#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৩৯
” এই না না। নাহ্! ”
বরফের বুকে ছুটে বেড়াচ্ছে উচ্ছ্বল রমণী। অধর কোলে তার দুষ্টু হাসির আভাস। পিছু নিয়েছে তূর্ণ। হাতে একমুঠো সফেদ বরফ। নিশানা তার আদুরে মাইরা। দুয়া বারবার পিছু ঘুরে নিষেধ করছে। আপত্তি জানাচ্ছে। মানুষটি তা শুনলে তো? ঠিক তাড়া করে বেড়াচ্ছে। তাকে বরফে হিম করে পালিয়ে বেড়ানো! অসম্ভব। দুয়া ছুটতে ছুটতে একপর্যায়ে ভারসাম্য হারিয়ে বসে পড়লো শুভ্র বরফের আচ্ছাদনে। রীতিমতো ঘন শ্বাস পড়ছে মেয়েটার। লালাভ রঙে রঙিন মুখশ্রী। হিমবাহের পরশে শীতল গাত্র। হাঁপিয়ে উঠেছে বেশ। তখনই সম্মুখে হাজির হলো তূর্ণ। শ্রান্ত মানুষটির অধরে বক্র হাসির রেখা। তা লক্ষ্য করে দুয়া ঘাবড়ে গেল। অনুধাবন করতে পারলো আজ তো সে খতম! তাই হঠাৎ ভিন্ন এক পন্থা অবলম্বন করলো। মায়া মায়া চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো,
” মে*রো না। আমি তো গুড গার্ল। তোমার পাঁচটা না দশটা না একটা মাত্র বউ। আমায় তুমি মা”রবে? হাত কাঁপবে না? ”
হাঁটু গেড়ে বিপরীতে বসলো তূর্ণ। মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানালো। মধুরতম স্বরে বললো,
” মা|রবো! অসম্ভব। আমার পাঁচটা না দশটা না একটা মাত্র বউ বলে কথা। আদর সোহাগ বিহীন অন্য কিছুতে মন টানে ই না। ”
কথার তালে তাল মিলিয়ে দুয়া বলে উঠলো,
” হুম। অন্য কিছুর কি দরকার? ”
বক্র হাসলো তূর্ণ। লালিমায় মাখা চেহারায় দৃষ্টি বুলাতে বুলাতে মৃদু স্বরে বলতে লাগলো,
” ঠিক আছে। অন্য কিছুর কি দরকার? তুমি আমি একসাথে। সঙ্গে সুইস আল্পসের বরফ। মাখো মাখো প্রেমপূর্ণ আবহাওয়া। জমে একদম ক্ষীর। তাহলে হয়ে যাক? আদর সোহাগে ভরপুর ওয়ান রাউন্ড? ”
চকিতে চমকালো দুয়া! এতক্ষণে হুঁশ ফিরল মেয়েটির। সে কোন কথার পিঠে কি বলছিল। ওহ্ শিট! লাজে ম’রি ম’রি দুয়া দোনামোনা করে পিছু হটার প্রয়াস চালালো। কিন্তু আরম্ভতেই ব্যর্থ। ডান হাতটি বন্দি হলো পুরুষালি হাতের মাঝে। মায়াবী পল্লব ঝাপটালো দুয়া। তাতে একটুও দরদ দেখালো না তূর্ণ। মুঠো ভর্তি বরফ ধীরগতিতে এগিয়ে নিলো মেয়েটির পানে। আগত শীতলতা অনুভব করে বদ্ধ হলো মেয়েটির নেত্রজোড়া। কেঁপে উঠলো ওষ্ঠাধর। শীতলতা জেঁকে ধরলো আষ্টেপৃষ্ঠে। নীরবে পেরিয়ে গেল কিছু মুহূর্ত। ঠাণ্ডা স্পর্শ না পেয়ে আস্তে ধীরে ভীত চোখে তাকালো দুয়া। ঠিক তখনই ঘটলো কাণ্ড। মাথায় পরিহিত বিয়ানির ওপর এক মুঠো বরফ ছেয়ে গেল। চোখেমুখেও হালকা বরফের শীতল পরশ। শীতে থরথর করে কেঁপে উঠলো মেয়েটি। বুজে গেল অক্ষি। তা দেখে দাঁত কেলিয়ে বিজয়ের হাসি হাসলো তূর্ণ। হাসির শব্দ কর্ণপাত হতেই তাকালো মেয়েটি। ক্ষে পে গেল বেশ।
