#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই
#পর্বঃ৬
#Jhorna_Islam
সৌন্দর্য হাত উঁচু করেই পিছনে ফিরে তাকায়। তারপর অন্য দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসে। হাসি থামিয়ে মুখটাতে কিছু দুঃখী ভাব ফুটিয়ে তুলে। তারপর হাঁটু মুড়ে মেঝেতে বসে পরে।
সৌন্দর্যের দিকে ৭ বছরের এক বাচ্চা রা’গী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কোমড়ে হাত দিয়ে রাগে ফুঁসছে।
” কি হয়েছে মাম?”
— আপনি কি কিছু হতে বাকি রেখেছেন মিষ্টার ওয়াহিদ?
— এভাবে কথা বললে আমার ভয় লাগে তো।
— উফফ মি. ওয়াহিদ একদম ড্রামা করবেন না। আমি আপনাকে হাড়ে হাড়ে চিনি।
— আমার মা আমাকে না চিনলে কে চিনবে?
— দিন দিন সেই মায়ের অবাধ্য সন্তান হয়ে যাচ্ছেন।
— মোটেও না।আমি৷ আমার মায়ের বাধ্য সন্তান।
ওদের কথার মাঝেই একজন বলে উঠে,, কি রে ফাতু? আমার জামাই টা আসতে না আসতেই তুই শাসন করা শুরু করে দিলি?
উফফফ বুড়ি ইট’স ফাতিহা।নট ফাতু। আর তোমার জামাই হওয়ার আগে আমি তার কে হই জিজ্ঞেস করো এই বা’উন্ডুলে ছেলে কে।
দেখ দাদু ভাই দেখ এই বয়সেই কি রকম করে কথা বলে। মনে হচ্ছে বয়স ৭ না ৭০ পেরিয়ে গেছে।
মি. ওয়াহিদ আমি আপনার কে হই?
— অবশ্যই আমার মা।
— তাহলে তোমাকে শাসন করার অধিকার কার বেশি আমার না তোমার এই বুড়ি বউয়ের?
সবার আগে মা।
ফাতিহা সৌন্দর্যের কথা শুনে খুশি হয়ে যায়। এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়। সৌন্দর্য ও চুমু খায় ফাতিহার কপালে।
আমি যে তোমাকে কি বলেছিলাম সেটা করেছো?
তুমি কিছু বলেছো আর আমি সেটা করিনি এমন কোনোদিন হয়েছে?
কখনো না।
এবারও তোমার কথা মতোই সব হয়েছে। কথাটুকু বলে সৌন্দর্য উঠে দাঁড়ায়। সোফায় নিজের শরীর টা হেলিয়ে দিয়ে বলে,,, একটু পানি দাও তো মাম। তোমার হাতে পানি না খেলে কি আমার তৃষ্ণা মিটে?
ফাতিহা দৌড়ে চলে যায় সৌন্দর্যের জন্য পানি আনতে। কিছু সময়ের মাঝেই পানি নিয়ে ফিরে আসে। সৌন্দর্যের হাতে দেয়।
সৌন্দর্য মুচকি হেসে পানি টুকু নিয়ে এক নিমিষে সবটুকু শেষ করে। তারপর টেবিলে গ্লাস টা রাখে। ফাতিহা কে তুলে নিজের কোলে তুলে নেয়।
ফাতিহা কোলে বসে নিজের হাত বাড়িয়ে দেয়।
সৌন্দর্য নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে ফাতিহার হাতে ধরিয়ে দেয়। এটাতে সব আছে মাম। তুমি যেভাবে বলেছো সেভাবেই করেছি।
ফাতিহা সৌন্দর্যের কথা শুনে লাফিয়ে উঠে। ফোনটা হাতে নিয়ে একটু দেখেই ওয়াও বলে চিল্লিয়ে উঠে।
সৌন্দর্য ফাতিহার মাথার চুল গুলো হাত৷ দিয়ে এলোমেলো করে দেয়। অন্যসময় হলে ফাতিহা রে’গে যেতো।কিন্তু এখন একটুও৷ রা’গ করলো না। উল্টে মুচকি হেসে ফোনটা হাতে নিয়ে উপরে চলে যেতে থাকে।
সৌন্দর্য ফাতিহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটু জোরে বলে,,মাম আর যা যা বলেছো সব এনেছি। গাড়িতে আছে। তোমার রুমে পৌঁছে যাবে।
ফাতিহা সৌন্দর্যের কথায় দৌড় থামিয়ে সৌন্দর্যের দিকে তাকায়। তারপর হাত দিয়ে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে মারে। তারপর নিজের রুমে চলে যায়।
দেখেছিস দাদু ভাই এই বয়সেই কি সব কান্ড ঘটায়?
বাদ দাও দাদি।আজকালকের বাচ্চারা একটু বেশিই আপডেট। তবে খারাপ সঙ্গের সাথে যেনো না মিশে সেই দিকে খেয়াল রাখলেই হলো।
হুম যা দাদু ভাই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।
যাচ্ছি। কিন্তু বাড়ির সবাই কোথায়?
