বর্ষার_প্রণয়ের_কথা #পর্ব_০২ #নুর_নবী_হাসান_অধির

0
257

#বর্ষার_প্রণয়ের_কথা
#পর্ব_০২
#নুর_নবী_হাসান_অধির

রাতের বেলা বারান্দায় বসে আকাশের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে মেঘ৷ দুইদিন হলো হসপিটাল থেকে এসেছে৷ হাতে এখনও ব্যান্ডেজ৷ চাঁদের আলোয় চোখের সামনে সেই পুরোনো স্মৃতি ভেসে উঠে৷ এমন চাঁদের আলোয় নিরিবিলি পরিবেশে এক সাথে ছিল মেঘ মাহবুব। মেঘকে এক নজর দেখার জন্য ঢাকা থেকে ছুটে গেছিল রাজশাহীতে। ঘড়ির কাটা একটা ছুঁই ছুঁই। হঠাৎ মেঘের ফোনের রিংটোন বেজে উঠল। ওয়ালপেপারে হার্ট দিয়ে সেইভ করা নাম ভাসতেই মেঘের ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল এক চিলতে হাসি৷ হাসিমুখে ফোনটা রিসিভ করতেই মাহবুব বলে উঠল,

–‘আমি তোমার হোস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি৷ তোমাকে এক পলক দেখতে চাই৷’

মেঘ চকিত কন্ঠে বলল,
–‘আপনি এখানে আসলেন কিভাবে? এতো রাতে আমার সাথে মজা করছেন! আপনি রাজশাহীতে আসলেন কখন?’

–‘আমি কিছু শুনতে চাইনা৷ আমি দাঁড়িয়ে আছি৷ তুমি এখনই আমার সাথে দেখা করবে৷ তোমাকে এক পলক দেখার জন্য ঢাকা থেকে ছুটে এসেছি৷ তোমাকে এক পলক দেখে চোখের তৃপ্তি মেটাব৷’

–‘আপনি সত্যি সত্যি এসেছেন৷ নাকি আমাকে মিথ্যা কথা বলছেন৷’

–‘আমি আমার পাগলীটাকে মিথ্যা কথা বলতে পারি! তুমি সাদা শাড়ী পড়ে আসবে৷’

মাহবুব কথা না বাড়িয়ে ফোন রেখে দিল৷ মেঘের মনে এক ঝাঁক প্রজাপতি বয়ে যাচ্ছে৷ খুশিতে নৃত্য করতে ইচ্ছা করছে৷ প্রিয় মানুষের সাথে বহুদিন পর দেখা হবে৷ মাহবুবের কথামতো মেঘ সাদা শাড়ী পড়ে হোস্টেলের বাহিরে আসো৷ মেঘ হাত ভাজ করে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ মাহবুবকে দেখে মেঘের ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠে হাসি৷ ঝলমলে চাঁদের আলোয় মাহবুবকে অনেক সুন্দর লাগছে৷ পাশে এসে দাঁড়ালে মাহবুব মুগ্ধ নয়নে মেঘকে এক পলক দেখে৷ মেঘের হাতে আলতো করে ঠোঁট স্পর্শ করে৷ নির্জন পরিবেশে পাশাপাশি হাঁটছে দুজনে৷ মাহবুব ভনিতা ভেঙে বলল,

–‘তোমাকে চাঁদের আলোয় একদম পরীর মতো লাগছে৷ আমি আমার পরীটাকে এক পলক দেখার জন্য ছুটে এসেছি তোমার কাছে৷

মাহবুবের কথায় মেঘ লজ্জা পেল৷ লজ্জমাখা কন্ঠে বলল,

–‘আপনাকেও অনেক সুন্দর লাগছে৷ আজই কি ঢাকা চলে যাবেন?’

