#তোমার_আমার_চিরকাল🌸
|| পর্ব – ২ ||
#লেখনীতে_বিবি_জোহরা_ঊর্মি
সকালবেলায় নিজের হাতে মেহেদী দিয়ে তুর্যের নাম দেখে অনেকটাই অবাক হয়ে যায় মীরা। তার হাতে কি করে তুর্যের নাম এলো? মীরা নিজের কাজিন সবাইকে এক জায়গায় ডাকলো। তারা চুপচাপ ওখানে দাঁড়িয়ে আছে। মীরা গম্ভীর হয়ে জিগ্যেস করে, “সত্যি করে বল কাল রাতে আমার হাতে কে তুর্য ভাইয়ার নাম লিখে দিয়েছে?”
মীরার কাজিন দিবা বলে, “আমরা জানি না মীরা।”
“চুপ।” ধমকের সুরে বলে উঠলো মীরা।
মীরার কাজিন ইরা বলল, “তুর্য ভাই! তুর্য ভাই এসে লাগিয়ে দিয়েছে।”
ইরার কথায় দিবা রেগে গিয়ে ওকে একটা চিমটি কাটে। মীরা ভাবছে, হঠাৎ তুর্য ভাই কেন তার নাম মেহেদী দিয়ে মীরার হাতে লাগাবে? দিবা টেনে নিয়ে গেল ইরাকে। মীরা বেশ চিন্তায় পড়েছে। ওদিকে ব্রেকফাস্ট করার জন্য মীরাকে ডাক দিল তার মা। মীরা হাতমুখ ধুয়ে নিচে চলে গেল।
–
খাবার টেবিলে একপাশে মিরাজ ও আহান বসেছে। অন্যদিকে বসেছে দিবা, ইরা ও মীরা। একটা চেয়ার খালি পড়ে আছে। এখনো পর্যন্ত তুর্যকে কোথাও দেখতে পায়নি মীরা। চুপচাপ সবাই খাবার খাচ্ছে। হঠাৎ করেই মিরাজ বলে উঠে, “আমরা দুপুর বারোটার দিকে রওনা হবো। তোরা তাড়াতাড়ি রেড়ি হয়ে যাস।”
দিবা বলল, “কেন, আমরা কি লেইট লতিফ নাকি?”
“তোমরা লেইট লতিফ না। তোমরা হলে মেয়ে মানুষ! আর মেয়ে মানুষের সাজতে বহুত সময় লাগে। এতো প্যারা আমি নিতে পারব না ওকে?”
দিবা চুপ হয়ে যায়। মীরা আর ইরা মিটমিট করে হাসছে।
আহান চুপচাপ তাদের কথা হজম করছে। তুর্য হুট করে কোথা থেকে আসলো। এসেই মীরার মুখোমুখি চেয়ারটায় বসলো। মীরা তুর্যকে দেখে রাগ দেখিয়ে ওখান থেকে চলে গেল। তুর্য ভাবছে, মীরা হটাৎ রেগে গেল কেন? তুর্য নিজেও উঠে গেল। এসব দেখে বাকি সবাই আশ্চর্য হচ্ছে। কি হচ্ছে এটা?
বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফুলের গাছগুলো দেখছিল মীরা। এমন সময় তুর্য ওখানে আসে। মীরা তুর্যকে দেখে চলে যেতে নেয়। তুর্য মীরার হাত ধরে। মীরা থেমে যায়। তুর্য শক্ত গলায় বলে, “কি হয়েছে বলবি মীরু? তুই না বললে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
মীরা তুর্যর দিকে ফিরে তাকায়। মীরা তার হাত তুর্যর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে, “এসব কি তুর্য ভাই? তুমি আমার অজান্তে আমার ঘরে এসে আমার হাতে মেহেদী লাগিয়েছো? তাও আবার তোমার নাম লিখে! কেন? তুমি জানো এই লেখাটা কেউ দেখলে কি হবে?”
তুর্য বলে, “আমি চাই সবসময়য় তোর হাতে আমার নাম থাক। কারণ… ” তুর্যকে থামিয়ে দিল মীরা। সে বলল, “তুমি সত্যিই একটা পাগল তুর্য ভাই। না জানি এটা কেউ দেখলে কিভাবে নিবে।”
“তুই এতো কথা ভাবছিস কেন? যা, একটুপর বের হবো। রেড়ি হয়ে নে। আর হ্যাঁ। বেশি সাজবি না কিন্তু। নাহলে তোকে পেত্নীর মতো লাগবে।”
“কিহ? আমাকে পেত্নীর মতো লাগবে? তুমি এটা বলতে পারলে? হেইট ইউ।”
“ওকে! আই লাভ ইউ টু।”
“আমি তোমাকে হেইট ইউ বলেছি তুর্য ভাই! তুমি লাভ ইউ টু বলছো কেন?”