” তোমাকে তো আমি.. ”
বাহুতে আঘাত করার পূর্বেই পগারপার তূর্ণ। তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ালো দুয়া। পোশাক হতে বরফ ঝেড়ে দৌড়ে নিলো পিছু। হু”মকির বার্তা প্রেরণ করতে লাগলো,
” তোমাকে আমি ছাড়বো না। বরফে নাকানিচোবানি গোসল করাবো। দাঁড়াও বলছি। দাঁড়াও। ”
তূর্ণ থামলে তো? বরং পিছু ঘুরে উঁচু স্বরে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলো।
” পারলে ধরে দেখা। ”
সুইস আল্পসের বুকে ছোটাছুটি করছে পা|গলাটে কপোত- কপোতী। কখনো প্রায় ধরে ফেলার মতো সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে। কখনোবা শিকার হাতের নাগালের বাইরে। তাদের এই খুনসুটি উপভোগ করে চলেছে সেথায় উপস্থিত কিছু দর্শনার্থী। মুখে তাদের হাসির রেখা।
•
হিমাংশু’র দ্যুতি ছড়িয়ে ধরনীর বুকে। বিছানায় বসে তৃষা। বুকে জড়িয়ে রাখা তুলতুলে বালিশ। ভিডিও কলে সংযুক্ত তিন সখী। তৃষা দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
” আমি নিশাদ ভাইয়াকে দেখার জন্য পা গ ল হয়ে গেছিলাম? ”
পুষ্পি দাঁত কেলিয়ে হাসলো।
” হস নাই? ”
” পুষ্পা রে! তোর কপালে হেব্বি ক্যা লা নি আছে। ভালোয় ভালোয় থাম বলতাছি। ”
পুষ্পি সরু চোখে তাকিয়ে বললো,
” আমি কি বাস ট্রেন না অটোরিকশা? থামবো কি করে? হাউ? ”
বিন্দু হেসে উঠলো সশব্দে। তৃষা ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
” এই মাইয়ারে থামতে কস না ক্যা? উল্টা নিজে দাঁত ক্যালাইয়া যাইতাছোছ। ও কিন্তু বেশি পকপক করতাছে। মা ই র খাবে বলে রাখলাম। ”
বিন্দু বললো,
” আমি অ্যার মধ্যে নাই। তোদের বিষয় তোরা বোঝ। ”
তৃষা গরম চোখে তাকালো পুষ্পির দিকে। টেনে টেনে বললো,
” তোরে একবার খালি বাগে পাই। বোঝাবো মা’ইর কারে কয় এবং তা কত প্রকার কি কি। ”
পুষ্পি মুখ ঝামটা দিয়ে বললো,
” এই হলো বন্ধু নামক শ ত্রু। কোথায় বলেকয়ে নিশু বেপ্পির সাথে দেখা করাই দিলাম। শুকরিয়া আদায় করবো। তা না। বাহুবলী পোজ দিতাছে। ”
তৃষা অবাক!
” নিশু বেপ্পি! হু? নি শা দ ভাইয়া? ”
” তা নয়তো কি? তোমার পরাণের নিশু বেপ্পি। ”
তৃষা চেঁচিয়ে উঠলো,
” পু ষ্পি! ”
তৎক্ষণাৎ দু’জনে কল কেটে উধাও। ঘন শ্বাস পড়ছে তৃষার। রাগে থরথর করে কাঁপছে গাত্র। কত বাজে কথাবার্তা! বলে কিনা তার পরাণের..! ছিঃ! আসতাগফিরুল্লাহ্ মার্কা সব কথা!
