কান্নাভেজা_রাত #৬ষ্ঠ_পর্ব #অনন্য_শফিক

0
359

#কান্নাভেজা_রাত
#৬ষ্ঠ_পর্ব
#অনন্য_শফিক



ঘুমাতে পারছিলাম না ভয়ে। কিন্তু হঠাৎই চোখ লেগে গেলো।কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানি না। ঘুম ভাঙলো রাতুল আমার গায়ে ধরে যখন শক্ত একটা ঝাঁকুনি দিলো তখন।চোখ খুলে ধরফরিয়ে উঠে বসতেই ও বললো,’ ব্যাগে তুই হাত দিছিলি?’
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,’ না।আমি তোমার ব্যাগে হাত দিবো কেন? দেইনি।’
রাতুল আমার উত্তর শুনে সঙ্গে সঙ্গে একটা চ*ড় বসিয়ে দিলো আমার গালে।রাগে চোখ দুটো যেন ওর কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসছে। গলায় সবটুকু তেজ এনে বললো,’তুই মিথ্যে বলে কূল পাবি না এটা তো জানস? জানস না? তুই কখন কি করস এর সব আমি জানি।আমি বুঝতে পারি।এটা কেন করলি তুই বল? কেন করলি?’
আমি নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলাম না।রাগে দুঃখে কাঁপতে কাঁপতে বললাম,’ তুমি একটা হা*রামি! অ*স্ত্রের ব্যবসা করো। ঘরে এনে আরেকটা বউ রেখেছো। আবার বলো সে তোমার বোন! তোমার মতো খা*রাপ লোক আমি আর দেখিনি!’
রাতুল আমার থুতনিতে ধরলো শক্ত করে। তারপর আমার মুখটা উপরে তুলে আমার মুখের কাছে তার মুখটা নিয়ে এলো। তারপর ফিসফিস করে বললো,’ ম*রার শখ হয়ছে? ম*রতে চাস?’
আমি তেজ দেখিয়ে বললাম,’ মে*রে ফেলো।মে*রে ফেলো আমায়। তোমার ঘর করার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক বেশি ভালো। এমনিতেও ম*রেই গেছি আমি। এরকম ভাবে এখানে বেঁচে থাকার ইচ্ছা নাই আমার!’
রাতুল হাসলো শব্দ করে। হেসে বললো,’ তো কি রকম করে বাঁচার ইচ্ছে? এতিম হয়ে? তোর বাপ তো এমনিতেই আশি ভাগ মরা।বাকিটাও শে*ষ করে দেই? মে*রে ফেলি তোর বাপেরে?’
ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। নিজের জীবন নিয়ে আমি ভীত এটা সত্যি। জগতে খুব কম লোকই আছে যারা মরণকে ভয় পায় না। মরতে আমরা কেউই চাই না সহজে। আমিও না। কিন্তু নিজের জীবনের চেয়েও বাবার জীবন নিয়ে আমি বেশি শঙ্কিত। বাবার কোন ক্ষতি আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না!
আমি কেঁদে ফেলেছি।চোখ থেকে অজর ধারায় জল নামছে। আমি কাঁদতে কাঁদতে ওকে বললাম,’ আমি কাউকে কিছু বলবো না।সত্যি বলবো না। তবুও বাবার কিছু করো না তুমি! বাবার কিছু হলে আমি মেনে নিতে পারবো না!’
রাতুল সা*পের মতো তার মাথাটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো। তারপর তীক্ষ্ণ অথচ ধারালো গলায় বললো,’ কাউকে কিছু বলার আগে একশো বার ভেবে নিবি কিন্তু।’
আমি কাঁদতে কাঁদতেই বললাম,’ আচ্ছা।’
রাতুল বললো,’ এমনে কাঁদতেছিস কেন? কেউ মরেছে?’
আমি বললাম,’ না।’
‘ তো? হাস। এখনই হাস। দাঁত কেলিয়ে হাসবি তুই আমার সামনে।’
আমি ভ*য়ে জড়সড় হয়ে গেলাম।রাতুল সুবিধার না কিংবা মেহেরুনের সঙ্গে তার গোপন কিছু একটা যে আছে এটা আগে ঠিকই আন্দাজ করেছিলাম। কিন্তু ও যে এরকম ভ*য়ংকর! তা কল্পনাও করিনি এর আগে!
রাতুল ধমকে উঠলো।বললো,’ হাসিস না কেন?’
আমি আরো কেঁদে ফেললাম।হাসি আসে না। এভাবে হাসা যায়? অ*স্ত্রের মুখে বসে থেকে আমি হাসবো কিভাবে?
ও আমায় টেনে কাছে নিলো। তার মতো করেই চুমু খেলো। তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,’ চোখ মুছে ফেলো।’
দীর্ঘ সময় পর তুই থেকে তুমিতে এলো।একটু ভালো করে কথা বললো।
আমি ভ*য়ে ভ*য়ে চোখ মুছে নিলাম।
ও এবার বললো,’ আমি ব্যবসা করি। ব্যবসা করা কি খারাপ?’
আমি বললাম,’ ব্যবসা করা খারাপ না। কিন্তু অ*স্ত্রপাতির ব্যবসা করা খারাপ!’
রাতুল বললো,’ সু*দ খাওয়াও তো খারাপ।ঘু*ষ খাওয়া খারাপ।মানুষরে ঠকানো খারাপ।মজুতদারি করা খারাপ।এক টাকার মাল দশ টাকায় বেচা খারাপ। দেশের বেশিরভাগ মানুষই এইগুলোর সঙ্গে জড়িত। আজকে যাদের বিরাট প্রভাবশালী দেখতেছো। সমাজের বিরাট সম্মানি যারা। এদের ইতিহাস ঘাইটা দেখো। বেশিরভাগই খারাপের সঙ্গে জড়িত। এদের কি বউ নাই? বউয়েরা সংসার করতেছে না? করতেছে। এদের বউয়েরা গলা উঁচিয়ে কথা বলে। দামি কাপড় চোপড় পরে। ভালো বাসায় থাকে।দামি গাড়িতে চড়ে।হ্যা*ডাম দেখায় এদের বাচ্চা কাচ্চারা। আমাদেরও টাকা হবে। অনেক টাকা হবে। তুমি কাঁদবা কেন? ওদের বউয়েরা যেমনে মাথা উঁচিয়ে চলে দুইদিন পর তুমিও এমনে চলবা! তোমার বাচ্চাও হ্যা*ডাম দেখাইবো। রাজপুত্রের মতো চলবো!’
আমি বসে যাওয়া গলায় বললাম,’ আমার এসব লাগবে না। আমার অতো শখ নাই মাথা উঁচু করে বাঁচবার।’
রাতুল ধারালো গলায় বললো,’ কিন্তু আমার শখ আছে।আমি ধনী হতে চাই।কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক হতে চাই। আমার স্ত্রী, সন্তান নিজের গাড়িতে চড়বে।রাজ রানীর হালে বাঁচবে। আর মাত্র কয়েকটা দিন। আমি এই শখ পূরণ করবোই করবো।’
আমি বললাম,’ তুমি মেহেরুনরে বিয়ে করার পরেও আমারে বিয়ে করলা কেন তাহলে? কেন এরকম কাজটা করলা? ‘
রাতুল বললো,’ মেহেরুন থাকবে না।’
আমি বললাম,’ থাকবে না মানে?’
রাতুল বিরক্তি নিয়ে বললো,’ লায় দিয়েছি এখন মাথায় উঠতে চাইতেছো তাই না? নারী জাতির স্বভাবটাই এই রকম।বিড়ালের মতো। লা*ত্থি দিলে সব সময় তিরিশ হাত দূর দিয়ে আনাগোনা করবে।আর আদর দিলে পায়ে আইসা খামচি কাটবে!’
আমি চুপ হয়ে গেলাম আবার।
রাতুল বললো,’ ঘুমাও এখন। সারারাত ঘুমাওনি। তুমি ঘুমাবা আমি পাহাড়া দিবো।’
আমার কি যে ভ*য় লাগছে! কলিজা পর্যন্ত শুকিয়ে যাচ্ছে।দম আটকে আসছে এমনিতেই।সব সময় আ*তঙ্ক বিরাজ করছে মনে। অ*স্ত্রের মুখে জি*ম্মি হয়ে আছে আমার বাবা। রাতুল তো সাধারণ কেউ না।ও হিং*স্র জানোয়ারের মতো।ও যা ইচ্ছে তাই করে বসতে পারবে। বাবার বেঁচে থাকা নির্ভর করছে আমার উপর।আমি যতোক্ষণ ওর কথার দাস হয়ে থাকবো ততোক্ষণ বাবা ঠিক থাকবে। বেঁচে থাকবে।আমি ওর কথার বিরুদ্ধে গেলেই ও বাবার ক্ষ*তি করে বসবে। এই জন্যই ভ*য়টা বেশি। এরকম ভ*য় নিয়ে ঘুমাবো কি করে?
রাতুল বললো,’ শুয়ে চোখ বন্ধ করে রাখো।ঘুম না এলেও জোর করে ঘুমাবা।’
আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম।চোখ বন্ধ করেই শুনলাম ফজরের আজান হতে। পাখি ডাকতে।সময় গড়িয়ে যাচ্ছে।রাত পেরিয়ে দিন হয়ে এলো। তবুও আমার চোখে ঘুম এলো না।
কিন্তু চোখ আমি ঠিকই বন্ধ করে রাখলাম।
চোখ বন্ধ করে রেখেই শুনলাম রাতুল কাকে যেন ফোন করেছে।ওর নাম সম্ভবত জয়। ওকে বললো,’ তুই ডিঙি রেস্তোরাঁয় আসবি।ঠিক এগারোটায়।’
জয় ওখান থেকে কি বললো কে জানে।
ও এখান থেকে গা*ল বকলো। বললো,’ কু*ত্তার বাচ্চা, রাস্তা থেকে তুলে এনে কাজ দিছি এখন ভাব মা*রাস! আমি তো কথা দিয়েছি মেহেরুনরে তোর কাছেই দিবো। আমি কথা দিয়ে কখনো কথা ভাঙছি? ‘
জয় কি উত্তর দিলো জানি না। রাতুল এরপরেই বললো,’ তুই এই কাজটা ডিল করে দে।ব্যাগটা পৌঁছে দে। বিনিময়ে যে টাকাটা আসে ওটা এনে দে।তোর পাওনা আমি দিবো।’
জয়ের মনে হয় বিশ্বাস হচ্ছে না। লম্বা করছে কথা ‌।
রাতুল মেজাজ আরো খা*রাপ করলো।বললো,’ তুই আসবি না? না আইসা দেখ,আজকেই তোর পু*লিশ বাপ দিয়ে ধ*রাবো তোরে! পাঁচ মিনিট লাগবো তোরে ধ*রাইতে!’
জয় সম্ভবত ভয় পেয়েছে এবার। সে রাজি হয়েছে।রাতুলকে বলতে শুনলাম,’ সময়টা মনে রাখিস।ঠিক এগারোটায়।’
বলে ফোন কেটে দিলো।এর আধ ঘন্টা পর বাসা থেকে বেরিয়ে গেল সে।ও চলে যাবার পর আমি বিছানা থেকে নামলাম।ব্যাগ নিয়ে গেছে। তার মানে ও চলে গেছে।আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। মেহেরুনকে জয় নিয়ে কি করবে? তার মানে রাতুল যে আগে আমার কাছে বললো, মেহেরুন থাকবে না। তাহলে কি জয়ের কাছে মেহেরুনকে তুলে দিবে? এখন আমি বুঝতে পারছি, বিয়ে টিয়ে কিসের, এমনিতেই এখানে আছে মেহেরুন। রাতুল উ*পভোগ করেছে শুধু। এখন জয় উ*পভোগ করবে। কিন্তু মেহেরুন এসে ওদের পাল্লায় পড়লো কি করে? আর নিজের স্বামী সন্তানকেই বা কেন শে*ষ করে দিলো সে? সে কি জানতো না রাতুল এরকম? নাকি এখানে অন্য কোন ঘটনা আছে?

লম্বা ঘটনা জানার ইচ্ছে আমার নাই।আমি শুধু রাতুলের হাত থেকে বাঁচতে চাই। বাবাকে বাঁচাতে চাই। আচ্ছা ও যে বললো, কোন রেস্তোরাঁয় দেখা করবে, কি যেন নাম?
অনেক ভাবার পর মনে পড়লো, ডিঙি।ডিঙি রেস্তোরাঁয়। সময় ঠিক এগারোটায়। তার মানে আজ দুপুর এগারোটায় রাতুল এবং জয় ওখানে উপস্থিত থাকবে। এগারোটা বাজতে এখনও অনেক দেরি। এখন আটটা বাজে।আরো তিন ঘণ্টা। এই সময়ের ভেতর অনেক কিছুই করা যাবে।আসাদ ভাইকে কল করা যায় একটা। আসাদ ভাই আমার বড় ফুফুর ছেলে। ফুলপুর থানার এসআই। যদিও এটা ওই থানার অন্তর্গত না। কিন্তু ওর কাছে বললে সে এই থানায় অবশ্যই যোগাযোগ করতে পারবে। তারপর পুলিশ যাবে ওখানে। রাতুল ধরা পড়বে।জয় ধরা পড়বে।সব ফাঁস হয়ে যাবে এদের। এই সুযোগে আমি বেঁচে যাবো। বেরিয়ে যেতে পারবো এখান থেকে। বাবার জীবন নিয়েও আর দুশ্চিন্তা হবে না আমার! স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবো আবার আমি।

কিন্তু রাতুল অতোটা বোকা কিছুতেই নয়।আমি সারা ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও আমার মোবাইল ফোন পেলাম না। মোবাইল ফোন কোথাও নেই। তার মানে মোবাইল রাতুল নিয়ে গেছে।ও আমায় বিশ্বাস করে না।ও জানতো, আমি এরকম কিছু করে ফেলতে পারি তাই আগে ভাগেই নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে সে!

#চলবে

৫ম পর্বের লিংক –
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/819424529779321/?mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here