#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
২২।
মেহুল ভার্সিটিতে যাওয়ার পর সবাই বেশ উৎসাহ নিয়ে তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছে। টিচাররাও সবাই খুব খুশি। রিতা মেহুলের কাছে গিয়ে বলল,
‘দোস্ত, আর যাই হোক এই এক নিউজ পেপারের হেডলাইন তোকে ছোট খাটো সেলিব্রেটি বানিয়ে দিয়েছে। আমার তো মনে হচ্ছে, যে করেছে সে ভালোই করেছে। দেখবি, এখন এই সূত্র ধরে বাইরে থেকেও তোর জন্য গান গাওয়ার অফার আসবে।’
তবে আজ মেহুলের মাঝে কোনো উৎসাহ নেই। সে নিরস মুখে বলল,
‘হু।’
‘কী হু, তুই খুশি না?’
মেহুল রিতার দিকে চেয়ে বলে,
‘বাড়িতে এই নিয়ে ঝামেলা চলছে। রাবীর উনার মা’কে কোনোভাবেই রাজি করাতে পারছেন না। এই অবস্থায় আমি কী করে খুশি হবো বলতো?’
রিতা বুঝতে পারে। সে মেহুলের কাঁধে হাত রেখে তাকে আশ্বাস দিয়ে বলে,
‘চিন্তা করিস না, দোস্ত। সব ভালো হবে।’
‘হ্যাঁ, ভালো লাগছে না। চল আজকে একটু ফুচকা খেতে যাই।’
‘কিন্তু, রাব্বী স্যার তো তোকে ডেকেছিলেল।’
‘আমাকে, কেন?’
‘জানি না।’
‘আচ্ছা, চল তাহলে আগে সেখানেই যাই।’
মেহুল স্যারের কেবিনের কাছে গিয়ে বলল,
‘আসবো, স্যার?’
স্যার বললেন,
‘হ্যাঁ হ্যাঁ, মেহুল। ভেতরে এসো।’
মেহুল ভেতরে প্রবেশ করে। রাব্বী স্যার হেসে বললেন,
‘প্রোগ্রামের পর তো তোমাকে আর দেখাই যায়নি। সেমিস্টার ব্রেকে কি কোথাও ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করেছো নাকি?’
মেহুল সৌজন্য হেসে বলল,
‘না স্যার। তেমন কিছু না। ক্লাস নেই বলে আসা হয় না আরকি।’
‘আচ্ছা। আপনি নিউজ পেপার দেখেছেন নিশ্চয়ই। সবাই তো আপনার বেশ প্রশংসা করছেন। আপনার পরিবারের মানুষ ও নিশ্চয়ই খুব খুশি?’
মেহুল মাথা নুইয়ে মৃদু সুরে বলে,
‘জি, স্যার।’
‘তা তো হতেই হবে। মেয়ের এমন প্রাপ্তিতে তো সব বাবা মা’ই খুশি হোন। তবে এখন আরেকটা খুশির সংবাদ আছে।’
‘কী?’
‘আমার এক বন্ধু, ভোকাল আর্টিস্ট। সে নতুন নতুন সিংগারদের নিয়ে কাজ করে। প্রতি বছর তার একটা করে এলভাম রিলিজ হয়। আর সেটা হিটও হয় খুব। তো সে কালকে খবরের কাগজে তোমার খবর দেখে আমাকে কল দিয়ে বলে, মেয়েটা তোদের ভার্সিটির না। আমি বলি, হ্যাঁ আমার ছাত্রী। সে তখন দারুণ একটা খবর দেয়। তোমাকে ওর সাথে কাজ করার অফার দেয়। আমাকে বলেছে তোমার সাথে কথা বলার জন্য। তুমি একবার ওর সাথে কাজ করলে তোমার আর গানের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হবে না। এমনিই সেটা অনেক উপরে উঠে যাবে। তো, এই নিয়ে তোমার কী মত?’
মেহুল বিস্ময় নিয়ে চেয়ে থাকে। সারাজীবন যা চেয়ে এসেছে আজ সেটা তার সামনে। সে কি সেটা ছুঁয়ে দেখবে না? বারণ করে দিবে? মনের বিরুদ্ধে গিয়ে এমনটা করতে পারবে সে?
মেহুল চিন্তায় পড়ে যায়। কী বলবে বুঝতে পারছে না। স্যার বললেন,
‘কী হলো, মেহুল। কী ভাবছো? এই সুযোগ কিন্তু কেউ সহজে হাত ছাড়া করবে না। তাই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভেবে নিও।’
মেহুল কিছু সিদ্ধান্ত নিতেই পারে না। একা এই সিদ্ধান্ত নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব না। তাই সে স্যারকে বলে,
‘স্যার, আমাকে কি একটু সময় দেওয়া যাবে? আমি আপনাকে ভেবে বলছি।’
‘হ্যাঁ, অবশ্যই। তুমি সময় নিয়ে ভেবে বলো।’
‘আচ্ছা স্যার, ধন্যবাদ।’
________
ফুচকার মামাকে ঝাল দিয়ে দু প্লেট ফুচকা বানাতে বলে সে চেয়ারে বসল। রিতা তখন বলল,
‘তুই রাজি হয়ে গেলেই পারতি। কত বড়ো একটা সুযোগ। তোকে ঐ লোকটা রাতারাতি সিংগার বানিয়ে দিতে পারতো। উনি খুব ভালো আর্টিস্ট। আমি উনার নাম শুনেছি।’
মেহুল চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
‘এতকিছুর পরও আমি কীভাবে রাজি হয় বলতো? আমি এখন রাজি হলে ভবিষ্যতে এই নিয়ে আরো ঝামেলা হবে।’
‘ভাইয়া আছেন তো সবকিছু সামলে নেওয়ার জন্য।’
‘একটা মানুষ আর কতদিক সামলাবেন? উনার সামনে ইলেকশন, এই নিয়ে রাত দিন ছুটছেন। তার উপর সেই অপরিচিত ব্যক্তিকে নিয়েও উনার মাথায় বিশাল দুশ্চিন্তা। আর আমার এই গান নিয়ে উনার সাথে উনার মায়ের ভুল বুঝাবুঝি তো চলছেই। আর কতদিক সামলামেন উনি? পাগল যে হচ্ছেন না এটাই বেশি। আমি আর এইসবের মাঝে নতুন করে কোনো প্রেশার সৃষ্টি করতে চাই না। উনার সাথে কথা বলব, উনি যা বলবেন তাই হবে।’
রিতা মেহুলের মুখের দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। তারপর সে মৃদু হেসে বলে,
‘তুই ভাইয়াকে ভালোবেসে ফেলেছিস, তাই না?’