” বে দ্দ প মাইয়া! যতসব লেইম কথাবার্তা পারে! ”
আসলেই কি লেইম কথাবার্তা! সে কি সত্যিই নিশাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য উদগ্রীব হয়ে ছিল না! অল্প হলেও তো ছিল। মনটা কেন যেন বড্ড আনচান করছিল। অনুভূত হচ্ছিল অস্থিরতা। অসুস্থ মানুষটা কেমন আছে, কি করছে জানার জন্য খুব উশখুশ করছিল হৃদয়। নাম না জানা অনুভূতিতে আবিষ্ট হচ্ছিল অন্তঃপুর। বারবার মনে পড়ছিল সে-ই আহত দুরবস্থা। তাই তো অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল কখন যাবে মানুষটির ফ্লাটে। একটিবারের জন্য তাকে দেখবে। শেষমেষ নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হলো। দেখা মিললো কাঙ্ক্ষিত মানুষটির। তার দর্শনে হৃদয়ের অস্থিরতা এখন অনেকাংশে লাঘব! মনটা কিঞ্চিৎ ফুরফুরে! চোখের পাতায় বারংবার ভেসে আসছে অনাকাঙ্ক্ষিত সেই মুখশ্রী। অজান্তেই মেয়েটির অধর প্রসারিত হলো। বুকের সঙ্গে জাপটে ধরলো তুলতুলে বালিশ।
•
বিছানায় ঠাঁই পেয়েছে লাগেজ। সেথায় পোশাকআশাক এর অনেকাংশ স্থান করে নিচ্ছে। ব্যস্ত রমণীর পানে অপলক চাহনিতে তাকিয়ে তূর্ণ। বসে হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে। দুয়া পোশাক গুছগাছ করতে করতে বললো,
” মামণি ফোন করেছিল। তৃষার সাথেও কথা হয়েছে। ও কিন্তু তোমার ওপর রাগ করে আছে। ”
” কেন? ”
” ভাই নাকি বউ পেয়ে বোনকে ভুলে গেছে। খোঁজখবর নিচ্ছে না। ”
সশব্দে হেসে উঠলো তূর্ণ।
” গা ধী বোধহয় ভুলে গেছে গতকাল সকালবেলা ভাই নামক কারো সাথে কথা বলেছে। ”
দুয়া ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো।
” বান্ধবী আমার পারেও বটে। এমন ভাব নেয় যেন রায় বাঘিনী ননদিনী। ভাই নাকি বউ পেয়ে বোনকে ভুলে গেছে। ”
তূর্ণ কথা পেঁচিয়ে বললো,
” ভুল কিছু বলেনি অবশ্য। পুরুষ মানুষ অমন একটু আধটু করে। বিয়ের শুরু শুরু বউ ছাড়া কিছুই বোঝে না। চেনে না। দু’দিন গেলে বউ ছাড়া দুনিয়ার সব ই চেনে। জানে। তখন তারা পত্নীদের প্যারায় আধম|রা জনগণ। ”
ব্যস্ত হাতটি থেমে গেল। দুয়া তাকালো সরু চোখে।
” কি বললে তুমি? ইনডাইরেক্টলি বউদের দোষারোপ করছো! বউরা প্যা রা দেয়? তাদের যন্ত্রণায় বিবাহিত পুরুষ আধম’রা? এমন অহেতুক কথাবার্তা কি করে বলছো? ”
” এই না না। আসতাগফিরুল্লাহ্। বউয়ের সামনে বসেই তার দুর্নাম করবো? এতটাও দুঃসাহসী নই আমি। ”
ঠাস করে লাগেজ বদ্ধ করলো দুয়া। তূর্ণ অবাক হয়ে শুধালো,
” কি হলো? ”
” নিজেরটা নিজে গুছাও। আমরা তো খালি প্যা রা দেই। আমাদের যন্ত্রণায় তোমরা পুরুষ জাতি তটস্থ। তাই নিজের চরকায় নিজেই তেল দাও। ”