“জলদি রেড়ি হ।”
তুর্য তাড়া দিয়ে চলে গেল ওখান থেকে।
.
বিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য সবাই রেড়ি। একে একে সবাই বের হচ্ছে। মিরাজ তার বিয়েতে ড্রেসকোড রেখেছে। মেয়েরা পড়বে সাদা ড্রেস আর ছেলেরা পড়বে ব্ল্যাক ড্রেস। মিরাজ নিজেই আজ কালো সেরোয়ানী পড়েছে। আহানও কালো পাঞ্জাবি পড়েছে। তুর্য অপেক্ষা করছে মীরার জন্য।
অবশেষে সকল অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মীরা এলো। সাদার সাথে গোলাপি রং মেশানো একটা গাউন পড়েছে সে। সমস্ত মস্তক তার গোলাপি হিজাব দিয়ে আবদ্ধ করা। কাঁধের একপাশে সাদা ওড়না পিনআপ করে তা হাতের মধ্যে রেখেছে সে। তুর্য অবাক দৃষ্টিতে মীরার দিকে তাকিয়ে আছে। বুকের ভেতর ধুকবুক ধুকবুক একটা শব্দ হচ্ছে ক্রমশ। একটা ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি হচ্ছে তুর্যর মনে। তুর্যকে এমন ক্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মীরা বলল, “তোমার আবার কি হলো?”
তুর্য নিজের হুশে ফিরে আসে। তুর্যের সাথে অন্য একজনও মীরাকে আড়চোখে দেখছিল। যেটা হয়তো মীরা খেয়াল করেনি। তুর্য বলল, “আটা ময়দা না লাগানোর জন্য ধন্যবাদ।”
“তুমি কি বলতে চাও যে আমি আটা ময়দা মাখি?”
“কই! আমিতো বলিনি।”
“তুমি বলেছ। তোমার সাথে আর কথা নাই আমার। বায়।” মীরা চলে গেল। তুর্য পিছন থেকে ডাকলো,
“আরে শুনবি তো। ধুর। এমন কেন করে ভাল্লাগেনা।”
–
বিয়ে বাড়ির হৈ হুল্লোড় এর মাঝে আছে মীরা। সবাই অনেক মজা করছে। সেল্ফি তুলছে! মিরাজ আহানকে ডেকে মীরাসহ ছবি তুললো। তুর্য একপাশে দাঁড়িয়ে ছিল। সে একটা ছবিও মীরার সাথে তুলতে পারেনি আজ। ভিষণ রেগে আছে। মীরা স্টেজ থেকে নেমে গেলো। হাটতে হাটতে নিজের চোখ ঢলছে মীরা। চোখে কিছু একটা পড়েছে তার। হাটতে হাটতে কোথায় এসে পড়েছে তার খেয়াল নেই। একটা ছেলের সাথে ধাক্কা লেগে যায় তার। ছেলেটার হাতে জুসের গ্লাস ছিল। মীরার ধাক্কা লাগায় সেটা গিয়ে পড়ে ছেলেটার শার্টে, ফলে ছেলেটার শার্ট নষ্ট হয়ে যায়। ছেলেটা বেশ রেগে যায়। সাথে তার দুইটা বন্ধুও ছিল। মীরা বলে, “স্যরি ভাইয়া।”
ছেলেটা গরম হয়ে বলে, “কিসের স্যরি? এক্ষুণি আমার শার্ট তুমি পরিষ্কার করবে।”
মীরা বলে, “এখন এটা আমি কিভাবে পরিষ্কার করবো?”
“এক্ষুণি পরিষ্কার করবে তুমি। আমার শার্ট নষ্ট করেছ আবার বলো স্যরি?”
মীরা টিস্যু দিয়ে ছেলেটার শার্ট মুছে দেয়। কিন্তু শার্টটা ভিজে গেছে এবং দাগ লেগে গেছে। ওই দাগ কিছুতেই উঠছে না। মীরা বলল, “ভাইয়া, এটা তো উঠছে না।”
“এটা পরিষ্কার করে তবেই এখান থেকে যাবে।”
তুর্য তখন মীরার কাঁধে হাত রাখে। তুর্যকে দেখে মীরা ভরসা পায়। তুর্য জিগ্যেস করে কি হয়েছে? মীরা তাকে সব ঘটনা খুলে বলে। তখন তুর্য ছেলেগুলোকে বলে, “সমস্যা কি ভাই? স্যরি বলেছে না?”
একটা ছেলে বলল, “স্যরি বললেই হয়ে গেল নাকি?”
তুর্য ওদের মারতে গেলো। “খুব বার বেড়েছিস। একটা মেয়েকে হেসন্তা করতে তোদের লজ্জা করে না?”