মেহুল দ্বিধাগ্রস্থ চোখে তাকায়। এটাকে ভালোবাসা বলে? নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে। তবে তার মন কোনো জবাব দেয় না। তাই সেও বুঝতে পারে না। অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে,
‘ভালোবাসা না হলেও মানুষটাকে আমি সম্মান করি। উনি আমাকে নিয়ে খুব ভাবেন। তাই স্ত্রী হিসেবে এইটুকু চিন্তা করা আমার কর্তব্য।’
রিতা ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,
‘তাও, ভালোবাসিস যে সেটা স্বীকার করবি না?’
মেহুল নাক ফুলিয়ে বলে,
‘না, করব না। আমি কেন করব? উনি আগে করবেন। উনিও তো আমাকে এখন পর্যন্ত ভালোবাসার কথা বলেননি। তবে আমি কেন স্বীকার করব? উনার আগে তো জীবনেও না।’
‘আচ্ছা, এই ব্যাপার? মানে তলে তলে প্রেম চলছে কিন্তু কেউ স্বীকার করবে না। আচ্চা আমি ভাইয়াকে বলব, তার বউ তার মুখে ভালোবাসার কথা শোনার জন্য একেবারে অস্থির হয়ে উঠেছে।’
মেহুল বড়ো বড়ো চোখ করে বলল,
‘মোটেও তা না। উল্টা পাল্টা কিছু বললে খবর আছে তোর।’
‘দাঁড়া, এখনি বলছি।’
এই বলে রিতা ফোন হাতে নিতেই মেহুল সেটা কেড়ে নেয়। রাগি গলায় বলে,
‘মার খাবি কিন্তু রিতার বাচ্চা।’
রিতা দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
‘বিয়ে ছাড়া আমার আবার বাচ্চা এলো কোথ থেকে?’
________
ফুচকা খেতে খেতে রিতা বলল,
‘এই মেহুল, দেখ; ঐ লোকটা কখন থেকে আমাদের দেখছে। বেটার লক্ষণ তো ভালো মনে হচ্ছে না।’
মেহুল তখন সঙ্গে সঙ্গেই বলল,
‘তোর ও তাই মনে হচ্ছে? আমারও তো তখন থেকে এই ভাবনাটাই বার বার মাথায় আসছিল। লোকটা আমাদেরই দেখছে, তাই না? ব্যাপার কী বলতো? আচ্ছা, এটাই আবার সেই লোকটা না তো, যাকে আমরা খুঁজছি?’
রিতা তার দিকে চেয়ে সন্দিহান সুরে বলল,
‘হ্যাঁ, হতেও পারে। কী করবি এখন?’
‘দাঁড়া, রাবীরকে কল দিয়ে আসতে বলি। আজকে বেটাকে হাতে নাতে ধরব।’
‘হ্যাঁ, সেটাই কর। তবে খেয়াল রাখিস, লোকটা যেন না বুঝে।’
‘না না, বুঝবে না।’
মেহুল রাবীরকে কল দেয়। রাবীর কল রিসিভ করতেই সে বলে,
‘আপনি কি ব্যস্ত আছেন?’
‘না, বলুন।’
‘এখনই একটু আমার ভার্সিটির সামনে আসুন।’
‘কেন, কোনো সমস্যা? ড্রাইভার যায়নি আজকে?’
‘না না, এসব কিছু না। আমার মনে হচ্ছে আমি ঐ লোকটাকে পেয়ে গিয়েছি। আপনি তাড়াতাড়ি আসুন।’
রাবীর অস্থির গলায় বলল,
‘কী বলছেন আপনি? ঐ লোকটা কি আপনার সাথেই? ও কি আপনাকে ফলো করছে?’
‘দেখে তো তাই মনে হচ্ছে।’
‘আচ্ছা, আপনি সাবধানে থাকবেন। আমি দু মিনিটের মধ্যেই আসছি। আজকে ঐ লোকের ফলো করার ইচ্ছে একদম জন্মের মতো মিটিয়ে দেব।’
রাবীর কল কেটে দেয়। মেহুল হেসে বলে,
‘আজকে তুমি শেষ বাবাজান। আমাকে অনেক জ্বালিয়েছো। আজকে তোমার সব খেলা শেষ হতে চলছে। আরেকটু অপেক্ষা করো।’
চলবে….