এই সময় কেউ বাড়িতে থাকে? যে যার কাজ নিয়ে আছে। আমিতো একাই থাকি। ফাতিহা আজ স্কুলে যায় নি তুই আসবি বলে।
আচ্ছা দাদি আমি রুমে যাচ্ছি।
যা গিয়ে রেস্ট নে।
এক কাপ কফি পাঠিয়ে দিও।
এখনই দিচ্ছি।
—————————————-
নূর বাড়িতে আসার সাথে সাথে তার ছোটো বোন তূর গল্প জুড়ে দিয়েছে। সেখানে কি কি করলো।কি কি দেখলো সব। তূরের ও খুব ইচ্ছে ছিলো বোনের সাথে যাওয়ার। কিন্তু তার একটা এক্সাম হওয়ায় যেতে পারেনি৷ অবশ্য এক্সাম কোনো ব্যাপার না সে এক্সাম ফেলে ঠিকই চলে যেতো।কিন্তু বাবার ভয়ে যেতে পারেনি।
নূরের উল্টো হচ্ছে তূর। নূর যেমন কম কথা বলে।তূর তেমন বেশি কথা বলে। নূর যেমন পড়াশোনায় ভালো তূর তেমন টেনেটুনে পাশ করা ছাত্রী। সেই কখন থেকে জানতে চাইছে কি দেখেছে।কি কি খেয়েছে। কেমন আনন্দ করেছে। অবশ্য ঠিক জানেই তার বোন কি বোরিং। ঘুরতে গিয়েও যে বইয়ে মুখ ঢুকিয়েছিলো।
কি হলো কিছু বলছিস না কেন আপু?
নূর চুপ করে বসে আছে। মাথাটা খুব ধরেছে।শরীর ও কেমন জানি মে’জ মে’জ করছে। জ্বর আসবে আসবে বলে মনে হয়।
কি হলো আপু চুপ করে আছিস কেন?
তূর এতো জোরে কথা বলবিনা তুই আমার সামনে। আর কি বলবো তোকে? সিলেটে কি দেখতে যায় মানুষ? পাহাড়,ঝর্না,চা বাগান এসবই তো।
হইছে তোর বর্ণনা দিতে হবে না। ফোন দে পিক দেখবো আমি।
আমার ফোনে পিক নাই তুই কোথা থেকে দেখবি?
মানে টা কি আপু? তুই পিক ও তুলিস নি?
না। তুই জানিস আমার এসব ভালো লাগে না। তারপরও কেন জিজ্ঞেস করছিস বলতো?
ধ্যাত। তোকে আমার জিজ্ঞেস করাটাই ভুল হয়েছে। মাফ কর বইন আমার। আমি ইশু আপুর থেকে জেনে নিবো। বোরিং একটা মেয়ে তুই। তোর উপর যে মাঝে মাঝে কি রা’গ হয় আমার। আমি বুঝে পাই না ইশু আপুর মতো একটা মেয়ে কি করে থাকে তোর সাথে। যে তোকে বিয়ে করবে তার জন্য আমার আফসোস হচ্ছে। কথাগুলো বলে তূর বের হয়ে যায়।
তূর যেতেই নূর বিছানায় শরীরটা হেলিয়ে দেয়। চোখ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
———————-
ইসরাত আননোন নাম্বার থেকে তালহা কে দুটো মিসড কল দেয়। তারপর মোবাইলের দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসতে থাকে। কানে ধরে তাকে দাঁড় করিয়ে রাখা তাই না। আজ মজা বোঝাবে।
তালহা ঘুরে এসে খুবই ক্লান্ত। মোবাইল সাইলেন্ট করেনি। তাই রিংটোনের আওয়াজে নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে যায়।
অপর পাশ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে ইসরাত আবার কল করে। এবার আর মিসড কল না ডাইরেক্ট কল করে। কয়েকবার রিং হয়ে কেটে যায়। কারণ তালহা কানের উপর বালিশ চাপা দিয়ে ঘুমোচ্ছে। বেশ কয়েকবার বিরক্ত হয়ে এবার ঘুমো ঘুমো চোখে উঠে বসে। মুখ দিয়ে গা*লি বের হতে গিয়ে ও নিজেকে সামলে নেয়।
ফোন তুলে কানে ধরে। হ্যালো হ্যালো করতে থাকে। ইসরাত মুখে ওড়না চাপা দিয়ে বসে বসে হাসছে। বার কয়েক হ্যালো হ্যালো বলে চলেছে তালহা।
ইসরাত ফোন কেটে দেয়।
তালহা শুতে যাবে আবার কল আসে। এবার ও কোনো প্রতিক্রিয়া করেনি।রাগে তালহা কল কেটে দেয়। তারপর ফোন বন্ধ করে আরামে ঘুম দেয়।
ইসরাত আরো একবার কল দিয়ে দেখে ফোন বন্ধ। এবার শব্দ করে হেসে উঠে। তারপর দরজার দিকে তাকিয়ে মুখে হাত দেয়।তার মা শুনতে পারলে পা’গল হয়ে গেছে ভেবে পাবনা দিয়ে আসবে।
নিজের মনে হাসতে হাসতে শুয়ে পরে ইসরাত।
———————-
নূরের রাতে সত্যিই অনেক জ্বর আসে কাঁপুনি দিয়ে। কিছুতেই কিছু হচ্ছিলো না। ঔষধ খাইয়ে মাথায় পানি দিয়ে। জ্বর কমার নাম নেই।
নূরের বাবা ডাক্তার কে কল করে।সব শুনে উনি জানায় নূরকে যেনো ইমিডিয়েটলি হসপিটালে নিয়ে যায়।
নূরকে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়। ডাক্তাররা তাকে দেখছে। নূরের বাবা মেয়ের এমন অবস্থা দেখে বেশ চিন্তিত। মেয়েটা এতোটা অসুস্থ হয়ে গেলো। ভাবতেই বুকে কষ্ট হচ্ছে।
#চলবে,,,
কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ।