়ে পালাতে পারিস, তবে একা ফিরতে পারিস না। ন্যাকামি!’

মেঘালয়া অতিষ্ঠ ভঙ্গিমায় জিজ্ঞেস করে ওঠে, ‘এ কথা আর কতদিন শোনাবেন?’

দৃঢ় কণ্ঠে জবাব এলো, ‘আজীবন।’

মেঘালয়া সচকিত হয়। খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো এ মুহূর্তে, তাহলে কি আজীবন সঙ্গে রাখবেন! অন্তত এ কথা শোনানোর জন্য হলেও!

মুখে বলতে পারল না। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল দুপুরের তেজ্বী সূর্যের তীর্যক তাপময় আলোর নিচে। ঘেমে উঠছে শরীর, তবে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে যেন! ইরাজ আদেশ করল, ‘যা ভেতরে যা।’

বলেই আবার কিছু মনে করার ভঙ্গিতে বলল, ‘আর তোর পাঠ্যবই গুলো সঙ্গে নিবি।’

মেঘালয়ার মস্তিষ্কে কথাটা পৌঁছাতেই একটু চমকাল, সঙ্গে সঙ্গে আবার মনটা খুশিতে নেচে উঠল যেন। দ্রুত চোখ ঘুরিয়ে তাকাল ইরাজের দিকে। সে গাড়ি স্টার্ট করতে ব্যস্ত। মেঘালয়া জিজ্ঞেস করে,

‘কখন আসবেন আপনি?’

ইরাজ সামনের দিকে তাকিয়েই জবাব দিল, ‘এসে কল করব তোর বাপের বাড়ির নাম্বারে।’ বলে আর দাঁড়াল না। মেঘালয়াকে ফেলে, গাড়ি এগিয়ে চলল সামনের দিকে।

_

বিকেলের দিকে প্রকৃতি বেশ অশান্ত হয়ে উঠেছে, চারদিকে বয়ে যাওয়া বাতাস জানান দিচ্ছে ঝড় না হলেও অন্তত বৃষ্টি হবেই। সেই সঙ্গেই আব্বুর সম্মুখে মেঘালয়া চোখ দুটোও যেন শ্রাবনের আকাশে মেঘ ঝরা বাঁধাহীন বৃষ্টির মতো বর্ষনে ভিজে উঠেছে। দুজনের মান-অভিমানের পালা ভেঙে এবার যেন অভিযোগগুলো উঠে এসেছে সম্মুখে। বাবা তো অভিযোগ করতে জানে না সন্তানের সম্মুখে। তাই মেঘালয়ার মুখেই ফুটে উঠল, অনুযোগের সুর,

‘আব্বু! ভুল কি কেবল তোমার মেয়েই করেছে? তোমার মেয়ের আব্বু করেনি?’

পাগলি মেয়ের এমন সরল অভিযোগে বাবার বুকটা ভিজে যায় নিমেষেই। সজল চোখে চেয়ে রইলেন কেবল হেলাল সাহেব মেয়ের ফুলো চোখদুটোর পানে। তার ছোট্র মেঘালয়া আজ শশুরবাড়ি থেকে এসেছে, তাও আবার শশুরবাড়ির নামে নালিশ জানাতে। ভাবতেই বুকে চাপ অনুভূত হলো। তিনি একদম চাননি তার সাজানো পুতুলটিকে নিজের থেকে দূর করতে। তবে পরিস্থিতি তো সায় দিল না সেদিন এ চাওয়াতে। তার বাড়ি জুরে তরতর করে আহ্লাদি পা ফেলে চষে বেড়ানো মেঘালয়া আজ অন্যের বাড়ির বউ!

মেঘালয়া ভেজা স্বরে আবারও বলে উঠল,

‘আব্বু! মামনি কবে যেন মামনি থেকে শাশুরি হয়ে উঠল! আজ আমি তার কাছে, তার বাড়িতে অবস্থানকারী এক অপ্রিয় সত্য। যা সে পারছে না উগরে ফেলে দিতে, গ্রহন করতে তো মোটেই পারছে না। তুমি কি ভুল সিদ্ধান্ত নাও নি– ও বাড়িতে বিয়ে দেওয়ার কথা ভেবে? তুমি মেয়ের সুখের নেশায় মেয়েকে ছোটো করে তোলো নি? যে ভুল আমি আগে তোমার সঙ্গে করেছি, তা তুমি সুধরাতে গিয়ে পুনরায় আমার সঙ্গে করেছ, আব্বু!’

মেয়ের বুকে যে অন্তহীন চাপা আর্তনাদের স্তর জমেছে তা বেশ বুঝলেন হেলাল সাহেব। এ ব্যাপারে তিনি আন্দাজ সেদিনই করেছিলেন, যেদিন আনতারা খানম এখানে এসেছিল এবং তিনি আনতারার চোখে মুখ-চোখে অপ্রসন্নতার ক্ষোভ লক্ষ্য করেছিলেন। আজ সত্যিই তিনি বাকরুদ্ধ। মেয়ের অভিযোগের বিরুদ্ধে, নিজের পক্ষে সাফাই দেওয়ার মতো উপযুক্ত যুক্তি নেই তার কাছে।

