#কান্নাভেজা_রাত
#৯ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘
রাতুলের মা এসে কিচেনে উঁকি দিয়ে বললো,’ বেলা দুপুর গড়ালো, এখনও কিচ্ছু রাঁধতে পারো নাই! এতোক্ষণ করছো টা কি তাইলে? ওই খা*রাপ মা*গির সাথে বইসা গল্প গুজব করছো নাকি? অতো ভাব কেন তার সাথে? সতীন বানাইবার বিরাট শখ হয়সে নাকি? এরে তুমি চিনো? এই মাইয়া একটা কাল সা*প। আমার নিষেধ আমি করছি, সমস্যা নাই। এখন তোমার ইচ্ছে হলে ভাব করো গিয়ে তার সাথে এতে তো আমার কোন সমস্যা নাই।এখন কিছু টের পাবা না।টের পাবা তখন যখন সবার আগে সে তোমার বুকে ছু*রিটা বিঁ***ধাইবো তখন!’
আমি কি উত্তর করবো? উত্তর করার মতো কিছুই আসছে না মাথায়। চুপচাপ যা করছিলাম তাই করছি। পিঁয়াজ কুচি করছি। এখানে আমি আসলেই বিরাট বিপদে পড়ে গেছি।কার কথা বিশ্বাস করা উচিৎ আর কারটা করবো না তা ভেবে কোন কূল পাচ্ছি না!
আমার শাশুড়ি আমায় এভাবে চুপ করে থাকতে দেখে বললেন,’ মুখে কুলুপ আঁটছো নাকি তুমি? ‘
আমার মাথায় কি ছিল তখন জানি না। শুধু এটুকুই তখন বললাম,’ মেহেরুনকে বিশ্বাস করবো না তাহলে কাকে বিশ্বাস করবো? আপনাকে? আপনাকে আমি কেন বিশ্বাস করবো? আপনি কি ভালো মানুষ? আপনি যদি এতো ভালোই হতেন তবে আপনার ছেলে যে অ*বৈধ অ*স্ত্র আর মা*দকের কারবার করে এসব নিয়ে প্রতিবাদ করেন না কেন? আটকান না কেন আপনার ছেলেকে?’
আমার শাশুড়ি এই প্রশ্ন গুলোর কোন উত্তর দিলো না। চুপসে গেল একেবারে।
এরপর থেকেই আমার প্রচন্ড রকম ভ*য় কাজ করছে মনে। রাতুল বার বার সাবধান করেছে আমায়।বলেছে, এই বিষয় নিয়ে কোন কথা বললে, কারোর কাছে কিছু বললে সে আমার ক্ষ*তি করবে। বাবার ক্ষ*তি করবে। নিজের উপর এখন বড় রাগ লাগছে । কেন মাতোব্বরি করে এসব বলতে গেলাম? এখন যদি তার ছেলে বাসায় ফিরলে ছেলের কাছে এসব বলে!
‘
সন্ধ্যা বেলায় আমার শাশুড়ি গেটের সামনের মোড় থেকে পান সুপারি আনতে গেলেন ।তার পান খাওয়ার অভ্যেস আছে। তিনি বেরিয়ে যাবার পর মেহেরুন নিজেই তার ঘর থেকে বেরিয়ে এলো কিচেনে। তারপর আমার দু’ বাহুতে আঁকড়ে ধরলো শক্ত করে।আমি ভয়ে আঁতকে উঠলাম। ভাবলাম, এক্ষুনি আমার পেটে চা*কু চালিয়ে দিবে নাকি ও? আমি মুহূর্তে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। মেহেরুন তাড়াহুড়ো করে বললো,’ বোন, চোখ বন্ধ করলে কেন? ভ*য় পাচ্ছো কেন তুমি আমায়? তুমি ওই মহিলার কোন কথা বিশ্বাস করো না প্লিজ! তোমার বিরাট ক্ষ*তি হয়ে যাবে। এই ক্ষ*তি কোনদিন আর কোনভাবে শোধ হবে না!’