মেঘের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,

–‘আমি আজ ঢাকা যাচ্ছি না৷ আমি আমার মেঘ পাখির সাথে আজ রাত কাটাব। তোমার পাশে আমায় রাখবে না৷’

মাহবুবের দুষ্টু কথায় মেঘ ভীষণ লজ্জা পেল৷ লজ্জা কাটিয়ে বলল,

–‘আমার সাথে থাকা যাবে না৷ আমি একা থাকি না৷ আপনি আজই ঢাকায় ফিরে যাবেন৷’

–‘যাক বাবা! যার জন্য সাত সাগর তেরো নদী পাড়ি দিলাম সেই তাড়িয়ে দিচ্ছে৷ ওকে আমি আজ চলে যাব৷ ঢাকায় তোমাকে পেলে প্রতিশোধ নিব৷’

–‘আপনি যেদিন সাত সাগর তেরো নদী পড়ি দিয়ে ঘোড়ায় পীঠে চড়ে আসবেন সেদিন ভেবে দেখব৷’

পুরোনো স্মৃতিগুলো মনের গহীনে স্মৃতি হয়ে থাকবে৷ বাস্তবে আর কোনদিন রুপান্তরিত হবে না৷ মাহবুবের কথা মনে পড়তেই চোখ থেকে দুই ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। মেঘ মনকে যথাসম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করে৷ ছোটবেলার স্মৃতিগুলো মনে করার চেষ্টা করছে৷ মানুষের জীবনে শৈশবের স্মৃতিগুলো রয়ে যায় আজীবন। মন খারাপের সময় সেই শৈশবের কথাগুলোর স্মরণ করলে মন ভালো হয়ে যায়৷
_______________

মাহিরের চোখ জোড়া শুধু মেঘকে খুঁজে। মেঘ হসপিটাল থেকে চলে যাওয়ায় মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়৷ মনের গহীনে কেন বার বার সাড়া ফেলছে মেঘ? আগে তো এমন হয়নি৷ সময়ের সাথে কি টান তীব্র হবে? নাকি দূরত্ব বেড়ে যাবে৷

সপ্তাহ ঘুরতে ঘুরতে মেঘের প্রতি টান কমে যায়৷ মাহির বুঝতে পারে মেঘের প্রতি মাহিরের ভালোবাসা নয়৷ মোহ ছিল৷ মোহ মানব জীবনে সবথেকে খারাপ দিক। যা মানব জীবনকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়৷ মাহির এ মোহ থেকে বের হতে পারলেই জীবনে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সন্ধান পাবে৷
___________________

দেখতে দেখতে কেটে যায় এক মাস৷ মেঘ নিজেকে সামলিয়ে নিয়েছে৷ মাহবুবের দেওয়া কষ্ট ভুলতে মাহবুবের দেওয়া সকল গিফট পুড়িয়ে ফেলছে৷ গিফটগুলো বারবার তার কথা মনে করিয়ে দেয়৷ পোড়া গন্ধ পেয়ে মেঘের মা দৌড়ে মেঘের রুমে আসে৷ ভীতু গলায় বলেন,

–‘এসব কি করছো মেঘ? আমাকে আজ একটা সত্যি কথা বলতে হবে৷ আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই৷ সেদিন কি হয়েছিল? ইভা কেন তোমার সাথে বাজে ব্যবহার করেছে?’

মেঘ বিরক্ত স্বরে উত্তর দিল,

–‘বাদ দাও মা৷ আমি ইভা আপুর কথা শুনতে চাইনা৷ ইভা আপু আমাকে নিয়ে কি ভাবছে তার কাছ থেকে শুনে নাও৷’

–‘তুমি না চাইলেও আমি চাই৷ কি এমন ঘটল? যার জন্য তোমাকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়েছে৷’

–‘আমি আত্মহত্যা করতে যাব কেন? রাস্তায় আনমনে হাঁটার জন্য এমন হয়েছে৷ আত্মহত্যা মহাপাপ।’

–‘মেঘ আমি তোমার মা৷ তোমার বয়স আমিও পার করে এসেছি৷ ধরে নিলাম তুমি আত্মহত্যা করতে চাওনি৷ মামা বাড়ি থেকে এভাবে পালিয়ে আসার কারণ?’

–‘মা আমার কিছু ভালো লাগছে না৷ আমাকে একা থাকতে দাও৷ এক কথা বারবার বলতে ইচ্ছা করছে না৷’

মেঘের মা আরাভী চৌধুরী মেয়ের এমন ব্যবহার মেনে নিতে পারল না৷ মেঘের গালে কষিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন৷ হুংকার দিয়ে বলেন,

–‘আমি ভেবেছিলাম তুমি নিজে থেকেই আমাদের সাথে সবকিছু শেয়ার করবে৷ সেজন্য তোমাকে সময় দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু তুমি এখনও আমাদের সাথে কিছু শেয়ার করনি৷ ধরে নিলাম আমাদের ধারণা ভুল৷ তাহলে এসব কর্মকান্ড কেন করছো?’