ওরা সবাই মিলে তুর্যর হাত দুটো ধরে বসে। তুর্য নিজেকে ওদের কাছ থেকে ছুটাতে ব্যস্ত। মীরা খুব ভয় পেয়ে যায়। ওরা কি এবার তু্র্যকে মারবে? ঠিক তখনই আহান ওখানে উপস্থিত হয়। নিজের পকেট থেকে রিভালবার বের করে একটা ছেলের মাথায় ধরে। “পুলিশ! এক্ষুণি ছাড় ওকে। নাহলে এখানেই পুতে রেখে দিব।”
মীরা আহানের সাহস দেখে অবাক! তার ভাই বলেছিল ছেলেটা লাজুক। কিন্তু এখন দেখছে সে খুব সাহসী। ছেলেগুলো দৌড়ে ওখান থেকে পালায়। তুর্য ছাড়া পেয়ে আহানকে বলল, “অনেক ধন্যবাদ আহান। ওরা আসলেই খুব বাজে ছেলে। মীরাকে টিজ করছিল।”
আহান মীরার দিকে তাকায়। মীরা এতক্ষণ আহানের দিকেই তাকিয়ে ছিল। দুজনের চোখাচোখি হলে মীরা চোখ সরিয়ে নেয়। তুর্য মীরার হাত ধরে তাকে এখান থেকে নিয়ে যায়। বিয়ে সম্পূর্ণ হলে তারা বাসার দিকে রওনা হয়।
–
মীরা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। বাতাসে তার চুল উড়ছে। শীতল হাওয়া বইছে। আকাশে উঁকি দিচ্ছে শত শত তারার দল। চাঁদ না থাকলেও আকাশ অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে। এই নির্জন পরিবেশ মীরার খুব পছন্দের। তাইতো সবার থেকে আলাদা হয়ে সে এখানে এসেছে। নিজের মতো করে কিছুটা সময় কাটাতে৷ বাড়িতে হৈচৈ এ থাকা যাচ্ছে না। মানুষের গমগমে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম।
ছাদে কেউ নেই, তাই মীরা ভাবলো কিছুক্ষণ ছাদে কাটানো যাক। মীরা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
মিরাজকে ছাদে আসতে দেখে মীরা। তার ভাই হঠাৎ ছাদে কেন আসছে? মিরাজ মীরার পাশ ঘেঁষে দাঁড়ায়। মীরা চুপ করে আছে। মিরাজ কি কিছু বলার জন্য এসেছে? নানান প্রশ্ন ঘুরছে মীরার মাথায়। মিরাজ মীরাকে বলে, “তুর্যর সাথে তোর কি কোনো সম্পর্ক আছে মীরা?”
ভাইয়ের মুখে এ কথা শুনে বেশ চমকালো মীরা। সম্পর্ক! কিসের সম্পর্কের কথা বলছে তার ভাই? সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে মীরা বলে, “কিসের সম্পর্ক ভাইয়া?”
“তোর হাতে তুর্যর নাম লেখা মেহেদী দিয়ে। তুর্য কি শুধুই তোর কাজিন নাকি তোর আর তুর্যর মাঝে কোনো সম্পর্ক আছে।”
মীরা এবার বুজতে পারলো তার ভাই কি বোঝাতে চাইছে। সে সরাসরি তার ভাইকে বলল, “আমি তুর্য ভাইয়ের নাম লিখিনি। এটা তুর্য ভাই-ই লিখেছে। আমি জানিও না কখন সে এ কাজ করেছেন। তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই ভাইয়া। ট্রাস্ট মি প্লিজ।”
“তুই যা বলিস আমি তা-ই বিশ্বাস করি বোন। আমি জানি তুই সত্যি বলছিস। কিন্তু তুর্য! আমি তুর্যর ব্যপারে খুব সিরিয়াস। ও আমাকে জানাচ্ছে না কিছু। ক্লিয়ার করে কিছু একটা বলতো তাও হতো।”
মীরা তার ভাইয়ের কথা কিছু বুঝলো না। মীরা প্রসঙ্গ পাল্টালো। সে বলল, “ভাইয়া চল নিচে যাই। ভাবির সাথে কথা হয়েছে তোর?”
“হয়েছে! কাঁদছে এখনো।”
মীরা বলে, “আমি যখন এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। ঠিক ওভাবেই কাঁদব। ভাবির মতোই।”
“এই বোন এভাবে বলবি না ঠিকাছে। চল এখন।”
মিরাজ মীরার হাত ধরে তাকে নিচে নিয়ে গেল। মীরা তার ভাবির কাছে গেল। মীরা যেতেই এক এক করে সবাই তার ভাবির কাছ থেকে চলে গেল। মীরা তার ভাবির সাথে খোশগল্প শুরু করে দিল। এতে যদি কাঁন্নাটা একটু থামায় সে। মীরা চায় তার আশেপাশের মানুষগুলো প্রাণ খুলে হাসুক।
চলবে…
আগের পর্ব – https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/790140499374391/?mibextid=Nif5oz