আমি ভ*য়ে ভ*য়ে চোখ খুললাম। তারপর আমি কিছু বলার আগেই সে তাড়াহুড়ো করে বললো,’ বুড়ি এসে যাবে এক্ষুনি! বলো, তুমি আমায় হেল্প করবে? যদি হেল্প না করো তবে জয়ের হাতে আমায় দিয়ে দিবে রাতুল।এতে আমার সব প্ল্যান নষ্ট হয়ে যাবে। আমাকে জয় কোথায় নিয়ে যায় এর কোন ঠিক ঠিকানা নাই। হয়তো তার চাহিদা পূরণ হলে অন্য কারোর হাতে আমায় দিয়ে দিবে।অথবা মে*রে ফেলবে।আর তোমার কি অবস্থা হবে বলো? তোমাকে যদি অন্য কোন পুরুষের বি*ছানায় যেতে হয় তখন তুমি তা মেনে নিতে পারবে? সময় থাকতে সিদ্ধান্ত নেও বোন। নয়তো সব হারাবে!’
এইটুকু বলেই সে দ্রুত নিজের ঘরে চলে গেল। আর এরপর পরই রাতুলের মা পান সুপারি নিয়ে ফিরলো।
এরপর থেকে পুরোটা সময় ধরে শুধু আমি ভেবেই গিয়েছি।কি করবো আমি? কাকে বিশ্বাস করবো? রাতুল যে খারাপ লোক এটা তো নিজের চোখেই দেখেছি। মেহেরুন যেভাবে বললো রাতুল আমায় অন্য পুরুষের বি*ছানায় দিয়ে দিতে পারে তার সুবিধা লাভের জন্য।এটা কি সত্যিই হতে পারে?
আর যদি আমি মেহেরুনের পক্ষ নিই। দেখা যাবে মেহেরুন রাতুলকে মে*রে নিজেই এই ব্যবসার একজন হর্তাকর্তা হবে।আর আমাকে তার দা*সির মতো ব্যবহার করে যাবে । এই অন্ধকার জগৎটা তো এরকমই। এখানে কেউ কারোর চেয়ে ভালো নয়।সবাই সাপের মতো হিং*স্র।সুযোগ পেলেই ছো*বল দিবে। তারপর নিজের পথ পরিষ্কার করবে।
‘
রাতে রাতুল ফিরলো হাসিমুখে। তার হাতে তিনটে ব্যাগ। শপিং ব্যাগ। সে ব্যাগগুলো বিছানায় রেখে বললো,’ একটা একটা করে খুলে দেখো।’
আমার ইচ্ছে করছে না এসব দেখতে।ভ*য় করছে।রাতুলকে দেখলেই আমার ভয় করে এখন। বিষয়টা এরকম না যে রাতুলের চেহারা ভ*য়ংকর।ও দেখতে অনেক বেশি সুন্দর।ভদ্র গোছের।কেউ বুঝতেই পারবে না যে সে গোপনে এসব কারবার করে বেড়ায়।
আমি ব্যাগ ধরছি না দেখে রাতুল একটু জোরের গলায় বললো,’ কি হলো? দেখো ব্যাগ খুলে কি এনেছি।আরে বাবা এখানে পি*স্তল টিস্তল কিচ্ছু নাই।ওসব চালান হয়ে গেছে।ব্যাগে অন্য কিছু এনেছি। তুমি দেখো।দেখলে আনন্দে আত্মহারা হবে।’
আমি আপারগ হয়েই বিছানা থেকে ব্যাগ তিনটে হাতে নিলাম। তারপর এক এক করে দেখলাম।
এর একটিতে জুতো। উঁচু হিলের জুতো। টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনের মডেলদের দেখেছি এরকম জুতো পরে হাঁটে । পরের ব্যাগটা খুলে দেখলাম, একটা জিন্স। উজ্জ্বল রঙের। মাঝেমধ্যে ছেঁড়াফাটা। ঝিলমিল করছে। আজকাল এগুলো ফ্যাশন।
এরপরের ব্যাগটা খুলে চোখ কপালে উঠলো আমার। দুটো রঙিন অ*ন্তর্বাস।একটা হিন্দি সিনেমায় দেখেছি আইটেম গানে এরকম পোশাক পরে মেয়েরা নাচে।