_

আকাশ সেই বিকেল থেকে মেঘাচ্ছন্ন। তুলনামূলক তাড়াতাড়িই আজ বেড়িয়ে পড়ল ইরাজ অফিস থেকে। তাছাড়া মেঘালয়াকেও পিক করতে হবে। রাত আটটার বেজে গিয়েছে। ইরাজ রাস্তায় বেরোনোর কিছুক্ষণের মাঝে ঝমঝম করে বৃষ্টি নামল জমিনে। তার মাঝেই গাড়ি চালিয়ে সে মেঘালয়াদের বাড়ির রাস্তার দিকে অগ্রসর হয়। ক্রমেই বৃষ্টির ফোঁটা ভারী হতে লাগল। সাথে বাতাসও প্রবল বেগে বেড়ে গেল যেন! প্রায় এক তাণ্ডবপূর্ন ঝড়ের রূপ নিলো আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘের রাশিগুলো।

এই দুর্যোগের মাঝে গাড়ি চালাতে চালাতে মেঘের এই প্রলঙ্কর রূপের কথা মাথায় আসতেই, মেঘালয়ার মুখটা স্মৃতিতে ভেসে উঠল এক পলকের জন্য। ইরাজ একটু বিভ্রান্ত হয়ে ওঠে যেন! মেঘালয়া তার জীবনে অমাবস্যার রাতে এক খণ্ড মেঘ। তাইতো ইরাজ সর্বদাই মেঘালয়াকে ‘মেঘ’ বলেই সম্বোধন করে; সকলে যেখানে ছোটো করে মেঘালয়া বলে থাকে। বুকের ভেতরে সূক্ষ্ম ছিদ্রক ব্যাথারা নেচে উঠল যেন! মেঘ! এই এমনই তাণ্ডব চালিয়িছে তার জীবনে মেঘালয়া। ইরাজ নামক শান্ত প্রকৃতিকে অশান্ত, অস্থির, বিক্ষিপ্ত করে তুলেছে বারবার। জানায়-অজানায় বারবার আঘাত করেছে!

এসব ভাবতে ভাবতে এসে পৌঁছাল মেঘালয়াদের বাড়ির সম্মুখে। বিদ্যুতহীন অন্ধকারচ্ছন্ন এলাকা। মাঝেমধ্যে মেঘে মেঘে ঘর্ষনে বিদ্যুতের ঝলকানি আকাশকে বিদীর্ণ করে পৃথীবিকে ক্ষণিকের জন্য আলোকিত করে তুলছে। এরই মাঝে একবার চোখ তুলে তাকাল মেঘালয়াদের সাদা বিল্ডিংটির দিকে। তৎক্ষনাৎ চোখ ফিরিয়ে নিলো। বুকের তিরতিরে ব্যথাগুলো সায় দিল না মেঘালয়াকে কল করতে। বাড়ির গেইট ভেতর থেকে আটকানো। এ ঝড়ের মাঝে ডাকলে লাভ হবে না।

গাড়ি ছেড়ে বাইরে বের হয়ে দাঁড়াল ইরাজ। মুহূর্তেই বৃষ্টির ঝাপটা ভিজিয়ে দেয় ইরাজকে। গাড়ি থেকে একটু সরে গিয়ে গাড়ির সম্মুখে গিয়ে ফাঁকা রাস্তার মাঝখানে হাত ছড়িয়ে দাঁড়াল। ওই কালো মেঘের ঘনঘটা থেকে ঝরে পড়া বারিধারা ইরাজের সর্বাঙ্গ ভিজিয়ে, ইরাজকে ছুঁয়ে ধুয়ে গড়িয়ে পড়ে জমিনে। ইরাজ চোখদুটো আবেশে বুজে নিলো। ওর ব্যাথাময় মেঘে বৃষ্টি হয়ে ওর শরীরে ঝরে পড়ে। আশপাশে খেয়াল করে দেখল, মেঘের বর্ষন শুধু ওকেই নয় বরং আশপাশের সকল বস্তুকেও ভিজিয়ে তুলেছে। বিষাদের হাসি ফুটে ওঠে ইরাজের ঠোঁটে। মেঘের বর্ষনে শুধু ইরাজই নয়; আশেপাশের বস্তদ্বয়ও সিক্ত হয়। ইরাজ তো সামান্য; সে তুলনায় ইরাজ ব্যাতিত অন্যকেই বেশি ভেজায় ওই নিষ্ঠুর, নির্বোধ, বোকা মেঘ!

হাঁটু ভেঙে বসে পড়ল রাস্তার ওপর। ভাবল, মেঘের এই বোকামির জন্য হলেও সে আজও মেঘকে কাছে পেয়েও আপন করে নেয়নি। তার মেঘের চেয়েও, বুকে বেড়ে ওঠা যন্ত্রনাগুলোকে সে বরাবরই বেশি প্রাধান্য দিয়ে আসছে!

_

মেঘালয়া সেই সন্ধ্যা থেকে তৈরী হয়ে বসে আছে। এই বুঝি আসবে ইরাজ, একটু দেরী হলে খিটখিটে মেজাজের মানুষটা ক্ষেপে উঠবে নিশ্চয়ই! তাই সে তৈরী হয়ে বসে রইল ক্ষেপা মানুষটির অপেক্ষায়। তারপরই আকাশ বিদীর্ণ করে বৃষ্টি নেমেছে মুষল ধারে। সঙ্গে দমকা বাতাসের ঝাপটাও আছে।

রাত নয়টা বেজে যাওয়ার পরও যখন ইরাজের কোন খোঁজ নেই মেঘালয়ার মনটা অজ্ঞাত কারনেই কেমন চিন্তিত হয়ে উঠল যেন! আব্বুর মোবাইল দিয়ে ইরাজের কন্টাক্ট নম্বরে ট্রাই করল একাধিকবার। তবে ওপাশ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া নেই ইরাজের। ক্রমেই চিন্তা বাড়তে থাকে মেঘালয়ার, সঙ্গে রাতও!

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here