তূর্ণ বুঝতে পারলো আবহাওয়া গরম। বউ ক্ষে’পেছে। এতে নিজেরই চরম লোকসান। তাই চটাপট বিছানা ত্যাগ করে উঠে দাঁড়ালো। দুয়া অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়ানো। তূর্ণ ওর পানে অগ্রসর হতে হতে দুষ্টু কণ্ঠে বলতে লাগলো,
” লক্ষ্মী সোনা রাগ করে না। লা লা লা। ”
নিজের পুরনো দুষ্টুমি কড়া নাড়ছে কর্ণ কুহরে। না চাইতেও নিঃশব্দে হাসলো দুয়া। তবে তা প্রকাশ করলো না। হঠাৎই অনুভব করতে পারলো পেশিবহুল দু হাতের অস্তিত্ব। দু’টো হাত তাকে নিজের সনে বেষ্টন করে নিয়েছে। ডান কাঁধে রেখেছে থুতনি। শিরশির করে উঠলো কায়া। কর্ণ কুহরে অধর ঠেকিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো তূর্ণ,
” রাগ করে না দুয়া। বউ রাগ করলে এই পত্নীভক্ত পুরুষের কি হাল হবে? হুঁ? ”
দুয়া কিঞ্চিৎ বিরক্তিকর স্বরে বললো,
” রাগ করবো না তো কি করবো? তুমি সবসময় খালি ফাও কথা বলো। জ্বালাতন করো। ”
তূর্ণ এমন ভান করলো যেন সদ্য ধরনীতে আছড়ে পড়লো।
” আ মি জ্বালাতন করি! এতবড় অভিযোগ! বিনা কিছু করেই এত মারাত্মক অভিযোগ? তা তো মানা যায় না। আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ এবার প্রাকটিক্যালি বুঝিয়ে দেবে জ্বালাতন কারে কয়। ইহার স্বাদ কেমনতর। ”
” মানে! ”
মানে খুঁজতে খুঁজতেই হতবিহ্বল দুয়া! তাকে পাঁজাকোলে তুলে নিয়েছে তূর্ণ। ভারসাম্য বজায় রাখতে ভীতসন্ত্রস্ত মেয়েটি দু হাতে আঁকড়ে ধরলো অর্ধাঙ্গের গলা। ক্ষীণ স্বরে বললো,
” কি করছো কি? নামাও। ”
কক্ষের আলো নিভিয়ে বিছানার পানে এগোতে এগোতে তূর্ণ জানালো,
” তা হবে না। তা হবে না। ”
” তাহলে হবেটা কি? ”
” খেল্লা হবে। খেলা। ওয়ানডে, টি টুয়েন্টি, টেস্ট ম্যাচ। স-ব। ”
চোখ টিপে দিলো তূর্ণ। হতভম্ব দুয়া অনুধাবন করতে পারলো পৃষ্ঠদেশ ঠেকে বিছানায়। সম্মুখে অতি নিকটে মানুষটি। তপ্ত শ্বাস আঁকিবুঁকি করে চলেছে মুখশ্রীতে। নে’শালো নয়ন আবদ্ধ দুয়া’তে! লাজুকলতার দৃষ্টি নত হলো। লালাভ আভা ছড়িয়ে পড়লো কপোলে।
” মাইরা! ”
সম্মোহনী সে সম্বোধন! অজানা মোহ’তে দু’জনের অক্ষি মিলন হলো। তৃপ্তির আভা ছড়িয়ে পড়লো তূর্ণ’র মুখ জুড়ে। ডুবে গেল সে মায়াময়ীর নয়ন সাগরে। ললাটে ছুঁয়ে দিলো ওষ্ঠ। ঘোর লাগানো স্বরে বললো,
” আমার হৃদয়ে লুকানো মাইরা। ”
•
দিবাবসুর দীপ্তিতে আলোকিত ধরনী। ব্যস্ত সড়কের ডান লন ধরে হেঁটে চলেছে তূর্ণ, দুয়া যুগল।