আমার মুখ মলিন হয়ে গেল এইগুলো দেখে। যেভাবে ব্যাগের ভেতর এইগুলো ছিল ঠিক ওভাবেই ব্যাগের ভেতর আবার রেখে দিলাম।
রাতুল হাসলো । হেসে বললো,’ এইগুলো দেখে নাক ছিটকানোর তো কিছু নাই।মন খারাপ করারও কিছু নাই। বরং খুশিতে গদগদ হয়ে উঠার কথা।’
আমি কিছু বললাম না। চুপচাপ বিছানার একপাশে বসে রইলাম।
রাতুল আমার কাছে এলো । এসে পেছন থেকে আমায় জড়িয়ে ধরে বললো,’ বোকা মেয়ে, এইগুলো পরে বড়লোকের মেয়েরা, বউয়েরা ক্লাবে যায়।ড্রিং*ক করে গিয়ে। তারপর ড্রাং*কড হয়ে নাচে,গায়, লাফালাফি করে। কিন্তু আমি তো ওদের মতো তোমায় নিয়ে আর নাইটক্লাবে যাচ্ছি না। তুমি এগুলো পরবে আমার জন্য। আমার নিজের স্ত্রীকে আমি এভাবে দেখবো।এতে তো দোষের কিছু নাই। নাকি?’
হাসলো রাতুল।
আমি তখনও কিছু বললাম না। শুধু বুঝতে পারলাম, আজ, কাল কিংবা পড়শু।এই দিনগুলোর কোন একদিন, আমার জন্য গহীন অন্ধকার কোনো কালরাত হয়ে আসবে। রাতুল এইসব পোশাক পরিয়ে আমায় নিজে দেখবে না।অন্য কাউকে দেখাবে। তবে কি মেহেরুন আমায় যা যা বললো এর সব সত্যি? কিন্তু মেহেরুনকে বিশ্বাস করে যদি আমি ঠকি? যদি রাতুলের হাত থেকে মুক্ত হয়ে আবার মেহেরুনের হাতে বন্দি হই?
কি জানি কি হয়!
রাতুল আমায় আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো পেছন থেকে। তারপর বললো,’ বোকা মেয়ে, ভয়ের কিছু নেই।আমি যে বিজনেসটা করি, এটা হয়তো খা*রাপ। ই*লিগ্যাল এটা। কিন্তু তুমি তো আমার ই* স্ত্রী নও। এবং তোমার প্রতি যে আমার ভালোবাসা।আবেগ ।মায়া – মমতা।এর কিছুই মিথ্যে নয়।’
রাতুল আমায় তার আরো কাছে টেনে নিলো। তারপর মাথার চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বললো,’ তুমি যদি আমার সঙ্গে কখনো বি*শ্বাসঘাতকতা না করো তবে তুমি রানীদের মতো জীবন পাবে।রানীদের মতো সুখ পাবে। কিন্তু আমার সঙ্গে বি*শ্বাসঘাতকতা করলে, কু*কুরের মতো ম*রতে হবে তোমাকে। তোমার বাবা সহ ।’
রাতুলের শেষের কথাগুলো শুনে ভয়ে আমি আঁতকে উঠলাম।বুকটা ধুকপুক করে শুধু কাঁপতে লাগলো। সারা শরীর ঘেমে ভিজে চুপসে এলো। রাতুল সেই ঘামে তার আঙুল ডুবিয়ে দিতে দিতে বললো,’খুব ভালো।ভ*য় পাওয়া নারীদের আমি পছন্দ করি। লজ্জা যেমন নারীর ভূষণ, ভয় পাওয়াও এরকম। নারীর ভূষণ। ‘
তারপর হাসলো সে।নিঃশ্বব্দে। তবুও এই হাসিটাকে আমার মনে হলো, পৃথিবীর সবচেয়ে ভ*য়াবহ বি*কৃত হাসি ।
‘
#চলবে
‘
৮ম পর্বের লিংক –
https://m.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/821858332869274/?mibextid=Nif5oz