মেঘ আর কিছু বলল না৷ মা’কে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কান্না করে দিল৷ এতদিন পর মেঘ কান্না করার জন্য একটা আশ্রয় খুঁজে পেল৷ কিছুই বলতে পারছে না৷ কান্না করেই যাচ্ছে৷ চোখের জলের সাথে ধুয়ে মুছে যাচ্ছে মেঘের কষ্ট গুলো৷ আরাভী চৌধুরী মেঘের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছেন৷ মেঘ ভেজা গলায় বলল,

–‘মা আমি জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে আছি৷ আমার স্বপ্ন ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে৷ আমার ভালোবাসার মানুষ আমাকে ঠকিয়েছে৷ আমি কিছুতেই এ আঘাত মেনে নিতে পারছি না৷’

মেয়েকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,

–‘তুমি কি কাউকে ভালোবাসতে? আমাদের আগে কখনও বলনি তো তুমি কাউকে ভালোবাসাে৷’

–‘মা বলার সুযোগ হয়নি৷ আমার জীবনের থেকে তাকে বেশি ভালোবাসতাম৷ তার ভালোবাসায় এতটাই মগ্ন ছিলাম তার ছলনা আমি ধরতে পারিনি৷’

–‘ভালোবাসা কোন অপরাধ নয়৷ যে ভালোবাসা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় সে ভালোবাসা অপরাধ৷ কাউকে ভালোবাসলে তাকেই জীবন সঙ্গী হিসেবে পেতে হবে এমন কোন কথা নেই৷ ভালোবাসা এক অমূল্য সম্পদ। যা সবাই পাইনা৷ যা তোমার নয় তা তুমি কোনদিন পাবে না৷ তোমার ভাগ্যে ভালোবাসা লেখা ছিলনা৷ বা সে তোমার ভালোবাসা পাবার যোগ্য নয়৷’

–‘আমি কিছুতেই তাকে ভুলতে পারছিনা৷ চোখ বন্ধ করলেই তাকে দেখতে পাই৷’

–‘তুমি কার কথা বলছো? এসবের মধ্যে ইভার কোথা থেকে আসল? ইভা কেন সেদিন হসপিটালে এমন করল?

–‘মা বিশ্বাস কর আমি ইভার সংসার ভাঙতে চাইনা৷ ইভা আপু আমাকে ভুল ভাবছে।

–‘তোমার প্রতি ইভার এত রাগ কেন? তোমাকেই ভুল ভাবছে কেন?’

–‘নিশ্চয় মাহবুব ইভাকে আমার বিষয়ে বাজে কথা বলেছে৷ আমি সেদিন সেই বাড়ি থেকে আসার আগে মাহবুবের গালে থাপ্পড় বসিয়ে আসছি৷ যার জন্য মাহবুব আমাদের দু’জনের মধ্যে বাজে সম্পর্ক সৃষ্টি করেছে৷’

–‘মাহবুবের গালে সেদিন তুমি থাপ্পড় মারছিলে৷ তোমার সাথে খারাপ কিছু করেছিল মাহবুব?’

–‘আমার খারাপ কি করবে? তার জন্যই আমার জীবন থেকে সুখ নামক পাখি উঠে গেছে৷ সেই আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে৷’

–‘মাহবুবের সাথে তোমার সম্পর্ক কি? কেন তুমি তার গায়ে থাপ্পড় মারছো? কি করেছিল তোমার সাথে? তুমি আবার…. ‘

–‘হ্যাঁ মা। আমি যাকে ভালোবাসি সে আর কেউ না৷ সে বিশ্বাসঘাতক, প্রতারক হলো মাহবুব৷’

আরাভী চৌধুরীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। মেয়ের গালে কষিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দিল৷ মেঘ বুঝতে পারল না তার সাথে কি হচ্ছে.?

চলবে…..

ভুল ত্রুটিগুলো মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন। মেঘের মা আরাভী চৌধুরী কি মেয়ের পাশে থাকবে.? নায়ক এখনও আসেনি৷ হুট করেই চলে আসবে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here