বাহনহফস্ট্রাস, জুরিখের একটি ছোট এবং মনোমুগ্ধকর রাস্তা। বিলাসবহুল ফ্যাশন ব্র্যান্ড, সুইজ-চকোলেটের দোকান, উষ্ণ ক্যাফে, আর্ট গ্যালারী এবং আরও অনেক কিছু নিয়ে কেন্দ্রীভূত এই বাহনহফস্ট্রাস। জুরিখের এই অসামান্য হাই স্ট্রিটটি ইউরোপের সবচেয়ে একচেটিয়া এবং ব্যয়বহুল শপিং আর্কেড হিসেবে পরিচিত এবং বিশ্বব্যাপী তালিকায় তৃতীয় সবচেয়ে ব্যয়বহুল। এখানে আগত দর্শনার্থী যদি শপিং বাফ হয় এবং অ্যাপল, চ্যানেল, কার্টিয়ার, গুচি, হেকেট, এইচএন্ডএম, বারবেরি, ডিওর এবং ম্যানর ইত্যাদির মতো বিশ্ব-মানের কিছু ব্র্যান্ডে লিপ্ত হতে চায়, তাহলে এটি তাদের জন্য একদম সঠিক জায়গা। তাই তো তূর্ণ, দুয়া’র আগমন এখানে। তারা আজ এসেছে বিদায়ের আগে পরিবারের সদস্যদের জন্য টুকটাক শপিং, গিফটস্ ক্রয় করতে।
হাই স্ট্রিট এই বাহনহফস্ট্রাস রাস্তাটি মোটামুটি ১.৪ কিমি লম্বা যা পায়ে হেঁটে মাত্র বিশ মিনিটে ঘোরাঘুরি করা যায়। তবে এখানকার অসংখ্য ব্র্যান্ডেড দোকান অপ্রতিরোধ্য রূপে আকৃষ্ট করে থাকে। দর্শনার্থীদের আশেপাশে যাওয়ার তাগিদ ভুলিয়ে কেবল হাঁটতে দেবে না! এছাড়াও দুর্দান্ত ফ্যাশন এবং প্রচলিত সবকিছুর জন্য জনপ্রিয়… জুরিখের এই চাওয়া-পাওয়া রাস্তাটি তার নান্দনিক নির্মাণের জন্যও প্রশংসিত। উনিশ শতকের শৈলী এবং স্থাপত্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে, রাস্তাটি খুব কমই আধুনিক বিল্ডিংগুলির কোনো কাস্ট রচনা করে। এইভাবে দূর-দূরান্তের লোকেদের প্রলুব্ধ করার জন্য সত্যিকারের ভিক্টোরিয়ান স্বাদকে বাঁচিয়ে রাখে। এই সুন্দর শহরের রাস্তার জন্য যা কিছু বলা হচ্ছে তা কম, তবে একটি জিনিস যা নিশ্চিত। এখানে সবকিছু একটি চাক্ষুষ আচরণ। এখানে একবার বা দুবার আসলে অবিস্মরণীয় স্বাদ এবং ভাইব সারাজীবনের মতো প্রভাবিত করবে।
প্রধান রেলওয়ে স্টেশন থেকে হ্রদ পর্যন্ত ১.৪ কিলোমিটার প্রসারিত, বাহনহফস্ট্রাস বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত কেনাকাটার রাস্তাগুলির মধ্যে একটি। গলায় মুক্তার মতন এর সাথে জুড়ে রয়েছে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, বুটিক এবং জুয়েলারির দোকান। দর্শনার্থীরা যতই লেকের দিকে হেঁটে যাবে দোকানগুলি ততই একচেটিয়া হয়ে উঠবে। প্যারাডেপ্লাটজ হলো বাহনহফস্ট্রাসের কেন্দ্রস্থল এবং জুরিখ লেকের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রাম জংশন হিসেবে কাজ করে। যেহেতু প্রধান সুইস ব্যাঙ্কগুলি এখানে তাদের সদর দপ্তর স্থাপন করেছে, প্যারাডেপ্লাটজ সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে বড় মানি-হ্যান্ডলিং সেন্টার হিসাবে নিজের জন্য একটি নাম তৈরি করেছে। পথ ধরে, রেনওয়েগ এবং অগাস্টিনারগ্যাসের মতো গলিগুলি মনোরম ওল্ড টাউনের দিকে নিয়ে যায়।
তূর্ণ, দুয়া লন ধরে এগিয়ে চলেছে। বাম পাশে সুউচ্চ একের পর এক দালান। রাস্তা দিয়ে চলে বেড়াচ্ছে ট্রাম। কিছু প্রাইভেট কার। ডান পাশে অগণিত শো-রুম। নজরকাড়া সেসব শো-রুম। ওরা গিয়ে দ্বার উন্মুক্ত করে একটি শোরুমে প্রবেশ করলো। কৃত্রিম আলোয় ঝলমলে পরিবেশ! দুয়া আশপাশ ঘুরে দেখতে দেখতে তূর্ণ’র পিছু নিলো। ওরা গিয়ে পৌঁছালো রিস্ট ওয়াচের সমারোহের নিকটে। দুজনে দেখতে লাগলো ওয়াচগুলো। একটি ওয়াচ দেখিয়ে দুয়া বললো,
” এটা সুন্দর না? বাবার হাতে খুব মানাবে। ”
” হাঁ এটা সুন্দর আছে। এবার খালু আই মিন শ্বশুর আব্বার জন্য চুজ করো তো। ”
দুয়া ওর পানে তাকালো। মিহি কণ্ঠে বললো,
” সবার জন্য কেনাটা খুব আবশ্যক? মানে..! এখানকার সবকিছু তো ব্র্যান্ডেড। অনেক দামী। ”
” তো? ”
থেমে থেমে দুয়া বললো,
” সবার জন্য শপিং করাটা বেশ ব্যয়বহুল হয়ে যাবে না?”
” হলেও বা কি? তোমার বর যেমন হ্যান্ডসাম স্যালারি ইনকাম করে তেমনি শ্বশুর বাবাও যথেষ্ঠ ধনী। সো চুপচাপ ওয়াচ সিলেক্ট করো। ”
মেয়েটির অধরকোলে সুক্ষ্ম হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
” আচ্ছা। ”
ওরা দু’টো ওয়াচ ক্রয় করলো দুই বাবার জন্য।
.
নামকরা শো-রুম হতে দুয়া কতগুলো চকলেট ক্রয় করলো ভাইবোনদের জন্য। নিজের জন্য তো অবশ্যই রয়েছে। তূর্ণ দুই মায়ের জন্য হালকা জুয়েলারি এবং সকলের জন্য আরো কিছু উপহার ক্রয় করলো। অতঃপর তারা উপভোগ করলো বাহনহফস্ট্রাসে ট্রাম ভ্রমণ।
•
Le River Gauche. সুইজারল্যান্ডের অন্যতম জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট। যা অবস্থিত জুরিখে। সুবিশাল দ্বার উন্মুক্ত করে ভেতরে প্রবেশ করলো তূর্ণ, দুয়া। আভিজাত্যে ভরপুর অন্দরমহল। বসার জন্য অসংখ্য দ্বৈত সোফা। উপরিভাগে ঝুলন্ত আলোকবাতি। অপূর্ব পরিবেশ! ওরা ফাঁকা দেখে একটি টেবিল দখল করলো। বসলো একে অপরের বিপরীত দিকে। ব্যস্ত হলো নিজস্ব আলাপণে।
যথাসময়ে ওদের খাবার পৌঁছে গেল। মেনুতে রয়েছে – লিন রোস্ট অন পটেটো ওয়েজেস, সামুদ্রিক শৈবালের সাথে রিসোটো। ডেজার্ট হিসেবে রয়েছে “এল জার্ডিন” চকলেট কেক। দুয়া খুশিমনে বললো,
” ইয়াম্মি লাগছে! ”
” লেটস্ স্টার্ট। ”
ভোজন পর্ব শুরু হলো দু’জনের। উপভোগ করতে লাগলো বিখ্যাত রেস্তোরাঁর অসাধারণ খাদ্য।
চলবে.
[ অবশেষে সমাপ্ত হলো সুইজারল্যান্ড ভ্রমণ। দেশে ফিরছে তূর্ণয়া। কেমন লাগলো ভিনদেশী ট্রিপ? গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। ]